‘ইশতেহারে তরুণদের চাওয়া-পাওয়ার প্রতিফলন ঘটেছে’

  ভোট এলো, এলো ভোট
  • আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বুধবার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে। এই ইশতেহারে তরুণদের চাওয়া-পাওয়া প্রতিফলন ঘটেছে বলে মনে করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। দ্রব্যমূল্যের চলমান উর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দেওয়ায় এই ইশতেহারকে বাস্তবানুগ বলেও বর্ণনা করেন তিনি।

এদিন বিকালে বার্তা২৪.কম-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি। কথা বলেছেন পরিকল্পনা সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম।

বিজ্ঞাপন

বার্তা২৪.কম: নির্বাচনের প্রাক্কালে আজ ইশতেহার ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ। ২০০৯ সাল থেকে এই ইশতেহার ঘোষণা করে আসছে দলটি। আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন...

ড. আতিউর রহমান: ২০০৯ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনের একটা সুচিন্তিত ইশতেহার দেবার সংস্কৃতি চালু করেন। সেটি তিনি এখনও পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এবং আজই তিনি একটি ইশতেহার দিয়েছেন, যাঁর নাম ‘স্মার্ট বাংলাদেশ: উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’। মূলতঃ কর্মসংস্থানের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে এই ইশতেহারটি করেছেন। তিনি ভালো করে জানেন যে আমাদের তরুণ সমাজের একটা বিরাট অংশ কর্মসংস্থান পাচ্ছে না। সুতরাং তাদের কর্মসংস্থান দেওয়ার জন্য তিনি নানা রকম উপায়ের কথা এখানে বলেছেন। বিশেষ করে তাদেরকে কিভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়। তাদেরকে কিভাবে উদ্যোক্তা বানানো যায়। তাদেরকে কি করে মূলধারার অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত রাখা যায় ইত্যাদি। তরুণদের জন্য আরেকটি কথা বলেছেন তিনি, সেটি হলো-তরুণরা কিন্তু দুর্নীতি পছন্দ করেন না। তিনি বলেছেন, দুনীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সকে তিনি অগ্রাধিকার দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

বার্তা২৪.কম: তরুণদের অগ্রাধিকারের সঙ্গে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি নিয়েও প্রধানমন্ত্রী ও আওয়মীলীগ সভাপতি তাঁর অবস্থান তুলে ধরেছেন। অর্থনীতিবিদ হিসেবে আপনি এটিকে কিভাবে বর্ণনা করবেন?

ড. আতিউর রহমান: আওয়ামীলীগ সভাপতি ইশতেহারে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন জিনসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের উপর। কারণ মূল্যস্ফীতি গরীবের বড় শত্রু। মধ্যবিত্তেরও বড় শত্রু। মূল্যস্ফীতি গরীব ও মধ্যবিত্তের পকেট কাটে। সুতরাং মূল্যস্ফীতি বা জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে আনবার জন্য গুরুত্ব দিয়েছেন এবং অবাক করা বিষয়, মূল্যস্ফীতি কমাতে যে নীতিসুদহার আছে মুদ্রানীতিতে, তার উপরও তিনি নজর রেখেছেন। বলেছেন, নীতিসুদহার ব্যবহার করব, মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনবার জন্য। পাশাপাশি তিনি এও বলেছেন, যাঁরা মূল্যস্ফীতির শিকার নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্তদের জন্য আরও বেশি সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির কথাও তিনি বলেছেন। আমার কাছে মনে হয়েছে, ইশতেহারটি অনেকটা বাস্তবানুগ এবং আমাদের এই সময়ের যে চাওয়া-পাওয়া, বিশেষ করে তরুণদের চাওয়া-পাওয়া সেটার অনেকটা প্রতিফলন ঘটেছে এতে।

বার্তা২৪.কম: কৃষি ও শিল্পোন্নয়নেও জোর দেওয়া দেওয়া হয়েছে ইশতেহারে...

ড. আতিউর রহমান: ইশতেহারে কৃষিতে খুব জোর দিয়েছেন তিনি। কৃষির যান্ত্রিকীকরণ, কৃষিতে ভর্তুকির ব্যবস্থা করা-এগুলো নিয়েও যেমন কথা বলেছেন, অন্যদিকে শিল্পের কথা বলেছেন। শিল্পখাতে যে ৪৩ শতাংশ নারী এখন আনুষ্ঠানিক কাজ করছেন, সেটিও তিনি বলেছেন এবং তিনি শিল্পখাতকেও প্রধান্য দিয়েছেন। তিনি কৃষি এবং শিল্পকে সমান গুরুত্ব দিয়ে এগুতে চাচ্ছেন। সুশাসনের কথা বলেছেন এবং বলেছেন, ব্যাংকিং খাতকে উনি আরও দক্ষ ও শক্তিশালী করবেন। একই সঙ্গে বিশ্বশান্তির কথাও বলেছেন। আমার কাছে মনে হয়েছে যে, এটি অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী নির্বাচনী ইশতেহার। একে বাস্তবায়ন করাটাই হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি ভাড়ায় বিদ্যুত কেন্দ্র বন্ধ করতে বলেছেন, এটাও একটি বড় উদ্যোগ। তিনি গ্রিন এনার্জির কথাও বলেছেন।

বার্তা২৪.কম: এই ইশতেহার আগামীর সম্ভাবনা ও সংকটকে কতটা স্পর্শ করেছে?

ড. আতিউর রহমান: সবমিলে মনে হয়েছে, এই ইশতেহার একটি কম্প্রিহেনসিভ অর্থনৈতিক প্যাকেজ। এই প্যাকেজটি ঠিক মতো বাস্তবায়ন করলে বাংলাদেশকে সামনের দিকে নিয়ে যেতে অনেক সহজ হবে। তিনি অনেক সুদূরপ্রসারী একজন নেত্রী। সেজন্য অনেক দূরেও দেখতে পান। ২০৩০ সালে আমরা উচ্চমধ্যম আয়ের দেশ, ২০৪১ সালে সম্বৃদ্ধ বাংলাদেশ এবং ২১০০ সালে অনেক পরিবেশবান্ধব সম্বৃদ্ধ বাংলাদেশ হওয়ার যে স্বপ্ন দেখছি-এই সব কিছুও কিন্তু শেখ হাসিনা এ আলোচনার মধ্যে এনেছেন। আমার মনে হয় এই যে আলোচনার ভিত্তিতে আগামীদিনের বাজেট, পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, পার্সপেক্টিভ প্ল্যান-সব কিছু যেন তৈরি হয়; সেটা নিশ্চয়ই তিনি দেখবেন।

বার্তা২৪.কম: এসব কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কি ধরণের পদক্ষেপ থাকা প্রয়োজন বলে আপনি মনে করেন...

ড. আতিউর রহমান: আমার মনে হয়, একটি স্মার্ট বাংলাদেশ তিনি যেহেতু করতে চাচ্ছেন, এসডিজির জন্য রেজাল্টবেজড মনিটারি সিস্টেম তিনি দাঁড় করিয়েছিলেন, ওই রকম একটি সিস্টেম দাঁড় করা যায় কিনা তা ভেবে দেখা যেতে পারে। আসলেই যে অগ্রগতিটা হওয়ার কথা সেটা কতখানি হচ্ছে সেটা যেন একটা সচিবালয় তথা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ সচিবালয়’ থেকে প্রতিনিয়ত মনিটরিং করা হয়। কোনটা পারলাম বা কোনটা পারলাম না, সেগুলোর একটা বিবরণ যেন থাকে। এখানে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে প্রাইম মিনিস্টার অফিস, মিনিস্ট্রি অব ফাইন্যান্স, প্ল্যানিং মিনিষ্ট্রি, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং এনবিআর-সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করলে আমার ধারণা সত্যি সত্যি স্মার্ট বাংলাদেশ অর্জন করতে পারব।