বামপন্থী দিশানায়েকের জনপ্রিয়তার নেপথ্যে কী?

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

অনুরা কুমারা দিসানায়েকে

অনুরা কুমারা দিসানায়েকে

শ্রীলঙ্কায় গণ-বিক্ষোভের মুখে মাহিন্দা রাজাপাকসে সরকারের পতনের পর অনুষ্ঠিত প্রথম নির্বাচনে দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন বামপন্থী ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার (এনপিপি) অ্যালায়েন্সের প্রার্থী অনুরা কুমারা দিসানায়েকে। এই জোটটি এর আগে এমনকি বিরোধী দলেও ছিল না। চীনপন্থী হিসেবে পরিচিত জনতা বিমুক্তি পেরামুনার (জেভিপি) দলের প্রধান দিশানায়েকে ২০১৯ সালে হওয়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মাত্র তিন শতাংশ ভোট পেয়েছিল। সব মিলিয়ে অনুরা এক চমক।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের বিশ্লেষণে বলা হয়, মাত্র পাঁচ বছরে দেশের মানুষের মনোভাবের এই আমূল বদলের কারণ শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক টালমাটাল পরিস্থিতি। ২০২২ সালে প্রবল বিক্ষোভের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছাড়েন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে এবং তার ভাই প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। পার্লামেন্ট সদস্যদের ভোটাভুটিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়েছিলেন রনিল। কিন্তু যে অর্থনৈতিক সংকট রাজাপাকসের বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভকে উস্কে দিয়েছিল, তা খুব বেশি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি রনিল। তাই রনিলের নেতৃত্বে অনাস্থা জ্ঞাপন করে ৫৬ বছরের দিশানায়েককে লঙ্কাবাসী প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নিলেন বলে মনে করা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৪২ দশমিক ৪১ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন বামপন্থী রাজনীতিবিদ অনুরা কুমারা দিসানায়েক। প্রথম রাউন্ডে কোনো প্রার্থী মোট ভোটের ৫০ শতাংশের বেশি না পাওয়ায় দ্বিতীয় দফায় ভোটগণনা হয়। এর আগে কখনও শ্রীলংকার নির্বাচনে ৫০ শতাংশ ভোট নিশ্চিত না হওয়ার মতো ঘটনা ঘটেনি।

বিজয়ী দিসানায়েকের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধী নেতা সজিথ প্রেমাদাসা পেয়েছেন ৩২ দশমিক ৭৬ শতাংশ ভোট। বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে ১৭ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন।

শ্রীলঙ্কার এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৩৯ জন। তবে সবাইকে পেছনে ফেলে মার্কসবাদী দিসানায়েক শ্রীলঙ্কার আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন।

দীর্ঘদিন ধরে শ্রীলঙ্কার প্রভাবশালী রাজাপাকসে পরিবারের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো দিসানায়েকের উত্থানের গল্প যেন রূপকথার মতো। ১৯৬৮ সালে জন্ম নেওয়া দিসানায়েক ছাত্রজীবনেই রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি শ্রীলঙ্কার দুর্নীতি ও দুর্বল শাসনের কঠোর সমালোচক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।

দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠিত রাজনীতিবিদদের চেয়ে নিজেকে ভিন্ন হিসেবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন দিসানায়েক। যদিও জেভিপির মাত্র তিনটি আসন রয়েছে ২২৫ সদস্যের শ্রীলঙ্কার সংসদে, তবুও সাম্প্রতিক জনমত জরিপগুলোতে তার জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী।

১৯৯৫ সালে দিসানায়েক জেভিপির পলিটব্যুরোতে যোগ দেন। ২০০০ সালে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৪ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত তিনি কৃষি, প্রাণিসম্পদ, ভূমি ও সেচ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রধান বিরোধী হুইপ হিসেবে কাজ করেন।

২০১৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ১৭তম জাতীয় কনভেনশনে তিনি জেভিপির নেতা নির্বাচিত হন। এই দীর্ঘ রাজনৈতিক যাত্রা তাকে শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, অনুরা কুমারা দিসানায়েকে অর্থনৈতিক মুখ থুবড়ে পড়া দেশটির সমাজের বিভিন্ন অংশের মধ্যে এক বৃহত্তর জোট গড়ে তুলতে পেরেছেন। এই জোটের শরিক বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ এবং সামরিক ব্যক্তি, বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়ন। লক্ষণীয়, একসময় জেভিপি এদের গণশত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। এখন দলের সবচেয়ে কার্যকর স্লোগান হচ্ছে দুর্নীতি মোকাবিলার প্রতিশ্রুতি।

১৯৪৮ সালে শ্রীলঙ্কার স্বাধীনতার পর থেকে, দেশটি শাসন করেছে দুটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল বা তাদের জোট বা তাদেরই কোনো অংশ। এরা হলো ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (ইউএনপি) এবং শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টি (এসএলএফপি)।

কিন্তু দিসানায়েক নিজেকে একজন সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি কোনো ধনী বা ক্ষমতাশালী পরিবারেরও সদস্য নন, যা তাকে অনেক ভোটারের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে।