আমাদের বৃহত্তর সিলেট চা শিল্পাঞ্চলময়। বিস্তর এলাকাজুড়ে চা বাগানগুলো ভিন্ন ধরণের এক প্রাকৃতিক শোভা বৃদ্ধি করে রয়েছে। যেখানে চোখ কেবলই জুড়ায়। আমরা চা বাগান দেখে বারবার মুগ্ধ হই।
প্রায় প্রতিটি চা বাগানের অন্তঃপুরে আরও এক অদেখা সৌন্দর্য নেপথ্যেই রয়ে গেছে। বলাই বাহুল্য, দূর থেকে আসা নানাপ্রান্তের পর্যটকরা এই সৌন্দর্যের পরশ এখনো পাননি। তবে এই সৌন্দর্য সহজলভ্য নয়। অনুমতি ছাড়া চা বাগানের ভেতরে প্রবেশ না করলে সেই সৌন্দর্যকে প্রত্যক্ষ করা যায় না।
বিজ্ঞাপন
আর তা হলো জলময় হ্রদ। প্রায় প্রতিটি চা বাগানেই থাকে হ্রদ বা লেক। বৃহদাকার পাহাড়ি গাছগাছালিতে পূর্ণ টিলাময় শোভা এই লেক-কে সৌন্দর্যের সর্বোচ্চ সীমায় নিয়ে গেছে। এখানেই নানা প্রজাতির পাখিদের বাস। পাখিরা এখানে তাদের দিবসরজনী অবস্থান করে প্রাকৃতিক মুগ্ধতা ছড়ায়।
চা বাগানের সেইসব লেকেই জলের শোভা। জলের সখা হয়ে ছোট-পানকৌড়ি সেখানে বসতি গেড়েছে। ওরা পরিবারভুক্ত হয়ে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস অবস্থান করছে। পানিতেই জীবন। সেই জীবনের ধারায় টিকে থাকার নিরন্তর প্রচেষ্টায় কালো দেহের অধিকারী পানকৌড়িদের নিত্য সংগ্রাম।
বিজ্ঞাপন
ছোট-পানকৌড়িদের বিশেষ দিক হলো- যেখানে উড়ে এসে বসে সেখানেই দুই দিকের ডানা মেলে ধরে কিছুক্ষণের জন্য। তাতেই যেনো ক্লান্তি কাটানোর প্রয়াস। এভাবে ডানা মেলে ধারার দৃশ্য দূরে থেকে অপূর্ব লাগে। যা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। তবে এই দৃশ্য যে সব থাকে তা নয়। ইচ্ছে হলে সে এমনটা করবে। নয়তো করবে না। অন্যান্য পাখিদের মতোই চুপচাপ ডালে গিয়ে বসবে।
ছোট-পানকৌড়ির ইংরেজি নাম Little Cormorant এবং বৈজ্ঞানিক নাম Microcarbo niger. এরা আকারে হাঁসের মতো, মাত্র ৫১ সেন্টিমিটারের। সারাদেহ কালো হলেও তাদের থুতনি সাদাটে। বুক ও পেট কালচে বাদামি।
পানকৌড়িই চা বাগানের জলাধার বা লেকের ভালোবাসার জলসখা। খাদ্যের জোগানই শুধু নয়, তার একাকীত্বের বিরহগাঁথা গানগুলোও শুনে থাকে সেই লেক। এভাবেই জলের সঙ্গে তার দীর্ঘকালের বন্ধুত্ব। একে অপরের সঙ্গে যেন আষ্টেপৃষ্ঠে বাধা। কেউ কাউকেই ছেড়ে যাবার নয়।
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংঘ (আইইউসিএন), বাংলাদেশ এর তালিকায় এই পাখিটি ‘ন্যূনতম বিপদগ্রস্থ’ পাখি হিসেবে চিহ্নিত।
সন্তানদের মুখে দু-বেলা দুমুঠো ডাল-ভাত তুলে দিতে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করছেন মধ্যবয়সী জরিনা বেগম। সিলেট নগরীতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান তিনি। স্বামী কামাল মিয়া মাদকাসক্ত হয়ে পরিবারের সঙ্গে না থাকায় বাধ্য হয়ে এই পেশা বেছে নিয়েছেন তিনি। আগে ইট ভাঙার কাজ করলেও চোখের সমস্যা এবং অল্প মজুরি দিয়ে ঘরভাড়া-সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। তাই কিস্তিতে নেওয়া একটি ব্যাটারিচালিত তিন চাকার বাহন রিকশায় ভর করে লড়ছেন তিনি।
তিন ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে সিলেট নগরীর শামীমাবাদ এলাকায় একটি কলোনিতে ভাড়া বাসায় থাকেন জরিনা। জন্ম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হলেও ১০ বছর বয়স থেকে বেড়ে ওঠা সিলেট শহরে। জরিনার তিন ছেলে সালমান, শাওন ও আরমান। ছেলেদের পড়ালেখা করানোর ইচ্ছে থাকলেও সামর্থ নেই তার। মায়ের কষ্টের ভাগ কমাতে ও ছোট ভাইদের পড়ালেখা করাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের একটি বেকারির দোকানে কাজ করেন ১২ বছরের ছোট্ট শিশু সালমান।
রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর ও বিকেল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত জরিনা রিকশা নিয়ে ছুটে চলেন শহরের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়। মাঝখানে যে সময়টুকু পান বাসায় ফিরে সন্তানদের জন্য রান্না করা ও তাদেরকে গোসল করিয়ে মুখে খাবার তুলেন তিনি। রিকশা চালিয়ে যে টাকা রোজগার করেন তা দিয়ে ঘরভাড়া ও সন্তানদের ভরণপোষণ চালান। সময় যত যাচ্ছে জরিনার সংসারে অভাব যেন তাড়া দিচ্ছে তত। এক হাত ভাঙা অবস্থায় অভাব দূর করতে যে রিকশাটি কিস্তিতে নিয়েছিলেন সেটির ব্যাটারি নষ্ট হয়ে গেছে। মেরামতের জন্য প্রয়োজন ২০-২৫ হাজার টাকা।
টাকার অভাবে সন্তানদের পড়ালেখা ও চোখের অপারেশন করাতে পারচ্ছেন না এই সংগ্রামী নারী। তাই সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের সাহায্য চাইলেন জরিনা।
জরিনা বেগম বলেন, রিকশা চালাতে গিয়ে কোনো সমস্যা হয় না। যাত্রীরা ভালো ব্যবহার করেন। সবাই অনেক উৎসাহ দেন। শুরুর দিকে রিকশাচালাতে গিয়ে কিছুটা সমস্যা হয়েছিল। স্বামী মদ-গাঁজা সেবন করেন। সে ঘুমাতে না পারলে আমার সন্তানদের মারপিট করে। কিছুদিন আগে কাজ করতে গিয়ে আমার একটি হাত ভেঙে যায়। টাকার অভাবে ভালোমতো চিকিৎসা করাতে পারেননি। বাসাভাড়া দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, মানুষের বাসা-বাড়িতে যে টাকা পেতাম তা দিয়ে আমার সংসার চালানো সম্ভব না। পরে ইট ও কংক্রিট ভাঙার কাজ করতে গিয়ে চোখ জ্বালাপোড়া করায় বাধ্য হয়ে সেই কাজ ছেড়ে দেই। এখন কিস্তিতে একটি রিকশা কিনেছি। সেই কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে খুব কষ্ট হচ্ছে।
সংগ্রামী এই মা জানান, ছেলেদের লেখাপড়া শেখাতে খুব ইচ্ছে ছিল কিন্তু টাকার অভাবে সেটা হয়ে উঠছে না। প্রথম দিকে প্রতিদিন ৮শ থেকে ১ হাজার টাকা রোজগার করা গেলেও এখন ৪০০-৫০০ টাকা রুজি করতে পারি।
মানুষের প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস আর ভালোবাসার পাশাপাশি বৈচিত্র্যময় ক্ষমতা শুধুমাত্র পোষা প্রাণীর থেকেও অধিক গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে কুকুরকে। আনুগত্যের সঙ্গে যখন এদের বিস্ময়কর বুদ্ধিমত্তা যোগ হয় তখন অনায়াসেই এরা মানুষের এমন সঙ্গীতে পরিণত হয়, যার কোনো বিকল্প হয় না। এদের মধ্যে বিশেষ কিছু কুকুরের অসাধারণ দক্ষতা রয়েছে যার মাধ্যমে এরা ২০২৪ সালের সেরা কুকুরের জায়গা দখল নিয়েছে। এমনকি খবরের পাতায় শিরোনামও হয়েছে।
চলুন, যে কুকুরগুলো ২০২৪ এ সেরা কুকুর হিসেবে আলোচনায় এসেছে- তা জেনে নেওয়া যাক।
এরিয়েল
ছয়টি পা নিয়ে জন্মগ্রহণকারী এরিয়েল নামের কুকুরটি ছিল এ বছরের সবচেয়ে আলোচিত প্রাণী। ২০২৪ সালে এরিয়েলের অতিরিক্ত অঙ্গগুলো অস্ত্রপচারের মাধ্যমে অপসারণ করা হয় এবং অপারেশনটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়। এরপর কুকুরটিকে ওয়েস্ট ওয়েলসে বসবাসকারী এক কুকুরপ্রেমী নিয়ে যান। সেখানে এরিয়েল সার্ফিং করা শেখে। এখন এরিয়েল কেবল স্বাভাবিকভাবে হাঁটতেই পারে না, সে সমুদ্রে সাঁতার কাটছে, সে প্যাডেল বোর্ডিং, সার্ফিংও করতে পারে।
ওয়াইল্ড থাং
ক্যালিফোর্নিয়ায় বিশ্বের কুৎসিত কুকুর প্রতিযোগিতায় জয়ী কুকুর হচ্ছে ওয়াইল্ড থাং। অবশ্য এই শিরোপা জেতার আগে থাং চারবার ব্যর্থ হয়েছে।
আট বছর বয়সী পিকিংগিজ কুকুরছানা হিসেবে ভাইরাল ওয়াইল্ড থাং ক্যানাইন ডিসটেম্পারে রোগে আক্রান্ত হয়েছিল । যার ফলে তার জিহ্বা স্থায়ীভাবে আটকে যায়। আর এতেই সে বিশ্বের কুৎসিত কুকুর প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়। তবে তার মালিক বলেছে, ওয়াইল্ড থাং শারীরিকভাবে সুস্থ একটা কুকুর।
গাইয়া
তীক্ষ্ণ বুদ্ধি ও স্মৃতিসম্পন্ন কুকুর হচ্ছে গাইয়া। শুধু তাই নয় গাইয়া একটি সার্টিফাইড জিনিয়াস কুকুর। এ প্রজাতির কুকুরের বিভিন্ন বস্তুর নাম শেখার একটি অনন্য ক্ষমতা রয়েছে। এদের স্মৃতিশক্তি অত্যন্ত প্রখর হয়। গত সেপ্টেম্বরে বায়োলজি লেটারস জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, বিভিন্ন খেলনা, রঙ, জিনিসের নাম তারা দীর্ঘ সময়ের জন্য মনে রাখতে পারে। গাইয়া এই গবেষণায় শীর্ষস্থানীয় পারফর্মার ছিল।
টাইটান
টাইটান সাদা ল্যাব্রাডুডল প্রজাতির একটি কুকুর। তবে এটি কোন সাধারণ কুকুর না, টাইটান এক অসাধারণ বীরত্বের অধিকারী এক কুকুর। সে তার মালিকের হত্যাকারীকে খুঁজতে পুলিশকে সাহায্য করেছিল।
ডেইজি
ডেইজি মোল ভ্যালিতে তার মালিকের সাথে থাকতো। ২০১৬ সালে তার মালিকের বাগান থেকে হারিয়ে যায় এবং প্রায় ৮ বছর পর ২০২৪ সালে ডেইজি তার পুরনো মালিকের কাছে ফিরে আসে।
ট্রুপার
চলতি বছরে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় হ্যারিকেন মিল্টনের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে যাওয়া এক অপ্রতিরোধ্য কুকুর হচ্ছে ট্রুপার। এক ভিডিওতে দেখা যায়, ট্রুপারকে একটা খুটির সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে। সেখানে বুক সমান পানিতে বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করতে দেখা যায় ট্রুপারকে। ওই ভিডিও দেখে তাকে মৃতপ্রায় অবস্থায় উদ্ধার করে তার মালিকের কাছে ফেরত দেয়া হয়েছিল।
বেথ
বেথ হচ্ছে একটি রাজকীয় কুকুরছানা। সে রানি ক্যামিলার সাথে অনেক জায়াগায় ঘুরতে গেছে। তবে দুঃখজনকভাবে গত নভেম্বর মাসে একটি অনিরাময়যোগ্য টিউমারের কারণে বেথের মৃত্যু হয়।
কেভিন
বিশ্বের লম্বা কুকুরের খেতাব পাওয়া গ্রেট ডেন প্রজাতির কুকুর কেভিন। এ বছরের মার্চে কেভিন-কে বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা কুকুরের খেতাব দেয় গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ডস রেকর্ড। তবে তিন বছর বয়সী কুকুরটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপর এটিকে সুস্থ করার জন্য অস্ত্রোপচার করা হয়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে কেভিন মারা যায়।
জেনি
জেনি একটি গাইড কুকুর এবং যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক পোষা প্রাণী। লিবারেল ডেমোক্র্যাট এমপি স্টিভ ডার্লিংয়ের সাথে তাকে সব সময় দেখা যায়। এমনকি জুলাই মাসে সংসদে এমপিদের শপথ নেয়ার সময় জেনীকে বেঞ্চে শুয়ে থাকতে দেখা গেছে।
কমান্ডার
কমান্ডার একটি জার্মান শেফার্ড প্রজাতির কুকুর। ২০২১ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে যোগ দেয় কমান্ডার। চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রকাশিত ইউএসএসএসের এক অভ্যন্তরীণ ফাইলে দাবি করা হয়, জার্মান শেফার্ড অন্তত ২৪ বার হোয়াইট হাউসের কর্মীদের কামড়েছে।
এসব ঘটনার মধ্যে রয়েছে সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যদের কব্জি, কনুই, বাহু, বুক, কোমর, কাঁধ ও উরুতে কামড় দেওয়া হয়।
ফাইলে দেখা গেছে, হোয়াইট হাউসে এক এজেন্টের হাতের কনুইয়ে কামড় লাগার পর সেলাই দিতে হয়েছে এবং আরেকজনের হাতে ছয়টি সেলাই দিতে হয়েছে। তার এই কামড়ের জন্যই বেশ আলোচনায় ছিল কমান্ডার।
ববি
বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক কুকুরের স্বীকৃতি পেয়েছে ববি। গায়ে বাদামি ও সাদা রঙের মিশেল। দেখতে আর দশটি কুকুরের মতোই। কিন্তু সাধারণ কুকুর নয় ববি। রীতিমতো তারকা সে। নাম উঠেছে গিনেস বুকে। কারণ, ববির বয়স। গত মে মাসে ৩১ বছর পূর্ণ করেছে ববি।
বছর না ঘুরতে ববির ৩১ বছরের পথচলা থেমে গেছে। দীর্ঘজীবন পাওয়া ববি গত বছর অক্টোবরে মারা যায়। বয়স হয়েছিল ৩১ বছর ১৬৫ দিন। দীর্ঘদিন ববির চিকিৎসা করেছেন পশুচিকিৎসক কারেন বেকার। তিনি কুকুরটির মৃত্যুর খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে জানিয়েছেন।
ববির মালিক লিওনেল কস্তা জানান, ববি রাফেইরো জাতের কুকুর। গবাদিপশু পাহারা দেওয়ার জন্য এই কুকুরগুলো পোষা হয়। ১২ থেকে ১৪ বছর বাঁচে একেকটি কুকুর। তবে ববি ছিল ব্যতিক্রম।
সন্তানের নামকরণ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর তর্কের ঘটনা নতুন কিছু নয়। তর্ক হলেও সেটার সমাধান কিছু সময়ের ব্যাপার। কিন্তু এর সমাধানে দীর্ঘ তিন বছর নিজেদের মধ্যে লড়াইয়ের পরও যখন কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি তখন সাহায্যের জন্য আদালতে উপস্থিত হন। শুধু তাই নয় এক পর্যায়ে তারা বিবাহবিচ্ছেদেরও সিদ্ধান্ত নেন। ঘটনাটি অদ্ভুদ এবং এমন ঘটনা আগে কখনো ঘটেছে কি না তা নিয়ে কথা উঠতেই পারে। তবে এবার সেই কথার ইতি টানতে হবে!
সন্তানের নামকরণ নিয়ে তর্ক, সেটার সমাধানে আদালতের দ্বারস্ত হওয়া এবং শেষ পর্যন্ত বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত- এর পুরো দৃশ্যই চিত্রায়িত হয়েছে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কর্ণাটকে।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানায়, ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কর্ণাটকের এক দম্পতি তাদের ছেলের নামকরণ নিয়ে তিন বছর লড়াইয়ের পর আদালতের শরণাপন্ন হন। তাদের মধ্যে লড়াইটি এতোটাই খারাপ পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে এক পর্যায়ে তারা বিবাহবিচ্ছেদ চাইছিলো।
সন্তান জন্ম দেওয়া ওই নারীর নাম প্রকাশ না করে ঘটনাটির বিস্তারিত তুলে ধরে বিবিসি জানায়, ২০২১ সালে ওই নারী একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দিয়েছিল। এরপর কয়েক সপ্তাহের জন্য সে সন্তানসহ বাবা-মায়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। সন্তান জন্মের পর বিশ্রাম এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য স্ত্রীরা সাধারণত তাদের বাবার বাড়িতে বেড়াতে যায়- ভারতে এটা সাধারণ ঘটনা।
এরপর সন্তান ও স্ত্রীকে ওই বাড়ি থেকে আনতে স্বামীর যাওয়ার কথা। কিন্তু যখন স্বামীর বাছাই করা নাম নিয়ে স্ত্রী প্রশ্ন তোলে তখন স্বামী তার প্রতি বিরক্ত হয়ে তাকে আনতে যেতে অস্বীকৃতি জানান।
হুনসুরের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর সৌম্য এমএন জানিয়েছেন, তাদের মধ্যে এ নিয়ে ঝামেলা মাস থেকে বছরে পরিণত হয়। শেষ পর্যন্ত এটা এমন এক পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছায় তারা বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন।
ওই নারীর আইনজীবী এম আর হরিশ বিবিসি হিন্দিকে বলেছেন, এ নিয়ে তিনি স্থানীয় একটি আদালতে মামলা করেছেন। তিনি বিচ্ছেদের পর সন্তানের দেখাশোনা ও নিজের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অর্থ চেয়েছেন।
আদালতে বিচারকরা তাদেরকে এটির সমাধান নিজের মধ্যে কথা বলে করে নেওয়ার কথা জানান। কিন্তু তারা এতে রাজি হয়নি বরং আদালতকেই একটি নাম বেছে দেওয়ার জন্য বলেছেন।
পরবর্তীতে আদালত ছেলে শিশুটির নাম আর্যাবর্ধন রেখে রায় ঘোষণা করেন। আর্যাবর্ধন অর্থ "আভিজাত্য" বলে জানায় আদালত।
তারপর দম্পতি মালা বিনিময় করেন এবং পুনরায় একসঙ্গে তাদের সংসার চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়নের চরউভূতি গ্রামের বিস্তীর্ন চরের মাঝখানে পাশাপাশি দুটি 'বয়া' প্রায় শত বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
লোহার বয়াগুলো দেখতে গোলাকার মোটকা সদৃশ,উপরে রয়েছে রিং এর মতো গোলাকার লোহার হাতল। মাটির ঠিক কত নীচ থেকে এগুলোর অস্তিত্ব ফুটেছে জানা নেই কারও। তবে অসংখ্য মানুষ একত্র হয়েও টেনে তুলতে পারবেনা এগুলো।
কয়েক যুগ আগে 'বয়া'গুলোকে ঘিরে ছিল রূপকথা। তখনকার কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজে মানুষ বয়াগুলোকে অলৌকিক কোন বস্তু হিসেবে বিশ্বাস করতো। সেই বিশ্বাস থেকেই তখন দূরদূরান্তের মানুষ বিভিন্ন মনোবাসনা পূর্ণের নিয়তে এখানে ছুটে আসতো। আয়োজন করে মিলাদ পড়তো, করে টাকা রাখতো আর ভক্তি ভরে শ্রদ্ধা নিবেদন করতো। কালের বিবর্তনে যখন সমাজ সভ্য হয়ে উঠে,কুসংস্কার কমে যায় তখন থেকে এখানে আর মানুষ কোন মানতে আসেনা। তবে এই বয়াগুলোকে ঘিরে এখনো মানুষের কৌতুহলের শেষ নেই। প্রতিদিন দূর এলাকার কোননা কোন মানুষ এগুলো দেখতে ছুটে আসে এখানে।
স্থানীয়রা জানায়, প্রায় শত বছর আগে এই অঞ্চলে প্রমত্তা মেঘনা বহমান ছিল। এখানে নদীটির দৈর্ঘ্য ছিল ৭ মাইল আর প্রস্থ ছিল ১ মাইল। নদীতে বড়বড় জাহাজ চলাচল করতো এই জায়গার উপর দিয়ে। এরপর নদীটি ক্রমে পশ্চিম দিকে সরে গিয়ে এদিকে চর দিয়ে যায়। নদী থাকাকালে জাহাজ চলাচলের দিকনির্দেশনার জন্য এদিকে কয়েকটি বয়া ফেলা হয়। চর দেওয়ার পর এই দুইটি বয়া এখানে মাটি চাপা পড়ে যায়। ধীরে ধীরে মাটি সরে গিয়ে বয়াগুলোর অস্তিত্ব ফুটে উঠে।
তবে একসময় মানুষ মনে করতো এই বয়া দুটো এখানে আসার পর থেকেই নদী সরে যায় এখান থেকে। তাই মানুষ অলৌকিক ভেবে এগুলো ঘিরে মানত আর মিলাদ করতো। এসবগুলোও অনেক পুরান কাহিনী। যেহেতু বয়াগুলো মানুষের কাছে ছিল রহস্যাবৃত। তাই এগুলো নিয়ে রূপকথাও ছিল মুখেমুখে। যার কারনে এখানে এই চরটির নামও বয়াগুলোর সাথে মিল রেখে মুখে মুখে রটে যায় "বয়ার চর"।
রহস্যঘেরা এই বয়া দুটি নিয়ে স্থানীয়দের কাছে কৌতুহলের শেষ নেই। এগুলো কীভাবে কোথা থেকে আসলো অনেকেরই জানা নেই। স্থানীয় অনেক বয়স্করাও ছোটবেলা থেকেই গোলাকার এই দুটি বয়া দেখে আসছেন এখানে। আর বাপ-দাদার মুখ থেকেই শুনে আসছেন এগুলোকে ঘিরে নানান রহস্যময় কাহিনী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়,এক সময় লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ, তেওয়ারীগঞ্জ, কুশাখালীসহ আশপাশ এলাকা নদী ছিল। তৎকালীন নোয়াখালী জেলার কুশাখালীর ফরাশগঞ্জ ছিল নৌ-বন্দর। ফরাশগঞ্জ নৌ বন্দরে বড় বড় জাহাজ ভিড়ত। জাহাজ ভিড়াবার জন্য ব্রিটিশরা এ অঞ্চলে কয়েকটি বয়া স্থাপন করে। সেগুলোর মধ্যে এ দুটি বয়াও ছিল। নদী সরে গিয়ে এলাকায় চর জেগে তখন বয়াগুলো মাটির নিচে চাপা পড়ে যায়। তবে কালের বিবর্তনে সেগুলোর ওপর থেকে মাটি সরে গিয়ে ওপরের অংশ দৃশ্যমান হয়।
স্থানীয় ষাটোর্ধ্ব আব্দুল আলী বলেন, তিনি ছোটবেলা থেকেই এখানে বয়াগুলো দেখে আসছেন। বাপ-দাদাদের মুখে শুনেছেন, তৎকালে অনেক দূর থেকে মানুষ বিভিন্ন নিয়তে এখানে আসতো। মোমবাতি জ্বালাতো, ধূপ পোড়াতো। মিলাদ পড়তো শিরনি বিতরণ করতো। মানত করে টাকা দিত। অনেক বছর এগুলো লাল কাপড় দিয়ে মানুষ ঘিরে রেখে বিশেষভাবে যত্ন নিত। মানত করে এখানে রেখে যাওয়া টাকা পয়সা এলাকার দুষ্ট পোলাপান নিয়ে যেত বলেও জানান তিনি।
এসময় তিনি আরও জানান, বয়াগুলো এখানে আসার পর থেকেই এদিকে আস্তে আস্তে চর জেগে উঠে। এ ধরনের বিশ্বাস ছিল তখন মানুষের মনে।
মমিন উল্যাহ নামে স্থানীয় বয়োবৃদ্ধ একজন বাসিন্দা বলেন, ১৯৬০ সালের আগে এ চরে তেমন কোনো বসতি ছিল না। নদীর জেগে উঠা চরে ফসল চাষ হত। তখন এ বয়াগুলো লোকজনের নজরে পড়ে। এরপর থেকে বয়াগুলো এভাবেই পড়ে আছে। বয়ার নামে এ এলাকার নাম ‘বয়ারচর’ হয়েছে।
মোহাম্মদ শাহজাহান নামের একজন বলেন, ছোটবেলা থেকে বয়া দুটি দেখে আসছি। অতীতে বয়ার ওপর লোহার তৈরি খাঁচা ছিল। অনেকটা টাওয়ারের উচ্চতার মতো ছিল। কিন্তু সেগুলো কেউ হয়তো নিয়ে গেছে। এখন বয়া দুটি অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে। লোহাগুলো ক্ষয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় শিক্ষাবিদ ও গবেষক সানাউল্যা সানু বলেন, ৭৫ বছর পূর্বে লক্ষ্মীপুর-রামগতি বেড়ী বাধ হওয়ার পর মেঘনা নদী এদিকে চর দিয়ে ৩৫ মাইল পশ্চিমে সরে যায়। এখানে নদী থাকাকালীন বয়াগুলো জাহাজ চলাচলের নির্দেশিকা হিসেবে ফেলা হয়। পানির উপর ভেসে থাকা বয়াগুলোর কোনটাতে লাল আর কোনটাতে সবুজ রঙের বিশেষ বাতি জ্বলতো। যা জাহাজ চলাচলের জন্য বিপজ্জনক ও বিপদমুক্ত পথের নির্দেশনা দিত।
উল্লেখ্য, বয়া হলো নেভিগেশন ইকুয়েপমেন্ট। এগুলো লোহার তৈরি শিকল ও অ্যাঙ্কর দিয়ে আটকানো থাকে।