ভারতীয় ও মার্কিন কূটনীতিকরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে একটি বৈঠক আয়োজনের চেষ্টা করছেন বলে ভারতীয় দুটি সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে। বৈঠকটি আয়োজনের সম্ভাব্য সময় হিসেবে আগামী মাস অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি ও স্থান হিসেবে ওয়াশিংটনের কথা উল্লেখ করেছে রয়টার্স। যদি সবকিছু ঠিক থাকে তাহলে ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পরে প্রথম বৈঠক করতে যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে।
তবে তা এখনও নিশ্চিত নয়। সূত্রগুলো বলছে, চলতি বছরের শেষে ভারতে কোয়াডের বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। তখন কোয়াড তথা ভারত, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের নেতারা ভারতে উপস্থিত থাকবেন। এই শীর্ষ সম্মেলন চলাকালে মোদি-ট্রাম্পের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হতে পারে, এই সম্ভাবনা আগে থেকে ছিল।
বৈঠকে দুটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে উল্লেখ করে সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, চীনকে মোকাবিলায় ভারতের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অংশীদারিত্ব রয়েছে। সেই সম্পর্ক আরও জোরদারে এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও দেশটির সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়ানো ও দক্ষ নাগরিকদের ভিসা পদ্ধতি সহজ করা নিয়ে আলোচনা হবে।
এর পাশাপাশি দুই নেতার মধ্যে প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা খাতে অংশীদারিত্ব বাড়ানো নিয়েও আলোচনা হবে, সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তনে ভারতের ওপর শুল্ক আরোপের বিষয়ে নয়াদিল্লির কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। কিন্তু সূত্রগুলো বলছে, নয়াদিল্লি ওয়াশিংটনকে কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দিতে ইচ্ছুক। যদিও এ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পারস্পরিক শুল্ক আরোপের কোন পরিকল্পনার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু প্রকাশ করেনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সূত্রগুলো আশা প্রকাশ করে জানায়, ট্রাম্পের নতুন মেয়াদে এই বৈঠক দুই দেশের মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক আরও গভীর করবে।
এদিকে মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে বৈঠক করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ওই বৈঠকের আলোচনা নিয়ে জয়শঙ্কর বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক সামনে এগিয়ে নিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সুস্পষ্ট আগ্রহ রয়েছে। এটা খুবই স্পষ্ট যে, নতুন প্রশাসন ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে ভারতের উপস্থিতি চেয়েছিল। তারা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ওপর অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
বৈঠকের বিষয়ে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নতুন মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস ওই বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, যু্ক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে অংশীদারত্ব জোরদার করার অভিন্ন প্রতিশ্রুতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুই দেশের পররাষ্ট্রন্ত্রী।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, মার্কো রুবিও ও এস জয়শঙ্কর বিস্তৃত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। আঞ্চলিক বিভিন্ন বিষয়, যুক্তরাষ্ট্র–ভারত সম্পর্ক আরও গভীর করার বিভিন্ন সুযোগ, গুরুত্বপূর্ণ ও বিকাশমান প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা সহায়তা, জ্বালানি এবং একটি স্বাধীন ও মুক্ত ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে দুজনের কথা হয়েছে।
এ ছাড়া অর্থনৈতিক সম্পর্ককে এগিয়ে নেওয়ার জন্য ভারতের সঙ্গে কাজ করতে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের আকাঙ্ক্ষার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোর দিয়েছেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি ‘অনিয়মিত অভিবাসন’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
উল্লেখ্য, ট্রাম্প ক্ষমতার প্রথম মেয়াদে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে ভারত সফর করেছিলেন। তখন দেশটির আহমেদাবাদ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এক লাখেরও বেশি মানুষ ট্রাম্পকে অভিবাদন জানিয়েছেন। তখন তিনি ভারতের সঙ্গে অবিশ্বাস্য বাণিজ্য চুক্তি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।