প্রেমিকা হত্যার ১১ বছর পর কারামুক্ত হবেন অস্কার পিস্টোরিয়াস

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: জোহানেসবার্গে একটি পুরষ্কার অনুষ্ঠান রিভা-অস্কার

ছবি: জোহানেসবার্গে একটি পুরষ্কার অনুষ্ঠান রিভা-অস্কার

প্রেমিকা রিভা স্টিনক্যাম্পকে হত্যার প্রায় ১১ বছর পর ২০২৪ সালের ৫ জানুয়ারিতে জেল থেকে মুক্তি পাবেন সাবেক প্যারালিম্পিক চ্যাম্পিয়ন অস্কার পিস্টোরিয়াস। তবে শর্তসাপেক্ষে তিনি মুক্ত হবেন বলে জানিয়েছে পুলিশ প্রশাসন ।

দক্ষিণ আফ্রিকার অলিম্পিক অ্যাথলিট ও গ্লোবাল স্টার পিস্টোরিয়াস ২০১৩ সালের ভালোবাসা দিবসে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়াতে নিজ বাড়িতে রিভা স্টিনক্যাম্পকে গুলি করে হত্যা করে। এই ঘটনায় তিনি দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে জেলে পাঠানো হয় এবং কারাবাসের শাস্তি হয়।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (২৪নভেম্বর)  স্কাই নিউজের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

ছবি: হত্যার কয়েক সপ্তাহ আগে পিস্টোরিয়াস তার প্রেমিকা রিভা স্টিনক্যাম্পের সাথে 

বিজ্ঞাপন

অস্কার পিস্টোরিয়াস তার প্রেমিকাকে হত্যার দায়ে প্রায় ১১ বছর কারাবাস করেছেন। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে এই বন্দী জীবন থেকে মুক্তি পাবেন তিনি।

দক্ষিণ আফ্রিকার পুলিশ প্রশাসন জানিয়েছে, ৩৭ বছর বয়সী পিস্টোরিয়াসের ৫ জানুয়ারি থেকে প্যারোল (বন্দীর শর্তাধীন মুক্তি) মঞ্জুর করা হয়েছে। সেদিন তিনি শর্তসাপেক্ষে মুক্ত হবেন এবং ২০২৯ সালের ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত তার এই প্যারোল কার্যক্রম চলমান থাকবে। এ সময়সীমা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি শর্তসাপেক্ষে আইনি নির্দেশনা মেনে চলবেন।

পুলিশ প্রশাসন সেসব শর্ত সম্পর্কে বলেন, তিনি অনুমতি ছাড়া তার প্রিটোরিয়া এলাকা ছেড়ে যেতে পারবেন না। তাকে অবশ্যই একটি ‘রাগ ব্যবস্থাপনা প্রোগ্রাম’ এ নিয়মিত অংশগ্রহণ করতে হবে। তিনি অবশ্যই কমিউনিটির সেবা কার্যক্রমে উপস্থিত থাকবেন।

কারাগারের মুখপাত্র সিঙ্গাবাখো নক্সুমালো বলেছেন, প্যারোলের অর্থ সাজা শেষ হওয়া নয়। এটি এখনও সাজার একটি অংশ। ২০২৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তাকে এসব শর্ত মেনে চলতে হবে।

২০১৩ সালে ঘটনার পর তিনি বলেছিলেন, ভোরের দিকে তাকে অনুপ্রবেশকারী ভেবে একটি বাথরুমের দরজা দিয়ে বন্দুক থেকে গুলি চালায়। এতে মৃত্যু হয় তারকা প্রেমিকা রিভা স্টিনক্যাম্পের। তার আইনজীবীরাও এই সত্য প্রতিষ্ঠায় চেষ্টা করে।

কিন্তু রিভা স্টিনক্যাম্প এর বাবা মা বাদী হয়ে অস্কার পিস্টোরিয়াসের বিরুদ্ধে জোরদার শাস্তির আবেদন চালায়। ফলে প্রথমে শাস্তি কম হলেও গুরতর হত্যাকাণ্ডের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কারাভোগ করেন তিনি।

সে সময় গ্লোবাল তারকার হুট করে হত্যাকারী হয়ে যাওয়ার সংবাদ অনেক টেলিভিশনে প্রচারিত হয়েছিল এবং বিশ্বজুড়ে শিরোনামে ভাসছিল তার নাম।

