ইউরোপের দেশ ক্রোয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত ২৫তম আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ৪৩টি দেশের প্রতিযোগীদের সঙ্গে লড়ে ৩য় স্থান অধিকার করেছে বাংলাদেশের শিশু হাফেজ শিহাবুল্লাহ।
ক্রোয়েশিয়ার রাজধানী জাগরেবের ইসলামিক সেন্টারে আয়োজিত এ প্রতিযোগিতায় ৪৩টি দেশের মোট ৭৫ জন প্রতিযোগী অংশ নিয়েছিল।
বিজ্ঞাপন
ক্রোয়েশিয়ার অনুষ্ঠিত কোনো প্রতিযোগিতায় এই প্রথম কোনো বাংলাদেশি অংশ নিয়ে সফলতা অর্জন করল।
কোরআন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে নয় বছর বয়সী কোরআনের এই হাফেজ বুধবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৩টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন।
বৃহস্পতিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় বিকাল ৫টা থেকে প্রতিযোগিতাটি শুরু হয়। শেষ হয় শনিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাতে।
প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ক্রোয়েশিয়ার বিচারমন্ত্রী ও আন্তঃধর্মীয় সংস্থার প্রধান ড্রাজান বসনিকোভিচ এবং জাগরেবের প্রধান মুফতি আজিজ হাসানভিকসহ অন্য সরকারি কর্মকর্তা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
হিফজুল কোরআন বিভাগসহ তিন ক্যাটাগরি ও তেলাওয়াত বিভাগে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
কুমিল্লা জেলার বড়ুরা উপজেলার সন্তান শিহাব। তার বাবার নাম নেয়ামতুল্লাহ মাহবুব। হাফেজ শিহাবুল্লাহ ক্বারী নাজমুল হাসান পরিচালিত যাত্রাবাড়ীস্থ তাহফিজুল কুরআন ওয়াসসুন্নাহ মাদরাসার ছাত্র। ক্রোয়েশিয়ায় হাফেজ শিহাবুল্লাহর সঙ্গে ক্বারী নাজমুল হাসান রয়েছেন।
হাফেজ শিহাবুল্লাহ সাত বছর বয়স থেকে কোরআনে কারিম হেফজ করা শুরু করেন এবং এক বছর বয়সেই তিনি কোরআনের হাফেজ হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন।
ইউরোপ মহাদেশের একটি দেশ ক্রোয়েশিয়া। রাজধানীর নাম জাগরেব। প্রায় হাজারেরও বেশি নানা আকৃতির দ্বীপ রয়েছে ক্রোয়েশিয়ার উপকূলে। সেখানকার অপূর্ব সুন্দর দ্বীপগুলো দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়।
ক্রোয়েশিয়ার আয়তন ৫৬ হাজার ৫৪২ বর্গকিলোমিটার। আয়তনের দিক থেকে বিশ্বে দেশটির অবস্থান ১২৬তম। ২০১৬ সালের তথ্যানুযায়ী, দেশটির মোট জনসংখ্যা ৮০ লাখের মতো।
ক্রোয়েশিয়ার বর্তমান সংবিধান ১৯৯০ সালের ২২ ডিসেম্বর গৃহীত হয়। তখনই সংবিধানে ধর্মীয় স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
ক্রোয়েশিয়ায় খ্রিস্টান জনসংখ্যা সর্বাধিক, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার ৭৬ ভাগ। এছাড়া দেশটিতে ইসলাম ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা ১৩ ভাগ। কোনো ধর্ম পালন করে না এমন মানুষসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষও দেশটিতে বসবাস করেন।
এমন দেশে আন্তর্জাতিকমানের কোরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন নিঃসন্দেহে বিরল ঘটনা। সেটা বাংলাদেশের জন্য আরও স্মরণীয় হাফেজ শিহাবুল্লাহর সাফল্যে।
অনেক মানুষকে দেখা যায় গাড়িতে, দোকানে ও অফিসে মোবাইল কিংবা কম্পিউটারে কোরআন মাজিদের তেলাওয়াত চালু করে অন্য কাজ করতে থাকে।
