বিশ্বের দীর্ঘতম সাইকেলটির তকমা এখন নেদারল্যান্ডসের (ডাচ) দখলে। সাইকেলটি লম্বায় ১৮০ ফুট ১১ ইঞ্চি। দেশটির আটজন ইঞ্জিয়ান এই সাইকেলটি তৈরি করেছেন।
এমন আবিষ্কারের জন্য দলটির নেতৃত্বে থাকা ইভান শাল্ক গিনেস ওয়ার্ল্ডস থেকে স্বীকৃতি পেয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
এর আগে এই রেকর্ডের মালিক ছিলেন অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক বার্নি রায়ান। ২০২০ সালের তার তৈরিকৃত সাইকেলটির দৈর্ঘ্য ছিল ১৫৫ ফুট ৮ ইঞ্চি।
রেকর্ডের এমন তথ্য জানায় ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি।
বিজ্ঞাপন
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুসারে, দলটির নেতৃত্বে ছিলেন ৩৯ বছর বয়সী ইভান শাল্ক। তিনি শৈশব থেকেই এমন আকৃতির সাইকেল তৈরির পরিকল্পনা করেছিলেন।
সাইকেলটি চালাতে সহজ হলেও এটি ডাচ শহরে দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য খুব বেশি কার্যকর হবে না।
ইভান শাল্ক বলেন, "আমি বছরের পর বছর ধরে এই ধারণাটি নিয়ে ভাবছি। পরে গিনেস ওয়ার্ল্ডস থেকে একটি বইয়ে এমন রেকর্ডের ধারণা পেয়েছি।
রেফারেন্স বই অনুসারে, এই রেকর্ডটি গত ৬০ বছরে বহুবার ভাঙা হয়েছে। স্বাভাবিকের চেয়ে বড় আকৃতির সাইকেল প্রথমে তৈরি হয়েছিল জার্মানির কোলন শহরে ১৯৬৫ সালে। যার পরিমাপ ছিল ৮ মিটার (২৬ ফুট ৩ ইঞ্চি)। অতীতের রেকর্ডধারীদের মধ্যে নিউজিল্যান্ড, ইতালি, বেলজিয়াম, অস্ট্রেলিয়া এবং নেদারল্যান্ডের দুটি দল সহ বিভিন্ন দেশের লোক ছিল।
তিনি জানান, আমি ২০১৮ সালে এই প্রকল্পটি শুরু করেছি। তৈরিকৃত এই সাইকেলটিতে উচ্চ প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়েছে। আমাদের প্রযুক্তিগত জ্ঞানকে সর্বোচ্চ প্রয়োগ করে এটি তৈরি করেছি।
কুকুর খুবই সামাজিক প্রাণী। তাদের মধ্যে পরিবার এবং গোষ্ঠীর প্রতি এক ধরনের দায়িত্ববোধ থাকে। অনেক মানুষ কুকুরের কৃতজ্ঞতাবোধ এবং পাহারা দেওয়ার দক্ষতার কারণে নিজেদের পরিবারের সদস্য হিসেবে গ্রহণ করে। কুকুরও প্রভুকে তার গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে দেখে এবং সুরক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করে।
তবে সব প্রাণীদের ভাগ্য একরকম হয় না। একদিকে যেমন কিছু কুকুরের সৌভাগ্য হয় মনিবের পরিবারের সদস্য হয়ে ভালোবাসা লাভের। তেমন অনেক দেশী প্রাণীর ঠাঁই হয় রাস্তায়। নির্দিষ্ট মালিকবিহীন এই কুকুরগুলো বেওয়ারিশভাবে ঘুরে বেড়ায় রাস্তায়। সামান্য সহানুভূতিতে তাদের চোখে স্বভাববশত ফুটে ওঠে প্রভুভক্তি। তবে মানুষের মানবিক দিকই তো তাকে সৃষ্টির সেরা জীব বানায়। উদারতা থেকেই আশ্রয়হীন এই কুকুরদের জন্যই বিচ্ছিন্ন থাকার জায়গা দেখা গিয়েছে।
কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন এলাকায় অনেকগুলো বেওয়ারিশ কুকুর বাচ্চা প্রসব করেছে। শীতের রাতে আশ্রয়হীন এসব কুকুরের অনেক কষ্ট। এটি উপলব্ধি করে তাদের জন্য বানানো হয়েছে ঘর। ঘরের ভেতরে বিছালী বিছিয়ে রাখা হয়েছে। রয়েছে পাত্রে কুকুরের জন্য পানি ও খাবার। ঘরের সামনে লিখে রাখা, ‘অরণ্যচারী মানুষের প্রথম বন্ধু কুকুর। বন্ধুর যত্ন নিন। তাকে ভালোভাবে থাকতে দিন।’
