জনপ্রিয়তায় এগিয়ে কমলা, মূল ফ্যাক্টর ‘ইলেকটোরাল কলেজ’
হাতি-গাধার লড়াই ২০২৪সবচেয়ে আলোচিত, বিতর্কমূলক যুক্তরাষ্ট্রের এবারকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর মাত্র দুইদিন বাকি। এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো- প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট নাকি দ্বিতীয় মেয়াদে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পাবে যুক্তরাষ্ট্র।
জনমত সমীক্ষা বলছে— ট্রাম্পের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে চলেছে কমলা হ্যারিসের। একেবারে শেষ মুহূর্তে আইওয়া অঙ্গরাজ্যে পরিচালিত এক জনমত জরিপে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ট্রাম্পকে পেছনে ফেলে এগিয়ে আছেন প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইওয়ায় ২০১৬ ও ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সহজ জয় পেয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই অঙ্গরাজ্যে এগিয়ে যাওয়া ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলার জন্য নিশ্চিতভাবে দারুণ এক সুখবর। কমলার এই অপ্রত্যাশিত এগিয়ে যাওয়ার পেছনে নারী ভোটাররা ভূমিকা রেখেছেন বলে বলা হচ্ছে।
যদিও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জনপ্রিয়তার চেয়ে ইলেকটোরাল কলেজ ভোট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণ অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো কেবল সাধারণ ভোটে (পপুলার) হয় না। সেখানে সরাসরি জনগণের ভোটে প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন না। সাধারণ ভোটাররা মূলত পছন্দের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার মধ্য দিয়ে একটি নির্বাচকমণ্ডলীকে নির্বাচিত করে। ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ নামের এই নির্বাচকমণ্ডলী প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কাজটি করে।
নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, ইলেকটোরাল কলেজের ভোটে এগিয়ে ট্রাম্প-ই। নেভাডা, অ্যারিজোনা, মিনেসোটা,পেনসিলভেনিয়া, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা, উইসকনসিন— এই ‘অনিশ্চিত’ প্রদেশগুলোই ঠিক করবে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প ফিরছেন কি না।
যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি প্রদেশ মিলিয়ে মোট ৫৩৮ জন ইলেকটোরাল রয়েছেন। ক্ষমতা দখল করতে প্রয়োজন ২৭০টি ভোট। কিন্তু অনেক সময়েই দেখা যায়, জনগণের ভোট বেশি পেয়েও শেষ পর্যন্ত হারতে হয়েছে কোনও প্রার্থীকে।
সাম্প্রতিক ইতিহাসে এর দু’টি উদাহরণ— ২০০০ ও ২০১৬-র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এ ভাবেই হেরে যান দুই ডেমোক্র্যাট প্রার্থী, যথাক্রমে অ্যাল গোর এবং হিলারি ক্লিন্টন।
ইলেকটোরাল পদ্ধতিতে ভোট হওয়ার প্রধান অসুবিধা, অনেক সময়ে গোটা দেশের জনমত আর ইলেকটোরাল সংখ্যায় ফারাক থেকে যায়। যেমন হয়েছিল ২০১৬ সালে। সে বার জনগণের ভোটে ডেমোক্র্যাট দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টন পেয়েছিলেন ৪৮ দশমিক ২ শতাংশ ভোট, আর রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছিলেন ৪৬ দশমিক ১ শতাংশ ভোট। অর্থাৎ, ট্রাম্পের থেকে ২ দশমিক ১ শতাংশ বেশি ভোট পেয়েও ইলেকটোরাল কলেজের ভোটাভুটিতে হেরে যান হিলারি। তিনি পেয়েছিলেন ২২৭টি ইলেকটোরাল ভোট, কিন্তু ট্রাম্প পেয়েছিলেন ৩০৪টি ভোট। টেক্সাসের মতো রিপাবলিকানদের শক্ত ঘাঁটি তো বটেই, পেনসিলভেনিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনার মতো ‘সুইং স্টেট’ তাদের বড় অঙ্কের ইলেকটোরাল ভোট নিয়ে ট্রাম্পের ঝুলিতে চলে যাওয়ার ফলেই হোয়াইট হাউস দখল করা তার পক্ষে সম্ভব হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রে এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আগাম ভোটে রেকর্ড হয়েছে। আগাম ভোটের হার দেখে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট—দুই শিবিরই উচ্ছ্বসিত। রিপাবলিকানরা খুশি, কারণ গত নির্বাচনে তারা যত আগাম ভোট পেয়েছিল, এবার তার চেয়েও বেশি ভোট পেয়েছে। আর ডেমোক্র্যাটরা খুশি, কারণ আগাম ভোটে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে বড় ব্যবধানে এগিয়ে তাদের প্রার্থী কমলা হ্যারিস।
আগামী ৫ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হলেও ২৭ অক্টোবর থেকে আমেরিকায় শুরু হয়েছে আগাম ভোটপর্ব। শনিবার পর্যন্ত সে দেশের প্রায় ৭ দশমিক ৫ কোটি বেশি ভোটদাতা গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করেছেন। আমেরিকায় ভোট দেওয়ার যোগ্য নাগরিকের সংখ্যা ২৩ কোটির বেশি। এ বারের নির্বাচনে নিবন্ধিত ভোটারের সংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি। সর্বশেষ ২০২০ সালের নির্বাচনে ভোট পড়ার হার ছিল ৬৬ শতাংশ, যা ছিল গত এক শতকের মধ্যে সর্বোচ্চ। সে বার আগাম ভোট পড়েছিল প্রায় ১০ কোটি।