সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধিত কোনো হজযাত্রী হজের টাকা ফেরত চাইলে তিনি অনলাইনে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আবেদন করবেন এবং কোনো প্রকার সার্ভিস চার্জ কর্তন ছাড়া তাকে তার জমা দেওয়া সমুদয় অর্থ ফেরত প্রদান করা হবে।
বুধবার (২৪ জুন) ধর্ম মন্ত্রণালয় হজ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে জুম মিটিং শেষে এ কথা জানিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নূরুল ইসলামের সভাপতিত্ব অনুষ্ঠিত বৈঠকে সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান, হাব সভাপতি, হজ পরিচালক, হজ কাউন্সিলরসহ স্বরাষ্ট্র, স্বাস্থ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দফতরের প্রায় ৩৯ জন কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন।
বৈঠক শেষে জানানো হয়, প্রাণঘাতী করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে চলতি বছর খুবই সীমিত সংখ্যক হজযাত্রী নিয়ে পবিত্র হজ পালিত হবে বলে সৌদি আরব জানিয়েছে। সৌদি সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী এ বছর পবিত্র হজে অংশগ্রহণের সুযোগ না থাকায় যেসব বাংলাদেশি নাগরিক হজে যাওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছিলেন, তারা যেকোনো সময় তাদের নিবন্ধনের টাকা তুলে নিতে পারবেন। টাকা তুলে নেওয়ার ক্ষেত্রে কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়টিও খেয়াল রাখা হবে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব আরও জানান, চলতি বছরের প্রাক-নিবন্ধন এবং নিবন্ধন যথারীতি ২০২১ (১৪৪২ হিজরি) সালের প্রাক-নিবন্ধন এবং নিবন্ধন হিসেবে কার্যকর থাকবে। ২০২১ সালে কোনো কারণে হজ প্যাকেজের ব্যয় বৃদ্ধি বা হ্রাস পেলে তা বর্তমান হজযাত্রীর জমাকৃত অর্থের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে।
কোনো হজযাত্রী নিবন্ধন বাতিল করলে একইসঙ্গে তার প্রাক নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে এবং তাকে নতুন করে প্রাক-নিবন্ধন করে হজে যেতে হবে।
বেসরকারি হজ ব্যবস্থাপনার হজযাত্রী নিবন্ধন বাতিল করে টাকা উত্তোলন করতে চাইলে তার হজ এজেন্সির মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন করবেন এবং মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে হজ এজেন্সির মাধ্যমে অথবা ব্যাংকের মাধ্যমে তাদের জমাকৃত অর্থ গ্রহণ করবেন।
সরকারি অথবা বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যে সব হজযাত্রী তাদের জমাকৃত নিবন্ধনের টাকা তুলতে চান তাদেরকে ১২ জুলাই এর পর আবেদন করতে হবে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নিবন্ধিত হজযাত্রীদের মধ্যে কেউ যদি টাকা না তুলে মনে করেন যে আগামী বছর হজে যাওয়ার জন্য তা রেখে দেবেন, তাহলে সে বিষয়টিকেও স্বাগত জানাবে মন্ত্রণালয়।
সৌদি বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক হজ চুক্তি অনুযায়ী ১৪৪১ হিজরিতে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে এবার বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ১৯৮ জন হজযাত্রীর হজে যাওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে চূড়ান্ত নিবন্ধন করেছিলেন ৬৪ হাজার ৫৯৯ জন হজযাত্রী। তন্মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৩ হাজার ৪৫৭ জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৬১ হাজার ১২৪ জন।
হাবের সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেছেন, আল্লাহর মেহমানরা হজের নিয়ত করে টাকা জমা দিয়েছেন। অনেকেই হয়তো হজের টাকা উঠাবেন না। আর হজের টাকা কেউ তুলে নিয়ে নিলে তার প্রাক-নিবন্ধনসহ পুরো নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে আগামী বছর হজে যেতে চাইলে তাদেরকে নতুনভাবে প্রাক-নিবন্ধন করতে হবে। সেক্ষেত্রে তারা সিরিয়ালে পিছিয়ে পড়বেন। কারণ কোটার চেয়ে প্রাক-নিবন্ধনকৃত হজযাত্রীর সংখ্যা প্রায় দিগুণ।
চলছে পবিত্র হজের নিবন্ধন। আগামী বছরের হজযাত্রীদের ব্যস্ততা ধীরে ধীরে বাড়ছে। হজ একটি ফরজ ইবাদত, বান্দার সঙ্গে রবের সেতুবন্ধন তৈরি হয় হজের মাধ্যমে। বিধানমতে, পরিবারের আবশ্যকীয় খরচ বাদে যে ব্যক্তির কাছে মক্কা শরিফ থেকে হজ করে ফিরে আসা পর্যন্ত যাতায়াতের মোটামুটি খরচ পরিমাণ অর্থ থাকে তার ওপর হজ ফরজ।
এই ফরজ কাজে যাওয়ার আগে দরকার প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা। সক্ষম প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য একবার হলেও হজ সম্পাদন করা আবশ্যক। হজযাত্রীদের প্রস্তুতি আগেভাগে সেরে নেওয়া উচিত।
হজের অনেক বিধি-নিষেধ আছে। সাধারণত এসব বিষয় আলোচিত হয় না। তাই সফরের আগেই হজবিষয়ক সব বিষয় জানা থাকা উচিত। হজের ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নত সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। বিদায় হজের সময় নবী কারিম (সা.) সাহাবিদের হজ বিষয়ে সব কিছু জানতে বলেছেন।
হজরত জাবির বিন আবদুল্লাহ (রা.) বর্ণনা করেছেন, আমি রাসুল (সা.)-কে কোরবানির দিন তার বাহনে চড়ে প্রস্তর নিক্ষেপ করতে দেখেছি। তখন হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলছিলেন, ‘তোমরা হজের বিধান সম্পর্কে জেনে নাও। কেননা আমি জানি না, এই হজের পর আমি আর হজ করতে পারব কি না।’ -সহিহ মুসলিম : ১২৯৭
তাই হজের বিষয়গুলো অভিজ্ঞ আলেমদের থেকে জানা প্রয়োজন। বিশেষত যেসব কারণে হজের বিধান ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং জরিমানা দিতে হয় সেসব বিষয়ে বিস্তারিত জানা উচিত। পাশাপাশি নিজেকে শারীরিক ও মানসিকভাবে হজের জন্য প্রস্তুত রাখা। যেন সুস্থভাবে হজের পুরো কার্যক্রম পালন করা যায়। তা ছাড়া হজভ্রমণের আগে অসিয়ত লিখে যাওয়া ও সঙ্গী নির্বাচনে সচেতন হওয়া উচিত।
বিজ্ঞ আলেমরা বলেন, সব ধরনের খরচ ও হজ প্যাকেজ সম্পর্কে ধারণা রাখা। হজে যাওয়ার আগে স্পষ্টভাবে জেনে যাবেন, কোন প্যাকেজে যাবেন। হজ এজেন্সি আপনাকে কোন কোন সুবিধা ও সেবা দেবে। হোটেল কোন মানের হবে, খাবার কেমন হবে, আগেভাগে যাবেন, আগেভাগে ফিরে আসবেন; নাকি হজের আগ-মুহূর্তে গিয়ে শেষে আসবেন? এসব বিষয়ে অভিজ্ঞদের পরামর্শ নেবেন।
মনে রাখতে হবে, অর্থবহ হজের জন্য হজ এজেন্সি ও প্যাকেজ নির্বাচন জরুরি। নাহলে, মক্কা-মদিনায় নানারকম বিব্রতকর অবস্থার মুখোমুখি হতে হয়। সম্পর্ক নষ্টের পাশাপাশি ইবাদত-বন্দেগি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সুতরাং যারা এ বছর হজে যাবেন, বিষয়গুলো আগেই খোলাসা করে নেবেন।
হজযাত্রার আগেই অন্তরে এই সৌভাগ্য লাভের উপলব্ধি থাকা উচিত। আর এ কথা মনে রাখতে হবে, এটি সাধারণ কোনো ভ্রমণ নয়; বরং তা মহান রবের প্রেমে ভরপুর অন্তরের মিলনমেলা। তাই এই ভ্রমণের সব দুঃখ ও কষ্টকে সৌভাগ্যের পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করা উচিত।
