করোনা: দ্বিতীয় ঢেউয়ে নাকাল ভারতে তৃতীয় ঢেউয়ের শঙ্কা

  • মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভারতে দৈনিক সংক্রমণ পৌঁছে গিয়েছিল চার লাখেরও বেশি। বেড়েছে মৃত্যুমিছিল। চারিদিকে অক্সিজেন, বেডের জন্য হাহাকার। মৃতদেহ সৎকার করতেও ব্যর্থ হয় সংশ্লিষ্টরা। এমতাবস্থায় ভারতে আবার করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের পূর্বাভাস দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষকদের আশঙ্কা ভারতে করোনার তৃতীয় ঢেউ হয়ে উঠতে পারে আগের চেয়েও বেশি ভয়ানক, যা আঘাত হানতে পারে সামনে অক্টোবরে।

সংবাদমাধ্যমের খবরে প্রকাশ, ভারত সরকারের মুখ্য বৈজ্ঞানিক পরামর্শদাতা ডা. কে বিজয় রাঘবনের মতে ভারতে করোনার তৃতীয় ঢেউ অনিবার্য। দ্বিতীয় ঢেউয়ের বিপর্যয় সামলে উঠতে না উঠতেই দেশে আছড়ে পড়বে তৃতীয় ঢেউ। তিনি আরও জানিয়েছেন, প্রতি দু'দিন অন্তর দেশের ভিন্ন ভিন্ন অংশে ভাইরাসের নতুন স্ট্রেনের সন্ধান মিলছে। তাই তৃতীয় ঢেউয়ের জন্য সকলকে প্রস্তুত থাকতে হবে বলেও জানিয়েছেন ডা. রাঘবন।

বিজ্ঞাপন

আইআইটি কানপুরের গবেষকরা তৃতীয় ঢেউয়ের একটি প্রাথমিক হিসেব কষেছেন। তাদের গাণিতিক মডেল জানাচ্ছে, অক্টোবরেই ভারতে আছড়ে পড়বে করোনার তৃতীয় ঢেউ। যদিও এর প্রভাব ঠিক কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তার কোনও পূর্বাভাস দেননি গবেষকরা। তাঁরা আরও জানিয়েছেন, মহারাষ্ট্রে ইতিমধ্যেই দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ নিম্নমুখী। কিন্তু, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, গুজরাট ও পশ্চিমবঙ্গ এই মুহূর্তে সংক্রমণের শিখরে রয়েছে।

ভারতে প্রথম দফার কোভিড সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছিলেন প্রবীণ নাগরিকরা। একইসঙ্গে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছিল কোমর্বিডিটি থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে। তবে বিগত একবছরে নিজের চরিত্র বদলেছে ভাইরাস। এই মুহূর্তে সদ্যজাতের মধ্যেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। তৃতীয় ঢেউয়ে শিশুদের মধ্যে সংক্রমণ বাড়ার সম্ভাবনা প্রবল বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। ফলে আর কেবল সুপার স্প্রেডার নয়, এবার শিশুরাও কোভিডের শিকার হচ্ছে। পাশাপাশি, মিউকরমাইকোসিস এবং ব্ল্যাক ফাঙ্গাসেও আক্রান্ত হতে পারে শিশুরা।

ভারতে এই মুহূর্তে কোভিডের একাধিক স্ট্রেন রয়েছে। ডবল মিউট্যান্ট ভাইরাস এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভয়ংকর। এই স্ট্রেনের নাম রাখা হয়েছে B.1.617। এখনও পর্যন্ত ব্রিটেন, ব্রাজিল, সাউথ আফ্রিকা এবং আমেরিকার ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে ভারতে। সবচেয়ে বেশি চর্চায় রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশে মেলা ভাইরাস। গবেষকরা জানাচ্ছেন, এই ভ্যারিয়েন্টের জন্যই চরিত্র বদল করতে পারছে করোনাভাইরাস। আর এর জন্যই ভারতে করোনার তৃতীয় ঢেউ অনিবার্য।

জানা গেছে, প্রথম পর্বের কোভিডে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা নষ্ট হতে সময় লাগত ১০ দিন। দ্বিতীয় ঢেউয়ে সেই সময়টা লাগছে পাঁচ থেকে সাতদিন। তবে তৃতীয় ঢেউয়ের ক্ষেত্রে সেই সময় কমে দাঁড়াবে দুই থেকে তিনদিন। অন্ধ্রপ্রদেশে হদিশ মেলা স্ট্রেনে আক্রান্তদের ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনটাই ঘটছে। গবেষণা জানাচ্ছে এই স্ট্রেন ১৫ গুণ বেশি সংক্রমিত করতে পারে।

ভারতে দ্রুত ২ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে ভ্যাকসিনেশন শুরু করা উচিত বলে মনে করছেন গবেষকরা। মূলত এই ঢেউয়ে ৬ থেকে ১৮ বছরের মধ্যেই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়বে। তাই টিকাকরণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। শিশুদের সুরক্ষিত রাখলে তৃতীয় ঢেউয়ের ভয়াবহতা খানিকটা হলেও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে তাদের অনুমান।