নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজা মোবারক জিয়ারত ও রিয়াজুল জান্নাতে নামাজ আদায় করেছেন মদিনা অঞ্চলে নিযুক্ত নতুন গভর্নর প্রিন্স সালমান বিন সুলতান। এর আগে সেখানে গভর্নর ছিলেন ফয়সাল বিন সালমান আল সৌদ।
২৭ ডিসেম্বর প্রিন্স সালমান দেশটির বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আলে সৌদের কাছে গভর্নর হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। এরপর ১ জানুয়ারি তিনি নিজ দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মদিনায় তাকে স্বাগত জানান বাদশাহর উপদেষ্টা প্রিন্স ফয়সাল, মদিনা অঞ্চলের ডেপুটি আমির প্রিন্স সৌদ বিন খালিদ আল-ফয়সালসহ জ্যেষ্ঠ সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তারা।
বিজ্ঞাপন
মদিনার গভর্নর হিসেবে প্রিন্স সালমান প্রথমবার পবিত্র মসজিদে নববি পরিদর্শন করেন এবং রওজা শরিফে নামাজ পড়েন। এ সময় তাকে স্বাগত জানান মক্কা ও মদিনার পবিত্র দুই মসজিদের ধর্মবিষয়ক প্রধান শায়খ ড. আবদুর রহমান আস-সুদাইস ও মসজিদে নববির ধর্মবিষয়ক উপপ্রধান ড. মুহাম্মদ আল-খুদাইরি। এ সময় মসজিদে নববির ইমাম শায়খ হুজাইফিসহ মক্কা-মদিনার অন্য ইমাম-খতিবরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রিন্স সালমান ১৯৭৬ সালে সৌদি আরবের দাহরান অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন। দেশটির সর্বশেষ সাবেক ক্রাউন প্রিন্স সুলতান বিন আবদুল আজিজ ছিলেন তার পিতা। তিনি কিং আবদুল আজিজ মিলিটারি কলেজ থেকে সামরিক বিজ্ঞান, নিরাপত্তা এবং গোয়েন্দা বিষয়ক বিভিন্ন কোর্সে অংশগ্রহণসহ স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
বিজ্ঞাপন
প্রিন্স সালমান মদিনার গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালনের আগে সৌদি আরবের উপপ্রতিরক্ষামন্ত্রী ও ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সহকারী মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। তা ছাড়া তিনি সৌদি আরবের উচ্চতর পরিষদের সদস্য হিসেবে রয়েছেন।
স্বার্থসিদ্ধির জন্য কোনো কথা কিংবা ঘটনাকে ভিন্ন রূপ দিয়ে অন্যকে সন্তুষ্ট করার প্রয়াসে প্রকাশ করাকে চাটুকারিতা বলে। এর সমার্থক শব্দ তোষামোদি, মোসাহেবি, তৈল মর্দন ইত্যাদি।
আজকাল এমন তোষামোদ ও চাটুকারিতার প্রতিযোগিতা চলছে। যেখানে মানবিকতা, পেশাগত দক্ষতা ও নীতি-আদর্শ তুচ্ছ।
শরিয়তের মূলনীতির মধ্যে থেকে কোনো ব্যক্তির প্রশংসা করা বৈধ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা একাধিক নবীর প্রশংসা করেছেন। ইসলামে ব্যক্তির প্রশংসা বৈধ, তবে তা অবশ্যই সীমা রক্ষা করে করতে হবে। এমনকি নবী-রাসুলের প্রশংসার ক্ষেত্রেও ইসলাম সীমালঙ্ঘন অনুমোদন করে না। নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘তোমরা আমার প্রশংসা করতে গিয়ে বাড়াবাড়ি করো না, যেমন ঈসা ইবনে মারইয়ামের ব্যাপারে খ্রিস্টানরা বাড়াবাড়ি করেছিল। আমি আল্লাহর বান্দা। তাই বলো- আল্লাহর বান্দা ও তার রাসুল।’ -সহিহ বোখারি : ৩৪৪৫