রিভা স্টিনক্যাম্পের মা প্যারোলের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘পিস্টোরিয়াস ইচ্ছাকৃতভাবে আমার মেয়েকে হত্যা করেছে। আমি বিশ্বাস করি সে জানত যে দরজায় রীভাই ছিল। এটি তার উদ্দেশ্যপূর্ণ হত্যাকাণ্ড ‘

প্রসিকিউশন যুক্তি দিয়েছিল, হত্যাটি পূর্বপরিকল্পিত ছিল এবং তিনি তার মডেল প্রেমিকাকে গুলি করে হত্যা করেছিলেন। যখন সে একটি ওয়াশরুমে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে তখন তাকে হত্যা করেন অস্কার পিস্টোরিয়াস।

ছবি: অস্কার পিস্টোরিয়াস

পিস্টোরিয়াসের মুক্ত হতে এখনও দুই মাস বাকি!

২০১৪ সালে সাবেক ক্রীড়াবিদ পিস্টোরিয়াসকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। গৃহবন্দী অবস্থায় চাচার বাড়িতে অবস্থান করেছেন ১ বছর। সে সময় তার বিচারকার্য  চলমান থাকায় কোথাও যাওয়ার অনুমতি ছিল না তার। এক বছর পর সুপ্রিম কোর্ট হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করলে তাকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

প্রাথমিকভাবে তাকে ছয় বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। ঘটনা গুরতর বলে বিবেচিত হওয়ার পরে তা বাড়িয়ে ১৩ বছর এবং পাঁচ মাস করা হয়েছিল। প্যারোল বোর্ড তাকে চলতি বছরের মার্চে প্যারোলে প্রত্যাখ্যান করার পর শুক্রবার তার মামলা আবার বিবেচনা করে।

পিস্টোরিয়াস কখন প্যারোলের জন্য যোগ্য হবেন তা গণনা করার জন্য তার আইনজীবী সাংবিধানিক আদালতে আবেদন করে।  তার মামলা নিয়ে যাওয়ার পরে দ্বিতীয় প্যারোলের শুনানির সিদ্ধান্ত আসে। তাকে প্রাথমিকভাবে বলা হয়েছিল যে তিনি ২০২৪ সালের আগস্টে যোগ্য হবেন। গুরুতর অপরাধীরা কমপক্ষে অর্ধেক সাজা ভোগ করার পরে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্যারোলের জন্য যোগ্য হয়।

জুন স্টিনক্যাম্প তার বিবৃতিতে আরও বলেন, ‘আমি অস্কারের কথা বিশ্বাস করি না যে তিনি টয়লেটে থাকা ব্যক্তিটিকে একজন চোর ভেবেছিল। আমার মেয়ে নিশ্চয়ই বাঁচার জন্য চেষ্টা করছিল এবং সে সময় তাকে হত্যা করা হয়।’ তার স্বামী ব্যারি স্টিনক্যাম্প তার সাথে মূল বিচারের বাদী ছিলেন। কিন্তু চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ৮০ বছর বয়সে তিনি মারা যান।

ছবি: অস্কার পিস্টোরিয়াস কিভাবে কৃত্রিম পা ছাড়া হাঁটেন তা আদালতে প্রদর্শন করছেন 

পিস্টোরিয়াস ১৯৮৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্মগ্রহণ করেন। ১১ মাস বয়সে জন্মগত ত্রুটির কারণে তার উভয় পা হাঁটুর নীচে কেটে দেওয়া হয়েছিল। তিনি অলিম্পিকের মতো আসরে প্যারালিম্পিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে গিয়েছিলেন এবং প্রথম ডাবল অ্যাম্পুটি হয়েছিলেন। সেই থেকে তিনি তারকা খেলোয়াড় হিসেবে দর্শক জনপ্রিয়তা লাভ করতে থাকেন।

তার কৃত্রিম ব্লেডের কারণে তিনি ব্লেড রানার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। পিস্টোরিয়াস অল্প সময়ের মধ্যেই নিজেকে একজন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত তারকা এবং সবচেয়ে বিখ্যাত প্যারালিম্পিক ক্রীড়াবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।