হজযাত্রায় নানা এলাকার, নানা শ্রেণির মানুষের সঙ্গে মিশতে হয়। মুখের ভাষা, সামাজিক অবস্থান ও গায়ের রং ভিন্ন হলেও সবার পরনে শুভ্র সেলাইহীন কাপড়। অনেক মতপার্থক্য থাকলেও সবাই এখন আল্লাহর ঘরের অতিথি। তাই সবার সঙ্গে সুন্দর আচরণ করা হজযাত্রীদের প্রধান কর্তব্য। অনেক হজযাত্রী ও এজেন্সি এটা মনে রাখেন না। এমন মনোভাব কোনোভাবেই কাম্য নয়।
কারণ, হজ কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রত্যাশায় পালন করা। আল্লাহর সন্তুষ্টি ও রাসুল (সা.)-এর সুন্নত অনুসরণ করে সব আমল করা। পার্থিব খ্যাতি, সামাজিক মর্যাদা লাভের জন্য হজপালন নয়।
হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আনাস বিন মালেক (রা.) বর্ণনা করেছেন, নবী কারিম (সা.) (উটের) পুরনো জিনে বসে হজ করেছেন। আর এর ওপরে ছিল চার দিরহাম বা তারও কম দামের একটি কাপড়। অতঃপর রাসুল (সা.) বলেন, ‘হে আল্লাহ, আপনি এই হজ কবুল করুন। এতে লৌকিকতা ও প্রচারণার কিছু নেই।’ -ইবনে মাজাহ : ২৮৯০
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কর্ণফুলী নদী হয়ে সাগরপথে সৌদি আরবের জেদ্দা বন্দর ছুঁয়ে পবিত্র নগরী মক্কা-মদিনা। একটা সময় এভাবেই জাহাজপথে হজপালন করতে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেশে যেতেন এই অঞ্চলের মানুষ।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় বাংলাদেশ থেকে সেই জাহাজযাত্রা থেমে যায় বহু দশক আগেই। একেবারেই ভাটা পড়ে যাওয়া জাহাজ পথে হজ করতে যাওয়ার আলোচনায় ফের জোয়ার আসে এক বছর আগে।
তবে দেশের রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর ওই আলোচনাও প্রায় মুছেই গিয়েছিল। সম্প্রতি বালাদেশ থেকে সমুদ্রপথে হাজযাত্রী পাঠানোর প্রস্তাবে সৌদি সরকার সম্মতি দেওয়ার পর নতুন করে আশা জাগাচ্ছে জাহাজে চড়ে হজে যাওয়ার স্বপ্ন।
৬ অক্টোবর সৌদি আরবের জেদ্দায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন এবং সৌদি হজ ও উমরাবিষয়ক মন্ত্রী ড. তাওফিক ফাউজান আল রাবিয়ার মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে সৌদি মন্ত্রী এই সম্মতির কথা জানানোর পর আলোচনা হচ্ছে কবে থেকে শুরু হবে এই জাহাজপথে হজযাত্রা। আবার প্রশ্ন উঠছে আদৌ কি এটি সফল হবে এই পরিকল্পনা? কেননা জাহাজপথে হজযাত্রায় যেমন আছে সুবিধা, তেমনি যে আছে চ্যালেঞ্জও।
বাংলাদেশের হজযাত্রীদের জন্য সমুদ্রপথে জাহাজ নামার প্রাথমিক আলোচনা চলছিল বহুদিন ধরে। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান জাহাজে হজযাত্রীদের নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন কোম্পানি লিমিটেডকে (আইআইএফসি) দিয়ে সমীক্ষাও চালায়। আইআইএফসি জাহাজ চলাচলকে কার্যকর বলেছে। এরপর প্রতিষ্ঠানটি একটা প্রস্তাবনাও তৈরি করেছিল। সেই প্রস্তাবনা অনুযায়ী জাহাজপথে যাওয়া-আসাসহ হজের পুরো কার্যক্রম সম্পন্ন করতে ২৭ দিন সময় লাগবে। জাহাজে গেলে উড়োজাহাজের চেয়ে এক থেকে দেড় লাখ টাকা খরচ কমবে।
সৌদি হজ ও উমরাবিষয়ক মন্ত্রী ড. তাওফিক ফাউজান আল রাবিয়ার সঙ্গে বৈঠকের পর জাহাজে হজযাত্রীদের পাঠানোর বিষয়ে নিজের ফেসবুকে তুলে ধরেছিলেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। তিনি লেখেন, ‘সৌদি হজ ও উমরাবিষয়ক মন্ত্রী সমুদ্রপথে বাংলাদেশ থেকে হাজি প্রেরণে সৌদি সরকারের কোনো বাঁধা নেই বলে জানিয়েছেন। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে নেবেন। বাংলাদেশকেও জাহাজ কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। পানির জাহাজযোগে ২/৩ হাজার হাজীকে পরীক্ষামূলকভাবে হজব্রত পালনের উদ্দেশে সৌদি আরবে প্রেরণের ব্যাপারে বাংলাদেশ চিন্তাভাবনা করছে।’
এখন নতুন করে আলোচনা শুরুর পর সমুদ্রপথে হজযাত্রী নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মতামত আসে। কেউ কেউ জাহাজে করে হজ করতে যাওয়াকে ইতিবাচক বলেছেন। নানামুখী চ্যালেঞ্জের কথাও তুলে ধরেছেন অনেকে। আশির দশক পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে জাহাজে করে সৌদি আরবে যেতেন হজযাত্রীরা। তখন জাহাজে করে যেতে-আসতে সময় লাগত তিন মাস। দীর্ঘ সময় লাগায় এক পর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায় সেই যাত্রা। তবে এবার সেই সময় অনেকটাই কমে আসছে। সময় কমলেও উড়োজাহাজযাত্রার তুলনায় জাহাজে খরচ কত কমবে- সেটিও আলোচনায় আসছে।
ভাড়া কমবে ৪০ শতাংশ সমুদ্রপথে জাহাজে হজযাত্রীদের পাঠানো গেলে উড়োজাহাজ থেকে ভাড়া ৪০ শতাংশ খরচ কম পড়বে বলে জানিয়েছেন ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন। তিনি সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন , ‘জাহাজে হাজিদের পাঠানো হলে চার্টার শিপ ভাড়া করতে হবে। এটা করতে গেলে আমাদের দুই হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক যদি আমাদের কর্জ দেয়, তাহলে আমরা এটা করতে পারব।’
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুদান নয়, ঋণ নেওয়া হবে উল্লেখ করে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ‘সৌদি সরকার থেকে অনুমোদন পেলে সরকারের অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে আলাপ করে দুই হাজার কোটি টাকা যদি তারা ঋণ দেন, তাহলে হাজিদের নেওয়া হবে। একটা শিপিং কোম্পানি জানিয়েছে, তারা লাভের আশায় নয়, সওয়াবের আশায় এটা করবে। এটা করা হলে উড়োজাহাজের তুলনায় ৪০ শতাংশ ভাড়া কম লাগবে জাহাজে। আমাদের বন্দর কর্তৃপক্ষ ও শিপিং কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।’
কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেডের প্রস্তাবনা অনুযায়ী, তাদের ব্যবস্থাপনায় হজে যেতে খরচ ধরা হয়েছিল ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৯৭ টাকা। অবশ্য সেই প্রস্তাবনা দেওয়ার পর প্রতিজনের হজ প্যাকেজ খরচ ৪ লাখের মধ্যে রাখার পরামর্শ এসেছিল মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।
সর্বশেষ ২০২৪ সালের হজ প্যাকেজে সরকারিভাবে হজে যেতে সাধারণ প্যাকেজের মূল্য ধরা হয়েছিল ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা। আর নতুন করে চালু করা বিশেষ হজ প্যাকেজের মূল্য ধরা হয়েছিল ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা। অন্যদিকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ প্যাকেজে উড়োজাহাজ ভাড়া ১ লাখ ৯৪ হাজার ৮০০ টাকা নির্ধারণ করেছিল হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)। প্রস্তাবনা অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে জাহাজপথে হজে গেলে ১ থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত সাধারণ হজ যাত্রীদের সাশ্রয় হতে পারে, যদিওবা জাহাজে দীর্ঘ ভ্রমণের ক্লান্তি সইতে হবে।
এখন এই বিষয়ে আগেই সমীক্ষা চালানো ও প্রস্তাবনা তৈরি করা কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেডের সঙ্গে অন্তবর্তীকালীন সরকারের আলোচনা হয়েছে কিনা তা অবশ্য জানা যায়নি। কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ রশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জাহাজে হজ করতে সময় লাগবে ২৯ দিন! কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেডের প্রস্তাবনা অনুযায়ী হজের জন্য মোট সময় লাগবে ২৯ দিন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম-জেদ্দা যেতে ৬ দিন, জেদ্দা-চট্টগ্রাম আসতে ৬ দিন এবং হজপালনের জন্য ১৭ দিন সময় লাগবে। যদিওবা হজযাত্রীরা অন্তত ৪০ দিন পর্যন্ত সৌদি আরবে অবস্থান করে বিভিন্ন ধর্মীয় স্থাপনা ঘুরে ঘুরে দেখেন।
কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল হজযাত্রীরা যতদিন জাহাজে থাকবেন তত দিন পর্যন্ত জাহাজ কর্তৃপক্ষ তাদের সবকিছু দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করবে। বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি, চট্টগ্রাম সংলগ্ন কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেডের নিজস্ব জেটি/টার্মিনাল রয়েছে যেখানে হজযাত্রীরা ওঠা-নামা করতে পারবেন। প্রস্তাবিত ক্রুজ শিপে বিশুদ্ধ খাবার পানি হিসেবে সমুদ্রের পানি মিনারেল ওয়াটারে রূপান্তরের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা থাকবে। হাজিদের সৌদি আরবে নিয়ে যাওয়ার জন্য পুরোনো জাহাজ কেনার কথা প্রাথমিকভাবে বলা হলেও, পরে প্রতিষ্ঠানটি জানায় পুরোনো জাহাজ কেনাটা বাস্তবসম্মত হবে না। তার চেয়ে ব্যবহৃত উপযুক্ত জাহাজ বিদেশ থেকে ভাড়া করে এনে হজযাত্রীদের পরিবহনের ব্যবস্থা করল যুক্তিসঙ্গত হবে।
যত চ্যালেঞ্জ সমুদ্রপথে হাজযাত্রী পাঠানোর প্রস্তাবে সৌদি সরকার সম্মতি দেওয়া এই পদক্ষেপকে অনেকদূর এগিয়ে দিলেও রয়েছে বহু চ্যালেঞ্জও। বহু বছর ধরে জাহাজ নিয়ে এই বন্দর থেকে ওই বন্দরে যাওয়া বেশ কয়েকজন নাবিকের সঙ্গে কথা বলে সেই চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে ধারণাও পাওয়া গেছে।
জাহাজপথে স্বাভাবিকভাবে মধ্যবিত্তদের সাড়াই মিলতে পারে বেশি। কিন্তু এক্ষেত্রে দেখা যায় মধ্যবিত্তদের বেশিরভাগই সারাজীবন টাকা জমিয়ে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে হজ করতে যান। প্রবীণদের শরীর এই দীর্ঘ জাহাজ-জার্নির ধকল কতটা সইতে পারে সেটি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
জাহাজে হজযাত্রী পরিবহন করতে হলে সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি সংশোধন করার বিষয়ও আছে। কেননা সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিবছর যে চুক্তি হয়, তাতে উড়োজাহাজের কথা উল্লেখ থাকে, জাহাজের কথা বলা থাকে না। আবার সেই চুক্তি সংশোধন হলেও জলপথে যাওয়া হজযাত্রীদের ইমিগ্রেশন কোথায় হবে, সেটাও আলোচনার বিষয়।
সমুদ্রপথে সময় লাগবে বেশি। এই সময়ে কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে গেলে তার দায়িত্ব কে নেবে, মাঝ সমুদ্রে কীভাবে হবে তার চিকিৎসা সেটাও ভাবনার বিষয়। যাত্রীদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগেরও একটা বিষয় আছে। সেক্ষেত্রে নেটওয়ার্কবিহীন গভীর সমুদ্রে তারা কীভাবে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন সেটি নিয়েও ভাবতে হবে।
