১৫০০ তালেবান বন্দীকে মুক্তি দেওয়ার এক আদেশে স্বাক্ষর করেছেন আফগানিস্তানের রাষ্ট্রপতি আশরাফ গনি। দেশটিতে ১৮ বছর ধরে চলা যুদ্ধ শেষ করতে সশস্ত্র গ্রুপগুলো সঙ্গে সরাসরি আলোচনা শুরুর পদক্ষেপ হিসাবে বন্দীদের মুক্তি দিতে যাচ্ছে আফগান সরকার।
মঙ্গলবার (১০ মার্চ) গভীর রাতে দুই পৃষ্ঠার আদেশের অনুলিপিটি হাতে পেয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। তালেবান বন্দীদের যুদ্ধের ময়দানে ফিরে না যাওয়ার লিখিত গ্যারান্টি দিলেই কেবল মুক্তি দেওয়া হবে বলে সেই আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।
আফগান রাষ্ট্রপতির মুখপাত্র সিদ্দিক সিদ্দিকী টুইটারে পোস্ট করেছেন— “রাষ্ট্রপতি গনি তালেবান ও আফগান সরকারের মধ্যে আলোচনা শুরু করার জন্য একটি গৃহীত কাঠামো মেনে তালেবান বন্দীদের মুক্তি দিতে ডিক্রিতে স্বাক্ষর করেছেন।”
কীভাবে তালিবান বন্দীদের সুশৃঙ্খলভাবে মুক্তি দেওয়া হবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত পরে জানানো হবে। তবে চারদিনের মধ্যে বন্দীদের মুক্তি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে ডিক্রিতে বলা হয়েছে।
মার্কিন-তালেবান চুক্তির অংশ
তালেবান বন্দীদের মুক্তির এই প্রক্রিয়া গত মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানদের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিরই একটি অংশ। ওই চুক্তিতে আফগানিস্তানের মাটিতে ১৮ বছর ধরে চলা যুদ্ধের অবসান করে মার্কিন বাহিনী এবং ন্যাটো সেনাদের সরিয়ে নেওয়ার শর্ত রয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার তালেবান মুখপাত্র সুহেল শাহীন একটি টুইট বার্তায় জানা তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ৫,০০০ বন্দীর একটি তালিকা হস্তান্তর করেছেন এবং তাদের সবার মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছেন।
মঙ্গলবার দলটির রাজনৈতিক সদর দোহার এক তালেবান নেতা জানিয়েছেন, রাজধানী কাবুলের উত্তরে বাগরাম কারাগারের নিকটবর্তী এলাকায় যানবাহন পাঠানো হয়েছিল মুক্ত যোদ্ধাদের নিয়ে আসতে।
রয়টার্সকে তিনি বলেন, সোমবার জালমায় খলিলজাদ (আফগানিস্তান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত) ৫,০০০ বন্দীকে মুক্তি দেওয়ার কথা বলেছিলেন, তাদের আনতে আমরা গাড়ি পাঠিয়েছিলাম।
তালেবানরা আফগান সরকারের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা সূচনার পথ প্রশস্ত করার জন্য বন্দীদের মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছিল।
আফগান রাষ্ট্রপতি আশরাফ গনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানদের মধ্যে বন্দী বিনিময় চুক্তিতে বিষয়ে শুরুতে অসম্মত ছিলেন। পরে অবশ্য শান্তি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তালেবান বন্দীদের মুক্তি দিতে তার আপত্তি নেই বলে জানান আফগান রাষ্ট্রপতি।
গনি ও তালেবানদের মধ্যে উত্তেজনার পাশাপাশি গনি ও তার সাবেক প্রধান নির্বাহী আবদুল্লাহ আবদুল্লাহর মধ্যে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক কোন্দল দেশটিতে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
গত সোমবার (৯ মার্চ) দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন আশরাফ গনি। তবে তার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান একটি রকেট হামলায় বাতিল হয়ে যায়।
গত মাসে প্রকাশিত নির্বাচনের ফল মেনে নিতে ও আশরাফ গনিকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি দাবি করেন আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ।
