পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে ম্যানিলার সিতিও পারিয়াহানে গ্রাম

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ডুবে যাওয়া সিতিও পারিয়াহানে গ্রাম, ছবি: সংগৃহীত

ডুবে যাওয়া সিতিও পারিয়াহানে গ্রাম, ছবি: সংগৃহীত

দেনিকা মার্তিনেজ জন্ম নেন তার বাবার নিজস্ব বাড়িতে। বাড়িটি প্রতিবছরই একটু একটু করে উচু হতো। কাঠ, টিনশেড আর বাঁশের তৈরি বাড়িটি ভর করতে বাঁশের অসংখ্য খুঁটির ওপর।

সমুদ্রের পানি যেন ঘরে মেঝেতে না উঠে তাই প্রতিবছরই বাঁশের খুঁটিগুলো পরিবর্তন করা হতো। লাগানো হত আগের বছরের চেয়ে লম্বা খুঁটি। মার্তিনেজ তার পরিবারের সঙ্গে বাস করে ফিলিপাইনসের উপকূলীয় গ্রাম সিতিও পারিয়াহানে। ম্যানিলা থেকে ১৭ কিলোমিটার উত্তরে গ্রামটি। এক সময়ের দ্বীপটি এখন হয়ে যাচ্ছে ভূমিশূন্য। প্রতিবছরই ৪ সেন্টিমিটার করে পানিতে ডুবে যাচ্ছে গ্রামটি।

বিজ্ঞাপন

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রামবাসীর অতিরিক্ত পরিমাণে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারের দরুণ দেবে যাচ্ছে গ্রামটি। এর সঙ্গে এখন যোগ হয়েছে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণ। গ্রামটি হয়ে পড়ছে এখন বসবাসের অযোগ্য। একে একে গ্রামবাসী ছেড়ে যাচ্ছে তাদের জন্মস্থান, হয়ে পড়ছেন জলবায়ু উদ্বাস্তু। মার্তিনেজে ৫০টি পরিবারকে গ্রামটি ছেড়ে চলে যেতে দেখেছেন। তারা আর কোনো দিন ফিরে আসেননি বলে জানায় সে।

১৬ বছর বয়সী মার্তিনেজ বলেন, তাদের গ্রামটি এক সময় ভরপুর ছিলো প্রাণ-চাঞ্চল্যে। আয়োজন হতো বাস্কেটবল টুর্নামেন্ট, বড় বড় উৎসব। তাদের উৎসবের জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েছিলো আশ পাশের এলাকায়ও। পর্যটকেরাও আসতে উৎসবের আমেজে নিজেকে বিলিয়ে দিতে। স্থানীয় গির্জায় লোকেরা সমবেত হয়ে প্রার্থনা অনুষ্ঠান করতো।

কিন্তু আজ আর সেই আমেজ নেই। যেন প্রাণহীন হয়ে পড়ছে গ্রামটি। ডুবে গেছে বাস্টেকবলের মাঠটি। গির্জাটি হয়েছে পরিত্যক্ত। মেঝে পানিতে ডুবে যাওয়ায় ফাংগাস, শ্যাওলায় ভরে গেছে গির্জা চত্বর আর স্যাঁত-স্যাঁতে হয়ে পড়ছে দেয়াল।

এক সময় দ্বীপ-গ্রামটিতে হাঁটা-চলা করা গেলেও এখন এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যেতে হয় নৌকায়। বেঁচে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করতে হচ্ছে গ্রামের বাসিন্দাদের।

এক জায়গায় থেকে অন্য জায়গায় যেতে নৌকা ব্যবহার, ছবি: সংগৃহীত

জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ফার্নান্দো সিরিনগান সিতিও পারিয়াহান গ্রামটির ওপর নিবিড় গবেষণা করেছেন। তিনি জানান, ম্যানিলার উত্তরাঞ্চলের ব-দ্বীপের কিছু এলাকায় দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে। ভূগর্ভস্থ পানি তোলাসহ বিভিন্ন কারণে মাটি সরে যাচ্ছে। একই সঙ্গে ঘটছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি।

গভীর শঙ্কা প্রকাশ করে সিরিনগান বলেন, ‘আজকে থেকে আমরা ৫০ বা ১০০ বছর পরে যা ঘটার বিষয়টি নিয়ে শঙ্কিত, আসলে সেটি এখনই ঘটছে। বিশ্বের বিভিন্ন অংশে এটি ঘটছে অতি দ্রুততার সঙ্গে।’

মার্তিনেজ নিজের গ্রামের বর্তমান অবস্থার হুবহু মিল পান কেভিন কস্টনারের অভিনীতি ম্যুভি ‘ওয়াটারওয়ার্ল্ড’ এর এক দৃশ্যের সঙ্গে। ১৯৯৫ সালের চলচ্চিত্রটির এক দৃশ্যে দেখানো হয়, বাইবেলে বর্ণিত বিধ্বংসী ও প্রলয়ংকারী ঝড়ের পর বেঁচে যাওয়া মানুষ হয়ে পড়েন নৌকাবাসী।

নিজেকে পানির মধ্যে বাস থেকে মুক্তির দিন খোঁজে মার্তিনেজ। সে স্বপ্ন দেখে গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার। বাস করতে চায় সমতল ভূমিতে।
২০১১ সালে টাইফুন নেসাতের আঘাতে লন্ডভণ্ড হয়ে যায় গ্রামটি। সেই টাইফুনে আঘাত থেকে এখনও বেরিয়ে আসতে পারেনি গ্রামটি।