মূলত এসব জটিলতা এড়াতে পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশ জাহাজপথে যাত্রা থেকে সরে এসেছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী এখন একমাত্র সুদানের মানুষ ২০১৮ সাল থেকে সমুদ্রপথে হজযাত্রা করছেন।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএমওএ) সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘প্রয়োজনীয় জ্বালানি থাকলে মাঝপথে কোনো বন্দরে না থেমে সরাসরি চট্টগ্রাম থেকে জেদ্দা বন্দরে যাওয়া সম্ভব। তবে জাহাজপথে হজে যাওয়ার মূল উদ্দেশ্যই হলো খরচ কমানো। এটা একটা সময় নিয়মিত হতো। এখন যদি খরচটা একটা বাস্তবসম্মতভাবে কমানো যায় তাহলে এই পদক্ষেপ ভালো হবে, সাড়া পাবে।’
অনেকগুলো চ্যালেঞ্জের কথা মনে করিয়ে দিয়ে সাখাওয়াত হোসেন আরও বলেন, ‘একটা সময় আড়াই থেকে তিন লাখ টাকায় হজ প্যাকেজ ছিল। এখন সেটা অনেকটাই বেড়ে গেছে। সেই খরচটা আগে কমানো দরকার। তারপর উড়োজাহাজে যাওয়ার প্যাকেজের সঙ্গে জাহাজে যাওয়ার প্যাকেজের তুলনা করা যাবে। খরচ তুলনামূলক কমলে চ্যালেঞ্জ থাকলেও যাত্রীদের আগ্রহ বাড়বে।’
'তৌহিদ ও রেসালতের আহ্বানে মানুষকে আকৃষ্ট করে এদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেই চিরায়ত ইসলামী জ্ঞান, মানবতা ও কল্যাণের পথে মানুষকে আলোকিত করতে হবে' বলে আহ্বান জানিয়েছেন ইসলামী চিন্তাবিদ ও শিক্ষাবিদগণ। তাঁরা বলেন, 'সুফি সাধকগণ এদেশের ভাষা, সংস্কৃতি ও মানুষকে আপন করে নিয়ে সমাজের গভীরে ইসলামের বীজ রোপণ করেছিলেন। যার ফলে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ইসলামী দেশের মর্যাদা লাভ করেছে।'
শনিবার (১২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় গাউসুল অলি আলি রজা কানু শাহ র ৫ম তম বংশধর হযরত খাজা শাহ্ নূর দরবেশ মাওলা (রাহ.)-এর পবিত্র ১৩তম উরস শরিফ উপলক্ষে খাজা দরবেশ মাওলা রাহ এর গবেষণামূলক জীবনী গ্রন্থ 'নক্ষত্র রাজির অস্তাচল' (মাওয়াকিয়ুন নজুম)-এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান বক্তারা আরও বলেন, 'ইসলামের আধ্যাত্মিক শক্তি আপামর মানুষের মধ্যে জাগ্রত করার মাধ্যমে তাঁদের সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবনকে পরিশুদ্ধ করার বিকল্প নেই। দুর্নীতি, অন্যায় ও অপরাধ প্রতিরোধের যে নৈতিক শিক্ষা ইসলাম দিয়েছে, তা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে।'
নাসিরাবাদ নুরীয়া বিষু দরবার শরীফের এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দরবারের সাজ্জাদানশীন মওলানা মঈনউদ্দীন নূরী সিদ্দিকী আল কোরাইশী।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বার্তা২৪.কম'র অ্যাসোসিয়েট এডিটর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম সেন্টার ফর রিজিওনাল স্টাডিজ, বাংলাদেশ (সিসিআরএসবিডি)-এর নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর ড. মাহফুজ পারভেজ।
অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড.মুফতি নুর হোসাই, ড. ওসমান মেহেদী ও ড.শেখ সাদী, সুফি গবেষক ড.সেলিম জাহাঙ্গীর, সুফি মেডিটেশন স্কলার খাজা ওসমান ফারুকী, ড.আব্দুল আজিম শাহ, ড.খলিলুর রহমান, প্রফেসর শফিউল গনি চৌধুরী, সুরাইয়া মমতাজ, হাসান মোহাম্মদ কপিল উদ্দীন।
মানবজাতির স্বভাবগত পরিচ্ছন্নতা, মানসিক ভারসাম্য এবং চারিত্রিক পবিত্রতার অন্যতম উপায় হলো বিয়ে। পবিত্র, পরিচ্ছন্ন, সংযত ও সুশৃঙ্খল জীবনের জন্য বিয়ের বিকল্প নেই। ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ে শুধু জৈবিক প্রয়োজন পূরণের মাধ্যম নয়, বরং একটি মহান ইবাদত ও ধর্মীয় অনুশাসন এবং আচারের অন্যতম অংশ। এ জন্য ইসলামে বিয়ের যথেষ্ট গুরুত্ব ও তাৎপর্য রয়েছে।