কোরআন তেলাওয়াত একেবারেই শুনছে না অথবা কাজের কারণে তেলাওয়াতের প্রতি মনোযোগ দিতে পারছে না। আবার একটা কিছু শুনতে শুনতে কাজ করার অভ্যাস, তাই কোরআন তেলাওয়াত ছেড়ে রেখেছে। শোনা উদ্দেশ্য নয়। এ কাজটি ঠিক নয়।
কোরআন তেলাওয়াত শোনা একটি স্বতন্ত্র আমল। কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘যখন কোরআন তেলাওয়াত হয় তখন তোমরা মনোযোগ সহকারে তা শ্রবণ করো এবং চুপ থাকো। যাতে তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করা হয়।’ -সূরা আরাফ : ২০৪
বর্ণিত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, কোরআন মুমিনদের জন্য রহমত। কিন্তু এই রহমত দ্বারা লাভবান হওয়ার জন্য কয়েকটি শর্ত ও প্রক্রিয়া রয়েছে, যা সাধারণ সম্বোধনের মাধ্যমে এভাবে বলা হয়েছে, ‘যখন কোরআন তেলাওয়াত করা হয়, তখন তোমরা সবাই তার প্রতি কান লাগিয়ে চুপচাপ থাকবে।’ অর্থাৎ যখন তা পাঠ করা হয়, তখন শ্রোতা সেদিকে কান লাগিয়ে নিশ্চুপ থাকবে।
কিন্তু কোরআন তেলাওয়াত চালু করে তা না শোনা এবং অন্য কাজে মশগুল থাকা কোরআনে কারিমের এই হুকুমের খেলাফ। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও অন্যের থেকে কোরআন তেলাওয়াত শুনতে পছন্দ করতেন।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেন, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, আমাকে তেলাওয়াত করে শোনাও। বললাম, আপনাকে কোরআন তেলাওয়াত করে শোনাবো, কোরআন তো আপনার ওপরই নাজিল হয়েছে! হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি অন্যের কাছ থেকে তেলাওয়াত শুনতে পছন্দ করি। আমি সূরা নিসা তেলাওয়াত করতে শুরু করলাম। যখন এই আয়াতে পৌছলাম, ‘যখন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী উপস্থিত করবো এবং আপনাকে উপস্থিত করবো তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষীরূপে, তখন কী অবস্থা হবে?’ তখন হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, থামো (হে আব্দুল্লাহ!)। আমি নবীজীর দিকে তাকিয়ে দেখি তার দুগন্ড বেয়ে অশ্রু ঝড়ছে। -সহিহ বোখারি : ৪৫৮২
আল্লাহর কালাম তেলাওয়াত হচ্ছে আর আপনি অন্যদিকে মনোযোগ দেবেন, এমন যেন না হয়। যখন কোরআন তেলাওয়াত শুনবেন, মনোযোগ দিয়ে তেলাওয়াতই শুনবেন। আর কাজ করার সময় যদি কিছু একটা শুনতেই হয়, তাহলে গোনাহের কিছু না শুনে শরিয়তসম্মত গজল সংগীত শোনা যেতে পারে।
চেচেন প্রজাতন্ত্রের গ্র্যান্ড মুফতি সালাহ মাগিভ রাশিয়ান কিছু স্কুলে হিজাব নিষিদ্ধের নিন্দা জানিয়ে এমন সিদ্ধান্তকে অবৈধ বলে অভিহিত করেছেন। গ্র্যান্ড মুফতি বলেন, ‘এই নিষেধাজ্ঞা ব্যক্তি এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার লঙ্ঘন করে।’
সম্প্রতি রাশিয়ার ভ্লাদিমির অঞ্চলের শিক্ষা কর্তৃপক্ষ পাবলিক স্কুলে হিজাব ও নেকাবসহ ধর্মীয় পোশাক নিষিদ্ধ করার আদেশ জারি করেছে।
এমন আদেশের প্রেক্ষিতে মুফতি সালাহ মাগিভ বলেছেন, ‘এই নিষেধাজ্ঞা বিশেষভাবে এবং শুধুমাত্র ইসলামিক পর্দাকে লক্ষ্য করায় আমরা হতবাক। আমরা আশা করি, এটি মুসলমানদের বিরুদ্ধে সমন্বিত পদক্ষেপের ফলাফল নয়।’
চেচেন গ্র্যান্ড মুফতি চেচেন নেতা রমজান কাদিরভের উপদেষ্টা ও বেশ প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব।
সম্প্রতি রাশিয়ার ভ্লাদিমির অঞ্চলের স্থানীয় শিক্ষা কর্তৃপক্ষ স্কুলগুলোতে নতুন ড্রেস কোড ব্যবস্থার অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীদের হিজাব ও নিকাবসহ ধর্মীয় পোশাক পরা নিষিদ্ধ করেছে।