কুকুরকে মানুষের সবচেয়ে সাহায্যকারী বন্ধু প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বব্যাপী কুকুরদের আমরণ প্রভুভক্তির বিভিন্ন নজিরও দেখা গেছে বিভিন্ন সময়ে। মানুষের থেকে সামান্য সাহায্য পেলেও তাদের মধ্যে কৃতজ্ঞতাবোধ প্রকটভাবে লক্ষ্য করা যায়। প্রভুর আদর, খাবার এবং আশ্রয় কুকুরের মনে কৃতজ্ঞতার অনুভূতি জাগায়। এই ব্যাপারগুলো এই শ্রেণির প্রাণীদের আরও বেশি প্রভুভক্ত করে তোলে।
এই অনুভূতি উপলব্ধি করে কুষ্টিয়া শহরের আমলাপাড়া, এনএস রোড, নারিকেলতলা এলাকা ও চর থানাপাড়া এলাকায় কুকুরের জন্য চারটি ঘর স্থাপন করা হয়েছে। ‘স্বপ্ন প্রয়াস যুব সংস্থা’ নামে একটি সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে এসব ঘর বানানো হয়েছে। গত বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) রাতে আমলাপাড়া বড় ড্রেনের সামনে কুকুরের জন্য বানানো ঘরের উদ্বোধন করা হয়।
উদ্যোক্তারা বলেন, রাত-বিরাতে শহরে ঘুরতে ফিরতে দেখা যায় যে কুকুরেরা এদিক–সেদিক ঘেউ ঘেউ করে। শহরের স্কুল-কলেজ, মসজিদ, মন্দির, বাসাবাড়ি—সবকিছুই এখন তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। ফলে কারও আঙিনায় কুকুর ঢুকতে পারে না। শীতের রাতে বাচ্চাগুলোর খুব কষ্ট হয়। এ চিন্তা করেই রাত পাহারা দেওয়া বন্ধু কুকুরের জন্য আশ্রয় স্থাপন করা হয়েছে কয়েকটি জায়গায়।
আক্তার হোসেন বলেন, আমি নিজেও প্রাণীপ্রেমী। কুকুরের ঘর বসানোর সময় পাশের দোকান থেকে পাউরুটি কিনে এনে টুকরো টুকরো করে তা কুকুরকে খেতে দেন।
তিনি বলেন, হাউজিং এলাকায় আমার বাসা এবং ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান। ‘গত তিন-চার বছর ধরে একদল কুকুর আমাকে দেখলেই ছুটে আসে। তাদের সাধ্যমতো খাবার দিই। এবারই দেখলাম কেউ কুকুরের জন্য আবাসনের চিন্তা করল। বিশেষ করে স্বপ্ন প্রয়াস যুব সংস্থা এই তীব্র শীতে কুকুর এবং বাচ্চাদের জন্য কাঠের ঘর নির্মাণ করলো এটি খুব ভালো উদ্যোগ। কুকুরকে নিয়ে এভাবে আসলে কেউ এভাবে চিন্তা করি না।’ এভাবেই অনেকেই এগিয়ে এলে সমাজ পরিবেশ এবং প্রকৃতি বদলে যাবে।
এ সময় কথা হয় জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ কুষ্টিয়ার সভাপতি পশুপ্রেমী শাহাবুদ্দিন মিলনের সঙ্গে।
তিনি বলেন, এখানে থাকা একটি কুকুরের পাঁচটি বাচ্চা হয়েছে। শীতের রাতে বাচ্চাগুলো খুব কষ্ট করে। একটি দোকানের পিছনে রাখা বালুর স্তূপে রাতে ঘুমায়। কুকুরের জন্য ঘর এ শহরে নতুন সংযোজন।
সাংবাদিক এসএম জামাল বলেন, প্রাচীনকাল থেকে কুকুর এবং মানুষের সম্পর্ক নিবিড়ভাবে গড়ে উঠেছে। মানুষ যখন কুকুরকে গৃহপালিত করতে শুরু করে, তখন থেকেই কুকুর মানুষকে সঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করতে থাকে। এই দীর্ঘ সম্পর্ক কুকুরের মধ্যে প্রভুভক্তির একটি স্বভাব তৈরি করেছে।
কুকুরের প্রসব সময়কে মনে করে ঘর স্থাপন করা হয়েছে। এখন কুকুরের বাচ্চা হচ্ছে। বাচ্চাগুলো যাতে বেঁচে থাকে, সে জন্য শহরের পথে পথে স্থাপন করা হয়েছে এসব আশ্রয় ঘর।