মাত্র চার মিনিটের ব্যবধানে ইসরায়েলে ৭০টি রকেট হামলা চালিয়েছে লেবাননের প্রতিরোধ সংগঠন হিজবুল্লাহ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স এ দেওয়া এক পোস্টে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, রোববার (২০ অক্টোবর) সকাল ১১টা ৯ মিনিট থেকে ১১টা ১২ মিনিটের মধ্যে লেবানন থেকে এ হামলা চালানো হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি আটকে দেয় সামরিক বাহিনী। বাকি রকেটগুলো বিভিন্ন জায়গায় আঘাত হেনেছে।
এতে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং কেউ হতাহত হয়েছে কিনা তা জানায়নি আইডিএফ। হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকেও এই হামলার ব্যাপারে জানানো হয়নি কিছুই।
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডলইস্ট আই বলছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে হামলার বেশ কয়েকটি ভিডিও। এতে দেখা যায়, এক ঝাঁক রকেট আসছে ইসরায়েলের আকাশে। এসব রকেট এসে বিভিন্ন জায়গায় পড়ে। আগুন নেভাতে আসতে দেখা যায় দমকল বাহিনীকে।
এদিকে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বাসভবনে হিজবুল্লাহর ড্রোন হামলার পর প্রতিশোধ নিতে লেবাননের বৈরুতে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। বার্তা সংস্থা এএফপি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, স্থানীয় সময় শনিবার বৈরুতে ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠি হিজবুল্লাহর অস্ত্রাগারে হামলা চালানো হয়েছে। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনের গাজায় হামাস সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করেও হামলা চালানো হয়েছে। এতে তিনজন কমান্ডার নিহতের দাবিও করা হয়।
ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন দখলদার ইসরায়েলের ৪০১তম সাঁজোয়া ব্রিগেডের কমান্ডার কর্নেল ইহসান দাকসা।
রোববার (২০ অক্টোবর) গাজার উত্তরাঞ্চলে তিনি নিহত হন বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এছাড়া একই হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন আরেক সেনা কর্মকর্তা।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, কর্নেল ইহসান দাকসা ট্যাংক নিয়ে গাজার উত্তরাঞ্চলের জাবালিয়ায় ছিলেন। তিনি যে ট্যাংকে অবস্থান করছিলেন সেটিসহ মোট দুটি ট্যাংকে বিস্ফোরক দিয়ে হামলা চালান হামাসের যোদ্ধারা।
সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, গাজায় স্থল হামলা চালাতে গিয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর যত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা প্রাণ হারিয়েছেন তার মধ্যে কর্নেল ইহসান অন্যতম।
৪১ বছর বয়সী ইহসান দাকসা দ্রুজ শহর দলিয়াত আল-কার্মেলের বাসিন্দা ছিলেন। গত জুনে তিনি এই ব্রিগেডের কমান্ডারের দায়িত্ব নেন। ২০০৬ সালের আয়তা আস-সাব যুদ্ধে অবদান রাখায় তাকে সম্মানিত করা হয়।
গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাস ও দখলদার ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। এক বছরের বেশি সময় ধরে চালানো এই বর্বরতায় এখন পর্যন্ত ৪৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। দিন দিন এ সংখ্যা বেড়েই চলছে।
ইসরায়েল হামলা চালালে ইরান পাল্টা হামলা চালাবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। এরই মধ্যে ইসরায়েলের সামরিক সব স্থাপনা শনাক্ত করা হয়েছে। তেল আবিব হামলা করলেই এসব লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাবে তেহরান।
শনিবার তুর্কি টিভি চ্যানেল এনটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি এ হুঁশিয়ারির কথা বলেন। রোববার (২০ অক্টোবর) ইরানের সংবাদ সংস্থা ইরনার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
আব্বাস আরাগচিকে উদ্ধৃতি দিয়ে ইরনা জানায়, "আমরা ইসরায়েলের সব সামরিক লক্ষ্যবস্তুকে চিহ্নিত করেছি। ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েল যেকোন পদক্ষেপ নিলে তেহরান তা দ্বিগুণ রূপে প্রতিক্রিয়া জানাবে।"