২৮ অক্টোবর প্রকাশিত এক নথিতে আঞ্চলিক শিক্ষা ও যুব নীতি মন্ত্রণালয় এ কথা জানিয়েছে।
বিধিমালায় বলা হয়, শিক্ষার্থীর ধর্মীয় অনুষঙ্গ প্রদর্শনকারী পোশাক এবং এর উপাদানগুলো (হিজাব, নিকাব ইত্যাদিসহ) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুমোদিত নয়। রাশিয়ার সংবিধানের পাশাপাশি ধর্মীয় সংগঠন ও শিক্ষা সম্পর্কিত ফেডারেল আইন অনুসারে এই বিধিমালা করা হয়েছে এবং সুনির্দিষ্টভাবে মুসলিম পোশাককে লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি।
রুশ সংবাদমাধ্যম আরটির খবরে বলা হয়েছে, ইসলাম ধর্মে নারীদের পরিধান করা হিজাব হলো- এক ধরণের স্কার্ফ, যা মাথা ও ঘাড় ঢেকে রাখে। অন্যদিকে নিকাব একটি পর্দা, যা সম্পূর্ণরূপে মুখ ঢেকে রাখে।
ভ্লাদিমির অঞ্চলটি মস্কো থেকে ২০০ কিলোমিটার পূর্বে এবং মূলত জাতিগতভাবে রাশিয়ানরাই জনবহুল। সেখানে ১ শতাংশেরও কম বাসিন্দা মুসলমান।
আরটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি রাশিয়ার আরও কয়েকটি অঞ্চল নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে মুসলমানদের ঐতিহ্যবাহী মুখ ও মাথা ঢেকে রাখার পোশাক নিষিদ্ধ করেছে। এই গ্রীষ্মে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রজাতন্ত্র কারাচায়েভো-চেরকেসিয়া এবং দাগেস্তানে নিকাব পরা নিষিদ্ধ করা হয়। খ্রিস্টান ও ইহুদি সাইটগুলোকে লক্ষ্য করে সন্ত্রাসী হামলায় ২০ জন নিহত হওয়ার পর এটি করা হয়েছিল।
তবে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, মুখ ঢাকার কারণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো নির্দিষ্ট কিছু কাজ সম্পাদনে বাধার মুখে পড়েন। আমি বিশ্বাস করি, যখন এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় যে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থ কিছু প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে, তখন প্রত্যেকেরই এটিকে পূর্ণ সম্মানের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত।
এর আগে আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ ২০১৩ সালে রাশিয়ার স্ট্যাভ্রোপল অঞ্চলে এবং ২০১৫ সালে মর্দোভিয়া প্রজাতন্ত্রের স্কুলে হিজাব নিষিদ্ধ করেছিল, রাশিয়ার সুপ্রিম কোর্ট উভয় সিদ্ধান্তই বহাল রেখেছিল।
নিজে পবিত্র কোরআনের হাফেজ। নাতি-নাতনিদের পরম যত্নে কোরআন মাজিদ শেখানোর একাধিক ছবি বিশ্ববাসী দেখেছে। সুযোগ পেলেই তিনি কোরআন তেলাওয়াত করেন। তুরস্কের বিখ্যাত আয়া সোফিয়ায় ৮৬ বছর পর যেদিন নামাজ শুরু হয়, সেদিনও তিনি ভরাট কণ্ঠে সুরা ইয়াসিনের কিছু অংশ তেলাওয়াত করে শুনিয়েছেন। তিনি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।
প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান তুরস্কে অনুষ্ঠিত নবম আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জনকারী বাংলাদেশের হাফেজ মুয়াজ মাহমুদকে অভূতপূর্ব সম্মান দিয়েছেন। সম্মাননা সনদ ও পুরস্কার হস্তান্তর শেষে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হাফেজ মুয়াজ মাহমুদের হাতে আরবীয় রীতিতে চুমু খেয়ে সম্মান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান।
