ইতালিতে অবরুদ্ধদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সেবা

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

কোভিড-১৯ এর ভয়াবহ প্রকোপ থেকে বাঁচতে ৯ মার্চ থেকে ইতালিয়ানরা বাড়িতে অবরুদ্ধ। পুরো দেশজুড়ে চলছে লকডাউন। এতে সকলের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব। কিন্তু এর জন্যও রয়েছে সহায়তার ব্যবস্থা।

৩৮ বছর বয়সী সোনিয়া ট্র্যাঙ্কিনা। দুই সন্তান ও এক পোষা কুকুর নিয়ে মিলানে তাদের ছোট্ট অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন। তিনি বলেন, ‘গতকাল পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। আমার ছোট ছেলের বয়স ১৩ বছর। সে সাধারণত নিজের মত একা থাকতে পছন্দ করে। কিন্তু কাল হঠাৎ সে বন্ধুদের সাথে বাইরে খেলতে যেতে চায়। এর আগে সে কখনো এমন বলেনি। আমি ওর কথায় একেবারে ভেঙে পড়েছি’।

বিজ্ঞাপন

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ট্র্যাঙ্কিনা আরো বলেন, ‘আমরা একেবারে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছি। সারাক্ষণ বাড়িতে থাকতে ভীষণ অদ্ভুত লাগছে। করোনাভাইরাস আমাদের জীবন যেন স্থবির করে ফেলেছে’।

ট্র্যাঙ্কিনার মত মুচড়ে পড়া মানুষদের জন্য গত সপ্তাহে ইতালিয়ান সরকার দেশব্যাপী মানসিক সহায়তা প্রোগ্রাম চালু করেছে। লকডাউনে যাদের মানসিক স্বাস্থ্য সেবার প্রয়োজন তাদের জরুরি সেবা দিচ্ছেন স্থানীয় অ্যাসোসিয়েশন এবং ইন্সটিটিউশনের সাথে কাজ করা মনোবিজ্ঞানীরা। রোগীরা ফোনে অথবা অনলাইনের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারবে।

যাদের সাজানো পরিবার এবং ভালো চাকরি আছে তারাও উল্লেখযোগ্য মানসিক এবং সামাজিক পরিবর্তন লক্ষ্য করছেন। দুই সন্তানের বাবা, ৪৪ বছর বয়সী গিওভানি সেরানা বলেন, তারা অনেক বেশি সন্দেহ প্রবণ হয়ে উঠছেন। তার বাবা-মা দুজনই বয়স্ক। কিন্তু তিনি তার ছেলেমেয়েদের তাদের দেখতে যেতে দেবেন কিনা তা বুঝে উঠতে পারছেন না। অথচ দাদা-দাদী ইতালিয়ান সমাজের স্তম্ভের মত।

মিলানের একজন মনোবিজ্ঞানী ক্যামিলা কোয়ারতিসেলি বলেন, বিশেষ করে ৩০ এর ঘরে যাদের বয়স তাদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তার চাহিদা বাড়ছে।

“আমরা একক এবং সমষ্টিগতভাবে তীব্র মানসিক ট্রমার মধ্যে পড়েছি। শুধু যে মহামারির কারণে এমন হয়েছে তা নয়। এর পেছনে পরোক্ষভাবে আরো কারণ রয়েছে যেগুলো কোনভাবেই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। যেমন, চাকরি হারানো, ট্রমা পরবর্তী বিষণ্ণতা এবং সঙ্গরোধের বিষণ্ণতা’।

লকডাউন ইতালি

 

গত কয়েক সপ্তাহে ইতালিতে অন্তত দুজন নারী সন্তানের ছুরিকাঘাতে মারা গেছেন। আরেকজন নারীকে তার স্বামী হাতুড়ি দিয়ে মারতে এলে তাকে উদ্ধার করা হয়েছে। নারীর প্রতি সহিংসতাকে বলা হচ্ছে, ‘বিপদের মধ্যে বিপদ’।

কোয়ারতিসেলি ডয়েচে ভেলেকে আরো বলেন, ইতালিতে এমনিতেই মনোবিজ্ঞানীর সংখ্যা বেশি। তাই শুধু এই সংকটকালেই নয় এর পরেও সুসমন্বয়ের মাধ্যমে প্রত্যেককে সহায়তা করা যাবে।

নিম্ন আয়ের মানুষ এবং যারা ছোট্ট পরিসরে একা থাকেন তারা বেশ খারাপ অবস্থায় আছেন।

দক্ষিণ অপুলিয়া অঞ্চলের একজন মনোবিজ্ঞানী সেরেনা ক্যাম্পোসেও বলেন, যারা নেশাগ্রস্ত তাদের জন্য লকডাউন একটা বড় চ্যালেঞ্জ। ঘরবন্দী জীবন, স্বাধীনভাবে বাইরে যেতে না পারা এবং বৈধ বা অবৈধ জিনিসের অভাব তাদের আরো বড় নেশার দিকে ঠেলে দিতে পারে। মানসিক সহায়তা ছাড়া তাদের বিভিন্ন মানসিক ব্যাধি দেখা দিতে পারে।

যারা করোনা আক্রান্তদের স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন তাদের অবস্থা আরো খারাপ। প্রতিদিন তাদের ভাইরাস আক্রান্তদের সংস্পর্শে যেতে হচ্ছে এবং তাদের মারা যেতে দেখতে হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ইতালিতে ৬৩ জন ডাক্তার করোনাভাইরাসে মারা গেছেন।

একজন ডাক্তার বলেন, ‘আমি আমার নিজের জন্য চিন্তা করছি না। আমার ভয় প্রিয়জনদের নিয়ে। এখন আমার মানসিক সেবার প্রয়োজন কিন্তু তার জন্য সময় নেই’।

ডাক্তাররা প্রতিদিন তাদের সহকর্মীদের মারা যেতে দেখছেন। এটা তাদের বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছে যে এর পরের জন তারাও হতে পারেন। চিকিৎসা সামগ্রীর অপ্রতুলতাও ট্রমার অন্যতম বড় কারণ।

সম্প্রতি এক ৩৪ বছর বয়সী নার্স যে ইতালিয়ান হাসপাতালে কাজ করতেন সেখানেই গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তার মত সকল স্বাস্থ্যসেবীই যুদ্ধের মত ভয়াবহ পরিস্থিতি চাক্ষুস করছেন।