সিঙ্গাপুরের ডাস্টবিন থেকে নবজাতক উদ্ধার করলেন বাংলাদেশি

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

উদ্ধারকৃত নবজাতক

উদ্ধারকৃত নবজাতক

শুরুটা হয়েছিল মৃদু কান্নার শব্দ শোনার মধ্য দিয়ে। আর শেষটা হলো দুইজন পরিচ্ছন্নতা কর্মীর একজন পরিত্যক্ত নবজাতককে উদ্ধারের মধ্য দিয়ে।

ঘটনাটা মঙ্গলবারের। সিঙ্গাপুরের বেডক নর্থ স্ট্রিটের ব্লক ৫৩৪ এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন বাংলাদেশি পরিচ্ছন্নতাকর্মী শামীম পাটওয়ারী এবং মোস্তফা কামাল। বিন থেকে ময়লা নিয়ে পরিচ্ছন্নতার গাড়িতে তুলছিলেন তারা। একটি ডাস্টবিনের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ২৪ বছর বয়সী শামীম প্রথমে মৃদু কান্নার শব্দ পায়। ভাবে হয়তো ভুল শুনেছেন এই ভেবে তার সহকর্মীকে জিজ্ঞাসা করেন।

বিজ্ঞাপন

৩৭ বছর বয়সী মোস্তফা শুক্রবার স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানান, তিনিও কান্নার শব্দ শুনতে পাচ্ছেন এবং বলেন, কোনো ফেলনা খেলনা পুতুল থেকে এই শব্দ হচ্ছে। হয়তো ব্যাটারি এখনো কাজ করছে।

তবে শিশুটির ভাগ্য নির্ধারিত হয় তাদের পরবর্তী সিদ্ধান্তে। শামীম পরিচ্ছন্নতার গাড়িটি থামায় এবং মোস্তফা ডাস্টবিনটি পর্যবেক্ষণ করতে নামেন।

মোস্তফা ডাস্টবিন খুলে দেখতে পেলেন, সেখানে কিছু পুরনো পত্রিকা সেং সিয়ং সুপারমার্কেটের একটি ব্যাগে। তবে সেটিকে ভেজা এবং রক্তাক্ত মনে হয়েছিল। কিছু একটা নড়তে দেখে তিনি ভয়ে পিছিয়ে পড়েন।

পরে শামীম সাহস করে ব্যাগটি ধরে বুঝতে পারেন সেখানে ছোট একটি শরীর রয়েছে। তিনি বলেন, এই ধরনের ঘটনায় আমরা সাধারণতো খেলনা ভেবে ফেলে দেই। কারণ পূর্বেও এই ধরনের খেলনা পুতুল আমরা পেয়েছি। যেগুলো কান্না করে।

তবে এবার শামীমের কাছে বিষয়টি অন্য রকম মনে হয়। তিনি তাদের সুপারভাইজারকে ফোন দিয়ে আসতে বলেন। সুপারভাইজার সেখানে পৌঁছে ব্যাগটি খোলেন। শামীম দেখতে পান ব্যাগে পানির মধ্যে একজন ছেলে নবজাতকের শরীর। সেখানে রক্তে মাখামাখি। শিশুটির তখনো নাভির শিরাও কাটা হয়নি।

তাদের সুপারভাইজার পুলিশে ফোন দেন এবং শামীম একটি তোয়ালে কিনে এনে শিশুটিকে মুছে দেন এবং জড়িয়ে রাখেন।

পুলিশ জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার তারা একটি ফোন পান এবং সকাল ৯টায় ঘটনাস্থলে যেয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করেন। শিশুটির হৃদক্রিয়া এবং অন্যান্য বিষয়গুলো চেক করা হয়েছে এবং সে সুস্থ রয়েছে। পরবর্তীতে তাকে কেকে ওম্যান এন্ড চিলড্রেন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শিশুটির বাবা মাকে এখনো খোঁজা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ।

শামীম পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। তিনি বলেন, এখনো আমার মাথায় বিষয়টি যেনো গেঁথে রয়েছে এবং শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরও চিন্তায় ছিলাম। একজন পুলিশ এসেছিলেন এবং আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, শিশুটি কেমন আছে। সুস্থ আছে শুনে ভালো লাগছে।

শামীম বলেন, গত মঙ্গলবার রাতে আমি ঘুমাতে পারিনি। আমার বারবার মনে এসেছে, আমি যদি শিশুটিকে না দেখতাম তাহলে কি হতো! যদি পরিত্যক্ত অন্য ময়লার সঙ্গে ফেলে দিতাম! শিশুটি হয়তো মারা যেতো! আমি একটি শিশুকে বাঁচাতে পেরে সত্যি আনন্দিত। আমার কাজটিকে এখন আমি আরো বেশি উপভোগ করি। শিশুটি বড় হলে তাকে দেখার ইচ্ছে রয়েছে।

মোস্তফা দুই বছর ধরে সিঙ্গাপুরে কাজ করছেন। তিনি বলেন, এটা সত্যি আশ্চর্য যে শিশুটি বেঁচে গেলো। আমার ১৭ বছরের ছেলে এখানেই একটি ব্লকে পরিচ্ছন্নতা কর্মীর কাজ করেন। আর ১১ বছরের ছেলেটি দেশে লেখাপড়া করেন।

তিনি বলেন, এই আবেগ ভাষায় প্রকাশ সম্ভব নয়। সাধারণত বিনে পরিত্যক্ত জিনিসই থাকে। আমরা সবসময় নিরীক্ষা করি না। একজন বাবা হিসেবে একটি সন্তানের জীবন বাঁচিয়েছি। আমার মনে হয়েছে, জীবনের সেরা কাজটি করতে পেরেছি আমি।