সংগঠনের সভাপতি সাদিক হাসান রহিদ বলেন, ‘আমরা শীতে কুঁকড়ে যাই, নানাভাবে শীত নিবারণ করি। কিন্তু কুকুরগুলোর তো ঘর নেই। কুকুর আমাদের পরম বন্ধু, বন্ধুর জন্য কিছু করা উচিত। সেই চিন্তা থেকে ঘরগুলো করা। সুযোগ থাকলে কেউ কিছু খাবার ও পানি রেখে আসতে পারেন ঘরে অথবা নজর রাখতে পারেন আশ্রয়গুলোর।’ আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রথমবারের মতো চারটি ঘর বিভিন্ন এলাকায় স্থাপন করেছি। সহযোগিতা পেলে শহরের সর্বত্র মোড়ে মোড়ে কুকুরের জন্য আশ্রয় এ ঘর স্থাপন করা হবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পাখি হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে বাল্ড বা টাক ঈগলকে নির্বাচন করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বড়দিন উপলক্ষ্যে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বিবিসির প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়। এর আগে ১৭৮২ সালে মার্কিন নথিতে জাতীয় পাখি হিসেবে ঈগল নথিভুক্ত ছিল। তখন দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রের সীলে জাতীয় পাখি হিসেবে এই পাখির প্রতীক ব্যবহার করা হতো। তবে একে এর আগে কখনো ঈগলকে মনোনীত করা হয়নি। গত সপ্তাহে কংগ্রেস বিলটি প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কাছে পাঠানো হয়েছিল। তার স্বাক্ষর করার পর বিলটি পাশ হয়।
ন্যাশনাল বার্ড ইনিশিয়েটিভ ফর দ্য ন্যাশনাল ঈগল সেন্টারের কো-চেয়ার জ্যাক ডেভিস এক বিবৃতিতে বলেন, ‘প্রায় ২৫০ বছর ধরে আমরা সাদা-কালো-হলুদ পালকের ঈগলকে জাতীয় পাখি বলে ডাকতাম। কিন্তু বাল্ড বা টাক ঈগল পাখি কখনোই জাতীয় পাখি হিসেবে নথিভুক্ত ছিল না, যা এখন সরকারিভাবে শিরোনামপ্রাপ্ত হলো।’
বেশিরভাগ আমেরিকান ঈগলের সিল ব্যবহার করেন। সেখানে একটি পতাকাযুক্ত ঢাল রয়েছে। এর একটি ট্যালনে একটি জলপাই গাছের শাখা রয়েছে এবং অন্যটিতে তীর। তবে বাইডেনের এই সিদ্ধান্ত সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।
ঈগলের জাতীয় মর্যাদা সম্পর্কে সবাই একমত নয়। প্রতিষ্ঠাতা ফাদার বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন এই প্রাণীকে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য বাছাইয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন। তিনি ‘নেতিবাচক নীতিবান পাখি’ বলে অভিহিত করেছিলেন।
অন্যদিকে কংগ্রেসের সবাই ফ্রাঙ্কলিনের বিরোধী মতামত জানিয়েছেন।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ ভেটেরান অ্যাফেয়ার্স অনুসারে, বিশ্বব্যাপী অন্যান্য ঈগলের থেকে বাল্ড ঈগলকে অন্যভাবে দেখা হয়। প্রজন্মের জন্য শক্তি, সাহস, স্বাধীনতা এবং অমরত্বের প্রতীক হিসাবে দেখা হয় এই ঈগল। এই ঈগল শুধুমাত্র উত্তর আমেরিকার আদিবাসী ছিল।
বাল্ড বা টাক ঈগলকে জাতীয় পাখি হিসাবে মনোনীত করা আইনটি মিনেসোটার আইন প্রণেতাদের নেতৃত্বে ছিল। সিনেটর অ্যামি ক্লোবুচার দেশে বৃহত্তম টাক ঈগল জনসংখ্যার একটি হিসাবে বর্ণনা করা হয় সেখানে। ১৯৪০ সালের জাতীয় প্রতীক আইনের অধীনে নেওয়ার পর এই প্রাণীটিকে বিক্রি বা শিকার করা অবৈধ ঘোষণা করা হয়।
বাল্ড বা টাক পাখি একসময় বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে ছিল। ২০০৯ সাল থেকে জনসংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
পাকিস্তানের এক কিশোরী তার অসাধারণ ভাষার দক্ষতা দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। কিশোরীর নাম শুমাইলা। কখনো স্কুলের গন্ডিতে পা না দিয়েও শুমাইলা যেভাবে উর্দু, ইংরেজি, সারাইকি, পাঞ্জাবি, পশতু ও চিত্রালি ভাষায় দক্ষতা দেখিয়েছেন তা দেখে সত্যিই অবাক হওয়ার মতো।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে জানায়, খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের লোয়ার দিরে চিনাবাদাম, সূর্যমুখী বীজ এবং অন্যান্য খাবার বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে শুমাইলা। তাকে পাকিস্তানি ইউটিউবার জিশান শাব্বির আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি ডাক্তার জিশান নামেও পরিচিত। হিন্দুকুশ পর্বতমালার মধ্য দিয়ে দির ও চিত্রলকে সংযোগকারী আইকনিক লোয়ারী টানেলের কাছে ভ্লগ চিত্রগ্রহণের সময় শুমাইলার সঙ্গে দেখা হয় তার।
একপর্যায়ে তাদের মধ্যে কথোপকথন হয়। সেই কথোপকথনের ভিডিও নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই শুমাইলা ভাইরাল হয়ে যায়।
ওই ভিডিওতে, শুমাইলার চিত্তাকর্ষক ভাষা দক্ষতা এবং কমনীয় ব্যক্তিত্ব সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের মনে জায়গা করে নিতে বাধ্য করেছে।
এতে দেখা যায়, শাব্বির যখন শুমাইলাকে নিজের পরিচয় দিতে বলেন, তখন শুমাইলা অসাধারণ আত্মবিশ্বাস ও ভদ্রতার সঙ্গে উত্তর দেন। শুমাইলা বলেন, "আমার বাবা ১৪টি ভাষায় কথা বলেন এবং আমি ছয়টি ভাষায় কথা বলতে পারি। আমি স্কুলে যাই না। আমার বাবা আমাকে বাড়িতে পড়ান।
তারপরে সে তার পণ্যের প্রচার করতে গিয়ে বলেন, "আমি চিনাবাদাম এবং সূর্যমুখী বীজ বিক্রি করছি। আপনি কিছু কিনতে চাইলে আমাকে বলুন।"
ভাইরাল হওয়া আরেকটি ভিডিওতে শুমাইলা তার পরিবার নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, আমার পাঁচ জন মা ও ৩০ জন ভাই-বোন রয়েছে। পরিবারের সবাই সাবলীলভাবে ইংরেজি বলতে পারেন। আমার এক ভাই ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে থাকেন। তিনি তার প্রতিদিনের রুটিন সম্পর্কেও আমাকে শেয়ার করেন।
ভিডিওগুলো দেখে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা শুমাইলার অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা, আত্মবিশ্বাস এবং উদ্যোক্তা মনোভাবের জন্য প্রশংসা করেছেন। অনেক ব্যবহারকারী তাকে বই পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছেন।
ভিডিওর মন্তব্যের ঘরে একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, "এটি দুর্দান্ত। সৃষ্টিকর্তা তাকে সব দিক দিয়ে সর্বোত্তম মঙ্গল করুক। আমিন।"
অন্য একজন মন্তব্য করেছেন, "তার ইংরেজিতে দক্ষতা অভিজাত স্কুলে পড়া অনেকের চেয়ে ভালো। তার বাবার প্রচেষ্টাকে অভিনন্দন।"
তৃতীয় একজন ব্যবহারকারী বলেছেন, "আমার প্রিয়তম শুমাইলা, তুমি আমাকে গর্বিত করেছো। তোমার জন্য আমি বই পাঠাতে চাই। কীভাবে পাঠাবো সেটা দয়া করে জানাও। ধন্যবাদ।"
চতুর্থ একজন যোগ করেছেন, "এটি খুব সুন্দর, বিস্ময়কর প্রতিভা প্রকাশের জন্য তোমাকে ধন্যবাদ। সে খুব বুদ্ধিমতী বলে মনে হচ্ছে। আমরা কি তার পরিবারকে স্কুলের খরচ বহন করার জন্য কিছু সাহায্য করতে পারি? আমি তাকে সাহায্য করতে চাই।"