শরিয়ত বৃহত্তর সামাজিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে কখনো কখনো ব্যক্তির প্রশংসা নিষিদ্ধ করেছে; যেমন-
আত্মপ্রশংসা: আত্মপ্রশংসা ইসলামের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘অতএব তোমরা আত্মপ্রশংসা করো না, তিনিই সম্যক জানেন কে আল্লাহভীরু।’ -সুরা নাজম : ৩২
অতিপ্রশংসা: কারো অতিপ্রশংসা করা ইসলামে নিন্দনীয়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর শপথ! আল্লাহ আমাকে যে মর্যাদা দান করেছেন তার চেয়ে উঁচু মর্যাদা আমাকে দান করো সেটা আমি পছন্দ করি না।’ -মুসনাদে আহমাদ : ১২১৪১
পাপিষ্ঠ ব্যক্তির প্রশংসা: যে ব্যক্তি প্রকাশ্য পাপাচারে লিপ্ত, যে মানুষের ওপর অত্যাচার করে, তার প্রশংসা করা নিষিদ্ধ। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা মুনাফিককে ‘আমাদের নেতা’ বলে সম্বোধন করো না। কেননা সে যদি নেতা হয়, তাহলে তোমরা তোমাদের মহামহিম আল্লাহকে ক্রোধান্বিত করলে।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৪৯৭৭
সামনে প্রশংসা করা: কোনো ব্যক্তির সামনে তার প্রশংসা করতে ইসলাম নিরুৎসাহ করেছে। হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) এক ব্যক্তিকে অপর ব্যক্তির প্রশংসা করতে শুনে বলেন, ‘তোমরা তাকে ধ্বংস করে দিলে বা তোমরা লোকটার মেরুদণ্ড ভেঙে ফেললে।’ -সহিহ বোখারি : ২৬৬৩
তোষামোদ ও চাটুকারিতা: কোনো ব্যক্তির ভালো-মন্দ বিবেচনা না করে শুধু তার প্রশংসা করা বা কারো চাটুকারিতায় লিপ্ত হওয়া ইসলামে নিষিদ্ধ। নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘তোমরা পরস্পরের অতিপ্রশংসা (তোষামোদ ও চাটুকারিতা) থেকে বেঁচে থাকো। কেননা তা হত্যাতুল্য।’ -সুনানে ইবনে মাজাহ : ৩৭৪৩
প্রশংসাপ্রত্যাশীদের প্রশংসা: পবিত্র কোরআনে প্রশংসাপ্রত্যাশীদের নিন্দা করা হয়েছে। সুতরাং এমন ব্যক্তিদের প্রশংসা পরিহার করা আবশ্যক। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা নিজেরা যা করেছে তাতে আনন্দ প্রকাশ করে এবং যা নিজেরা করেনি এমন কাজের জন্য প্রশংসিত হতে ভালোবাসে, তারা শাস্তি থেকে মুক্তি পাবে- এমন তুমি কখনো মনে করো না। তাদের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি রয়েছে।’ -সুরা আলে ইমরান : ১৮৮
প্রশংসা যখন বৈধ ইসলাম নির্দেশিত সীমার মধ্যে থেকে একজন মুমিন অপর মুমিনের প্রশংসা করতে পারে; যেমন-
কৃতজ্ঞতা আদায়: ইসলাম অনুগ্রহকারীর কৃতজ্ঞতা আদায়ে উৎসাহিত করেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে মানুষের কৃতজ্ঞতা আদায় করে না, সে (যথাযথভাবে) আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পারে না।’ -মুসনাদে আহমাদ : ২১৩৩১
ভালো কাজে উৎসাহ দেওয়া: ব্যক্তিকে ভালো কাজে উৎসাহিত করা। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছিলেন, ‘আবদুল্লাহ কতই না উত্তম ব্যক্তি, যদি সে তাহাজ্জুদ আদায় করত।’ -সহিহ বোখারি : ১১৫৬
এছাড়া মানুষ যেন তার প্রাপ্য অধিকার, মর্যাদা ও অবস্থান লাভ করে এ জন্য প্রশংসা করা বৈধ।
মসজিদে হারাম ও নববির ধর্ম বিষয়ক বিভাগ নারী উমরাযাত্রীদের কাছে একটি বার্তা পাঠিয়েছে, তারা যেন হারামাইনে (মসজিদে হারাম ও মসজিদে) যতটা সম্ভব ইবাদত-বন্দেগিতে সময় ব্যয় করেন, কোরআন তেলাওয়াত করে উপকৃত হন। মোবাইল ফোনে স্মৃতি রক্ষার নামে ছবি তুলে সময় নষ্ট না করেন।
হারামাইন ইনস্টিটিউশন বিশ্বের নানাপ্রান্ত থেকে আগত নারী যাত্রীদের উদ্দেশ্যে দেওয়া বিশেষ বার্তায় বলেছে, ‘হারামাইনের পবিত্রতার প্রতি বিশেষ যত্ন নিন।’ ‘মসজিদে হারাম এবং মসজিদ নববিতে অবস্থানকালীন সময়গুলো কাজে লাগান এবং পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করুন এবং বেশি বেশি তওয়াফ ও নফল নামাজ পড়ুন।’
মসজিদে হারাম ও নববিতে বিভিন্ন ভাষায় বিশেষ কোরআন শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে, প্রয়োজনে সেখানে সময় দিন, এর মাধ্যমে আপনি ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা সম্পর্কে সঠিকভাবে সচেতন হতে পারবেন।
নারীদের উদ্দেশ্যে দেওয়া বার্তায় আরও বলা হয়েছে, ‘প্রিয় বোনেরা! দয়া করে মনে রাখবেন যে, আপনারা বিশ্বের সবচেয়ে পবিত্র স্থানে আছেন এবং এখানে আপনাদের উপস্থিতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতএব, এই পবিত্র স্থানের পবিত্রতার প্রতি বিশেষ যত্নবান হোন।’
তাওয়াফ এবং সাঈয়ের সময়, বিশেষ করে মসজিদে হারাম থেকে বের হওয়ার সময়, জনাকীর্ণ স্থানে না যাওয়ার বিষয়ে বিশেষ যত্নবান হোন। প্রার্থনায় বেশি সময় ব্যয় করুন।
যদি আপনি ধর্মীয় কোনো বিষয়ে জানতে চান, তাহলে হারামাইনের নির্দেশিকা কেন্দ্রে যোগাযোগ করুন এবং তাদেরকে সমস্যাটি বলুন, যেখানে আপনাকে সঠিকভাবে নির্দেশনা দেওয়া হবে।
নারীদের এমন বার্তা ছাড়াও মসজিদে হারাম কর্তৃপক্ষ বারবার ছবির বিষয়ে সতর্ক করে আসছে। এ সংক্রান্ত প্রচারণায় বলা হয়েছে, ‘মসজিদে হারামে ছবি তোলার সময় আশেপাশের লোকজনের প্রাইভেসির বিষয়ে সর্তক থাকুন। তাদের ছবি তুলবেন না এবং তাদের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবেন না।
উল্লেখ্য, পবিত্র হারামের সব মুহূর্তই মহিমান্বিত। তাই সেখানে অবস্থানের সময় ইবাদত-বন্দেগিতে কাটানো দরকার।
এ লক্ষে মসজিদে হারামের প্রধান ইমাম শায়খ আবদুর রহমান আস সুদাইস কিছুদিন আগে দেওয়া বাণীতে বলেন, দুই পবিত্র স্থানে ছবি তোলা ও ভিডিও করা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে সময় নষ্ট করবেন না। এখানে ইবাদতে বেশি সময় কাটান, সময় ও পবিত্র স্থান দ্বয়ের মূল্যায়ন করুন।
বাংলাদেশের পক্ষে ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন এবং সৌদি আরবের পক্ষে সৌদি আরবের হজ ও উমরা মন্ত্রী তওফিক বিন ফাওজান আল রাবিয়া হজ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ধর্ম উপদেষ্টা বাংলাদেশের সার্বিক হজ ব্যবস্থাপনার অগ্রগতি নিয়ে সৌদি হজ ও উমরা মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেন। এ সময় ধর্ম উপদেষ্টা বাংলাদেশি হজ এজেন্সি প্রতি সর্বনিম্ন হজযাত্রীর কোটা এক হাজার থেকে কমানোর বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য সৌদি হজ ও উমরা মন্ত্রীকে অনুরোধ করেন। কিন্তু সৌদি হজ ও উমরা মন্ত্রী এজেন্সি প্রতি সর্বনিম্ন হজযাত্রীর কোটা এক হাজারই বহাল রেখেছেন।
