রাত গড়ালেই এখানে ভোটের মাসে পড়বে যুক্তরাষ্ট্র। ৬০তম প্রেসিডেন্সিয়াল ভোট। কিন্তু দিন গণনায় যখন ক্যালেন্ডারে আর মোটে ৫ দিন বাকি তখন বৃহস্পতিবার গোটা দিনটি ছিল ট্রাম্পময়। বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে। এইদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট দিয়ে রীতিমতো বোমা ফাটিয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এক্স হ্যান্ডেলে ও পোস্টে বাংলাদেশকে টেনে এনে তিনি মূলত যুক্তরাষ্ট্রে হিন্দুদের ভোট কাড়ার চেষ্টা করেছেন।
ট্রাম্প লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের হিন্দু, খ্রিস্টান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর বর্বর সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানাই, যারা মবের দ্বারা আক্রমণ ও লুটপাটের শিকার হয়েছে।’ তার মতে, বাংলাদেশে এই হামলা ও লুটপাট সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় বিশৃঙ্খলা। ট্রাম্প লিখেছেন, ‘আমার সময়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটনি। জো বাইডেন ও কমলা সারাবিশ্বে তথা আমেরিকায় হিন্দুদের স্বার্থ উপেক্ষা করেছে।’ পোস্টটির মধ্য দিয়ে মূলত হিন্দুদের পক্ষে থাকার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেছেন ট্রাম্প। তিনি আরও লিখেছেন যে, তার প্রশাসনের অধীনে, ভারতের সঙ্গে অংশীদারিত্ব আরও শক্তিশালী করা হবে। টুইটে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে তার বন্ধু বলেই উল্লেখ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিষয়টি রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের চোখ এড়ায়নি। তারা ট্রাম্পের এই টুইটকে দেখছেন রীতিমতো ভারতীয় হিন্দুদের ভোট জয়ের কৌশল হিসেবে। তবে সে জন্য তিনি গুটি হিসেবে ব্যবহার করেছেন বাংলাদেশকে।
এর বাইরেও ট্রাম্পকে নিয়ে আলোচনা ছিল দিনভর। সেটাও আরেক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট নিয়ে। বুধবার তার সোশ্যাল মিডিয়া ট্রুথ সোশ্যালে এমন একটি পোস্ট দেন ট্রাম্প। তাতে গুরুত্ব পেয়েছে তার অপর একটি অভিযোগ। সে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সমালোচকরা বলছেন, এবারের প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে যদি হেরে যান তাহলে নির্বাচনকেই যাতে দোষারোপ করতে পারেন এমন একটি প্লট কি আগেই সাজিয়ে রাখছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প?
তারা এই কথা বলছেন কারণ, নির্বাচন সামনে রেখে অন্যতম ব্যাটলগ্রাউন্ড পেনসিলভানিয়ায় ভোটিং প্রতারণা হচ্ছে এমন একটি অভিযোগ তুলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনের যখন আর এক সপ্তাহও বাকি নেই তখন এসে ট্রাম্পের এমন একটি বক্তব্য নির্বাচন মাঠকে সরগরম করে তুলেছে। সমালোচকরা মনে করছেন, এবারও যদি নির্বাচনে ট্রাম্প হেরে যান তাহলে ২০২০ সালের মতোই কোনো কাণ্ড না করে বসেন। বিশেষ করে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে হামলার কথা সকলের স্মৃতিতেই এখনো দগদগে।
ট্রাম্পের এই পলিটিকাল রেটোরিককে উদ্বেগজনক বলছেন ব্রেনান সেন্টার ফর জাস্টিসের ডেমোক্রেসি বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়েন্ডি উইসার। তবে এতে পেনসিলভেনিয়ার ভোট ঝুঁকিতে পড়ল এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই, বলেন ওয়েন্ডি।
"ভোটাররা তাদের আস্থার সঙ্গেই ভোট দিতে পারেন এবং তাদের ভোট গ্রহণ করা হবে এবং যথাযথভাবেই গণনা করা হবে।" ট্রাম্পের এই বক্তব্যকে ভোট পদ্ধতির প্রতি জনগণের আস্থাকে নাড়িয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ভোটের পরে যাতে বিষয়গুলোকে চাঙ্গা করে তোলা যায়, আর ঝামেলা পাকানো যায়, তারই একটি অংশ এমন বক্তব্য, বলেন ওয়েন্ডি।
ট্রাম্প ও তার দলের সদস্যরা কেবল পেনসিলভানিয়াই নয়, অন্যান্য ব্যটলগ্রাউন্ডগুলোতেও ভোটের ব্যালট সংগ্রহ ও গণণা নিয়ে একই ধরণের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। আর পেনসিলভেনিয়াকে এবারও ধরা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্য হিসেবে। ২০২০ সালের নির্বাচনে এমন পরিস্থিতির কারণে ভোটের ফল ঘোষণায় কয়েকদিন লেগে গিয়েছিল।
"পেনসিলভানিয়ায় প্রতারণা ধরা পড়ছে। বড় ধরণের প্রতারণা হচ্ছে। যা আগে কখনোই দেখা যায়নি। কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতারণার অভিযোগ দাখিল করুন।"
এর একদিন আগে তিনি পেনসিলভানিয়ার অ্যালেনটাউনে বক্তৃতায় ভোটার রেজিস্ট্রেশন ফরমেও সম্ভাব্য প্রতারণা অভিযোগ আনেন।
ওদিকে বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিস দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্যগুলোয় তাদের ক্যাম্পেইন চালান। দুজনও এদিন ছিলেন নেভাদা ও অ্যারিজোনায়।
নতুন জরিপ দেখাচ্ছে, দুটি ব্যটলগ্রাউন্ড জর্জিয়া ও নর্থ ক্যারোলিনা মিলিয়ে দুজনের কেউই কারো চেয়ে এগিয়েও নেই, পিছিয়েও নেই। সারা দেশের জরিপেই বিষয়টি এখনও একইরকম।
এর মধ্যে জর্জিয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্প ৪৮% আর কমলা হ্যারিস ৪৭% দেখালেও, নর্থ ক্যারোলিনায় কমলা ৪৮% আর ট্রাম্প ৪৭% এ রয়েছেন।