করোনা ঠেকাতে ১০ সতর্কবার্তা

  করোনা ভাইরাস
  • নুসরাত জাবীন বিভা, আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

গত ডিসেম্বরে চীনে করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। এখন ভাইরাসটি আন্তর্জাতিক হুমকি হয়ে উঠেছে।

নতুন এই করোনাভাইরাস অফিশিয়ালি কোভিড-১৯ নামে পরিচিত। এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে ৯৩০৯০ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এবং ৩ হাজার ২৮৫ জন মারা গেছে। যদিও অধিকাংশ মানুষ চীনে মারা গেছে তবে গত দুই সপ্তাহে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রে এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে। সম্প্রতি আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকা থেকেও আক্রান্তের খবর এসেছে।  

বিজ্ঞাপন

মরণব্যাধি করোনার বিরুদ্ধে এশিয়ার জনবহুল দেশগুলো কীভাবে মোকাবিলা করছে সে সম্পর্কিত ১০ তথ্য তুলে ধরেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সিএনএন। মহামারি মোকাবিলায় পূর্বসতর্কতা স্বরূপ এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।  

জনগণের সঙ্গে স্বচ্ছতা

সরকারের জবাবদিহিতা এবং জনগণকে সঠিক তথ্য জানানোর ব্যাপারে স্বচ্ছতা থাকতে হবে। অর্থাৎ জনগণকে রোগের ঝুঁকি সম্পর্কে আগে থেকে জানালে রোগ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করে। এতে ভুল তথ্যের ফলে আতঙ্ক সৃষ্টিও এড়ানো যায়।

জাপানের স্থানীয় গণমাধ্যমের মতে, ব্যাপক স্বাস্থ্য সচেতনতা সৃষ্টির কারণে জাপানে এ রোগ আক্রান্তের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমছে।

জনগণ এবং অভ্যন্তরীণভাবে সরকারকে কঠিন সত্যগুলো জানালে ভুল পদক্ষেপ নেওয়া এড়ানো যায়। যেমনটা সংক্রমণের প্রথম কয়েক সপ্তাহে চীনে করা হয়েছিল।

সামাজিক দূরত্ব তৈরি

শারীরিক সংস্পর্শ থেকে করোনা ছড়ায়। এক্ষেত্রে সরকার বা জনগণকে  অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যে পদক্ষেপটি নিতে হবে সেটি হলো সামাজিক দূরত্ব তৈরি করা। 

সামাজিক দূরত্ব বলতে যা শোনায় তাই। নিজের এবং অন্যের মধ্যে দূরত্ব রাখা এবং যেখানে গেলে অনেক লোকের সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনা রয়েছে সেরকম পরিস্থিতি এড়িয়ে চলা।

যেমন এশিয়ার অনেক দেশে স্কুল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। চীনে লুনার নববর্ষ উৎসব উদযাপন করার মতো গণজমায়েত বাতিল করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মানুষকে বাড়ি থেকে কাজ করতে বলা হয়েছে।  

আগে থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ

বড় পরিসরে সংক্রমণ ছড়ানোর আগেই প্রশাসনকে প্রাদুর্ভাবের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।

জানুয়ারিতে এশিয়ায় দ্রুত এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি স্পষ্ট হতেই বিভিন্ন দেশ প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। এজন্য তারা কোয়ারেন্টাইন সেন্টার বানায়, আগাম অতিরিক্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম আমদানিসহ আন্তবিভাগীয় সরকারি জরুরি সেবা কমিটিগুলো গঠন করে।  

চীনের পর থাইল্যান্ডে প্রথম করোনা ছড়ায়। প্রথম জন আক্রান্ত হওয়ার পরদিন থেকেই তারা ব্যাপকভাবে পরিবহনকেন্দ্র গুলোতে থার্মাল স্ক্রিনিং চালু করে।

যত দ্রুত সম্ভব পরীক্ষা করা

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় করোনার প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিতেই যত দ্রুত সম্ভব পরীক্ষা করানোর জন্য উৎসাহিত করতে পারেন। এক্ষেত্রে স্থানীয় জেলাসহ সারাদেশে পরীক্ষা করানোর ব্যবস্থা রাখতে পারে। এতে কেউ আক্রান্ত হলে সাথে সাথে জানা যাবে।

দক্ষিণ কোরিয়া এ ব্যাপারে একটি ভালো উদাহরণ। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী একটি স্মার্টফোন অ্যাপ চালু করেছে যা জনগণকে তাদের লক্ষণের ব্যাপারে প্রতিদিন খেয়াল রাখতে এবং প্রয়োজন মনে করলে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে জানাতে বলে। 

এ ধরনের পদ্ধতি আক্রান্ত ব্যক্তিদের দ্রুত কোয়ারেন্টাইনে নিয়ে তাদের থেকে রোগ ছড়ানো বন্ধ করতে পারে।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক চর্চার প্রচার

অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, হাঁচিকাশির সময় নাক এবং মুখ ঢাকা, চোখ অথবা মুখে হাত না দেওয়া এবং যেসব জায়গা হাত দিয়ে ধরা হয় সেগুলোর ব্যাপারে সতর্ক থাকা সম্পর্কে মানুষকে জানাতে হবে। ইতোমধ্যে এশিয়ার বিভিন্ন দেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক সচেতনতা বাড়াতে প্রচারণা চালাচ্ছে।

বিভিন্ন শহর যেমন হংকংয়ে মানুষ বাইরে যাওয়ার সময় গ্লাভস পরছে ও সংক্রমণ নাশক বা অ্যালকোহল ওয়াইপ দিয়ে নিয়মিত শরীর পরিষ্কার করছে।

কর্মীদের কাজের ব্যাপারে নমনীয়তা

গত এক মাস যাবত এশিয়ার লক্ষাধিক মানুষ বাড়ি থেকে কাজ করছে বা সুবিধামত কর্মঘণ্টা নিয়ে কাজ করছে। কিছু প্রতিষ্ঠান খুব বেশি প্রয়োজনীয় নয় এমন কর্মীদের বাড়ি পাঠিয়েছেন। আবার অনেকে কর্মীদের গ্রুপ করে আসার সময় ভাগ করে দিয়েছে।

এখানে কিছু সমস্যা অবশ্যই রয়েছে। বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ থাকলে এবং মা-বাবা বাড়ি থেকে কাজ করলে সন্তানদের দেখাশোনা করতে হয়। আবার অনেক পেশায় বাড়িতে বসে কাজ করা সম্ভব নয়। তবে আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় অনেক কিছুই সহজ হয়েছে।

ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে কেনাকাটা না করা

ফেব্রুয়ারিতে হংকংয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে কেনাকাটা করে দোকান খালি করার হিড়িক পড়েছিল।

সরকারিভাবে বার বার আশ্বস্ত করার পরেও মানুষ ভেবেছিল বর্ডার বন্ধ থাকলে টয়লেট টিস্যু সাপ্লাই ব্যাহত হবে। তাই তারা কিনে মজুত রাখতে চেয়েছিল।

শুধুমাত্র টয়লেট টিস্যু নয় ফেসমাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, পরিষ্কারক সামগ্রী এবং ভাতের মতো খাদ্যও কিনে রাখা শুরু করেছিল।

এতে অহেতুক বিশৃঙ্খলা ও ভীতি সৃষ্টি হয়। গত মাসে বেশ কয়েকজন ৬০০ টয়লেট টিস্যুর রোল চুরির দায়ে গ্রেফতার হয়।

পোষা প্রাণীদের ভয় না পাওয়া

হংকংয়ে গত সপ্তাহে এক কুকুরের করোনাভাইরাস টেস্ট পজিটিভ আসায় একটি ভ্রান্ত ধারণা ছড়িয়ে পড়ে যে কুকুর এ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে এবং মালিকের কাছে ছড়াতে পারে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ব্যাপারটি ঠিক তা নয়। কুকুর অথবা বিড়াল আক্রান্ত না হলেও করোনাভাইরাস এদের ত্বকে উপস্থিত থাকতে পারে।

তাই এগুলো কোয়ারেন্টাইন করতে হবে না। এদের মাস্ক পরিয়ে রাখুন অথবা ছেড়ে দিন। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার মূল বিষয়গুলো মেনে চলুন। পোষা প্রাণী ধরার পর সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন। বাইরে থেকে ফেরার পর এদের পায়ের নিচের অংশ অ্যান্টিসেপটিক দিয়ে ধুয়ে দিন। 

রোগীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ না করা

ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সঙ্গে বাড়ছে ভীতি, বিড়ম্বনা এবং বৈষম্য।

বিশেষজ্ঞরা রোগীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। এই রোগ প্রতিরোধে কোয়ারেন্টাইন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু এটি করতে গিয়ে রোগীদের অসম্মান করা যাবে না।

আতঙ্কিত না হওয়া

ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রস্তুতির পাশাপাশি আতঙ্কিত না হওয়াও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

বর্তমান তথ্য অনুযায়ী করোনাভাইরাসে মৃত্যুহার প্রায় ৩.৪ শতাংশ যা ইনফ্লুয়েঞ্জার চেয়ে বেশি কিন্তু সার্স (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটোরি সিনড্রোম) এবং মার্স (মিডিল ইস্ট রেসপিরেটোরি সিনড্রোম) এর চেয়ে অনেক কম। এগুলোর মৃত্যুহার যথাক্রমে ৯.৬ শতাংশ ও ৩৫ শতাংশ।

চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের হিসেব অনুযায়ী আক্রান্তদের অর্ধেকেরও বেশি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।