- ইরানে ইসরায়েলের হামলার পরিকল্পনার মার্কিন নথি ফাঁস
- ইসরায়েলি হামলায় হাশেম সাফিয়েদ্দিন নিহত
- লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় হিজবুল্লাহর ৩ কমান্ডার নিহত
- নেতানিয়াহুর বাসভবনে হিজবুল্লাহর ড্রোন হামলা
- ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃত্যুর প্রতিক্রিয়া জানাল ইরান
- ইসরায়েলের হামলায় হামাসের সিনিয়র কমান্ডার নিহত
ইরানের ওপর ইসরায়েলি হামলাকে ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের জন্য লাল রেখা হিসেবে বিবেচনা করা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ইরানের বিরুদ্ধে যেকোনও আক্রমণের অর্থ একটি লাল রেখা অতিক্রম করা। আমরা এ ধরনের হামলার জবাবে ছাড় দিবো না। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যেকোনো হামলা বা অনুরূপ কোনো আক্রমণের প্রয়োজনীয় জবাব দেওয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন, ইরান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ইসরায়েলের মিত্র হিসেবে বিবেচনা করে। কারণ ইসরায়েল গাজা এবং লেবাননে আমেরিকার সরবরাহকৃত অস্ত্র ব্যবহার করে তাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে।
"মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধের সঙ্গে জড়িত। যদি এই অঞ্চলে বড় আকারের যুদ্ধ হয়, তবে তাদেরকেও এতে টেনে আনা হবে এবং আমরা এটি মোটেই চাই না"- বলেছেন আরাগচি।
উল্লেখ্য, গত ১ অক্টোবর ইসরায়েলের সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায় ইরান। এরপর তেহরানেও পাল্টা হামলার হুমকি দেয় ইসরায়েল। তাদের এ হুমকির প্রেক্ষিতেই হুঁশিয়ারি দিয়েছে তেহরান।
প্রসঙ্গত, জুলাইয়ের শেষের দিকে তেহরানে হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়াহকে হত্যা, সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে হিজবুল্লাহ নেতা সাইয়েদ হাসান নাসরুল্লাহ এবং ইরানের সামরিক কমান্ডার আব্বাস নীলফরৌশানকে হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে ইরান এই অভিযান পরিচালনা করে।
ইরান বলছে, তারা ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃঢ় প্রতিক্রিয়ার অভাবে এই অভিযান চালাচ্ছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনেস্কি ১২ অক্টোবর ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর কাছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ‘বিজয়ের পরিকল্পনা’ পেশ করেন। জার্মানির রামস্টেইনে মার্কিন এয়ার ফোর্সের ঘাঁটিতে অনুষ্ঠিত ন্যাটোর নিয়মিত বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও এসময় উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে জেলেনেস্কি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছেও তার ‘বিজয় পরিকল্পনা’ পেশ করেছিলেন।
এরপর হোয়াইট হাউস জেলেনেস্কির পরিকল্পনার বিষয়ে মন্তব্য করেছিল, জেলেনেস্কির পরিকল্পনায় এগিয়ে যাওয়ার ইতিবাচক পদক্ষেপ রয়েছে।
জেলেনেস্কি যে সময় পাশ্চাত্যের বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর কাছে ‘বিজয় পরিকল্পনা’ তুলে ধরছেন, তখন রাশিয়া ধীরে ধীরে ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলে অগ্রসরমান। ইউক্রেনের সৈন্যদের নিজ দেশের অঞ্চল পুনরুদ্ধারে তীব্র লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছিল।
জানা যায়, জেলেনেস্কি মোট ৫টি পয়েন্টে তার বিজয় পরিকল্পনা ১২ অক্টোবর পাশ্চাত্যের দেশগুলোর কাছে তুলে ধরেন। এর মধ্যে তিনটি পয়েন্ট ছিল অতি গোপনীয়।
তবে পাশ্চাত্যের দেশগুলো জেলেনেস্কির পরিকল্পনায় উদ্বেগও প্রকাশ করেছে বলে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) এক প্রতিবেদনে জানায়।
কারণ হিসেবে যা বলা হয়, তা হচ্ছে, ২০২৩ সালের সামার থেকে ইউক্রেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে।
