সংঘাতের ক্রমাবনতি: ফ্রান্সজুড়ে বাস-ট্রাম বন্ধ

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বিক্ষোভ থেকে দুই হাজারেরও বেশি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়। ছবি: সংগৃহীত

বিক্ষোভ থেকে দুই হাজারেরও বেশি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়। ছবি: সংগৃহীত

সহিংসতার ক্রমাবনতি ঘটতে থাকায় ফ্রান্সে শুক্রবার রাতে বাস ও ট্রামসহ গণপরিবহন বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। পাশাপাশি সংঘাতে ব্যবহার হয় এমন জিনিসপত্র বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানায়, স্থানীয় সময় রাত ৯টা থেকে সকাল পর্যন্ত সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছে সরকার। আলাদা বিবৃতিতে ফরাসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড দার্মানিন সংঘাতে ব্যবহারের আতশবাজি, পেট্রোল বোতল, দাহ্য ও রাসায়নিক পদার্থ বিক্রিতেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

তল্লাশি চৌকিতে এক কিশোর পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে উত্তাল ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস ও এর আশপাশের শহরগুলো এখন অগ্নিগর্ভ বলা যায়। গত মঙ্গলবার (২৭ জুন) রাত থেকে শুরু হওয়া সংঘাতে এখন পর্যন্ত প্রায় পাঁচ শ ভবনে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। লুটপাট হয়েছে অ্যাপল স্টোরসহ বহু বিপণিবিতানে। পোড়ানো হয়েছে দুই সহস্রাধিক গাড়ি। কেবল বৃহস্পতিবার রাতেই বিভিন্ন স্থানের সহিংসতা থেকে ৮৭৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

শুক্রবার জরুরি সংকটকালীন বৈঠক করেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাখোঁ। বৈঠকে তিনি জানান, চার দিন তিন রাত ধরে চলা সংঘাতে ৪৯২টি ভবনে ভাঙচুর চালিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। দুই হাজারেরও বেশি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। প্রায় চার হাজার স্থানে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

অন্যদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বৃহস্পতিবার রাতভর বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা থামাতে গিয়ে আড়াই শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮৭৫ সহিংসতাকারীকে। এদের অর্ধেকই গ্রেপ্তার হয়েছেন প্যারিস অঞ্চলে। যাদের অনেকেই কিশোর-কিশোরী।

প্রেসিডেন্ট ম্যাঁখো এক বিবৃতিতে সহিংসতা থেকে কিশোর-তরুণদের দূরে রাখতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি সংঘাত বন্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে দায়িত্বশীল ভূমিকা দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী এলিজাবেথ বোর্নে চলমান সহিংসতাকে ‘অসহনীয় ও অমার্জনীয়’ উল্লেখ করে বলেছেন, আইন-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় সরকার সব ধরনের বিকল্প পর্যালোচনা করছে। সংঘাত থামাতে প্রয়োজনে পুলিশ ‘সাঁজোয়া যান’ ব্যবহার করবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

গত ২৭ জুন সকালে প্যারিসের উপকণ্ঠ ন্যান্তেরে এলাকায় নাহেল এম নামে ১৭ বছরের ওই কিশোরকে পুলিশ গুলি করে মারার ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ছড়ানোর পর থেকেই উত্তাল ফ্রান্সের রাজপথ। অভিযোগ উঠেছে, ট্রাফিক আইন ভাঙার অভিযোগে গাড়িতে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ (একেবারে সামনে) থেকে তাকে গুলি করেছেন পুলিশের এক কর্মকর্তা।

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, দুজন পুলিশ সদস্য গাড়িটির জানালায় ঝুঁকে আছেন এবং হাতের আগ্নেয়াস্ত্র চালকের দিকে তাক করা। একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘গুলি তোমার মাথা ফুঁড়ে বের হবে...’। সেসময় স্টার্ট দিয়ে গাড়িটা চলতে শুরু করতেই পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে চালককে লক্ষ্য করে চলে গুলি। কয়েক মিটার এগিয়েই একটি খুঁটিতে সজোরে ধাক্কা খায় গাড়িটি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় নাহেলের।

মঙ্গলবার ও বুধবার রাতে বিক্ষোভে সহিংসতার ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই কিশোরের মা মোনিয়া ননতেরের নেতৃত্বে প্যারিসের পাশের শহরে রাজপথে বিক্ষোভ শুরু হয়। পুলিশ তাদের নিবৃত্ত করতে চাইলে সহিংসতা আরও ব্যাপক আকার নেয়। নিহত কিশোরের মায়ের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেন হাজার হাজার মানুষ।

পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত ৯টা থেকে প্যারিসের বাস ও ট্রেন সেবা বন্ধের ঘোষণা দেন অঞ্চলের প্রধান ভালেরি পেক্রিস। অন্যদিকে প্যারিসের চেয়েও পরিস্থিতি নাজুক হওয়ায় ইয়ে-দে-ফ্রান্স অঞ্চলের শহর ক্লামার্তে বৃহস্পতিবার কারফিউ জারি করা হয়। সোমবার পর্যন্ত এই কারফিউ জারি থাকবে। প্রতিদিন রাত ৯টা থেকে পরদিন ভোর ৬টা পর্যন্ত কার্যকর থাকবে এই বিশেষ প্রশাসনিক অবস্থা।

লিলে ও ট্যুরসের মতো আরও অনেক শহরে বাস-ট্রেন সেবা বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়। কিছু শহরে বিক্ষোভ-সমাগমেও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।

কিন্তু এত পদক্ষেপও বৃহস্পতিবার রাতে সংঘাত থামাতে পারেনি। বিক্ষোভকারীরা আরও সহিংস হয়েছেন রাস্তায়। জ্বালিয়েছেন গাড়ি, ভাঙচুর করেছেন দোকান-বাড়িতে। পুলিশ থামাতে গেলে আক্রমণ করেছেন তাদেরও।