পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি করছে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। রাজধানীতে ১১৬ টি ট্রাকে টিসিবির পণ্য বিক্রির কার্যক্রম চলছে। আর সারা দেশে ৫০৫টি ট্রাকে পণ্য বিক্রি করছে টিসিবির। প্রতিটি ট্রাক সেলেই ক্রেতাদের ভিড় রয়েছে।
সোমবার (২৭ এপ্রিল) টিসিবির কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির বলেন, ১ এপ্রিল থেকে রমজানের পণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে। শুরুতে ঢাকায় ৫০ থেকে ৬০টি ট্রাকে পণ্য বিক্রি হচ্ছিল। বাড়তে বাড়তে তা এখন ১১৬টিতে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা সিটি এলাকায় ৯৯টি ও সিটির বাইরে ১৭টি ট্রাকে টিসিবির পণ্য বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে ঢাকার ২০০ স্থানে টিসিবির পণ্য বিক্রি চলছে। একদিন অন্তর অন্তর ওই স্থানগুলোতে টিসিবির ট্রাক দাঁড়াচ্ছে। আর সারাদেশে এখন ৫০০টি ট্রাকে পণ্য বিক্রি চলছে। রমজানে নতুন করে টিসিবির ট্রাকে আবারও পেঁয়াজ যুক্ত হয়েছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
টিসিবির প্রতিটি ট্রাকেই এখন ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় থাকছে। সোমবার সচিবালয় গেট, প্রেসক্লাব গেট ও পুরানা পল্টনে টিসিবির ট্রাকগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। কারওয়ান বাজারেও ছিল একই অবস্থা। এখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে টিসিবির পণ্য বিক্রি হচ্ছিল।
টিসিবি জানিয়েছে, ট্রাক থেকে চিনি ৫০ টাকা (সর্বোচ্চ ৪ কেজি), মসুর ডাল ৫০ টাকা (সর্বোচ্চ ২ কেজি) ও সয়াবিন তেল ৮০ টাকা লিটার (সর্বোচ্চ ৫ লিটার) দরে কেনা যাবে। এছাড়া ছোলা ৬০ টাকা, খেজুর ১২০ টাকা ও পেঁয়াজ ৩৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, রমজান উপলক্ষে বিক্রি কার্যক্রম শুরু হয়েছে ১ এপ্রিল থেকে। ২০ মে পর্যন্ত তা চলার কথা রয়েছে। গত ৩১ মার্চ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে টিসিবি জানায়, রমজান উপলক্ষে সারাদেশে ৩৫০টি ট্রাকে বিক্রির কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এর মধ্যে ঢাকায় ৫০, চট্টগ্রামে ১৬, অন্যান্য বিভাগীয় শহরে ১০টি ও জেলা সদরে ৪টি করে টিসিবির ট্রাক থাকবে। পরে ধারবাহিকভাবে বেড়েছে টিসিবির ট্রাকের সংখ্যা।
এর আগে করোনার সময়ে সাধারণ ছুটিতেও টিসিবির কার্যক্রম চলছিল। ঢাকায় তখন ৫০ থেকে ৬০টি ট্রাকে এই বিক্রি কার্যক্রম চলছিল। তবে রাস্তায় মানুষের আনাগোনা কম থাকায় বাজার ও কলোনির দিকে টিসিবির ট্রাক ছিল বলে প্রতিষ্ঠানটির দাবি। পণ্য কিনলে বিনামূল্যে মাস্ক দিয়েছে টিসিবি।
ঢাকা নগরীতে টিসিবির পণ্য বিক্রির সম্ভাব্য স্থান— প্রেসক্লাব, সচিবালয় গেট, যাত্রাবাড়ী, ইত্তেফাক মোড়, শান্তিনগর বাজার, শাহজাহানপুর বাজার, খামারবাড়ী ফার্মগেট, মিরপুর-১৪ কচুক্ষেত, মিরপুর-১ মাজার রোড, শ্যামলী মোড়/ন্যাম গার্ডেন, উত্তরা আব্দুল্লাপুর, ভিকারুননেসা ১০ নং গেট/ইস্টার্ন গাউজিং গেট, বেগুনবাড়ী, মতিঝিল সরকারি কলোনি, ভাষানটেক বাজার, মধ্য বাড্ডা, পলাশী/ছাপড়া মসজিদ, জিগাতলা/ধানমন্ডি সরকারি কলোনি, রামপুরা বাজার, মাদারটেক/নন্দীপাড়া/কৃষি ব্যাংকের সামনে, আদাবর/মনসুরাবাদ, বাংলা কলেজ, শাহ সাহেব মাঠ আজিমপুর বটতলা।
