অক্সফোর্ডে ভ্যাকসিন তৈরিতে আরও অগ্রগতি

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

করোনাভাইরাসের সফল ভ্যাকসিন তৈরির পথে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। ভ্যাকসিন তৈরির যে নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে, তার আগেই এটি তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।

দ্রুতই ভ্যাকসিনটি বিশ্বব্যাপী করোনা প্রতিরোধে ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদী বিজ্ঞানীরা। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই তারা জানিয়েছেন, ভ্যাকসিনের জন্য আরও এক বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না।

বিজ্ঞাপন

গত সপ্তাহে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনার ইনস্টিটিউট মানবদেহে করোনাভাইরাসের পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে। বিজ্ঞানীরা তাদের এ পরীক্ষা এক মাসের মধ্যে ব্যাপক আকারে বাড়ানোর পরিকল্পনা করছেন।

সোমবার (২৭ এপ্রিল) নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, বিজ্ঞানীরা মে মাসের শেষ নাগাদ ছয় হাজারেরও বেশি মানুষের ওপর এ ভ্যাকসিন পরীক্ষার পরিকল্পনা করেছেন।

অক্সফোর্ডের দলটি বলছে, ভ্যাকসিনটি যদি কার্যকর হয়, তাহলে সেপ্টেম্বরের মধ্যে এক মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন উত্পাদন করার লক্ষ্য নিয়ে তারা এগোচ্ছে। বিশ্বের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কোনো ভ্যাকসিন সফল হলে সেটি উৎপাদন করে বাজারজাত করতে ১২ থেকে ১৮ মাসের মতো সময় লাগবে। তবে, অক্সফোর্ডের দলটি এর চেয়েও কম সময়ে তা করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেছে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাকসিনোলজির অধ্যাপক সারা গিলবার্ট দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি বলেন, আমরা ৮০ ভাগ সাফল্যের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী। পরীক্ষার ওপর ভিত্তি করে এটুকু বলতে পারি, করোনার ভ্যাকসিন সফলভাবে তৈরি করতে পেরেছি আমরা।

এই আত্মবিশ্বাসের কারণে ইতোমধ্যে ব্রিটেন বেশ বড় আকারের অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে দলটিকে। এমন সময় যদি ভ্যাকসিনটি অকার্যকর হয়, তাহলে এটি আর্থিকভাবে বিশাল এক ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

গত সপ্তাহে ব্রিটেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক বলেন, তাদের সাফল্যের সর্বোত্তম সুযোগ দেওয়ার জন্য তাদের প্রয়োজনীয় সব সংস্থান আমরা দেবো।

গবেষকদের আত্মবিশ্বাস এটা প্রমাণ করে যে, ভ্যাকসিনের জিনগত উপাদানগুলো করোনার বিরুদ্ধে লড়তে সক্ষম এবং ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে এটি নিরাপদ বলে প্রমাণিত হয়েছে। প্রাথমিক পরীক্ষায় বানরের শরীরে এটি প্রয়োগের পর প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।

ভ্যাকসিনটি একটি সাধারণ কোল্ড ভাইরাস থেকে তৈরি করা হয়েছে। যা মানুষের শরীরে ভাইরাসের বিস্তারকে বাধাগ্রস্ত করে এবং করোনাভাইরাসে যুক্ত প্রোটিনের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সক্ষম।

ম্যালেরিয়ার ভ্যাকসিন তৈরির জন্য এ ভাইরাসের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলে আসছে কয়েক বছর ধরে। এরই একটি পরিবর্তিত ভাইরাস অধ্যাপক সারা গিলবার্ট মার্সের (মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) বিরুদ্ধে কাজে লাগাতে ব্যবহার করেন। আর এই ভ্যাকসিনটি মানব দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কয়েকগুণ বাড়িয়ে তুলতে সক্ষম। পরবর্তী ধাপে, বিজ্ঞানীরা এখন যত দ্রুত সম্ভব ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা পরীক্ষা শেষ করতে চাইছেন।

ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য এমন স্থান প্রয়োজন, যেখানে সংক্রমণের হার স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি। বেশি পরীক্ষার জন্য সংক্রমণের সংখ্যাও বেশি হওয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা এখন যুক্তরাজ্যে ভ্যাকসিনের প্রাথমিক পরীক্ষা করছেন। তবে এখানে সংক্রমণের হার কমে গেলে অবশ্যই বিশ্বের অন্য স্থান, যেখানে অতি দ্রুত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে, এমন স্থানে পরীক্ষার প্রয়োজন পড়তে পারে।

ভ্যাকসিন পরীক্ষার নিয়ম অনুযায়ী সুস্থ ও গুরুতর অসুস্থ রোগীকে ভ্যাকসিন পরীক্ষায় অংশ নিতে নিষেধ করা হয়। বিশ্বজুড়ে এখন ১০০টিরও বেশি ভ্যাকসিনের ওপর কাজ চলছে। তবে এর মধ্যে কেবল কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মানবদেহে এর পরীক্ষা শুরু করেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক মডারনা সংস্থা প্রথম মার্চে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করেছিল। তবে বৃহত্তর আকারে মানবদেহে এর পরীক্ষা শুরু হয়নি। চীনা সংস্থা ক্যানসিনো এবং জার্মান বায়োটেক সংস্থা বায়োএনটেক ও মার্কিন ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থা ফাইজার যৌথভাবে ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করছে।