দরিদ্র ভোটার, কোটিপতি প্রার্থী!

  • ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ভারতের সর্বদরিদ্র রাজ্য বিহারে কোটিপতি প্রার্থীর ছড়াছড়ি, ছবি: সংগৃহীত

ভারতের সর্বদরিদ্র রাজ্য বিহারে কোটিপতি প্রার্থীর ছড়াছড়ি, ছবি: সংগৃহীত

বিহার হলো ভারতের রাজ্যগুলোর মধ্যে দরিদ্রতর। গরিবি, বেকারত্ব, অসাম্য, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, অপহরণ, নারী নির্যাতন, অনুন্নয় ও পশ্চাৎপদতার দিক থেকে বিহার সব রাজ্যের পেছনে। আধুনিক মানদণ্ডে দরিদ্র রাজ্য ও মাফিয়া রাজনীতির আদর্শ ক্ষেত্র বিহারে নির্বাচন হচ্ছে। এতে মোট প্রার্থী ১,০৫৩ জন। তাদের মধ্যে ১৫৩ জনই কোটিপতি!

বিহার বিধানসভা ভোটের প্রাক্কালে এমনই বিচিত্র পরিসংখ্যান মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। এতে জানা যায়, বিহার বিধানসভার মোট আসন ১৪৩। আগামী ২৮ অক্টোবর প্রথম দফায় ৭১টি বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নির্দল মিলিয়ে মোট ১,০৫৩ জন প্রার্থী রয়েছেন ভোটযুদ্ধে। তাঁদের পেশ করা হলফনামা জানাচ্ছে, ১৫৩ জন প্রার্থীর সম্পত্তির অঙ্ক ১ কোটি বা তার বেশি, যেখানে রাজ্যের সিংহভাগ জনতাই দারিদ্রসীমা নীচে বসবাস করেন।

বিজ্ঞাপন

কোটিপতিদের অধিকাংশই ক্ষমতাসীন এনডিএ জোটের সদস্য। তাদের হার ৬০ শতাংশ। বিরোধী ‘মহাগঠবন্ধন’-এর ৫৮ শতাংশ প্রার্থী কোটিপতি বলে হলফনামা থেকে জানা যাচ্ছে। তালিকার প্রথম ১০ জনের মধ্যে আরজেডি-র ৪, জেডি(ইউ)-র ৩ এবং কংগ্রেস, এলজেপি, আরএলএসপি-র ১ জন করে রয়েছেন।

সবচেয়ে ধনী প্রার্থী জেডি(ইউ)-র মনোরমা দেবী। গয়া জেলার অতরী বিধানসভা কেন্দ্রে  প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী মনোরমার মোট স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির অঙ্ক ৫৩ কোটি টাকা। দ্বিতীয় স্থানাধিকারী কংগ্রেসের রাজেশ কুমারের সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৩৩ কোটি ৬০ লক্ষ। অওরঙ্গাবাদ জেলার কুটুম্বার বিদায়ী বিধায়ক রাজেশ কুমার আবার নির্বাচনে অবতীর্ণ হচ্ছেন।

তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছেন নওয়াদার জেডি(ইউ) প্রার্থী কুশল যাদব। তার সম্পত্তির পরিমাণ ২৬ কোটি ১৩ লক্ষ। ওই কেন্দ্রে কুশলের প্রতিদ্বন্দ্বী আরজেডির বিভা দেবীও পিছিয়ে নেই। জমি, বাড়ি, গাড়ি, নগদ মিলিয়ে তার কাছে রয়েছে ২২ কোটি ৪৭ লক্ষ টাকার সম্পত্তি। মোকামা আসনের আরজেডি প্রার্থী ও বিদায়ী বিধায়ক অনন্ত সিংহের নিজস্ব সম্পত্তির পরিমাণ ১৯ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। তার স্ত্রী নীলম দেবীর রয়েছে প্রায় সাড়ে ৬৮ কোটি টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি। গত পাঁচ বছরে এই দম্পত্তির সম্পত্তি কয়েক গুণ বেড়েছে।

বিহার বিধানসভার তথ্য জানাচ্ছে, বিদায়ী ২৪০ জন বিধায়কের মধ্যে কোটিপতির সংখ্যা ১৬০। এর মধ্যে জেডি (ইউ) এবং আরজেডি-র ৫১ জন করে বিধায়ক রয়েছেন। বিজেপির ৩৩, কংগ্রেসের ১৭, এলজেপি-র ২ এবং এআইএমআইএম-এর ১ জন বিদায়ী বিধায়ক রয়েছেন কোটিপতির তালিকায়।

দারিদ্র, অনুন্নয় ও মাফিয়া রাজনীতির কব্জায় ভোটাররা অবহেলিত ও নিষ্পেষিত হলেও প্রার্থী ও রাজনৈতিক নেতাদের অবস্থা হয় রমরমা। তৃতীয় বিশ্বের গণতন্ত্রের প্রকৃত যে চেহারা, বিহারে সেটাই প্রস্ফুটিত হয়েছে। গণতন্ত্রের ধারায় রাজনৈতিক অধিকার ও অর্থনৈতিক অধিকার যে সব সময় একসাথে ও সমান্তরালে চলে না, দরিদ্র ভোটারে রাজ্যে কোটিপতি প্রার্থীরা সে সত্যই প্রমাণ করলেন বিহারে। ভারতের সর্বদরিদ্র রাজ্য বিহারে কোটিপতি প্রার্থীর ছড়াছড়ি আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রকৃত চিত্রকেও উদ্ভাসিত করেছে।