সন্তানদের মুখে দু-বেলা দুমুঠো ডাল-ভাত তুলে দিতে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করছেন মধ্যবয়সী জরিনা বেগম। সিলেট নগরীতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান তিনি। স্বামী কামাল মিয়া মাদকাসক্ত হয়ে পরিবারের সঙ্গে না থাকায় বাধ্য হয়ে এই পেশা বেছে নিয়েছেন তিনি। আগে ইট ভাঙার কাজ করলেও চোখের সমস্যা এবং অল্প মজুরি দিয়ে ঘরভাড়া-সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। তাই কিস্তিতে নেওয়া একটি ব্যাটারিচালিত তিন চাকার বাহন রিকশায় ভর করে লড়ছেন তিনি।
তিন ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে সিলেট নগরীর শামীমাবাদ এলাকায় একটি কলোনিতে ভাড়া বাসায় থাকেন জরিনা। জন্ম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হলেও ১০ বছর বয়স থেকে বেড়ে ওঠা সিলেট শহরে। জরিনার তিন ছেলে সালমান, শাওন ও আরমান। ছেলেদের পড়ালেখা করানোর ইচ্ছে থাকলেও সামর্থ নেই তার। মায়ের কষ্টের ভাগ কমাতে ও ছোট ভাইদের পড়ালেখা করাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের একটি বেকারির দোকানে কাজ করেন ১২ বছরের ছোট্ট শিশু সালমান।
রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর ও বিকেল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত জরিনা রিকশা নিয়ে ছুটে চলেন শহরের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়। মাঝখানে যে সময়টুকু পান বাসায় ফিরে সন্তানদের জন্য রান্না করা ও তাদেরকে গোসল করিয়ে মুখে খাবার তুলেন তিনি। রিকশা চালিয়ে যে টাকা রোজগার করেন তা দিয়ে ঘরভাড়া ও সন্তানদের ভরণপোষণ চালান। সময় যত যাচ্ছে জরিনার সংসারে অভাব যেন তাড়া দিচ্ছে তত। এক হাত ভাঙা অবস্থায় অভাব দূর করতে যে রিকশাটি কিস্তিতে নিয়েছিলেন সেটির ব্যাটারি নষ্ট হয়ে গেছে। মেরামতের জন্য প্রয়োজন ২০-২৫ হাজার টাকা।
টাকার অভাবে সন্তানদের পড়ালেখা ও চোখের অপারেশন করাতে পারচ্ছেন না এই সংগ্রামী নারী। তাই সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের সাহায্য চাইলেন জরিনা।
জরিনা বেগম বলেন, রিকশা চালাতে গিয়ে কোনো সমস্যা হয় না। যাত্রীরা ভালো ব্যবহার করেন। সবাই অনেক উৎসাহ দেন। শুরুর দিকে রিকশাচালাতে গিয়ে কিছুটা সমস্যা হয়েছিল। স্বামী মদ-গাঁজা সেবন করেন। সে ঘুমাতে না পারলে আমার সন্তানদের মারপিট করে। কিছুদিন আগে কাজ করতে গিয়ে আমার একটি হাত ভেঙে যায়। টাকার অভাবে ভালোমতো চিকিৎসা করাতে পারেননি। বাসাভাড়া দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, মানুষের বাসা-বাড়িতে যে টাকা পেতাম তা দিয়ে আমার সংসার চালানো সম্ভব না। পরে ইট ও কংক্রিট ভাঙার কাজ করতে গিয়ে চোখ জ্বালাপোড়া করায় বাধ্য হয়ে সেই কাজ ছেড়ে দেই। এখন কিস্তিতে একটি রিকশা কিনেছি। সেই কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে খুব কষ্ট হচ্ছে।
সংগ্রামী এই মা জানান, ছেলেদের লেখাপড়া শেখাতে খুব ইচ্ছে ছিল কিন্তু টাকার অভাবে সেটা হয়ে উঠছে না। প্রথম দিকে প্রতিদিন ৮শ থেকে ১ হাজার টাকা রোজগার করা গেলেও এখন ৪০০-৫০০ টাকা রুজি করতে পারি।