লিবিয়ায় মৃতের সংখ্যা ৬ হাজার ছাড়ালো

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ধ্বংসস্তুপে পরিনত হয়েছে দেরনা। ছবি : সংগৃহীত

ধ্বংসস্তুপে পরিনত হয়েছে দেরনা। ছবি : সংগৃহীত

ভূমধ্যসাগরীয় ঝড় ড্য়ানিয়েলের তাণ্ডবের পর লাশের পর লাশ জমেছে লিবিয়ার দেরনায়। শহরের জমা পানি, কাদার স্রোত, সমুদ্রের পানি, ধসে যাওয়া বাড়ির ছাদে, জানলায়- সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মৃতদেহ।

আল-জাজিরা জানিয়েছে, গত তিন দিনে মৃত্যুর সংখ্যা সরকারি হিসাবে ৬ হাজারে পৌঁছেছে। লিবিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন, বন্যায় এখনও পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি মানুষ নিখোঁজ রয়েছে। ফলে, মৃতের সংখ্যা আরও অনেক বাড়তে পারে।

বিজ্ঞাপন

রাজনীতি, সন্ত্রাসসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত লিবিয়ায় যে গুটি কয়েক ধনী শহর রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো এই দেরনা। ভূমধ্যসাগরীয় ঝড় ড্য়ানিয়েল সাজানো শহরটাকে প্রায় ধ্বংস করে ফেলেছে।

বিবিসি যে, উপগ্রহচিত্র প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, বন্যার আগের ভূমধ্যসাগরের গাঢ় নীল পানি রবিবারের পর রং বদলে হয়েছে ঘোলাটে সবুজ।

বিজ্ঞাপন

শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া ওয়াদি দেরনা নদী থেকেই সুনামির মতো জলস্রোত বয়ে গিয়ে মিশেছিল সাগরে। সেই নদীর দু’পাশে ছিল ঘন জনবসতি। সে সব স্রেফ ধুয়েমুছে গেছে।

গত ৪ সেপ্টেম্বর গ্রিসের উপকূলে ভূমধ্যসাগরের উপর তৈরি হয়েছিল সামুদ্রিক ঝড় ‘ড্যানিয়েল।’ যার আঘাতে ৫ এবং ৬ সেপ্টেম্বর গ্রিসে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছিল। গ্রিসের জাগোরা গ্রামের একাংশে ২৪ ঘণ্টায় ৭৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। যা ওই অঞ্চলের প্রায় ১৮ মাসের মোট বৃষ্টিপাতের সমান।

এরপরেই রবিবার ড্যানিয়েল আছড়ে পড়ে লিবিয়া উপকূলে। ড্যানিয়েলের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে যায় আল-বায়দা, আল-মার্জ, তোবরুক, বাতাহ, বেনগাজির মতো শহর। তবে সবচেয়ে ক্ষতি হয় দেরনার।

প্রবল বৃষ্টি এবং হড়পা বানে প্রথমে একটি বাঁধ ভাঙে দেরনা নদীর। তারপর তার পানির তোড়ে সশব্দে ভেঙে যায় আরও দুটি নদীবাঁধ। পানির স্রোত ভাসিয়ে নিয়ে যায় শহরের বাড়িঘর।

১ লক্ষ ২৫ হাজার মানুষের বাস এই বন্দর শহরে। সরকারি হিসাবে এই জনসংখ্যার প্রায় ১২ শতাংশই হয় নিখোঁজ, নয় মৃত। লিবিয়ার বিমান পরিবহণ মন্ত্রী এবং পূর্বাঞ্চলীয় প্রশাসনের জরুরি পরিস্থিতি কমিটির সদস্য হিচেম আবু চকিওত সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘শহরের ২৫ শতাংশ স্রেফ মুছে গিয়েছে।’

সঙ্কট মোকাবিলায় বেশ কয়েকটি দেশ ইতিমধ্যেই সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ১৬৮টি অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দল পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছেন। উদ্ধার অভিযানে সহায়তার জন্য প্রতিরক্ষা দল পাঠাচ্ছে ইতালিও। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ত্রাণ পাঠিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে সৌদি আরবও।

যদিও লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলি থেকে মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) জাতীয় ঐক্যবদ্ধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী আবদুল হামিদ ডিবেইবা জানিয়েছেন, ১৪ টন ত্রাণ সমেত একটি বিমান ঝড়ে বিধ্বস্ত বেনগাজিতে পাঠানো হলেও বন্যাবিধ্বস্ত দেরনাতে এখনও ত্রাণ পৌঁছনো সম্ভব হয়নি।