জেলেনেস্কির পরিকল্পনায় গুরুত্ব দিয়েছিলেন, ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে আরো শক্তিশালী করতে। তিনি চেয়েছিলেন, ইউক্রেনের সেনাবাহিনী পাশ্চাত্যের উন্নত অস্ত্র দিয়ে রাশিয়াকে পরাজিত করে চাপে রাখতে পারবে। এতে করে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে শান্তি আলোচনার জন্য বাধ্য করতে পারবে ইউক্রেন।
সে কারণে জেলেনেস্কি পাশ্চাত্যের কাছে বেশি দূরত্বে হামলা করতে সক্ষম এমন ক্ষেপণাস্ত্র চেয়েছিলেন, যাতে করে রাশিয়ার অত্যন্ত ভেতরে হামলা করতে সক্ষম।
এছাড়াও তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এফ-১৬ জেট ও পেট্রিয়ট এয়ার ডিফেন্স পেতে পাশ্চাত্যের দেশগুলোর কাছ থেকে সহযোগিতা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ন্যাটোভুক্ত পাশ্চাত্যের দেশগুলো মনে করছে, জেলেনেস্কির এ ধরনের অস্ত্রের সরবরাহ করা অবাস্তব।
যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান অবস্থান
জেলেনেস্কির এ প্রত্যাশার বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বরং কৌশলগত অবস্থান নিয়েছেন। তিনি সরাসরি জেলেনেস্কিকে পেট্রিয়ট ও এফ-১৬ জেট দিতে যেমন অস্বীকার করেননি, তেমনি এখনি তা সরবরাহ করবেন, এমন কথাও বলেননি।
বরং জো বাইডেন জেলেনেস্কিকে যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেছেন এবং সেইসঙ্গে তিনি এটাও বলেছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত পরবর্তী প্রেসিডেন্ট এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
আগামী ৫ নভেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
ফলে ভোলোদিমির যেমনটা চিন্তা করে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর কাছে তার রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয়ের পরিকল্পনা পেশ করেছিলেন, তা একেবারে থমকে গেলই বলে মনে হচ্ছে।
এই থমকে যাওয়াটা ইউক্রেনের জন্য বড় একটি হোঁচটও বলা চলে। কারণ, ইতোমধ্যে ইউক্রেনের কৌশলগত অনেক অঞ্চল রাশিয়া দখল করে নিয়েছে।
এছাড়া তারা ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো মনে করছে, ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ও এফ-১৬ জেট দিলে সে অঞ্চলে যুদ্ধের আরো বিস্তৃতি ঘটতে পারে। এতে করে পারমাণবিক শক্তিধর দেশ রাশিয়ার সঙ্গে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল।
শুধু তাইই নয়, রাশিয়ার একেবারে নাকের ডগায় ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত করে নিলে রাশিয়া সেটিকে মেনে তো নেবেই না, সেইসঙ্গে রাশিয়া আরো যুদ্ধংদেহী হয়ে উঠবে। এর আগে রাশিয়া পারমাণবিক যুদ্ধের হুঁশিয়ারিও দিয়েছিল পাশ্চাত্যের দেশগুলির প্রতি।
বিশ্লেষকদের বক্তব্য
এদিকে, বিভিন্ন বিশ্লেষকদের বক্তব্যে জানা যায়, জেলেনেস্কির রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ের পরিকল্পনা নিয়ে বাইডেন প্রশাসন এখনি কিছু করতে চাইছে না। বিষয়টিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পরবর্তী সময়ের রেখে দিতে চেয়েছেন, কোনো ধরনের ঝুঁকি না নিয়ে।
এমনকি মার্কিনি ভোটারদের মুখোমুখিও হতে চাইছে না এ বিষয়টিকে নিয়ে। সে কারণে চলতি বছরের ৫ নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে বিজয়ী পরবর্তী প্রেসিডেন্টের ওপর ছেড়ে দেওয়ার কৌশল নিয়েছেন জো বাইডেন।