বিয়ের মাধ্যমে গড়ে ওঠে নারী-পুরুষের শান্তি-সুখের পরিবার। এরপর পরিবারে জন্ম নেয় ভালোবাসার সেতুবন্ধ মানব শিশু। সেই শিশু একসময় পূর্ণ মানবে পরিণত হয়। এভাবেই মানব প্রজন্মের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মানুষ! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী থেকে, পরে তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হতে পারো।’ -সুরা হুজরাত : ১৩
বিয়ে মানসিক প্রশান্তি, স্বাভাবিক ও সুশৃঙ্খল জীবনের অন্যতম মাধ্যম। বিয়ের মাধ্যমে দুটি পরিবারের মধ্যে সখ্য, ভালোবাসা ও দায়িত্ব-কর্তব্যবোধ সৃষ্টি হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর তার নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে যে তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্যে থেকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের সঙ্গিনীদের, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও এবং তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য তাতে অবশ্যই বহু নিদর্শন আছে।’ -সুরা রুম : ২১
আমাদের সমাজে সাধারণত বিয়ের ক্ষেত্রে সৌন্দর্য, সম্পদ ও বংশ মর্যাদা দেখা হয়। এগুলোর কোনোটি টেকসই প্রশান্তি নিশ্চিত করতে পারে না। প্রশান্তির জন্য প্রয়োজন নৈতিকতা, দায়িত্ব সচেতনতা, কর্তব্যবোধ, কল্যাণকামিতা, অল্পে তুষ্টতা, পরকালকে অগ্রাধিকার দেওয়া ইত্যাদি। এসব রয়েছে দ্বিনের মধ্যে। এ জন্য বিয়ের ক্ষেত্রে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ধার্মিকতাকে অগ্রাধিকার দিতে বলেছেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘চারটি গুণ দেখে মেয়েদের বিয়ে করা হয়। তার সম্পদ, বংশ, সৌন্দর্য ও ধার্মিকতা। তোমরা ধার্মিকতাকে প্রাধান্য দাও।’ -সহিহ বোখারি : ৪৮০২
ইসলামের দৃষ্টিতে সর্বোত্তম, কল্যাণকর ও বরকতময় বিয়ে হলো, যা খুব স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সহজসাধ্যভাবে অল্প খরচে অনুষ্ঠিত হয়। জমকালো আয়োজন, জৌলুসপূর্ণ আলোকসজ্জা, গান-বাদ্য এবং খরচের অসুস্থ প্রতিযোগিতা বিয়ের বরকত নষ্ট করে। হজরত উমর ইবনে খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সর্বোত্তম বিয়ে হলো যা সহজসাধ্য হয়।’ -মুসনাদ আহমাদ : ২৪৫২৯
আরেকটি কথা, ইসলাম বিয়ের বয়সের ক্ষেত্রে কোনো সীমারেখা নির্ধারণ করেনি; বরং শারীরিক, আর্থিক ও সামাজিকভাবে সক্ষমতা অর্জনকেই বিয়ের যোগ্যতার মাপকাঠি নির্ধারণ করেছে। অঞ্চলভেদে পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুযায়ী বিয়ের সমীচীন বয়সসীমা নির্ধারণ করা যেতে পারে। তবে বিশেষ অবস্থায় এ বয়সসীমা শিথিলও হতে পারে। যেমন- কোনো ব্যক্তির যৌনসংক্রান্ত অনাচারে লিপ্ত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকলে এবং অন্যান্য সামর্থ্য অর্জিত হলে তার বিয়েতে বাধা দেওয়া ইসলামের দৃষ্টিতে কোনোভাবে সমীচীন নয়।
এভাবে কোনো নারী শারীরিক, মানসিকভাবে পূর্ণতা লাভ করার পর সুযোগ্য পাত্র পাওয়া গেলে তার অভিভাবকদের দ্রুত বিয়ের আয়োজন করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন এমন কোনো ব্যক্তি তোমাদের কাছে বিয়ের প্রস্তাব পেশ করে, যার দ্বিনদারি ও চারিত্রিক দিক তোমাদের মুগ্ধ করে, তখন তোমরা ওই ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে দাও। যদি তোমরা তা না করো তাহলে সমাজে বিরাট ফিতনা-ফ্যাসাদ ও বিপর্যয় দেখা দেবে।’ -জামে তিরমিজি : ১০৮৪