এছাড়া নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রতিযোগীদের অভিনন্দন জানিয়ে এরদোয়ান লিখেছেন, ‘আন্তর্জাতিক হিফজ ও কোরআন সুন্দর তেলাওয়াত প্রতিযোগিতায় যারা সাফল্য অর্জন করেছেন, সেই সব কারি ও হাফেজদের পাশাপাশি প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া ৯৪ জন প্রতিযোগীকেই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।’
তিনি আরও লেখেন, ‘এই মহৎ কার্যক্রম সফল করতে যারা পরিশ্রম ও অবদান রেখেছেন, সেই সম্মানিত বিচারকমণ্ডলীসহ সবাইকে আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’
এর আগে বুধবার (৩০ অক্টোবর) স্থানীয় সময় বাদ জোহর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের হাত থেকে মুয়াজ মাহমুদ সম্মাননা ক্রেস্ট ও পুরস্কার গ্রহণ করেন। ২০১৬ সালের পর এই প্রথম তুরস্কের আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ প্রথম স্থান লাভ করেছে।
উল্লেখ্য, গত ২৮ মার্চ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধায়নে এ প্রতিযোগিতার বাছাইপর্বে দেশের শতশত মেধাবী হাফেজদের পেছনে ফেলে প্রথম স্থান অর্জন করেন মুয়াজ মাহমুদ। তুরস্কে আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতার জন্য বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি নির্বাচিত হন তিনি। এর আগে আরও বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশের জন্য সুনাম বয়ে এনেছেন।
হাফেজ মুয়াজ ঢাকার মিরপুর-১ এ অবস্থিত মারকাযু ফয়জিল কুরআন আল ইসলামী, ঢাকার কিতাব বিভাগের ছাত্র। তিনি এই মাদ্রাসা থেকে হাফেজ হয়েছেন। এখন কিতাব বিভাগে পড়াশোনা করছেন। শুক্রবার (১ নভেম্বর) ভোর সাড়ে পাঁচটায় মুয়াজ বাংলাদেশে ফিরবেন।
তুরস্কের প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে এই কোরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। ২৯ অক্টোবর ছিল তুরস্কের ১০১তম প্রজাতন্ত্র দিবস।
তুরস্ক মসজিদ ও মুসলিম ঐতিহ্যের দেশ। জনসংখ্যা অনুপাতে সেখানে মসজিদ বেশি। দেশটির মসজিদগুলো অনেকটা এক গম্বুজের। তুরস্কের যেকোনো শহরে গেলে একই আকৃতির মসজিদ চোখে পড়বে। এসব মসজিদ নির্মাণ ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য। বর্তমান কালেও শত শত বছর আগে থেকে চলে আসা তাদের একই আদলের মসজিদ নির্মাণ চালু রাখতে তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
তুরস্কের বড় বড় শহরে এই ধরনের প্রকাণ্ড দৃষ্টিনন্দন মসজিদ মানুষকে আকৃষ্ট করে। ইস্তাম্বুল, আংকারা, কোনিয়া, ইজমির, আদানা, মার্সিন, বুরসা- বড় বড় শহরে এক গম্বুজের দৃষ্টিনন্দন মসজিদ চোখে পড়বে। কয়েক বছর আগে রাজধানী ইস্তাম্বুল থেকে আংকারায় স্থানান্তরিত হলেও ইস্তাম্বুল তার ঐতিহ্য ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। ইস্তাম্বুলের অবস্থান পৃথিবীর একেবারে মধ্যখানে বলা যায়।
বিশ্ব যদি এক দেশ হয়ে যায় তাহলে ইস্তাম্বুল তার রাজধানী হওয়ার দাবি রাখে। ইস্তাম্বুলে অসংখ্য দৃষ্টিনন্দন মসজিদ আছে। এর মধ্যে সুলতান আহমদ মসজিদ তথা ব্লু মসজিদ এবং সুলায়মানি মসজিদ (ইস্তাম্বুলের কেন্দ্রীয় মসজিদ) অন্যতম। এ দুই মসজিদ দেখতে প্রতিদিন শত হাজার পর্যটক ভিড় করে। সুলতান সুলায়মান এই মসজিদ নির্মাণ করেন।
মসজিদের কিবলার দিকে তিনি ও তার পরিবারবর্গের কবর আছে। অন্যদিকে সুলতান আহমদ মসজিদ তথা ব্লু মসজিদ ইস্তাম্বুলের একেবারে প্রাণকেন্দ্রে, যা তোপকাপি জাদুঘর থেকে নিকটতম দূরত্বে। প্রখ্যাত সাহাবি হজরত আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) মাজার কমপ্লেক্স মসজিদ, ইস্তাম্বুল জয়কারী সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদ মাজার মসজিদসহ ইস্তাম্বুলে আরো ১০-১২টি প্রকাণ্ড দৃষ্টিনন্দন মসজিদ আছে।
