বাংলা চলচ্চিত্রের প্রথম মুসলিম অভিনেত্রী বনানী চৌধুরী

  • আইয়ুব হোসেন খান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, মাগুরা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বনানী চৌধুরী

বনানী চৌধুরী

যে সময় উপমহাদেশে মুসলিম নারীদের ঘর থেকে বের হওয়ার অনুমতি ছিলো না। গান-বাজনা বা চলচ্চিত্র ছিলো তাদের কাছে স্বপ্নের মতো। সে সময়ে শত বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে উপমহাদেশের প্রথম মুসলিম নারী হিসেবে চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ করেন মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার সোনাতুন্দী গ্রামের বনানী চৌধুরী। ওই সময়ে তার সাহসিকতা ও সাবলীলতা বর্তমান সমাজে এক দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে। তার পথ অনুসরণ করে বাংলা চলচ্চিত্রে অনেক মুসলিম নারীর আগমন ঘটেছে যারা বর্তমানে দাপটের সাথে চলচ্চিত্রে কাজ করে যাচ্ছেন।

১৯১৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন বনানী চৌধুরী। তার বাবা আফসার উদ্দিন তৎকালীন সময়ে ভারতের বনগাঁতে কর্মরত ছিলেন। তার শিক্ষাজীবন শুরু হয় ভারতের মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘী গ্রামের একটি ছোট স্কুলে। ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি তার বেশ আগ্রহ ছিলো। তবে অল্প বয়সে তার বিয়ে হয়ে যায়। কিন্তু তাতেও অভিনয় থেকে মনযোগ সরাতে পারেননি তিনি। অভিনয়ে আসার জন্য তাকে সহযোগিতা করেছিলেন তার স্বামী রাজ্জাক চৌধুরী। স্বামীর উৎসাহে তিনি যেমন লেখাপড়া চালিয়ে গেছেন, তেমনি স্কুল ও কলেজের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অভিনয় করে সুনাম অর্জন করেছেন।

বিজ্ঞাপন

লেখাপড়া শেষে বনানী চৌধুরী চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। ১৯৪৬ সালে বিখ্যাত পরিচালক গুণময় বন্দোপাধ্যায়ের পরিচালনায় মুক্তি পায় তার অভিনীত প্রথম ছবি ‘ছাব্বিশ বছর পরে’। এতে অভিনয় করে তিনি যেমন মানুষের মন জয় করে নেন তেমনি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে তার সুনাম।

এরপর জহির রায়হানের ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ সিনেমায় অভিনয় করে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ভারতে অভিনীত তার সিনেমার মধ্যে ‘পরশপাথর’, ‘তপবন’, ‘পূর্বরাগ’, ‘মহাশ্মশান’ বিখ্যাত। এছাড়া ‘অভিযোগ’, ‘মায়াজাল’, ‘শেষের বিতা’, ‘মানব সম্পদ’, ‘আম্রপালি’, ‘তাপসী’, ‘নন্দ রামের সংসার’তাকে খ্যাতি এনে দেয়।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া ঢাকার কিছু উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন। তার মধ্যে- ‘ধীরে বহে মেঘনা’, ‘সুখ দুঃখের সাথী’, ‘আল্লাহ মেহেরবান’, ‘আকাশ পরী’ জনপ্রিয়।

জীবনে চলার পথে অনেক বিখ্যাত মানুষের সাথে তার কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে। যাদের মধ্যে পাহাড়ি সান্যাল, প্রমোদ বসু, হেমেন গুপ্ত, নীতিশ বসু, ছবি বিশ্বাস ও জহির রায়হান অন্যতম।

তবে জানা যায়, রোকেয়া খাতুন নামে একজন মুসলিম নারীর প্রথম চলচ্চিত্রে অভিনয়ের কথা। তৎকালীন সময়ে সওগাত নামে একটি পত্রিকার ১৯৩২ সালের আগস্ট মাসের ১৩৩৯ নাম্বার সংখ্যায় রোকেয়া খাতুন এর নাম ছাপা হয়। তার বাবার নাম ব্যারিস্টার লুতাফ আলী। মা ছিলেন ইউরোপিয়ান। রোকেয়ার জন্ম ইংল্যান্ডে।তিনি কলকাতায় ‘বেবি ব্রিজ ব্রাইড’ নামে একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন বলে ওই পত্রিকাটি দাবি করে। পরে তিনি পাকিস্তানের লাহোরে চলে যান। তারপর তার আর কোনো বাংলা চলচ্চিত্রের উল্লেখযোগ্য ছবির কথা জানা যায় না।

তবে বাংলা চলচ্চিত্রের মুসলিম নারীদের মধ্যে বনানী চৌধুরী প্রথম বলে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণাদি রয়েছে। যদিও বাংলার এই বিখ্যাত অভিনেত্রীর গ্রামের বাড়িতে এখন আর তেমন কোন স্মৃতিচিহ্ন নেই।

১৯৯৫ সালের ৫ জানুয়ারি তিনি ঢাকায় তার নিজ বাসাতেই মৃত্যুবরণ করেন। তাকে ঢাকার বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়।