উল্লেখ্য, গতবছরের অক্টোবরে সৌদি আরবের জেদ্দায় অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ধর্ম উপদেষ্টা সৌদি হজ ও উমরা মন্ত্রীকে এজেন্সি প্রতি ন্যূনতম হজযাত্রীর কোটা দুই হাজার থেকে কমিয়ে ২৫০ জন করার অনুরোধ করেন। তার অনুরোধের প্রেক্ষিতে সৌদি হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় ২০২৫ সালের জন্য বাংলাদেশি এজেন্সি প্রতি হজযাত্রীর ন্যূনতম কোটা দুই হাজার হতে কমিয়ে এক হাজার নির্ধারণ করে। তবে আগামীবছর এই কোটা হবে দুই হাজার জন।
এ চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ধর্ম সচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামানিক, হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মতিউল ইসলাম, সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত দেলোয়ার হোসেন, কনসাল জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ মাইনুল কবির, কাউন্সিলর (হজ) মো. জহিরুল ইসলাম ও উপদেষ্টার একান্ত সচিব ছাদেক আহমদসহ সৌদি হজ ও উমরা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জনপ্রিয় ইসলামি স্কলার ড. মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী বলেছেন, এদেশে চাঁদাবাজি, দখলবাজী, দুর্নীতি ও টেন্ডারবাজি হোক আমরা চাই না। আমরা দেখেছি ক্ষমতার যখন পালা বদল হয় তখন এক সরকার যায়, আরেক সরকার আসে। তখন আমরা দুর্নীতির ফিরিস্থি জানতে পারি তার আগে জানতে পারি না। প্রতিটি দলের ভেতরে আমরা এই বাজে স্বভাবটা দেখেছি। তাই এখন আমাদেরকে শুধরে নেয়ার সময় এসেছে। নতুন ভোরের বাংলাদেশে আমরা যেনো কাদা ছোঁড়াছুড়ি না করি। আমাদের শপথ নেয়ার সময় এসেছে। নিবন্ধিত প্রতিটি দলের শপথ নেয়া উচিত। আমরা আর কোনোদিন চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি করবো না।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) রাতে সিলেট এমসি কলেজ মাঠে আনজুমানে খেদমতে কুরআন সিলেট আয়োজিত তিন দিনব্যাপী তাফসীরুল কুরআন মাহফিলের শেষ দিনে আলোচনায় বয়ান পেশকালে তিনি এসব কথা বলেন।
রাজনৈতিক দলকে উদ্দেশ করে আজহারী বলেন, সম্প্রতি যশোরের একটি মাহফিলের আলোচনার একটি লাইন কেন্দ্র করে আমাদের অনেক রাজনীতিবীদ, বন্ধুরা নিজেদের গায়ে মেখে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। আমি বলেছিলাম এক দল খেয়ে গিয়েছে, আরেক দল খাওয়ার জন্য রেডি হয়ে আছে। এখানে তো কোন দলের নাম নেইনি। আমি জেনারেলি বলেছি। দায়ীদের বৈশিষ্ট্য এটা যার যে মেসেজ নেয়ার এখান থেকে নিয়ে নেয়। কোনো দল এটা নিয়ে কথা বললো না। কিন্তু আপনারা যে এটা নিজেদের গায়ে মাখালেন এটা ঠিক হয়নি।
তিনি আরও বলেন, আনজুমানে খেদমতে কুরআন সিলেট অঞ্চলের জন্য একটি নেয়ামত। এই সংগঠনটির সাথে শহীদ আল্লামা সাঈদীর স্মৃতি জড়িত রয়েছে। সংগঠনটি শুধু দ্বীনের দাওয়াতের কাজ করে না, সামাজিক অঙ্গনে বিশাল ভূমিকা রেখে আসছে।