তুরস্কে মিনারবিহীন মসজিদ চিন্তা করা যায় না। ইস্তাম্বুলের কেন্দ্রীয় তথা সুলায়মানি মসজিদ চার মিনারের। অন্যদিকে সুলতান আহমদ মসজিদ তথা ব্লু মসজিদ ছয় মিনারের। তোপকাপি জাদুঘর মসজিদে রূপান্তরিত আয়া সোফিয়া গির্জা, ব্লু মসজিদ নিয়ে বসফরাস প্রণালির তীরে তিন-চার বর্গ কিলোমিটার এলাকা ইস্তাম্বুলের প্রাণকেন্দ্র। এখানে রাত-দিন হাজার হাজার ভ্রমণকারী ঘুরঘুর করতে থাকে। উন্নত বিশ্বসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অমুসলিম হাজার হাজার পর্যটক ইস্তাম্বুলে ভ্রমণকালে ব্লু মসজিদ ও সুলায়মানি মসজিদ দেখতে আসে। অমুসলিমদের এসব ঐতিহাসিক মসজিদ দেখতে সুযোগ করে দেওয়া হয়। সেই লক্ষ্যে কিবলার বিপরীতে মসজিদে প্রবেশ করে দু-তিন ফুট উচ্চতায় ব্যারিকেড দিয়ে রাখা হয়।
তুরস্কের সঙ্গে আছে বাংলাদেশের ভ্রাতৃপ্রতিম সম্পর্ক। ঢাকা-ইস্তাম্বুল টার্কিশ এয়ারের দৈনিক ফ্লাইট আছে। বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে আছে নানা ব্যবসা-বাণিজ্য। তুরস্কে বাংলাদেশের বহু ছাত্র-ছাত্রী লেখাপড়া করছে। অসংখ্য বাংলাদেশি ভ্রমণের উদ্দেশ্যে তুরস্কে গমন করছে।
তুরস্কে অনুষ্ঠিত ৯ম আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেছেন বাংলাদেশের হাফেজ মুয়াজ মাহমুদ।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) স্থানীয় সময় বাদ জোহর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগানের হাত থেকে মুয়াজ মাহমুদ সম্মাননা ক্রেস্ট ও পুরস্কার গ্রহণ করেন।
২০১৬ সালের পর এই প্রথম তুরস্কের আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ প্রথম স্থান লাভ করেছে।
এর আগে, গত ২৮ মার্চ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধায়নে এ প্রতিযোগিতার বাছাইপর্বে দেশের শতশত মেধাবী হাফেজদের পেছনে ফেলে প্রথম স্থান অর্জন করে তুরস্ক আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতার জন্য বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি নির্বাচিত হন।
এছাড়াও চলতি বছরের ২১ আগস্ট মক্কায় ৪৪তম আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় ১২৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ প্রথমস্থান অর্জন করে। সে সময় হাফেজ মুয়াজ মাহমুদ ১৫ পারা গ্রুপে প্রথম স্থান অর্জন করেন।
হাফেজ মুয়াজ মাহমুদ ২০২৩ সালে ৪৬তম কেন্দ্রীয় বেফাক পরীক্ষায় নাহবেমির জামাতে অংশগ্রহণ করে মেধা তালিকা অর্জন করেছিলেন।
উল্লেখ্য, হাফেজ মুয়াজ ঢাকার মিরপুর-১ এ অবস্থিত মারকাযু ফয়জিল কুরআন আল ইসলামী, ঢাকার কিতাব বিভাগের ছাত্র। তিনি এই মাদরাসা থেকে হাফেজ হয়েছেন। এখন কিতাব বিভাগে পড়াশোনা করছেন।
২০১৪ সালে মারকাযু ফয়জিল কুরআন আল ইসলামী যাত্রা শুরু করে। ইতোমধ্যে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় এই মাদরাসার শিক্ষার্থীরা সফলতার স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছে।
এই মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক গুলশান সোসাইটি জামে মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি মুরতাজা হাসান ফয়েজী মাসুম।