প্রেসিডেন্টের পদত্যাগেও ক্ষোভে ফুঁসছে শ্রীলঙ্কা

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

জনবিদ্রোহের মুখে শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন গোতাবায়া রাজাপক্ষে। ভয়ে দেশ থেকে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন মালদ্বীপে। তাতেও ক্ষোভ কমেনি বিক্ষোভকারীদের। এখন তারা নতুন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের পদত্যাগ দাবি করছেন।

গোতাবায়া বুধবার মালদ্বীপে পালিয়ে যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব দিয়ে গেছেন।

বিজ্ঞাপন

বিক্ষোভ সামলাতে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন শ্রীলঙ্কার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে, যা আজ বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) সকাল থেকে কার্যকর হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের থামাতে যা যা করা দরকার তা করতে সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন রনিল বিক্রমাসিংহে।

তবে সেনাবাহিনীকে সেই নির্দেশ পালন না করার আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির সাবেক সেনাপ্রধান শরৎ ফনসেকা, যিনি সেনাপ্রধান হিসেবে তামিল টাইগার দমন করে বীরের স্বীকৃতি পেলেও পরে রাজাপক্ষের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়েন।

ফনসেকার মতো শ্রীলঙ্কার বিরোধীদলীয় নেতা সাজিথ প্রেমাদাসাও মাত্র দুজন ব্যক্তিকে রক্ষা না করে দেশের জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সামরিক বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

বর্তমান পরিস্থিতিতে রনিলের প্রতি বিক্ষোভকারীদের অনাস্থা ফুটে উঠেছে। বিরোধী দলগুলো এখন রনিলকেই বিদায় নিতে বলছেন।

এদিকে স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, গোতাবায়া রাজাপক্ষে মালে থেকে সিঙ্গাপুরে যাওয়ার জন্য একটি প্রাইভেট জেটের অপেক্ষায় রয়েছে।

দেশটির সংসদ আগামী সপ্তাহে একজন নতুন পূর্ণ-সময়ের প্রেসিডেন্টর নাম ঘোষণা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে ক্ষমতাসীন দলের একটি শীর্ষ সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিক্রমাসিংহই দলের প্রথম পছন্দ, যদিও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

সরকারি সূত্র জানিয়েছে, প্রেসিডেন্টের ভাই, সাবেক প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী বাসিল রাজাপক্ষে এখনও শ্রীলঙ্কায় রয়েছেন। মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কার অভিবাসন কর্মকর্তারা বাসিল রাজাপক্ষকে দেশের বাইরে যেতে বাধা দেয়।

প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর বিক্ষোভকারীদের হাত থেকে রক্ষা পেতে গোপন ডেরায় আশ্রয় নিয়েছেন মাহিন্দা রাজাপক্ষে ও তার পরিবার। দ্বীপরাষ্ট্রের উত্তর-পূর্বের একটি নৌসেনার গোপন ডেরায় আশ্রয় নিয়েছেন তিনি।

এক সময়ে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশটিতে চলছে চরম খাদ্য সংকট। জ্বালানি তেল কিনতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে মৃত্যুও হয়েছে কয়েকজনের। ওষুধসহ নিত্যপণ্যের সংকটে জনজীবন বিপর্যস্ত।

দেশের এ পরিস্থিতির জন্য প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে এবং তার পরিবারকে দায়ী করে আসছে শ্রীলঙ্কার বিক্ষোভকারীরা। গত দুই দশক ধরে এই দ্বীপ রাষ্ট্রটির ক্ষমতায় রয়েছে রাজাপাকসে পরিবার, যাদের উৎখাতে এবার মাঠে নেমেছে লাখো বিক্ষোভকারী।

প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ বেদখল হওয়ার পর বুধবার প্রথম প্রহরে দেশ ছাড়েন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। স্ত্রীকে নিয়ে সামরিক একটি বিমানে চড়ে তিনি মালদ্বীপে গেছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।

শ্রীলঙ্কায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত জুলি চুং দেশের সংবিধানের মধ্যে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানিয়েছেন এবং বলেছেন যুক্তরাষ্ট্র সব ধরনের সহিংসতার নিন্দা করে এবং আইনের শাসন মেনে চলার আহ্বান জানায়। মার্কিন রাষ্ট্রদূত দেশে দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রদানের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান।