গতকালই গণমাধ্যমে খবর এসেছে প্রযোজক ও পরিচালক মোহাম্মদ ইকবাল তার ‘বিট্রে’ ছবি থেকে বাদ দিয়েছেন চিত্রনায়িকা শবনম বুবলীকে। যে ছবির প্রায় অর্ধেক কাজ শেষ করেছেন বুবলী ও রোশান, সেখান থেকে তাদের বাদ নিয়ে নতুন জুটি নিয়ে কাজ করার এই ঘোষণা নিঃসন্দেহে প্রযোজকের জন্য বিরাট সিদ্ধান্ত। এই খবর সত্যি হলে এই তারকাদের জন্যও তা ভীষণ অপমানজনক।
বুবলীর ওপর যে ইকবাল খুব বিরক্ত সে কথা দুদিন আগেই তার আরেক মন্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে। তিনি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, রিভেঞ্জ খুবই ভালো গল্পের সুনির্মিত সিনেমা। তারপরও ছবিটি দর্শকের কাছে ঠিকমতো পৌঁছতে পারেনি নায়ক-নায়িকার দায়িত্বহীনতার কারণে। বুবলী শাকিব খানকে এতোটাই ভালোবাসে যে, তার সিনেমা (তুফান) যাতে একচেটিয়া ব্যবসা করতে পারে এজন্য নিজের সিনেমার (রিভেঞ্জ) কোন প্রচারণাতেই তিনি আসেননি!
বিজ্ঞাপন
এখন সিনেমা হলে ‘রিভেঞ্জ’ সিনেমার অবস্থা বেশ শোচনীয়। তাই এর প্রযোজক ও পরিচালক ইকবাল তার পরবর্তী ছবি ‘বিট্রে’ থেকে বুবরীকে বাদ দিয়েছেন।
শাকিব খানের জন্য শুধু ‘বিট্রে’ নয়, বুবলী প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রেই তার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এই নায়িকার দাবী, ‘আমি শেহজাদকে সামনে আনার পর থেকেই অনেক কিছুই হচ্ছে। আমাকে নিয়ে প্রপাগান্ডা ছড়ানোর চেষ্টা চলছে। আমি যেখানে যে সেক্টরেই কাজ করছি, সেখারে আমার সহশিল্পী নিয়ে হোক, প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান হোক কিংবা টিভিসির ক্ষেত্রে হোক, প্রতিটি জায়গায় আমাকে নিয়ে নোংরাভাবে মিথ্যা নিউজ ছড়ানো হচ্ছে। যাতে আমি কাজ না করতে পারি। এই কাজগুলো কেন করা হচ্ছে? কিংবা কারা করছেন? সেকথা তো আলাদা করে বলার দরকার নেই। এগুলো পরিকল্পনা করেই করা হচ্ছে আসলে।’
বিজ্ঞাপন
বুবলী কথাগুলো সরাসরি না বললেও সাক্ষাৎকারের আগে ও পরের বিষয়ে তিনি যে আলাপ করেন তাতে বোঝাই যাচ্ছে এই কাজের সঙ্গেও শাকিব খানের সম্পৃক্ততা রয়েছে। কারণ এই নায়ককে ঘিরেই সারা বছর বুবলীর সঙ্গে আরেক জনিপ্রয় নায়িকার দ্বন্দ্ব চলতেই থাকে।
শুধু কাজের ক্ষেত্র নয়, বুবলীর ব্যক্তিজীবন নিয়েও নানা মিথ্যা কথা ছড়ানো হচ্ছে বলে জানালেন তিনি। বর্তমানে শোবিজে চাউর আছে, বুবলীকে শাকিব খান বা তার পুরো পরিবার একদমই পছন্দ করেন না। বরং অপু বিশ্বাস এখন তাদের বেশ কাছের। এ প্রসঙ্গে বুবলী বলেন, এটাও সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। এ ধরনের কথা শুনলে মনে হয় যেন গ্রামের কোন একটি পরিবেশ। শাকিব খান বা তার বাবা মা তো এমন নন। এ ধরনের কথা ছড়ানো মানে তাদেরই অসম্মান করা। আসল কথা হলো, তাদের সবার সঙ্গে আমার খুবই ভালো সম্পর্ক। নানা বিষয়ে আমাদের কথা হয়, দেখা হয়। শাকিব নিজেও তার ছেলেকে দেখতে বাসায় আসে, আমারও যাওয়া হয়। এটা তো খুবই স্বাভাবিক তাই না? কারণ এটা তো একটা সম্পর্ক। আমরা একই সন্তানের বাবা-মা। আমাদের দেখা সাক্ষাৎ হবে এটাই তো স্বাভাবিক।
প্রতি বছরের মতো এ বছরও জীবনের ভ্রমণ শেষ করে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন বিনোদন অঙ্গনের বেশকিছু গুণীজন। কেউ অসুস্থ হয়ে পাড়ি দিয়েছেন না ফেরার দেশে। আবার কেউ বেছে নিয়েছেন আত্মহত্যার মত কঠিন পথ।
জাহিদুল হক
১৫ জানুয়ারি মারা যান ষাটের দশকের কবি, গল্পকার, গীতিকার জাহিদুল হক। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। সঙ্গীত শিল্পী সুবীর নন্দীর কণ্ঠে তার লেখা ‘আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়’ গানটি দেশজুড়ে তুমুল জনপ্রিয়তা পায়।
আহমেদ রুবেল
গত ৭ ফেব্রুয়ারি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান অভিনেতা আহমেদ রুবেল। ওইদিন সন্ধ্যায় বসুন্ধরা সিটির বেজমেন্টে গাড়ি রেখে নিজের শেষ সিনেমা ‘পেয়ারার সুবাস’-এর প্রিমিয়ার অনুষ্ঠানে এসেছিলেন তিনি। গাড়ি থেকে নামার পর ফ্লোরে পড়ে যান এই অভিনেতা। এরপর তাকে স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সাদি মহম্মদ
প্রখ্যাত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদ ১৩ মার্চ মারা যান। অজানা এক অভিমানে আত্মহত্যা করেন এই গুণী সংগীতশিল্পী।
খালিদ
‘হয়নি যাবারও বেলা’, ‘সরলতার প্রতিমা’, ‘আবার দেখা হবে’র মতো অসংখ্য জনপ্রিয় গানের শিল্পী খালিদ মারা যান। ১৮ মার্চ রাজধানীর পান্থপথের কমফোর্ট হাসপাতালে তিনি মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর।
জিএম ফুরুখ
১৮ মার্চ লন্ডনে বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ হারান লন্ডন প্রবাসী বাংলাদেশি নাট্য নির্মাতা জিএম ফুরুখ। মৃত্যু কালে তার বয়স হয়েছিল ৪৫ বছর।
আবু তাওহীদ হিরণ
১৫ এপ্রিল ঢাকার মগবাজারের ফ্ল্যাটে মৃত অবস্থায় ‘আদম’ সিনেমার নির্মাতা আবু তাওহীদ হিরণের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
অলিউল হক রুমি
ক্যানসারে আক্রন্ত হয়ে ২২ এপ্রিল অভিনেতা অলিউল হল রুমি মারা যান। ক্যানসার জয় করে আগের মতো অভিনয়ে ফিরতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফেরা হয়নি তার।
এম এ আউয়াল
৭ মে রাজধানীর মগবাজার দিলু রোডের একটি বাসা থেকে ‘রাজপথের বাদশা’ ও ‘কাছের শত্রু’ সিনেমার পরিচালক এম এ আউয়ালের (৬০) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, চলচ্চিত্র পরিচালক দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, ঘুমের মধ্যেই অসুস্থতার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।
মাসুদুল মাহমুদ রূহান
১১ মে তরুণ প্রযোজক মাসুদুল মাহমুদ রূহানের মরাদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানায়, তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
শাফিন আহমেদ
২৫ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে মারা যান জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকা শাফিন আহমেদ। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর।
হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল
৩০ জুলাই সকালে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান সংগীতশিল্পী, নির্মাতা ও সঞ্চালক হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল। ১১ বছর ধরে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন তিনি।
আব্দুল ওয়াদুদ রঙ্গিলা
উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসে ভোগার পর ১২ মার্চ মারা যান খায়রুন সুন্দরীসহ বেশ কিছু ব্যবসাসফল ছবির অভিনেতা আব্দুল ওয়াদুদ রঙ্গিলা। তার বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর।
শিল্পী চক্রবর্তী
রক্তক্ষরণ জনিত কারণে ৭ মার্চ ঢালিউডের অন্যতম সফল নির্মাতা শিল্পী চক্রবর্তী মারা গেছেন। মৃত্যুকালে নির্মাতার বয়স ছিলো ৭১ বছর।
মো. শাহাদাৎ হোসেন বাদশা
১৫ জুন চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির সাবেক সভাপতি হাজি মো. শাহাদাৎ হোসেন ওরফে বাদশা মারা যান। রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তিনি মনোয়ার হোসেন ডিপজলের ভাই।
মনি কিশোর
চলতি বছর অক্টোবরে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান ৯০ দশকের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী মনি কিশোর। ১৯ অক্টোবর রাজধানীর রামপুরার বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, হৃদ যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়।
মাসুদ আলী খান
বরণ্য অভিনেতা মাসুদ আলী খান মারা যান চলতি বছরের ৩১ অক্টোবর। মৃত্যুর আগে দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন তিনি।
ওস্তাদ মিহির লালা সাহা
১৭ আগস্ট নিজ বাসায় মারা যান স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠসৈনিক ওস্তাদ মিহির লালা সাহা। তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।
আলাউদ্দিন লাল
গত ২৫ সেপ্টেম্বর মারা যান অভিনেতা আলাউদ্দিন লাল। ২০০৮ সাল থেকে টিভি নাটকে অভিনয় করেন আলাউদ্দীন লাল। প্রায় ৩০০ নাটকে অভিনয় করেছেন এই প্রবীণ অভিনেতা।
সুজেয় শ্যাম
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগীতযোদ্ধা, সুরকার ও সংগীত পরিচালক সুজেয় শ্যাম মৃত্যুবরণ করেন ১৭ অক্টোবর। সংগীতে অবদানের জন্য তিনি ২০১৮ সালে একুশে পদক এবং এর আগে ২০১৫ সালে পান শিল্পকলা পদক।
আফরোজা হোসেন
দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ১০ নভেম্বর মারা যান ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী আফরোজা হোসেন। দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসারের সঙ্গে লড়ছিলেন আফরোজা। জরায়ুমুখ ক্যানসার ধীরে ধীরে মেরুদণ্ড থেকে হাড়ে ছড়িয়ে পড়ে তার। অবশেষে সবাইকে কাঁদিয়ে পাড়ি জমালেন না ফেরার দেশে।
আবু জাফর
বছরের শেষের দিকে আমরা হারাই বিখ্যাত গীতিকার, সুরকার ও শিক্ষক আবু জাফরকে। তিনি মারা যান গত ৫ ডিসেম্বর। আবু জাফর রাজশাহী ও ঢাকা বেতার এবং টেলিভিশনের নিয়মিত সংগীতশিল্পী ও গীতিকার ছিলেন।
পাপিয়া সারোয়ার
বছরের একেবারে শেষপ্রান্তে এসে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান একুশে পদকজয়ী রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী পাপিয়া সারোয়ার। দীর্ঘদিন ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। গত ১২ ডিসেম্বর সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থান মারা যান গুণী এই শিল্পী।
আজাদী হাসনাত ফিরোজ
ঢাকাই সিনেমার সফল নির্মাতা আজাদী হাসনাত ফিরোজ মৃত্যুবরণ করেন গত ১৭ ডিসেম্বর। আজাদী হাসনাত ফিরোজ ছিলেন প্রেমের সিনেমার পরিচালক। শাবনূরকে নিয়েই ১০টি সিনেমা নির্মাণ করেছেন তিনি। তার পরিচালিত উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে ‘কাজের মেয়ে’, ‘সবার উপরে প্রেম’, ‘বউ শাশুড়ির যুদ্ধ’, ‘ফুলের মতো বউ’, ‘রসের বাইদানী’, ‘ঘরের লক্ষ্মী’, ‘স্বামী নিয়ে যুদ্ধ’ ইত্যাদি।
মিনহাজ আহমেদ পিকলু
হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ২০ ডিসেম্বর রকস্ট্রাটা ও অর্থহীন ব্যান্ডের সাবেক গিটারিস্ট মিনহাজ আহমেদ পিকলু। তিনি ছিলেন কিংবদন্তি গিটারিস্ট নিলয় দাশের শিক্ষার্থীদের অন্যতম।
সি বি জামান
‘উজান ভাটি’ খ্যাতদেশের খ্যাতনামা চলচ্চিত্র নির্মাতা সি বি জামান মারা গেছেন ২০ ডিসেম্বর। চলতি মাসে হার্ট অ্যাটাকের পর থেকেই আইসিইউতে ছিলেন তিনি।
২০১৩ সালের দিকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত শিল্পী হিসেবে নাটকে অভিনয় শুরু করেছিলেন মানসুরুল হক। তবে অভিনয় পেশাকে অব্যহতি জানিয়ে বর্তমান তিনি উপস্থাপন করছেন দেশের বেশ কয়েকটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে। তার সঞ্চালনায় উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- চ্যানেল আইতে প্রচারিত দুর্যোগ কথা, এটিএন বাংলায় প্রচারিত উন্নয়নের বাংলাদেশ, আরটিভিতে প্রচারিত 'দুর্নীতিকে না' প্রভৃতি।
কেন অভিনয় ছেড়ে উপস্থাপনায় এলেন? জানতে চাইলে মানসুরুল হক বলেন, ‘অভিনয় পেশায় প্রাণের টান খুঁজে না পেয়ে অভিনয় থেকে সরে এসেছি!’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্ম নেয়া মানসুর স্থানীয় অন্যদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে স্কুল জীবন শেষ করে ঢাকার একটি স্বনামধন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ সম্পন্ন করেন। এরপর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে যোগদান করেছিলেন বাংলাদেশ সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে। ২০০৫ সালে দুর্যোগ মোকাবেলা ও ঝুঁকিহ্রাস ব্যবস্থাপনা বিষয়ে জাতিসংঘে বাংলাদেশের একমাত্র ফেলো হিসেবে দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ার গৌরব অর্জন করেন তিনি।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করলেও মানসুরের অভিনয়ের প্রতি দুর্বলতা ছিলো ছোটবেলা থেকেই। তাইতো ২০১৩ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে তালিকাভুক্ত শিল্পী হিসেবে অভিনয় শুরু করেছিলেন। তবে আস্তে আস্তে দেশের মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজটিই তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হতে লাগলো। তাই এখন থেকে এই কাজেই তার পুরোটা সময় ও মেধা ব্যয় করতে চান।
অভিনয় থেকে সরে এসে মানসুর বর্তমানে সমাজদের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে গণমাধ্যমের প্রয়োজনীয়তা ভিন্নভাবে অনুভব করেছেন। তাইতো দেশের বেশ কয়েকটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে সঞ্চালনা করছেন প্রাকৃতিক, মানবসৃষ্ট দুর্যোগ প্রতিরোধ ও সচেতনতামুলক অনুষ্ঠানের। কাজ করছেন দুর্নীতি প্রতিরোধ, শিক্ষার প্রসার ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবেলায় জনগণকে ঐকবদ্ধও করতে।
মানসুর মনে করেন, প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবেলায় মানুষ যেদিন ঐক্যবদ্ধ ভাবে নিজেরাই সচেতন হবে। সেদিনই তিনি জীবনের পরিপূর্ণ সার্থকতা খুঁজে পাবেন।
মেহজাবীন চৌধুরীর অভিষেক সিনেমা ‘প্রিয় মালতী’র প্রশংসা শোনা যাচ্ছে মুক্তির পর থেকেই। কিন্তু অনেকেই মনে করছেন, ছবিটি শুধু বোদ্ধা দর্শকই পছন্দ করছে। সাধারণ দর্শক সেভাবে দেখছে না।
কিন্তু আজ এক জরিপে সেই ধারণাও ভুল প্রমাণিত হলো। দেশের সর্ববৃহৎ চেইন মাল্টিপ্লেক্স ‘স্টার সিনেপ্লেক্স’-এ মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমার মধ্যে এই সপ্তাহে কোন ছবিটি বেশি দেখেছেন দর্শক, তার একটি তালিকা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। তালিকায় দেশীয় সিনেমার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ‘প্রিয় মালতী’।
এই সপ্তাহের শীর্ষ সাত সিনেমার মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মেহজাবীন চৌধুরী অভিনীত সিনেমা ‘প্রিয় মালতী’। তাতে বোঝাই যায়, ছবিটি সিঙ্গেল স্ক্রিনে অতো মার কাটারি ব্যবসা না করলেও মাল্টিপ্লেক্সে ভালোই সাড়া ফেলেছে।
খবরটি নিজেই সাংবাদিকদের জানিয়ে নিজের উচ্ছ্বাসের কথা প্রকাশ করেছেন। মেহজাবীন বলেন, ‘এই বছরটা আমরা দারুণ একটা খবর দিয়ে শেষ করছি! প্রিয় মালতি টিমের আমরা সবাই সুপাার এক্সাইটেড। কারণ, সবার ভালোবাসা আর সাপোর্ট-এর জন্য আমাদের সিনেমা ভালো করছে। এটা আপনাদের সবার সাপোর্ট ছাড়া সম্ভব হতো না। আমাদের সিনেমাকে এতটা ভালোবাসা আর সাপোর্ট দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করি, ভবিষ্যতেও আমরা এভাবেই একসাথে এগিয়ে যাবো।’
এই ছবিতে মেহজাবীন লড়াকু নারী মালতী রানি দাশ চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তার অভিনয়ের প্রশংসা করছেন অনেকে। ছবিটি পরিচালনা করেছেন তরুণ নির্মাতা শঙ্খ দাশগুপ্ত। প্রযোজনা করেছে ফ্রেম পার সেকেন্ড।
গত ২০ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া ছবিটিতে আরও অভিনয় করেছেন নাদের চৌধুরী, আজাদ আবুল কালাম, মোমেনা চৌধুরী, সমু চৌধুরী, আনিসুল হক বরুণ, শাহজাহান সম্রাট, রিজভী রিজু।
স্টার সিনেপ্লেক্সের তালিকায় প্রথম অবস্থানে রয়েছে হলিউডের সিনেমা ‘মুফাসা: দ্য লায়ন কিং’, এরপরই ‘প্রিয় মালতী’। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ‘মোয়ানা ২’, চতুর্থ অবস্থানে ‘সোনিক দ্য হেজহগ’, পঞ্চম স্থানে ‘৮৪০’, ষষ্ট অবস্থানে ‘ক্র্যাভেন দ্য হান্টার’ ও সপ্তম স্থানে রয়েছে ‘নকশীকাঁথার জমিন’।
জুয়ার প্রচারণায় যুক্ত হওয়ায় বছরের বিভিন্ন সময়ে সমালোচিত হয়েছেন শোবিজ তারকারা। অবাক করা বিষয় হলো- এই কাজটির জন্য কতৃপক্ষের প্রথম পছন্দ ঢালিউডের শীর্ষ নায়িকারা। কেউ কেউ এই কাজে যুক্ত হওয়ার পেছনে নিজেদের যুক্তি দাঁড় করিয়েছিলেন, কেউ ছিলেন চুপচাপ। বছরের প্রথম থেকে যারা জুয়ার অ্যাপের প্রচারণায় যুক্ত হয়ে সমালোচিত ছিলেন, একনজরে দেখে নেওয়া যাক-
এ বছর দুটি ছবি মুক্তি পেয়েছে অপু বিশ্বাসের। একটি ‘ট্র্যাপ; দ্য আনটোল্ড স্টোরি’, অন্যটি ‘ছায়াবৃক্ষ’। দুটি ছবির কোনোটিই তাকে সফলতা এনে দিতে পারেনি। অভিনয় দিয়ে আলোচনায় আসতে না পারলেও অপু বিশ্বাস হয়েছেন সমালোচিত। তার এই সমালোচিত হওয়ার কারণ একটি অবৈধ জুয়ার অ্যাপের প্রচারণায় যুক্ত হওয়াকে ঘিরে। অবৈধ সেই বেটিং অ্যাপের শুভেচ্ছাদূত হওয়ার খবর এ বছরের জানুয়ারিতে প্রথম প্রকাশ্যে আসে। বছরের শুরুতে অবৈধ সেই অ্যাপ অপু বিশ্বাসের একটি ভিডিও শুভেচ্ছাবার্তা পোস্ট করে।
২০২৪ সালে কোনো ছবি মুক্তি পায়নি মাহিয়া মাহির। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ ঘিরে গত বছরের শেষ দিক থেকে বছরের শুরুর দিকে এই তারকাকে ঘিরে ছিল আলোচনা–সমালোচনা। জানুয়ারিতে নির্বাচন শেষ হলেও মাহিকে ঘিরে নির্বাচনকেন্দ্রিক আলোচনা থেমে থাকেনি। একসময় এসে মাহি ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ রাকিব সরকারের সঙ্গে তার সংসারের ইতি টানার খবরে আলোচনায় আসেন। মে মাসে এসে শোনা যায়, মাহিয়া মাহি একটি অবৈধ জুয়ার অ্যাপের প্রচারণায় যুক্ত হয়েছেন। শুভেচ্ছাদূত হয়েই তিনি সেই জুয়ার অ্যাপের প্রচারণা চালান। ফেসবুকে এক ভিডিও বার্তায় বিষয়টি জানান মাহি নিজেই। এভাবে প্রকাশ্যে অবৈধ জুয়ার অ্যাপের প্রচারণার কারণে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন মাহি। সব মিলিয়ে বছরটা মোটেও ভালো যায়নি মাহির। হাতে সিনেমা নেই। নির্বাচনে হারার পর দ্বিতীয় সংসারেও ভাঙন। তবে তারপরও নিজেকে ফিরে পেতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
২০২৪-এ বড়পর্দায় কোনো ছবি মুক্তি পায়নি পরীমনির। তবে শুটিং করেছেন একাধিক চলচ্চিত্রের। কোনোটি দেশের, আবার কোনোটি দেশের বাইরের। বছরের শেষ দিকে ওটিটিতে মুক্তি পাওয়া কাজ দিয়ে আলোচনায় ছিলেন এই তারকা। অভিনয়জীবনের শুরু থেকে আলোচনার পাশাপাশি নানান সব কর্মকাণ্ডের কারণে সমালোচিত পরীমনি। এ বছর জুয়ার অ্যাপের মডেল হয়েও ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন এই তারকা। যেখানে বাংলাদেশের আইনে যেকোনো ধরনের জুয়া ও বাজি ধরা নিষিদ্ধ, প্রচার-প্রচারণায়ও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে—সেখানে অন্য তারকাদের মতো জুন মাসে পরীমনি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি অনলাইন বেটিং (জুয়া) প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনচিত্র প্রকাশ করেন। এতে ক্রিকেট ম্যাচ চলাকালে বাজি ধরে অর্থ লাভের জন্য দর্শককে প্রলুদ্ধ করতে দেখা গেছে তাকে।
অনেক দিন ধরে নতুন কোনো ছবিতে অভিনয়ের খবরে ছিলেন না ঢালিউড তারকা নুসরাত ফারিয়া। সেপ্টেম্বরে এসে তারপরও আলোচনায় তিনি। এই সময়টায় একটি জুয়ার অ্যাপের শুভেচ্ছাদূত হওয়ার পাশাপাশি সেই অ্যাপের একটি গানেও দেখা গেছে তাকে। গানে গানে জুয়ার প্রচারণা চালিয়েছেন নুসরাত ফারিয়া। ‘সবাই মিলে খেলব, আনন্দ করে ফিরব, সাবধানে খেলে যাব...’ এমন কথার একটি গানের জমকালো পরিবেশনায় অংশ নিয়েছেন নুসরাত ফারিয়া। গানের শেষাংশে তাকে বলতে দেখা গেছে, ‘প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে পথচলায় আমি ভীষণ রোমাঞ্চিত।’ ভিডিওর বর্ণনায় লেখা হয়েছে, ‘শুভেচ্ছাদূত নুসরাত ফারিয়ার অফিশিয়াল গানের ভিডিও। বাংলাদেশের নিরাপদ প্ল্যাটফর্ম...।’
চলতি বছর মুক্তি পাওয়া দুটি সিনেমা ‘মায়া: দ্য লাভ’ ও ‘রিভেঞ্জ’-এ চিত্রনায়িকা শবনম বুবলী ছিলেন চলনসই। তবে ভিন্নধারার সিনেমা ‘দেয়ালের দেশ’-এ অভিনেত্রী বুবলীকে পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ‘মায়া’ ও ‘দেয়ালের দেশ’ মুক্তি পেয়েছিল রোজার ঈদে। একই সময়ে একই অভিনেত্রীর দুটি ভিন্নধারার সিনেমা চলছে হলে, এটা বিরল দৃশ্যই বটে। অক্টোবরে ‘পিনিক’ নামের নতুন ছবির শুটিংয়ের কারণে আবার খবরের শিরোনামে আসেন এই তারকা। ছবির শুটিংয়ের মধ্যে সমালোচিত হন বুবলী, তাকে ঘিরে এই সমালোচনা জুয়ার অ্যাপের শুভেচ্ছাদূত হওয়ার কারণে। হঠাৎ করে জুয়ার অ্যাপের প্রচারণামূলক একটি ভিডিও নিজের ফেসবুক পেজে শেয়ার করে নিজেই জানান অবৈধ অ্যাপের শুভেচ্ছাদূত হওয়ার খবর। প্রচারণামূলক সেই ভিডিওতে বুবলীকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি বুবলী।....একজন শুভেচ্ছাদূত। তোমরা সবাই কি তৈরি আছ? অনলাইন স্পোর্টস এবং ক্রিকেট অভিজ্ঞতাকে নেক্সট লেভেলে নিয়ে যাওয়ার জন্য।...শুধু একটি আঙুলের ছোঁয়ায়। সুযোগ হাতছাড়া কোরো না।....জেতার আনন্দ উপভোগ করো, নিরাপত্তার স্বার্থে।...যেখানে খেলা শুধু জেতার জন্য।’ সাধারণত চিত্রনায়িকা শবনম বুবলী তাঁর ফেসবুক পোস্টের মন্তব্যের ঘর সবার জন্য উন্মুক্ত রাখেন। তবে জুয়ার অ্যাপের প্রচারণামূলক এই ভিডিও পোস্টের পর মন্তব্যের ঘর বন্ধ করে রেখেছিলেন।
বছরের শেষ দিকে মডেল ও অভিনেত্রী পিয়া জান্নাতুলের জুয়ার অ্যাপের প্রচারণার খবরটি প্রকাশ্যে আসে। সদ্য শুরু হওয়া এবারের বিপিএল ঘিরে একটি জুয়ার অ্যাপের পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি অনুষ্ঠানে কথা বলতে দেখা গেল এই মডেল ও অভিনয়শিল্পী তারকাকে। মডেল ও অভিনয়শিল্পী জান্নাতুল পিয়া একজন পেশাদার আইনজীবীও। তাই বিনোদন অঙ্গনসংশ্লিষ্টদের মতে, একজন আইনজীবী হয়ে তিনি কীভাবে একটি জুয়ার অ্যাপের স্পনসর হয়েছেন, এমন একটি অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হলেন! বিপিএল উপলক্ষে পিয়া একটি ক্রিকেটবিষয়ক অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করছেন। ফেসবুক ও ইউটিউবের জন্য তৈরি এই অনুষ্ঠানে জান্নাতুল পিয়াকে ম্যাচ–পূর্ববর্তী বিশ্লেষণ করতে দেখা গেছে। উপস্থাপনার সময় এই মডেল ও অভিনেত্রী জুয়ার অ্যাপের নামসংবলিত একটি টি–শার্ট পরিহিত ছিলেন। তবে তিনি দাবি করেছেন, এই অ্যাপের শুভেচ্ছাদুত নন তিনি। তবে পিয়া জান্নাতুল বলেন, ‘আমি একজন ক্রিকেটপ্রেমী। বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে আমি কথা বলতে ভালোবাসি। আমি শুধু ক্রিকেট নিয়ে পোস্ট করছি, যা ক্রিকেট সম্পর্কে আমার ভালোবাসা প্রকাশ করে।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জান্নাতুল পিয়া যে জুয়ার অ্যাপের টি–শার্ট পরে অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছেন, তা বাংলাদেশের সেরা জুয়ার এজেন্টদের একটি, যা ১০ বছর আগে চালু হয়।