চীন ও মিয়ানমারের বিআরআই নিয়ে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা

  • খুররম জামান স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি ও  চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং

মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং

চীন ও মিয়ানমারের সরকার বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভকে (বিআরআই) স্থায়ীরূপ দিতে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতা বিষয়ক পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে যাচ্ছে।

মিয়ানমারের বিনিয়োগ ও বৈদেশিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে, গত সপ্তাহে এই পরিকল্পনাটি তৈরির জন্য দুই দেশের মধ্যে রাজধানী নেপিডোতে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বিজ্ঞাপন

এশিয়া, ইউরোপের ১৫২ টি দেশে চীন সরকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং বিনিয়োগের বিষয়ে বিআরআই এর সঙ্গে জড়িত।

২০১৯ সালের এপ্রিলে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় বিআরআই ফোরামের আন্তর্জাতিক সহযোগিতার সময় এই পরিকল্পনার ধারণাটি উত্থাপন করা হয়েছিল। ঐ ফোরামে স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি উপস্থিত ছিলেন। তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর সঙ্গে বৈঠকও করেছিলেন।

গত সোমবারের বৈঠকে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে দেন বিনিয়োগ ও বৈদেশিক সম্পর্ক মন্ত্রকের স্থায়ী সচিব ইউ অং নাইং। অন্যদিকে চীনের দলের নেতৃত্ব দেন চীনের পররাষ্ট্র বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বিভাগের মহাপরিচালক ওয়াং শেংওয়েনের।

উভয় দেশের বিভিন্ন সংস্থার প্রায় ৭০ জন প্রতিনিধিও এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

এ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা হাতে নেওয়ার আগে দুই দেশ বেশকিছু ক্ষেত্রে চুক্তি করেছে এবং ঐক্যেমতে পৌঁছানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

২০১৯ সালের এপ্রিলে বেইজিংয়ে এ বিষয়ে দ্বিতীয় সম্মেলনে স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির নেতৃত্বে চীনা ও মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা নয়টি বিষয়ে সহযোগিতায় সম্মত হয়েছিলেন। তিনটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তিসহ ভবিষ্যতে বিআরআই প্রকল্পের সাথে জড়িত থাকার দেশটির ইচ্ছা পাকাপাকি বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংযোগস্থলে এবং ভারত মহাসাগর এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চীনের স্থলভূমি ইউনান প্রদেশের মধ্যে অবস্থিত বিশ্বব্যাপী বিআরআই পরিকল্পনায় মিয়ানমার একটি অনন্য ভৌগলিক অবস্থান নিয়েছে।

চীনের শীর্ষ অর্থনৈতিক পরিকল্পনা সংস্থা, জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশন (এনডিআরসি) চীন-মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডোর (সিএমইসি) এর উপর একটি সহযোগিতা পরিকল্পনা (২০১৯-২০৩০) মিয়ানমারের সঙ্গে স্বাক্ষর করেছে।

চীন-মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডোর (সিএমইসি), সেপ্টেম্বরে ১৫ দফা সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করে। অর্থনৈতিক করিডোরটি বিআরআইয়ের অংশ হতে প্রস্তুত এবং মিয়ানমারের মূল অর্থনৈতিক শহরগুলোকে সংযোগকারী মূল সড়ক অবকাঠামো নির্মাণ করবে। সমঝোতা চুক্তির আওতায় চীন সরকার মূল অবকাঠামো, নির্মাণ, উৎপাদন, কৃষি, পরিবহন, অর্থ, মানবসম্পদ উন্নয়ন, টেলিযোগাযোগ, এবং গবেষণা এবং প্রযুক্তিসহ একাধিক প্রকল্পে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়।

এছাড়াও শিল্প, পরিবহন, জ্বালানি, কৃষিকাজ, “ডিজিটাল সিল্ক রোড”, অর্থ, পর্যটন, পরিবেশ সুরক্ষা, জনগণের আদান-প্রদান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, কর্মী প্রশিক্ষণ, জলের সম্পদের ব্যবহারের সহযোগিতা বাড়িয়ে তুলবে। মিয়ানমার মনে করে, এই পরিকল্পনাটি দেশটির বন্যা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণও করতে সহযোগিতা করবে। 

আনুমানিক একহাজার ৭০০ কিলোমিটার দীর্ঘ করিডোরটি মিয়ানমারের প্রধান অর্থনৈতিক শহরগুলোর সঙ্গে চীনের ইউনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিংকে সংযুক্ত করবে।

প্রথমে মধ্য মিয়ানমারের মান্ডালে এবং তারপরে পূর্ব ইয়াঙ্গুন এবং পশ্চিমে কিউকফিউ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) এর সাথে সংযুক্ত হবে।

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ২০১৯ সালের এপ্রিলের শেষদিকে মিয়ানমারের বিনিয়োগ ও বৈদেশিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক মন্ত্রকের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতার জন্য পঞ্চবার্ষিকী উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। যার লক্ষ্য দুই দেশের বিনিয়োগ এবং উৎপাদনশীলতায় সহযোগিতা বাড়ানো।

মিয়ানমার ও চীন আরো একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে যা দেশ দুটির অর্থনীতি ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে।

এ চুক্তির আওতায় চীন আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, বিশেষত জনগণের জীবিকা নির্বাহ, শিক্ষা এবং বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের মানবিক সহায়তা দিতে প্রায় ১৫ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের অর্থ সহযোগিতা দিয়েছে।