পশ্চিমবঙ্গে ত্রিমুখী ভোটযুদ্ধ?

  • ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

পশ্চিমবঙ্গে ভোটের লড়াই। ছবি: সংগৃহীত

পশ্চিমবঙ্গে ভোটের লড়াই। ছবি: সংগৃহীত

অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, ২০২১ সালের প্রথমার্থে পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে প্রধান তিনটি রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই হবে। একদিকে বর্তমান শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস, বাম-কংগ্রেস জোট আর ভারতের সর্ববৃহৎ দল বিজেপি, যারা কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকায় অনেকটা শক্তিশালী। মূল লড়াইয়ে না থাকলেও আসাদউদ্দিন ওয়াইসীর মজলিসে ইত্তেহাদুল মুসলেমিন বা মীম বিভিন্ন কারণে ভোটের পটভূমিতে আলোচিত হচ্ছে।

ভোটের রাজনীতি ও মেরুকরণে নানা দল নিজ নিজ অবস্থান থেকে পরিস্থিতির মূল্যায়ন করছে। সিপিআই(এম)এল বলেছে, দেশের সর্বাপেক্ষা বিপজ্জনক সাম্প্রদায়িক দল বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে প্রয়োজনে তৃণমূলকে সঙ্গে নিতে হবে। আর এই পরিকল্পনার তীব্র বিরোধী সিপিএম-এর মতো সর্ববৃহৎ বাম দল। তাদের লক্ষ্য, পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা পুনর্দখল করা। তাই তাদের কৌশলে বিজেপি অপেক্ষা তৃণমূলকে ক্ষমতা থেকে হটানো অনেক জরুরি।

বিজ্ঞাপন

এসব আলাপ-আলোচনার সূত্রে জোট ঘোষণা ও আসন সমঝোতার পর আরো তীব্র হবে দলগুলোর স্বার্থের সংঘাত। দলগুলোর মধ্যে বিভাজনের ফলে বিজেপির সম্ভাবনা বাড়বে। সংগ্রামবিমুখ, নীতি-আদর্শহীন, স্বার্থপর রাজনীতির অনুশীলনও দেখা যাবে ভোটের মাঠে।

রাজনীতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অনেক কিছু দিয়েছে, যেমন অল্প বয়সে যাদবপুরের সাংসদ পদ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় মন্ত্রিত্ব, রাজ্যস্তরের যুবনেত্রী। তবু তিনি দলত্যাগ করে নতুন দল গঠন করেছিলেন। কখনও বিজেপির হাত ধরে, কখনও সেই কংগ্রেসের হাত ধরে দীর্ঘ ১৩ বছর নিরলস রাজনৈতিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অবশেষে তার দল ক্ষমতায় এসেছে।

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে সত্যিকারের চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছেন মমতা। ক্ষমতা ধরে রাখার অগ্নিপরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হবে তাকে আসন্ন নির্বাচনে। রাজনৈতিক জীবনের কঠিন পথ পেরিয়ে আসা নেত্রী এ চ্যালেঞ্জ কেমন করে সামলান, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

রাজ্যের সাবেক ক্ষমতাসীন বামপন্থি ও প্রাচীন দল কংগ্রেসের সামনেও চ্যালেঞ্জ কম নয়। রাজনীতিতে টিকে থাকতে হলে তাদেরকে কিছু করে দেখাতে হবে। তা না করে যদি ভোট কাটাকাটির অংশে পরিণত হয়, তাহলে দলগুলোর অস্তিত্বে আঘাত লাগবে।

বিজেপি নবাগত শক্তি হিসেবে ক্ষমতা দখল করতে চায় একক ক্ষমতায়। দলের সর্বশক্তি নিয়োগ করা হয়েছে এজন্য। উজ্জীবিত হয়ে কাজ করছে বিজেপি।

আসাদউদ্দিন ওয়াইসীর দল সংখ্যালঘু এলাকায় কিছু চমক দেখাতে সমর্থ হতে পারলেও রাজ্য রাজনীতির নিয়ামকে পরিণত হতে পারবে কিনা সন্দেহ। তবে তাদের অংশগ্রহণে রাজ্য রাজনীতি ও ভোটের অঙ্ক আরো জটিল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

নির্বাচনের এমন মেরুকরণে বিজেপি থাকবে সুবিধাজনক অবস্থানে। ত্রিমুখী লড়াইয়ের মাঝ দিয়ে দলটি সহজেই জয় ছিনিয়ে আনতে পারবে। ফলে নির্বাচনে অবতীর্ণ দলগুলোর মধ্যে মোটামুটি স্বস্তিতে আছে বিজেপি।

পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে প্রথম এনেছিলেন স্বয়ং মমতা। জোট গড়ে বিজেপিকে সঙ্গে নিয়ে লড়েছিলেন তিনি। বিজেপির রাজনৈতিক কৌশলও এমনই। বিভিন্ন রাজ্যের কোন আঞ্চলিক দলের সঙ্গে মিশে মাঠে অবতীর্ণ হয়ে দ্রুত দলীয় ক্ষমতা বৃদ্ধি করা দলটির লক্ষ্য। বিহারে নীতীশকুমারের সঙ্গে মাঠে নেমে এখন সেখানে একক বৃহত্তর দল বিজেপি।  

যে মমতা বিজেপিকে রাজ্যে এনেছিলেন, সে বিজেপিই এখন তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে মসনদ দখল করতে চায়। আর বাম-কংগ্রেস জোট মমতাকে হটাতে গিয়ে যদি পথ করে দেয় বিজেপিকে তাহলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। বিজেপি যদি পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতা দখল করে, তবে তা সম্ভব হবে মমতা, বাম ও কংগ্রেসের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগত ভুলের কারণে।