করোনা সংকটে উ.কোরিয়ার পোশাকখাতে অন্যায্য সুযোগ

  • খুররম জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

করোনা সংকটে উ.কোরিয়ার পোশাকখাতে অন্যায্য সুযোগ

করোনা সংকটে উ.কোরিয়ার পোশাকখাতে অন্যায্য সুযোগ

করোনাভাইরাস সংকটে  উ.কোরিয়ার পোশাকখাতে অন্যায্য সুযোগ নিচ্ছে। তার সঙ্গী হয়েছে পার্শ্ববর্তী বড় দেশ চীন। কোভিড-১৯ এর সংক্রমণে বিশ্বের ৩’শ কোটির বেশী মানুষ যেখানে লকডাউনে সেখানে দক্ষিণ কোরিয়া এবং চীনের রেড জোনে বসে উত্তর কোরিয়া দাবি করেছে যে করোনভাইরাসটির একটিও সংক্রমণ তার দেশে ধরা পড়েনি।

দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, যদিও এটি সত্য হওয়ার সম্ভাবনা নেই । মার্কিন গোয়েন্দারা এটি ‘মোটামুটি নিশ্চিত’ করেছে। উত্তর কোরিয়ায় সামরিক নিয়ন্ত্রণের কারণে সঠিক তথ্য চেপে যাওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে করোনা সংকটে আক্রান্ত চীনের বেশ কিছু বন্ধ কারখানার কাজ হাতিয়ে নিয়েছে উত্তর কোরিয়া।

বিজ্ঞাপন

ইতিমধ্যে উত্তর কোরিয়ায় তৈরি পোশাক 'মেড ইন চায়না' লেবেল লাগিয়ে স্থানীয় ও অন্যদেশে পাঠানো হচ্ছে।

সীমান্তবর্তী শহর ডংডং চীনা পোশাক প্রস্তুতকারীদের একটি কেন্দ্র। সেখান থেকে উত্তর কোরিয়ার সিনুইজু শহরে গোপনে  ইলু নদী পেরিয়ে অবৈধভাবে টেক্সটাইল পাঠানো হয় এবং তারপরে তা সেখানকার কারখানায় সেলাই হয়ে ‘মেড ইন চায়না’ লেবেলে ফিরে আসে।

এভাবে উৎপাদনকারীরা উৎপাদন ব্যয় ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত বাঁচাতে পারে কারণ উত্তর কোরিয়ার কারখানাগুলো রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এবং মজুরি চীনের চেয়ে এক চতুর্থাংশেরও কম ।

অন্যদিকে উত্তর কোরিয়ার শ্রমিকদের খাটানো হয় বেশী সময় ধরে। এরফলে তাদের বেশী উৎপাদনশীল বলেও মনে করা হয়। তারা প্রতিদিন একজন চীনা শ্রমিকের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি পোশাক তৈরি করে। এটি দীর্ঘ কর্মঘণ্টা, কঠোর কাজের পরিস্থিতি এবং বাধ্যতামূলক শ্রমের কারণে  বেশি পোশাক তেরি হয়।

সীমান্তের উভয় পাশে কর্মরত এক কোরিয়ান-চীনা ব্যবসায়ী বলেন, উত্তর কোরিয়ায় কারখানার শ্রমিকরা ইচ্ছা করলেই টয়লেটে যেতে পারেন না। কারণ কারখানার কর্মকর্তারা মনে করেন এটি  ধারাবাহিক প্রোডাকশন লাইনের গতি কমিয়ে দেয়। আমাদের মতো অনেক ব্যবসায়ী চীনা কারখানার কর্মীরা যারা কেবল বেশী অর্থের জন্য কাজ করেন তাদের পছন্দ করি না।

অন্যদিকে উত্তর কোরিয়ার কর্মী আলাদা মনোভাব রয়েছে, তারা বিশ্বাস করেন যে, তারা তাদের দেশের জন্য, তাদের নেতার পক্ষে কাজ করছেন।

সীমান্তবর্তী শহর ডংডং সূত্রগুলো বলছে, এসব পোশাক এজেন্টরা চীনা পোশাক প্রস্তুতকারক, উত্তর কোরিয়ার পণ্য তৈরি করে এবং যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডা এবং রাশিয়ার ক্রেতাদের যতটা সম্ভব সস্তায় বিক্রি করে।

কঠোর নিষেধাজ্ঞার পরেও, উত্তর কোরিয়ার টেক্সটাইল শিল্পের মূল্যমান ২০১৬ সালে ৭২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল যা দেশটির অর্থনীতির যথেষ্ট পরিমাণের প্রতিনিধিত্ব করে। করোনা সংকটের কারণে এটি আরো বেড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, উত্তর কোরিয়া সরকার তার অর্থনীতি সচল রাখতে সাধারণ নাগরিকদের জোরপূর্বক শ্রম দিতে বাধ্য করে।

এখন যেহেতু চীন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার বেশিরভাগ শ্রমিক সঙ্গরোধে রয়েছেন, উত্তর কোরিয়া কারখানার মালিকরা এ সুযোগ কাজে লাগাতে  চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

পিয়ংইয়াং বলছে উত্তর কোরিয়া ভাইরাস-মুক্ত আছে। উত্তর কোরিয়ার বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন থাকায় কোভিড -১৯ এর ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে সাহায্য করেছে। তারা কোনও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের অনুমতি দেয়নি। ভাইরাসটির সুরক্ষিত কোরিয়ান সীমান্ত পেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

তবে চীনের সাথে সীমানা দীর্ঘ এবং ক্রটিযুক্ত। যদি ভাইরাসটি সেদেশে প্রবেশ করে, তবে উত্তর কোরিয়া তার প্রতিবেশীদের যে কোনও দেশের চেয়ে আরও বড় মানবিক সঙ্কটের সম্মুখীন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে কারণ নিষিদ্ধ এ দেশটির চীন বা দক্ষিণ কোরিয়ার মতো সামর্থ নেই। কিন্তু এ ঝুঁকি নিয়ে চিন্তার চেয়ে অবৈধভাবে টি-শার্ট তৈরি করার দিকে নজর বেশী দেশটির।