চীনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মাচার নিষিদ্ধ

  • খুররম জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

চীনের শিনজিয়ান প্রদেশের ভকেশনাল ট্রেনিং সেন্টারে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা, ছবি: বার্তা২৪

চীনের শিনজিয়ান প্রদেশের ভকেশনাল ট্রেনিং সেন্টারে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা, ছবি: বার্তা২৪

চীনের শিংজিয়ান প্রদেশের কাশগির থেকে: চীনে যেকোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠরত অবস্থায় যদি কোনো মুসলিম হোস্টেলে অবস্থান করেন তাহলে সেখানে তিনি নামাজ ও রোজা রাখতে পারেন না। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বের হয়ে ব্যক্তিগত জীবনে ফিরে গেলে ধর্মের কাজে কোনোও বাধা নেই। ছাত্র-শিক্ষক নির্বিশেষে সবাইকে এ নিয়ম পালন করতে হয়।

মঙ্গলবার (২৯ মে) চীনের শিংজিয়ান প্রদেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের কাশগিরে মুসলিম প্রধান অঞ্চলে গিয়ে বার্তা২৪.কম এমনটিই জানতে পারে। চীন সরকারের পক্ষ থেকে একটি ভকেশনাল ট্রেনিং সেন্টারে নেওয়া হলে সেন্টারের পরিচালক মিজিদ মাহমুদ এসব তথ্য জানান।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, এ অঞ্চলে ২০১৭ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এখানে ২০ থেকে ৪০ বছরের যে মুসলিমরা সন্ত্রাসবাদ বা চরমপন্থা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে, তাদের শিক্ষা দেওয়া হয়।

China Religion

মিজিদ মাহমুদ বলেন, প্রায় ১৪০০ শিক্ষার্থী এখানে নয় মাস থেকে এক বছরের আবাসিক ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসবিরোধী শিক্ষা নেন। সপ্তাহে তারা পাঁচদিন ক্যাম্পাসে থাকাকালীন কোনো প্রকার ধর্মীয় আচার পালন করতে পারে না। কারণ চীনের সংবিধান ধর্মকে প্রতিষ্ঠান ও রাজনীতি থেকে আলাদা করেছে। কিন্তু ছাত্ররা যখন সপ্তাহে দু’দিন বাড়ি ফিরে গেলে তখন নামাজ পড়তে পারেন ও রোজা রাখতে পারেন। সন্ত্রাসবাদী যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য এখানে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ অভিজ্ঞতা বিনিময় করা হয়। এটি একটি মুক্ত ট্রনিং সেন্টার। এখানে চীনা ভাষা, আইন এবং সন্ত্রাস বিরোধী শিক্ষা দেওয়া হয়।

এক প্রশ্নের উত্তরে পরিচালক মিজিদ মাহমুদ বলেন, এখানে নারী ও পুরুষ শিক্ষার্থী রয়েছেন। তাদের বিভিন্ন স্থান থেকে আনা হয়েছে। সব ছাত্র সন্ত্রাসবাদ নিয়ে প্রভাবিত। প্রথমে তারা ছোট অপরাধ করে। পরিবার যখন তাদের সম্পর্কে পুলিশকে জানায়, তখন তাদের সঙ্গে আলোচনা করে মতামত নিয়ে এ সেন্টারে আনা হয়।

China religion

সেন্টারে পাঠদানরত শিক্ষিকা মাইনর চুনা বার্ত২৪.কমকে বলেন, আমি পর্যটন নিয়ে ছাত্র ও ছাত্রীদের পাঠদান করছি। বিশেষ করে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী আইন, বিবাহ আইন, শিশু আইন নিয়ে তাদের ধারণা দেই। সিভিল আইন নিয়ে পড়ানো হচ্ছে। এখানে যারা রয়েছেন তারা সবাই সন্ত্রাসবাদ নিয়ে প্রভাবিত হয়েছিলেন।

ছাত্র আলম জান বার্তা২৪.কমকে বলেন, এখানে আসার আগে আমি ইন্টারনেট থেকে সন্ত্রাসবাদের ভিডিও দেখে প্রভাবিত হয়েছিলাম। অনেক ভিডিও আমি শেয়ারও করি। পরে এখানে এসে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী শিক্ষা লাভ করছি। এখন আমি ভাল আছি।

China Religion

ছাত্র সেরজাত মহিত বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমি চীনের সংবিধান মানতে বদ্ধপরিকর। এখানে যখন থাকি তখন সাংবিধানিক নিয়ম থাকায় নামাজ পড়তে ও রোজা রাখতে পারি না। তবে সপ্তাহের ছুটির দুই দিন বাড়িতে গিয়ে রমজান মাসে রোজা রাখি ও নামাজ পড়ি।

শিংজিয়ানে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উইঘুর বললেই আজকে মুসলিম জনগোষ্ঠীকে বোঝানো হয়। উইঘুরের বর্ণমালাও আরবি। তবে এখানে উইঘুরে অন্য জাতির লোকও আছে।

China Religion

ভকেশনাল ট্রেনিং সেন্টারের ঘুরে দেখা গেলো, এখানে শিক্ষার্থী লেখাপড়ার মাঝে খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক শিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষা লাভ করছে। সাংস্কৃতিক দিক থেকে উইঘুর মুসলিমরা তুর্কি ও আরবি দ্বারা প্রভাবিত। উরুমকি বর্তমান শিংজিয়ানের রাজধানী। কাশগির অন্যতম বৃহৎ শহর।

উইঘুর জাতির ইতিহাস প্রায় চার হাজার বছর আগের। মূলত, এরা স্বাধীন পূর্ব তুর্কিস্তানের অধিবাসী। পূর্ব তুর্কিস্তান প্রাচীণ সিল্ক রোডের পাশে অবস্থিত মধ্য এশিয়ার একটি দেশ, যার চতুর্পাশ্বে চীন, ভারত, পাকিস্তান, কাজাখস্তান, মঙ্গোলিয়া ও রাশিয়ার অবস্থান।

এখানে সন্ত্রাসবাদ মাথা চাড়া দেওয়ার বেশ কিছু ঘটনার পর চীন সরকার উইঘুর মুসলিমদের পুর্নবাসনে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে বলে কতৃপক্ষ জানায়।

আরও পড়ুন: চীনে ধর্মকে রাজনীতি থেকে আলাদা করা হয়েছে