এছাড়াও আশকোনা হাজী ক্যাম্প, বাসাবো বাজার, আজমপুর, ডিসি অফিস, সাঁতারকুল, বাংলাদেশ ব্যাংক, মিরপুর-২/১২, মাতুয়াল/সিদ্ধিরগঞ্জ, ইসিবি/কালশী, গাবতলী/টেকনিক্যাল, কাপ্তান বাজার, সোয়ারিঘাট/নবাবগঞ্জ সেকশন, বনশ্রী বাজার, কলমিলতা বাজার, কারওয়ানবাজার, দিলকুশা, মেরাদিয়া বাজার, নিপ্পন বটতলা, খিলগাঁও তালতলা, মুগদা, নিউমার্কেট, টঙ্গীবাজার, শণির আখড়া, বছিলা, কামরাঙ্গীর চর লোহার পুল, সারুলিয়া বাজার, গঙ্গী বাজার, ৬০ ফিট ভাঙ্গা মসজিদ, গুলিবাগ খোকন কমিউনিটি সেন্টার, গুলশান ভাটারা বাজার, সাভার বাজার, আনন্দ সিনেমা হল, মগবাজার ফরচুন মার্কেট, হাতিরপুল বাজার, মালিবাগ বাজার, উত্তর বাড্ডা বাজার ও খিলক্ষেত বাজার।
মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জিকে মহেশখালীতে ভাসমান এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) টার্মিনাল-৩ নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে পেট্রোবাংলা। এ জন্য কোম্পানিটিকে উন্মুক্ত দরপত্রে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ওই ভাসমান টার্মিনাল স্থাপনের জন্য বিশেষ বিধান আইনে সামিট গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। অন্তবর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর চুক্তিটি বাতিল করে দিয়েছেন। এক্সিলারেট এনার্জি মহেশখালীতে বর্তমানে একটি ভাসমান টার্মিনাল পরিচালনা করে আসছে। কোম্পানিটি পায়রাতে আরেকটি ভাসমান টার্মিনাল করতে যাচ্ছিল। ওই টার্মিনালের বিষয়েও বিশেষ বিধান আইনের আওতায় চুক্তির প্রক্রিয়া শুরু করেছিল আওয়ামী লীগ। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে পেট্রোবাংলার অনুস্বাক্ষরিত খসড়া ২০২৩ সালে নীতিগত অনুমোদন দেয় অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। চুড়ান্ত চুক্তির অপেক্ষায় থাকা ওই ভাসমান এলএনজি টার্মিনালও বিশেষ আইনে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
বুধবার (১৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় পেট্রোসেন্টারে এক্সিলারেট এনার্জির উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে উন্মুক্ত দরপত্রে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয় বলে বৈঠক সুত্র জানিয়েছে।
ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের পাশাপাশি স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি সরবরাহের উন্মুক্ত দরপত্রে তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি সরবরাহের জন্য পেট্রোবাংলার তালিকাভুক্ত ২৩টি কোম্পানি রয়েছে। সেখানে নতুন করে তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। পেট্রোবাংলার এসব প্রস্তাবে আগ্রহ দেখিয়েছে এক্সিলারেট, পাশাপাশি তারা দেশের জ্বালানিখাতে আরও কিভাবে বিনিয়োগ বাড়ানো যায় সেই বিষয়ে আলোচনা করেছে বলে বৈঠক সুত্র জানিয়েছে।
এক্সিলারেটের সঙ্গে ওই বৈঠকে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার, পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মাইনস) প্রকৌশলী কামরুজ্জামান খান, পরিচালক (প্রোডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট) প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম, এক্সিলারেট এনার্জির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান স্টিভেন কোবোস, এক্সিলারেট এনার্জির স্ট্র্যাটেজিক উপদেষ্টা ও সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস ও কোম্পানিটির বাংলাদেশের আবাসিক ব্যবস্থাপক হাবিব ভূঁইয়া অংশ নেন।
এক্সিলারেট এনার্জি প্রতিনিধিদলটি অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ১৫ অক্টোবর সাক্ষাৎ করেন।
