চীনে মারাত্মক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। উহান প্রদেশে উদ্ভূত এই ভাইরাসটি নিয়ে উদ্বিগ্ন চীনসহ সারাবিশ্ব। এ ভাইরাস নিয়ে চীনের নির্যাতিত মুসলিম জাতি উইঘুর আতঙ্কিত বলে খবর প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো।
জিনজিয়াংয়ের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ৫০ জনের করোনাভাইরাসে আক্রান্তের খবর পাওয়া গেলেও চীন সরকার তা অস্বীকার করছে। এখনও অবধি, চীনা রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম দ্বারা প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যানে জিনজিয়াংয়ের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ে কোনো উদ্বেগ দেখায়নি চীন প্রশাসন। তুর্কি ভাষায় কথা বলা মুসলিম সংখ্যালঘু উইঘুররা এখানেই বসবাস করেন।
গত দশক থেকে পশ্চিম চীনে ইসলামোফোবিয়া সৃষ্টি হয়েছে যা উইঘুর মুসলিমদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে তথাকথিত বন্দি ক্যাম্প তথা সংশোধনাগার নিয়ে চীনকে মানবাধিকার ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করেছে বিশ্ব সম্প্রদায়। উইঘুর সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিতর্কিত চীনা শিবিরগুলোতে করোনাভাইরাসের দ্রুত বিস্তার ঘটার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে।
হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে। অনেক লোক একত্রে আবদ্ধ থাকলে এবং সাবান ও পানির অপর্যাপ্ততায় ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সম্ভাবনা বাড়বে।
এনজিওগুলো এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের অভ্যন্তরে শিবিরে আনুমানিক ১০ লাখ উইঘুরসহ কয়েকটি মুসলিম সংখ্যালঘু জাতিকে নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করতে হয়। তাদের অভ্যন্তরের পরিস্থিতি সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়।
বেইজিং জোর দিয়ে বলছে, ‘সন্ত্রাসবাদ’ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ‘বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ খোলা হয়েছে।
উইঘুর বংশোদ্ভূত ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী দিলেনুর রেহান বলেন, লোকেরা আতঙ্কিত হতে শুরু করেছে। আমাদের পরিবারগুলো সেখানে কেমন রয়েছে, তারা কেমন করে ভাইরাসের মোকাবিলা করছে, আমরা জানি না। তাদের পর্যাপ্ত খাবার আছে কিনা বা তাদের মাস্ক আছে কিনা, আমরা তাও জানি না।
একটি অনলাইন পোস্টে তিন হাজারের বেশি লোক স্বাক্ষর করে আবেদন করেছেন এ হুমকি হ্রাস করার জন্য শিবিরগুলো বন্ধ করার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে (ডাব্লুএইচও) জিনজিয়াং শহরে তাদের প্রতিনিধি প্রেরণের জন্য অনুরোধ করার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবেদন করা হচ্ছে।
আবেদনে বলা হয়েছে, ভাইরাসটি দ্রুত শিবিরগুলোতে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং আমরা যদি এখন নিরাপত্তা বাড়াতে না পারি তবে লাখ লাখ উইঘুর ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
শিনজিয়াংয়ের আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ শিবিরগুলোতে ভাইরাসের বিস্তার রোধে নেওয়া ব্যবস্থা সম্পর্কে বিশ্ব গণমাধ্যমের প্রশ্নের কোনো জবাব দেয়নি।
চীনের বাইরে উইঘুরদের প্রতিনিধিত্বকারী বেশ কয়েকটি গ্রুপের অন্যতম, ওয়ার্ল্ড উইঘুর কংগ্রেস (ডাব্লুইউসি) বলেছে যে, এটি অত্যন্ত উদ্বেগের কারণ যে, যদি এই ভাইরাসের বিস্তারকে আরও সীমাবদ্ধ করার ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তবে এটি জিনজিয়াংয়ের মানুষকে দ্রুত সংক্রামিত করতে পারে।
চীন সরকারের অপব্যবহার এবং দুর্ব্যবহারের কারণে এই উইঘুর দুর্বল থেকে দুর্বলতম অবস্থায় রয়েছে। করোনা এসব জনগণের দুর্ভোগকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।