এ বিষয়ে স্কটল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব সেন্ট অ্যান্ডুজ-এর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের অধ্যাপক ফিলিপস ও’ব্রিয়েন বলেন, ‘তারা (মার্কিন প্রশাসন এবং ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো) এখনি জেলেনেস্কির প্রত্যাশা পূরণে তেমন কিছু করার আগ্রহ দেখায়নি। বরং তারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পরবর্তী প্রশাসনের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। কারণ এটাতে কৌশলগত ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। এ কৌশল ডেমোক্র্যাটদের জন্য ওয়াশিংটনে ‘টিকে থাকা না থাকার মতো’ অবস্থায় দাঁড় করাতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই নির্দেশনা ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর জন্য উপযুক্ত বলেই মনে হয়েছে। কারণ, হিসেবে তারা বলছেন, ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ও এফ-১৬ জেট সরবরাহ করা মানে পারমাণিক শক্তিধর রাশিয়ার সঙ্গে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার মতোই অনেক বেশি ঝুঁকি নেওয়া।
সেইসঙ্গে তারা আরো বলছেন, পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কী ধরনের পদক্ষেপ নেবেন, সে বিষয়টি এখনো অজানা।
ফিলিপস ও’ব্রিয়েন বলেন, ইউরোপীয়ান কাউন্সিল থেকে ফিরে জেলেনেস্কি মন্তব্য করেছেন, হোয়াইট হাউসের প্রতিক্রিয়ার জন্য তিনি অপেক্ষা করছেন।
সাবেক ব্রিটিশ ট্যাংক কমান্ডার ও কৌশলগত পরামর্শক ফার্ম সিবিলাইনের প্রধান জাস্টিন ক্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি, জনগণ (ইউক্রেন) যুদ্ধ জয়ের আরো বিস্তারিত কার্যকর পরিকল্পনা চায়’।
তিনি বলেন, ‘এটাই হচ্ছে, জনগণের মতামত। তারা এমন একটি বিস্তারিত ও আরো কার্যকরী পরিকল্পনা চায়, যা দিয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে জয়লাভ করা যায়।’
ভোলোদিমির জেলেনেস্কির রাশিয়ার বিপক্ষে যুদ্ধ জয়ের পরিকল্পনার বিষয়ে খোদ ইউক্রেনের বিশ্লেষকদেরই সমালোচনা রয়েছে। তারা জেলেনেস্কির যুদ্ধ জয়ের পরিকল্পনাকে ‘মার্কেটিং প্রসেস’ (বিপণন কৌশল) হিসেবে বিবেচনা করছেন।
এ প্রসঙ্গে ইউক্রেনের থিংকট্যাংক ‘কাম ব্যাক অ্যালাইভ সেন্টার অব ইনিশিয়েটিভস’-এর ব্লিশেষক হলিব ভোলোস্কি বলেন, ‘এই ধরনের যুদ্ধ জয়ের জন্য নিজের সে শক্তি থাকা দরকার, যা দিয়ে শত্রুপক্ষকে বিধ্বস্ত করে দেওয়া যায়। সেই দিকটি থাকলে যুদ্ধের শেষপর্যন্ত টিকে থেকে জয়লাভ করা যায়। সেটি আসলে ইউক্রেনের নেই। যা আছে, তা অন্যের শক্তির ওপর নির্ভরতা’!
এদিকে, যখন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনেস্কি তার রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয়ের পরিকল্পনা নিয়ে ব্যস্ত, তখন ১ অক্টোবর ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় খনিসমৃদ্ধ পাহাড়ি শহর ভুহলেদার দখল করে নিয়ে নেয় রাশিয়ার সেনাবাহিনী।
এ শহর ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে যোগাযোগের হাব হিসেবে কাজ করে। এ শহর থেকেই ইউক্রেনের সেনাবাহিনী রাশিয়ার ওপর হামলার রসদ সরবরাহ করতো।
এর আগে সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি রাশিয়ার সেনাবাহিনী ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের ফ্রন্ট লাইনের দক্ষিণ দিকের কৌশলগত শহর পোক্রোভস্ক শহর দখল করে নেয়। এই শহর পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগের হাব হিসেবে পরিচিত।
সে সময় ইউক্রেনের সেনাবাহিনী জানায়, পোক্রোভস্ক ঘিরে ফেলা মানে একটি বড় অঞ্চলকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেওয়া। এই অঞ্চলের ভেতরেই রয়েছে নেভেলেস্কি, হিরনিক এবং ক্রাসনোহোরোইভকা শহর।
এর আগের সপ্তাহে রাশিয়ার সেনাবাহিনী এই শহরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে এবং ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর ওপর হামলা আরো জোরদার করে।
এ ছাড়া এই শহর ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় তারা চলাচল করতো। ফলে, শহর পতনের পর ইউক্রেন এক ধরনের চাপ অনুভব করছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে জয়লাভ করে যুদ্ধ শেষ করতে।