বর্তমানে মহেশখালীতে এক্সিলারেট এনার্জির একটি টার্মিনাল পরিচালনা করছে। ওই টার্মিনালের মাধ্যমে দৈনিক ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করছে। পেট্রোবাংলার সঙ্গে ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই এই চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট থেকে তারা গ্যাস সরবরাহ চুক্তি স্বাক্ষর করে। পেট্রোবাংলার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির ১৫ বছর মেয়াদী গ্যাস চুক্তি রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদে এলএনজি সরবরাহের জন্য গত বছরের নভেম্বরে পেট্রোবাংলার সঙ্গে চুক্তি সই করে এক্সিলারেট এনার্জি। চুক্তি অনুযায়ী, এক্সিলারেট এনার্জির সহযোগী প্রতিষ্ঠান এক্সিলারেট গ্যাস মার্কেটিংয়ের কাছ থেকে ১৫ বছর মেয়াদে ০.৮৫ হতে এক এমটিপিএ এলএনজি আমদানির করবে সরকার। এক্সিলারেট ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে গ্যাস সরবরাহ করার কথা রয়েছে।
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি বিনিয়োগের মান উন্নততর করার লক্ষ্যে ‘এক্সট্রা এফোটর্স ফর বেটার অ্যাসেট বেটার টুমোরো’ শীর্ষক ৪৫ দিনব্যাপী ক্যাম্পেইন শুরু করেছে।
ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ প্রধান অতিথি হিসেবে মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে এ ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করেন।
ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মুহাম্মদ মুনিরুল মওলার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান মো. আবদুল জলিল, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এম মাসুদ রহমান, অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মো. আবদুস সালাম ও স্বতন্ত্র পরিচালক মোহাম্মদ খুরশীদ ওয়াহাব।
অন্যান্যদের মাঝে বক্তব্য দেন অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খান এবং ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট আবু সাঈদ মো. ইদ্রিস।
সভায় অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. আলতাফ হুসাইন ও মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন মজুমদারসহ প্রধান কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন নির্বাহী, ঢাকার ৪ জোন প্রধান ও ৬ করপোরেট শাখার প্রধানবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ব্যাংকের সব জোনপ্রধান, শাখাপ্রধান ও উপশাখা ইনচার্জগণ ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে সংযুক্ত ছিলেন।
৫ আগস্ট-পরবর্তী নতুন বাংলাদেশে অর্থনৈতিক গতিশীলতা আনতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকে প্রাধান্য দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এনভয় লিগ্যাসি ও শেলটেক গ্রুপের চেয়ারম্যান কুতুবউদ্দিন আহমেদ। বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন।
দেশের রফতানি খাত, প্রবাসী কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধিসহ অভিজ্ঞতার আলোকে সংস্কারসহ অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি নিয়ে নিজের ভাবনার কথা জানিয়েছেন এই ব্যবসায়ী। বণিক বার্তা’য় প্রকাশিত সাক্ষাৎকারটির সংক্ষিপ্তরূপ বার্তা২৪.কম এর পাঠকদের জন্য প্রকাশিত হলো:
দেশের বর্তমান সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারের কোন দিকগুলোয় নজর দেয়া প্রয়োজন?
