লস অ্যাঞ্জেলেসে ভয়াবহ দাবানলের মধ্যে দেখা দিয়েছে টনের্ডোর শঙ্কা। বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) বার্তা সংস্থা রয়টার্স স্থানীয় আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে এ তথ্য প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় সময় বুধবার (১৫ জানুয়ারি) থেকে শুরু হওয়া ‘সান্তা অ্যানা’ নামের ঝোড়ো বাতাসে আগুন নিয়ন্ত্রণে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে অগ্নিনির্বাপণ কর্মীরা। এরমধ্যেই ‘আগুনে টর্নেডোর’ আশঙ্কা করছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা।
প্রতিবেদনে দেশটির জাতীয় আবহাওয়া অধিদফতর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, অগ্নি-বিধ্বস্ত লস অ্যাঞ্জেলেসের অবস্থা এমনিতেই ভয়াবহ, এর মধ্যে নতুন করে টনের্ডোর লাল সতর্কতা জনমনে ভয়ের মাত্রা দ্বিগুণ করেছে। আবহাওয়া অধিদফতর থেকে আরও বলা হয়, আগামী রোববার থেকে বাতাসে তীব্র গতি আর কম আর্দ্রতার জন্য আগুনের পরিস্থিতি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ইতিহাসের ভয়াবহ দাবানলে ৯ দিন ধরে পুড়ছে ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেস। এতে প্রাণ গেছে অন্তত ২৫ জনের, নিখোঁজও রয়েছেন বেশ কয়েকজন। লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানল শুরু হয় গত ৭ জানুয়ারি। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে বিস্তীর্ণ এলাকায়। এরমধ্যে ছোট-বড় প্রায় ১২টি অগ্নিকাণ্ড ঘটে। আগুনে অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত প্যাসেফিক প্যালিসেডসের বাসিন্দাদের প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বাড়িঘর ও স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে।
এছাড়া প্যালিসেডসের ৪০ কিলোমিটার পূর্বে আলটাডেনা এলাকায় ইটন ফায়ার পুড়িয়েছে আরও পাঁচ হাজারের বেশি স্থাপনা। এই দুই এলাকার আগুন এখনও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। গত আট মাস ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় দাবানলের কারণে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার বাতাসের মান ও গতি আরও খারাপের দিকে। সর্বোচ্চ সতর্কতা ‘রেড ফ্ল্যাগ’ জারি করে, এ অঞ্চলে আরও এক সপ্তাহ তীব্র বাতাস বয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে জাতীয় আবহাওয়া দফতর।
প্রায় ১৫ মাস ধরে চলা সংঘাতের পর অবশেষে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে রাজি হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ হামাস ও দখলদার ইসরায়েল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে মিশরীয় ও কাতারি মধ্যস্থতাকারীদের সহায়তায় কয়েক মাসের তীব্র আলোচনার পর এই অগ্রগতি আসে।
আগামী ১৯ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে যুদ্ধবিরতি। অনেক আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক এ ঘটনাকে ‘নাটকীয় সাফল্য’ বলে অভিহিত করেছেন।
কী কী ধারা রয়েছে এ চুক্তিতে
বিভিন্ন সংশোধন, পরিমার্জন ও পরিবর্ধনের পর চূড়ান্ত যে চুক্তির ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেছে হামাস এবং ইসরায়েল, সেটি এখনও প্রকাশ করা হয়নি।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু গতকাল এক সংক্ষিপ্ত বার্তায় জানিয়েছেন, প্রস্তাবিত এই চুক্তিতে বেশ কিছু অমিমাংসিত ধারা রয়েছে। শিগগিরই সেগুলোর মিমাংসা হবে বলে আশা করছেন তিনি।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের সীমান্তে অতর্কিতে প্রবেশ করে এলোপাতাড়ি গুলি ও রকেট চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যা করে হামাস যোদ্ধারা, সেই সঙ্গে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় ২৫১ জনকে। ওই বছরেরই নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে এক অস্থায়ী বিরতির সময় ১০৭ জন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছিল হামাস। গোষ্ঠীটির নেতারা জানিয়েছেন, এখনও ৯৪ জন জিম্মি রয়েছেন তাদের কব্জায়। তবে ইসরায়েলের ধারণা, বর্তমানে জীবিত জিম্মিদের সংখ্যা মাত্র ৬০ জন।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, হামাস এই জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার পর ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি প্রায় ১ হাজার ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে দেশটির সরকার।
যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গতকাল বুধবার হোয়াইট হাউজে এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, তিন স্তরে বাস্তবায়ন করা হবে এই চুক্তি।
প্রথম স্তর বা পর্যায়ের মেয়াদ হবে ৬ সপ্তাহ। এই মেয়াদে গাজায় হামলা-সংঘাত সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে এবং নিজেদের হাতে থাকা জিম্মিদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে মুক্তি দেবে হামাস। এই জিম্মিদের মধ্যে নারী, বয়স্ক এবং শারীরিকভাবে অসুস্থদের প্রাধান্য দেওয়া হবে।
প্রথম পর্যায়ে কতজন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে— সে সম্পর্কে বাইডেন সুনির্দিষ্টভাবে কিছু না বললেও কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, চুক্তির প্রথম পর্যায়ে ৩৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস।
এ তথ্যের সত্যতা স্বীকার করে হামাসের এক নেতা বিবিসিকে জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতি শুরুর দিন ৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে। পরবর্তী ৬ সপ্তাহে পর্যায়ক্রমে মুক্তি দেওয়া হবে আরও ৩৩ জনকে।
এছাড়া প্রথম স্তরের ৬ সপ্তাহে অন্তত ৬০০ ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করবে বলেও গতকালের ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট।
যুদ্ধ বিরতির দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায় কবে থেকে শুরু হবে সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে বিরতির প্রথম স্তর শেষ হওয়ার আগেই। এ চুক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক ফিলিস্তিনি নেতা বিবিসিকে জানিয়েছেন, বিরতির ১৬তম দিন থেকে এ বিষয়ক আলোচনা শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
গতকালের ব্রিফিংয়ে বাইডেন জানিয়েছেন, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায় কবে থেকে শুরু হবে- এ সংক্রান্ত মিমাংসা হওয়ার আগ পর্যন্ত বিরতের প্রথম পর্যায় চলবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে জয়ী হওয়ায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে জিম্মি মুক্তি এবং যুদ্ধবিরতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে ইসরায়েল ও হামাসের যুদ্ধ বিরতির ঘোষণা আসার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্বাগত জানিয়ে এই কথ বলেন তিনি ।
ট্রাম্প দাবি করেন, এই ঐতিহাসিক যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি নভেম্বরে আমাদের ঐতিহাসিক বিজয়ের ফলস্বরূপ ঘটতে পারে।
এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এই চুক্তিতে পর্যায়ক্রমে যুদ্ধবিরতি হবে বলে আশা করছেন ট্রাম্প। হামাস প্রাথমিক ৪২ দিনের পর্যায়ে গাজার অভ্যন্তরে প্রায় ১০০ জিম্মির মধ্যে ৩৩ জনকে মুক্তি দিয়েছে।
ট্রাম্প উইটকফকে ধন্যবাদ জানিয়ে গাজা আর কখনও সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পরিণত না হয় তা নিশ্চিত করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল এবং তার মিত্রদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন।
দীর্ঘ দিন ধরে চলা সংঘাতের পর অবশেষে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে রাজি হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ হামাস ও দখলদার ইসরায়েল।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই খবর জানিয়েছে এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল এবং হামাস গাজায় শত্রুতা বন্ধ করতে এবং ফিলিস্তিনি বন্দীদের জন্য ইসরায়েলি জিম্মি বিনিময়ের জন্য একটি যুগান্তকারী চুক্তিতে পৌঁছেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে মিশরীয় ও কাতারি মধ্যস্থতাকারীদের সহায়তায় কয়েক মাসের তীব্র আলোচনার পর এই অগ্রগতি আসে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
ইসরায়েল ও হামাসের দীর্ঘদিনের সংঘর্ষের ৪৬ হাজার জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
এছাড়া, কয়েক হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত, অস্থায়ী আশ্রয়ে বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ ১৫ মাসের যুদ্ধের অবসানের দিকে এই চুক্তিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত ট্রাম্প একটি দ্রুত সমাধানের জন্য তার আকাঙ্ক্ষার বিষয়ে সোচ্চার ছিলেন, জিম্মিদের মুক্তি না দিলে গুরুতর পরিণতির হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন।