তারকাদের জন্য প্লাস্টিক সার্জারি নতুন কোন বিষয় নয়। বিশেষ করে অভিনেত্রীরা নিজেদের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য শরীরের নানা অংশে প্লাস্টিক সার্জারি করিয়ে থাকেন। যদিও বা কখনও কখনও এর কারণে সৌন্দর্য বৃদ্ধির পরিবর্তে ভয়ানক সব অভিজ্ঞতারও শিকার হতে হয় তাদের।
এদিকে, তারকারা সাধারণত প্লাস্টিক সার্জারি করালে সেটি যতোটা সম্ভব লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করেন। কিন্তু এই নীতির সম্পূর্ণ বিপরীত পথে হেঁটেছিলেন অভিনেত্রী কোয়েনা মিত্র।
বিজ্ঞাপন
নিজের মুখের প্লাস্টিক সার্জারি করার পর অন্যান্যদের মতো সেটি লুকিয়ে না রেখে বিষয়টি নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করেছিলেন বলিউডের এই অভিনেত্রী। আর এ কারণে নাকি তাকি মানসিক যন্ত্রণার শিকারও হতে হয়েছিলো। প্লাস্টিক সার্জারি করানোর সুবাদে তাকে রীতিমতো একঘরে করে দিয়েছিল ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি।
কোয়েনার কথায়, “সেটি সম্পূর্ণ আমার সিদ্ধান্ত ছিল। দিনের শেষে এটা তো আমার মুখ, আমার জীবন। লোকের এত সমস্যা কেন?”
যোগ করে এই অভিনেত্রী আরও বলেন, “আমি জানতাম না বলিপাড়ায় সার্জারি করিয়ে সে ব্যাপারে মুখ খোলা নিষেধ। প্লাস্টিক সার্জারি নতুন কিছু নয়। তবে তা করে যে খোলাখুলি কথা বলা যায় না সেসব ব্যাপার একেবারেই মালুম ছিল না। তাই তো একজন জিজ্ঞেস করা মাত্রই স্বীকার করে নিয়েছিলাম প্লাস্টিক সার্জারি করানোর কথা। ব্যাস! মনে হলো পুরো পৃথিবী আমার পিছনে পড়ে গেছে। সার্জারি করার পর তিন বছর ধরে ক্রমাগত মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছিল আমাকে। দেখলাম বলিপাড়ার অনেকেই আমার থেকে দূরত্ব রাখা শুরু করে দিলেন। আমাকে ঘিরে রাজ্যের নেতিবাচক খবর চলতে লাগল।”
শুধু প্লাস্টিক সার্জারির কারণে মানসিক যন্ত্রণা নয়, স্বজনপ্রীতির শিকারও হয়েছেন এই অভিনেত্রী। এ প্রসঙ্গে তার ভাষ্য, “বলিউডে স্বজনপোষণ আছে ভীষণভাবে। রয়েছে দলবাজি। সেসবের শিকারও হয়েছি। সবরকমের আচরণ পেয়েছি। এক সময় সম্পূর্ণ বহিরাগত হয়েও বি-টাউনে দারুণ সব ছবির প্রস্তাব পেয়েছি, কাজ করেছি আবার যখন সবথেকে বেশি কাজের দরকার ছিল আমার তখন পাইনি। কোনও সহকর্মী সমর্থন করেননি আমাকে। সোচ্চারে আমার হয়েও গলা ফাটায়নি। এই অভিযোগ আমার আজও রয়েছে। থেকে যাবেও।”
২০০৪ সালে রাম গোপাল ভার্মা পরিচালিত ‘রোড’ ছবির মধ্য দিয়ে অভিনয় দুনিয়ায় পা রাখেন কোয়েনা মিত্র। এরপর সঞ্জয় দত্ত অভিনীত ‘মুসাফির’-এর আইটেম গান ‘সাকি সাকি’তে কোমর দুলিয়ে সফলতা পান কোয়েনা। এরপর ‘এক খিলাড়ি এক হাসিনা’, ‘ইনসান’, ‘আপনা স্বাপনা মানি মানি’, ‘ওম শান্তি ওম’ এবং হেভি বেবি’ ছবিতে দেখা গেছে তাকে।
‘চলচ্চিত্র সংস্কার রোডম্যাপ ২০২৪’ সকল স্তরের চলচ্চিত্রকর্মীদের দ্বারা তৈরি চলচ্চিত্র বিষয়ক একটি প্লাটফর্ম। এর যাত্রা শুরু হয় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঠিক পরপর। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সম্ভাবনাময় বাংলাদেশে চলচ্চিত্র মাধ্যমের সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা যা যা পরিবর্তন চান তা একটি গবেষণার মাধ্যমে একত্রিত করে ‘বুকলেট’ আকারে প্রকাশ করা হয়েছে।
আজ বিকেলে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরে (ডিএফপি) সেমিনার হলে এক এই প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যতা নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, নুরুল আলম আতিক, রুবাইয়াত হোসেন, প্রযোজক এহসানুল হকসহ বিভিন্ন পদভুক্ত চলচ্চিত্রকর্মী, চলচ্চিত্র শিক্ষক, আইনজীবী, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য, প্রচারণা ও সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিনিধিগণ এবং সাংবাদিকবৃন্দ।
‘চলচ্চিত্র সংস্কার রোডম্যাপ ২০২৪’ শিরোনামের গবেষণাটির যাত্রা শুরু হয় গত আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে। অনলাইন ও অফলাইনে চলচ্চিত্রের সকল ক্ষেত্রের অংশীজনের মতামত, দাবি ও চাওয়া একত্রিত করে ‘রোডম্যাপ’ তৈরীর কাজটি অগ্রসর হয়। মতামত প্রদান কার্যক্রম চলে শতাধিক চলচ্চিত্রকর্মীর সক্রিয় উপস্থিতিতে। গবেষণাটিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যায় প্রায় চল্লিশজন স্বেচ্ছাসেবী। এছাড়াও চলচ্চিত্র মাধ্যমে কর্মরত শ্রমজীবীদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য গৃহীত উদ্যোগ - প্রস্তাবিত ‘ফেডারেল ইউনিয়ন অফ মিডিয়া প্রফেশনালস’ও একইসাথে কাজ করে চলেছে সংস্কারের এই যাত্রায়। চলচ্চিত্র শিক্ষা ব্যবস্থার সার্বিক দিক নিয়ে এই উদ্যোগের সাথে যুক্ত ছিলো বিসিটিআইসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের চলচ্চিত্র বিভাগের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘ দুই মাস ধরে প্রাপ্ত রিসার্চ ডাটার উপর ভিত্তি করে তৈরী করা রোডম্যাপটি সকলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
গবেষণাপত্রটিতে বাকস্বাধীনতা পরিপন্থী আইন সংস্কার, চলচ্চিত্র শিক্ষা ও অনুদান ব্যবস্থার পরিবর্তন, স্বায়ত্তশাসিত ফিল্ম কাউন্সিল ও ফিল্ম কমিশন গঠন, দেশীয় চলচ্চিত্রকে আন্তর্জাতিকভাবে বাণিজ্যিকীকরণসহ আরও নানা বিষয়ে বিস্তারিত দিকনির্দেশনা রয়েছে।
গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে তৈরি হওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রিফর্ম বা সংস্কারকে অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করেছে। বিভিন্ন সেক্টরের অংশীজনদের কাছ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শুরু থেকেই সংস্কারের প্রস্তাব চেয়ে আসছেন। চলচ্চিত্রকর্মীদেরও দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা একটি কাক্সিক্ষত সংস্কার। তাই বিভিন্ন জনরার চলচ্চিত্র ও অডিও ভিজ্যুয়াল মাধ্যমে কাজ করা চলচ্চিত্রকর্মীরা একত্রিত হয়ে একটি রোডম্যাপ তৈরীর কাজে অংশ নেন। এই রোডম্যাপ তৈরির জন্য গবেষণার মাধ্যমে উঠে এসেছে চলচ্চিত্রকর্মীদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা এবং চলচ্চিত্রশিল্পের জন্য পেশাদারী একটি রূপরেখা।
দেশের সার্বিক চলচ্চিত্রের উন্নয়নের জন্য এবং যে কোন চলচ্চিত্র বিষয়ক উদ্যোগ গ্রহণের জন্য এই প্রকাশনাটি চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট মানুষের চাওয়াকে যেমন প্রকাশ করবে, তেমনি চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে কাজ করতে চাওয়া যেকোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং সরকারকে দিক নির্দেশনা পেতেও সহযোগিতা করবে বলে আশাবাদ ব্যস্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
আজ দেশের অন্যতম জনপ্রিয় শোবিজ তারকা তাহসান রহমান খানের জন্মদিন। তাইতো রাত ১২টার পর থেকেই শুভেচ্ছার বন্যায় ভাসছেন ভক্তদের প্রিয় এই সঙ্গীতশিল্পী, কম্পোজার ও অভিনেতা।
শুধু ভক্তরাই নয়, শোবিজের অনেক জনপ্রিয় তারকাও তাহসানকে নিয়ে জন্মদিনের পোস্ট শেয়ার করেছেন। তবে খোদ তাহসানকে জন্মদিন নিয়ে কোন পোস্ট করতে দেখা যায়নি। এই তারকা জন্মদিনটা বরাবরই নিজের মতো করে কাটাতে পছন্দ করেন। কখনোই বড় কোন আয়োজন রাখেন না। এবারও হয়ত সেভাবেই কাটবে তার জন্মদিন।
জন্মদিনে ভক্তদের তেমন কিছু উপহার না দিলেও এবার জানা গেলো এই তারকার মেগা কনসার্টের খবর। যা ভক্তদের জন্য উপহারের চেয়ে কোন অংশে কম কিছু নয়।
মাঝে দেশের বাইরে বেশকিছু সফল কনসার্ট করলেও তাহসানকে দেশের মাটিতে বড় ধরনের শোতে দেখতে পাওয়া যায়নি। তাই তার ওপেন এয়ার কনসার্টের প্রতি ভক্তদের আগ্রহ বেড়েছে অনেকগুণ।
এবার জানা গেলো, আসছে নভেম্বরে এক মেগা কনসার্টে অংশ নেবেন তাহসান খান। অনেকেই জানেন, আবারও ঢাকায় গাইতে আসছেন পাকিস্তান ও বলিউডের সুপারস্টার গায়ক আতিফ আসলাম। সেই কনসার্টেই দর্শক একসঙ্গে উপভোগ করবেন তাহসানের পরিবেশনাও।
বাংলাদেশি শ্রোতাদর্শকদের উদ্দেশে বার্তা দিয়েছেন আতিফ আসলামও। একটি ফটোকার্ট শেয়ার করে বুধবার আতিফ তার ফেসবুক পাতায় লিখেন, ‘বাংলাদেশ, আমি আসছি।’
আতিফ আসলামকে নিয়ে ঢাকায় এই কনসার্টটি আয়োজন করছে ‘ট্রিপল টাইম কমিউনিকেশন’। শুধু আতিফ নয়, বাংলাদেশ থেকে একইমঞ্চে গাইতে দেখা যাবে তুমুল জনপ্রিয় শিল্পী তাহসান খানকেও।
আয়োজকরা কনসার্টের ইভেন্ট শেয়ার করে জানান, আগামী ২৯ নভেম্বর বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়ামে আয়োজিত ‘ম্যাজিকাল নাইট ২.০’ কনসার্ট শুরু হবে বিকেল ৫টায়। দর্শকের জন্য গেট খুলে দেয়া হবে বেলা ১টার দিকে। অনলাইনে টিকেট টোমোরো.কম থেকে টিকিট কেনা যাবে,যদিও এখনো টিকেট বিক্রি শুরু করেননি আয়োজকরা।
বিশ্বসংগীতের ভক্তদের কাছে অজানা নেই জনপ্রিয় ব্রিটিশ তারকা লিয়াম পাইন মারা গেছেন। গত বুধবার আর্জেন্টিনার বুয়েনস এইরেসে একটি হোটেলের চতুর্থ তলা থেকে পড়ে মারা গেছেন লিয়াম। ৩১ বছর বয়সী এই তারকা দুনিয়াজুড়ে ব্যাপক খ্যাতি পান আলোচিত ব্রিটিশ ব্যান্ড ‘ওয়ান ডিরেকশন’-এর সদস্য হিসেবে।
২০১৬ সালে ভেঙে যায় ‘ওয়ান ডিরেকশন’। অন্য সদস্যদের মতো লিয়ামও একক ক্যারিয়ার গড়ে তোলেন। গত কয়েক বছরে অবশ্য গানের সঙ্গে ব্যক্তিজীবনের নানা ঘটনা নিয়ে আলোচিত হয়েছেন তিনি। ২০২২ সালে এক সাক্ষাৎকারে নিজেই জানান তার পানাসক্তির কথা। মাদক সমস্যা ছাড়াও তার যে আত্মহত্যার প্রবণতা আছে, সে কথাও প্রকাশ্যে বলেছিলেন। গত বছর কিডনি সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।
পরে জানান, তিনি মাদক ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন, শিগগিরই নতুন অ্যালবামের ঘোষণা দেবেন। তবে আলোচিত এই গায়কের পথচলা থেমে গেল মাত্র ৩১ বছর বয়সেই।
১৪ বছর বয়সী স্কুলশিক্ষার্থী লিয়াম ২০০৮ সালে রিয়েলিটি শো ‘দ্য এক্স ফ্যাক্টর’-এর অডিশন দিতে গিয়ে গান নিয়ে বলেছিলেন, ‘এটা আমার স্বপ্ন, এই স্বপ্নের পেছনে ছুটতে চাই’। তবে অনেক স্বপ্ন সত্যি না করেই চলে গেলেন গায়ক। এখন তার অনেক টুকরা স্মৃতি নিয়ে আলাপ চলছে অন্তর্জালে।
১৯৯৩ সালের ২৯ আগস্ট উলভারহ্যাম্পটনে জন্ম লিয়াম পাইনের। ছোটবেলা থেকেই ছিলেন খেলাধুলার পোকা। নাম লিখিয়েছিলেন উলভারহ্যাম্পটন অ্যান্ড বিলস্টন অ্যাথলেটিকস ক্লাবে। রানার হিসেবে বেশি নাম করেছিলেন, বক্সিংয়েও সুনাম ছিল বেশ। তবে ১২ বছর বয়সে এক ফুটবল ম্যাচে ২৬ হাজার দর্শকের সামনে গান গাওয়ার পর লিয়ামের জীবনের গতিপথ বদলে যায়।
এরপর নাম লেখান জনপ্রিয় ব্রিটিশ টিভি শো ‘দ্য এক্স ফ্যাক্টর’-এ। এখানেই পরিচয় হয় নিয়াল হোরান, লুইস টমিলসন, হ্যারি স্টাইলস, জায়ান মালিকদের সঙ্গে। তাঁদের দল রিয়েলিটি শোতে তৃতীয় হয়। জন্ম হয় ওয়ান ডিরেকশনের। ‘আপ অল নাইট’, ‘টেক মি হোম’, ‘মিড নাইট মেমরিস’, ‘ফোর’, ‘মেড ইন দা এ.এম’-আলোচিত চার অ্যালবাম উপহার দিয়ে ২০১৬ সালে ভেঙে যায় ওয়ান ডিরেকশন।
এরপর একক শিল্পী হিসেবে দুনিয়ার নানা প্রান্তে পারফর্ম করছিলেন লিয়াম, ২০১৯ সালে মুক্তি দেন প্রথম একক অ্যালবাম ‘এলপিওয়ান’। প্রস্তুতি চলছিল দ্বিতীয় অ্যালবামের, তবে তার আগেই চলে গেলেন তিনি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে আছে সুজেয় শ্যামের নাম। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের নয়টি গানে সুর করেছিলেন সুজেয় শ্যাম, যেগুলো একাত্তরের জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত গাওয়া হয়েছিল। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ যখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে, তখনই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সুরকার ও সংগীতপরিচালক সুজেয় শ্যামকে বলা হল, বিজয়ের গান করতে।
এরপর শহীদুল ইসলামের লেখা ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই/ খুশির হাওয়ায় উড়ছে/ উড়ছে উড়ছে উড়ছে/ বাংলার ঘরে ঘরে’ গানটিতে সুর করেন সুজেয় শ্যাম। মাত্র ১৫ মিনিট লেগেছিল গানটি লেখা ও সুর করতে; এরপর রেকর্ডিং। মাত্র এক ঘণ্টায় তৈরি হয়েছিলো পুরো গানটি, যা এখনো বাংলাদেশের মানুষ বিজয়ের আনন্দ উদযাপন করতে গেয়ে থাকে।
বাংলাদেশের এই মহান শিল্পী আজ (১৮ অক্টোবর) রাত ৩টার দিকে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। সুজেয় শ্যামের মেয়ে রূপমঞ্জুরী শ্যাম লিজা বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, তার বাবার মরদেহ সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে রাখা হয়। এখন সবুজবাগের বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দিরে শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হবে। তার মৃত্যুতে স্বাভাবিকভাবেই শোকের ছায়া নেমে এসেছে সঙ্গীতাঙ্গনে। কিছু তারকা সেই শোক প্রকাশ করেছেন নিজেদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে।
প্রখ্যাত সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক শেখ সাদী খান লিখেছেন, ‘সহযাত্রী,বন্ধু, শব্দসৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা, সংগীতপরিচালক সুজেয় শ্যাম রাত ৩টায় পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে! শান্তি কামনা করি।’
ব্যান্ড সঙ্গীতের জনপ্রিয় নাম নকিব খান লিখেছেন, ‘সত্যিই দুঃখিত! আরেকজন কিংবদন্তি সুরকার সুজেয় শ্যাম দা’কে হারালাম! তার আত্মা শান্তি পাক... আমাদের গভীর শ্রদ্ধা এবং সমবেদনা!’
জনপ্রিয় মডেল ও অভিনেত্রী বিজরী বরকতউল্লাহ লিখেছেন, ‘একুশে পদকে ভূষিত, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগীতযোদ্ধা, দেশ বরেণ্য সঙ্গীতপরিচালক, সুরকার সুজেয় শ্যাম আর নেই। তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি।’
প্রখ্যাত শিল্পী প্রয়াত বশির আহমেদের কন্যা শিল্পী হুমায়েরা বশির লিখেছেন, ‘সুজেয় শ্যাম কাকা আর নেই। তার আত্মা শান্তি পাক... আমাদের গভীর শ্রদ্ধা এবং সমবেদনা!’
আরেক ক্লোজআপ তারকা অপু আমান তার শ্রদ্ধেয় সঙ্গীতপরিচালক ও সুরকার সুজেয় শ্যামকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে পৌঁছেছিলেন ঢাকেশ^রী মন্দিরে। সেখান থেকে মরহেদের একটি ভিডিও পোস্ট করে এই শিল্পী লিখেছেন, ‘আসুন তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি।’
সঙ্গীতশিল্পী টিনা মুস্তারি সুজেয় শ্যামের সঙ্গে একটি ছবি প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘আরেকজন কিংবদন্তি সঙ্গীতপরিচালক সুজেয় শ্যাম স্যারকে আমরা হারালাম। তার আত্মার শান্তি কামনা করি। একবার সৌভাগ্য হয়েছিল তার সঙ্গে কাজ করার। আমার শো এর গেস্ট হিসেবে তিনি এসেছিলেন।’
শরীরে ক্যান্সার নিয়েই কাটছিল সুজেয় শ্যামের দিন; সঙ্গে ডায়েবেটিস, কিডনিসহ নানা জটিল রোগও ছিল। গত জুন মাসেও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের এই শিল্পী। গত সেপ্টেম্বর তার হার্টে পেসমেকার বসানোর পর ইনফেকশন হয়ে যায় বলে জানিয়েছিলেন তার কন্যা লিজা। ওই সময় আইসিইউতে শয্যা খালি না থাকায় তাকে সিসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল।
১৯৪৬ সালে সিলেটে জন্ম নেওয়া সুজেয় শ্যামকে সংগীতে অবদানের জন্য ২০১৮ সালে একুশে পদক দেওয়া হয়। তার আগে ২০১৫ সালে শিল্পকলা পদক পান তিনি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে আছে সুজেয় শ্যামের নাম। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের নয়টি গানে সুর করেছিলেন সুজেয় শ্যাম, যেগুলো একাত্তরের জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত গাওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে রয়েছে ‘মুক্তির একই পথ সংগ্রাম’, ‘ওরে শোনরে তোরা শোন’, ‘রক্ত চাই রক্ত চাই’, ‘আজ রণ সাজে বাজিয়ে বিষাণ’, ‘আহা ধন্য আমার’,‘আয়রে চাষী মজুর কুলী’। তার সুর করা গানের মধ্যে ‘রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি’ এবং ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই’ গান দুটি বাংলাদেশের যে কোনো জাতীয় দিবসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে।
গিটার বাদক ও শিশুতোষ গানের পরিচালক হিসেবে ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তান চট্টগ্রাম বেতারে কর্মজীবন শুরু হয় সুজেয় শ্যামের। পরে তিনি ঢাকা বেতারে যোগ দেন। ১৯৬৯ সালে চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন সুজেয় শ্যাম। ঢাকাই চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য তিনবার শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক হিসেবে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।
বাংলাদেশ বেতারের প্রধান সংগীত প্রযোজক পদ থেকে ২০০১ সালে অবসরে যান সুজেয় শ্যাম। ২০০৬ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ বেতারে প্রচারিত ৪৬টি গানের সংকলন নিয়ে ‘স্বাধীন বাংলা বেতারের গান’ শিরোনামে একটি অ্যালবামের সংগীত পরিচালনা করেন তিনি। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে আরও ৫০টি গানের সংকলন নিয়ে ‘স্বাধীন বাংলা বেতারের গান-২’ নামে আরেকটি অ্যালবামের সংগীত পরিচালনা করেন শিল্পী। ‘টুনাটুনি অডিও’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সংগীত পরিচালক হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি।
এছাড়া মঞ্চনাটকেও সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে যুক্ত ছিলেন সুজেয় শ্যাম। তিনি আরণ্যক নাট্যদল প্রযোজিত ‘এবং বিদ্যাসাগর’, ‘ময়ূর সিংহাসন’, ‘দি জুবিলি হোটেল’ নাটকের সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন।