প্রায় ১৫ মাস ধরে চলা সংঘাতের পর অবশেষে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে রাজি হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ হামাস ও দখলদার ইসরায়েল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে মিশরীয় ও কাতারি মধ্যস্থতাকারীদের সহায়তায় কয়েক মাসের তীব্র আলোচনার পর এই অগ্রগতি আসে।
আগামী ১৯ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে যুদ্ধবিরতি। অনেক আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক এ ঘটনাকে ‘নাটকীয় সাফল্য’ বলে অভিহিত করেছেন।
কী কী ধারা রয়েছে এ চুক্তিতে
বিভিন্ন সংশোধন, পরিমার্জন ও পরিবর্ধনের পর চূড়ান্ত যে চুক্তির ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেছে হামাস এবং ইসরায়েল, সেটি এখনও প্রকাশ করা হয়নি।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু গতকাল এক সংক্ষিপ্ত বার্তায় জানিয়েছেন, প্রস্তাবিত এই চুক্তিতে বেশ কিছু অমিমাংসিত ধারা রয়েছে। শিগগিরই সেগুলোর মিমাংসা হবে বলে আশা করছেন তিনি।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের সীমান্তে অতর্কিতে প্রবেশ করে এলোপাতাড়ি গুলি ও রকেট চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যা করে হামাস যোদ্ধারা, সেই সঙ্গে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় ২৫১ জনকে। ওই বছরেরই নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে এক অস্থায়ী বিরতির সময় ১০৭ জন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছিল হামাস। গোষ্ঠীটির নেতারা জানিয়েছেন, এখনও ৯৪ জন জিম্মি রয়েছেন তাদের কব্জায়। তবে ইসরায়েলের ধারণা, বর্তমানে জীবিত জিম্মিদের সংখ্যা মাত্র ৬০ জন।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, হামাস এই জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার পর ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি প্রায় ১ হাজার ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে দেশটির সরকার।
যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গতকাল বুধবার হোয়াইট হাউজে এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, তিন স্তরে বাস্তবায়ন করা হবে এই চুক্তি।
প্রথম স্তর বা পর্যায়ের মেয়াদ হবে ৬ সপ্তাহ। এই মেয়াদে গাজায় হামলা-সংঘাত সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে এবং নিজেদের হাতে থাকা জিম্মিদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে মুক্তি দেবে হামাস। এই জিম্মিদের মধ্যে নারী, বয়স্ক এবং শারীরিকভাবে অসুস্থদের প্রাধান্য দেওয়া হবে।
প্রথম পর্যায়ে কতজন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে— সে সম্পর্কে বাইডেন সুনির্দিষ্টভাবে কিছু না বললেও কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, চুক্তির প্রথম পর্যায়ে ৩৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস।
এ তথ্যের সত্যতা স্বীকার করে হামাসের এক নেতা বিবিসিকে জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতি শুরুর দিন ৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে। পরবর্তী ৬ সপ্তাহে পর্যায়ক্রমে মুক্তি দেওয়া হবে আরও ৩৩ জনকে।
এছাড়া প্রথম স্তরের ৬ সপ্তাহে অন্তত ৬০০ ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করবে বলেও গতকালের ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট।
যুদ্ধ বিরতির দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায় কবে থেকে শুরু হবে সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে বিরতির প্রথম স্তর শেষ হওয়ার আগেই। এ চুক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক ফিলিস্তিনি নেতা বিবিসিকে জানিয়েছেন, বিরতির ১৬তম দিন থেকে এ বিষয়ক আলোচনা শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
গতকালের ব্রিফিংয়ে বাইডেন জানিয়েছেন, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায় কবে থেকে শুরু হবে- এ সংক্রান্ত মিমাংসা হওয়ার আগ পর্যন্ত বিরতের প্রথম পর্যায় চলবে।