কুতুবউদ্দিন আহমেদ: বর্তমানে বাজারে অস্থিরতা বিরাজমান। চাঁদাবাজি যদি আমরা বন্ধ করতে পারি তাহলে জিনিসপত্রের দাম এমনিতেই কমে যাবে। এক্ষেত্রে যদি রাজনীতিবিদদের সম্পৃক্ত করা যায় এবং পুলিশকে যদি দায়বদ্ধতার ভেতর আনা যায় তাহলে এটা দূর করা সম্ভব। চাঁদাবাজির দুটি স্থান হলো ট্র্যাফিক জ্যাম এবং ফুটপাত দখল করে থাকা দোকানপাট। এতে পণ্যের দাম বাড়ে। প্রত্যেক এলাকার থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার নিজ এলাকার ফুটপাতকে দখলদারত্ব থেকে মুক্ত রাখতে পারেন, তাহলে চাঁদাবাজি বিশালাকারে কমে যাবে। চাঁদাবাজির মহামারী একটি উৎস হলো পোশাক শিল্প। কাটিং ওয়েস্টেজের ক্রয় নিয়ে সন্ত্রাসীদের মাঝেই প্রতিযোগিতা চলে। কোনো পোশাক কারখানাই সঠিক দামে সেই ওয়েস্টেজ নিজ থেকে বিক্রয় করতে পারে না, এক্ষেত্রে তারা বন্দি সেই চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীদের কাছেই। তাদের কাছে বিক্রয় করে দিতে হয় প্রায় অর্ধেক দামে, কোনো দরদামের সুযোগও নেই সেখানে। তাদের দাবি না মানলে কারখানার সংশ্লিষ্টদের রাখা হয় হুমকির ওপর। দেশের নানা কারখানাকে হিসেবে আনলে আনুমানিক দৈনিক ৫ থেকে ১০ কোটি টাকার ওয়েস্টেজ বিক্রি হচ্ছে এ সন্ত্রাসীদের কাছে, এমনটিই শোনা যায়। যদি পোশাক কারখানাগুলো নিজেদের ইচ্ছামতো দরদাম করে যথাযথ জায়গায় ওয়েস্টেজ বিক্রি করতে পারে, তাহলেই নিশ্চিতভাবে বোঝা যাবে যে দেশে আইন-শৃঙ্খলা সুসংহত অবস্থায় রয়েছে। চাঁদাবাজি বন্ধে দরকার সরকার ও রাজনীতিবিদদের অঙ্গীকার ও প্রচণ্ড সদিচ্ছা।
৫ আগস্ট-পরবর্তী নতুন বাংলাদেশে অর্থনৈতিক গতিশীলতা আনতে সবচেয়ে বেশি জরুরি হলো সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকে প্রাধান্য দেয়া। বিশেষ করে যেসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সততার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে, তাদেরকে কীভাবে আরো চাঙ্গা করা যায় সেদিকে নজর দিতে হবে। কেননা সরকারি খাতের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের উন্নয়ন ঘটলে কর্মসংস্থান বাড়বে। এতে অর্থনীতির আকার বাড়বে, সংকটে থাকা অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করা সহজ হবে।
আমাদের রফতানি আয়ের বড় অংশ আসছে তৈরি পোশাক খাত (আরএমজি) থেকে। রফতানি খাত বৈচিত্র্যময় করতে করণীয় কী?
কুতুবউদ্দিন আহমেদ: আমরা এখন পর্যন্ত গার্মেন্ট শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের রফতানির প্রায় ৮৫ শতাংশ আসে পোশাক খাত থেকে। এ জায়গায় যদি আমরা ভ্যালু অ্যাডিশন বাড়াতে চাই তাহলে বস্ত্র খাতকে আরো জোরদার করতে হবে; তাহলে আমরা আরো বেশি ভ্যালু অ্যাড করতে পারব, যা আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা মেটাতে সাহায্য করবে।
বাংলাদেশ থেকে যেসব পণ্য রফতানি হয়ে থাকে সেগুলো সাধারণত নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণীর প্রয়োজন মিটিয়ে থাকে। তবে এক্ষেত্রে কিছু কারখানা উচ্চ-মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের চাহিদা মেটাতে পোশাক রফতানি করে থাকে, এর পরিমাণ অতি নগণ্য। আমাদের পোশাক কারখানাগুলো ৭০-৮০ শতাংশই ক্যাজুয়াল প্যান্ট, শার্ট, সোয়েটার, টি-শার্ট, পোলো শার্ট ইত্যাদি তৈরি করে থাকে। সেক্ষেত্রে আমরা যদি পণ্যের ভিন্নতা আনতে পারি, যেমন ফরমাল প্যান্ট, স্যুট, জ্যাকেট, আন্ডারগার্মেন্টস, ব্র্যান্ডেড স্পোর্টসওয়্যার ইত্যাদি পণ্য যদি উচ্চ-মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের জন্য রফতানি করি, তাহলে আমরা আমাদের ভ্যালু অ্যাডিশনও বাড়াতে সক্ষম হব, সেই সঙ্গে বাড়বে রফতানির পরিমাণ। এক্ষেত্রে ভিয়েতনাম হতে পারে একটি বড় উদাহরণ। তারা শুরু করেছিল আমাদের মতো করেই, কিন্তু তারা পরবর্তী সময়ে উত্তরণ ঘটায় হাই ভ্যালু আইটেমে।
আমরা কাঁচামালসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি করছি, এতে আমাদের বড় অংকের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে। আমদানি বিকল্প (ইম্পোর্ট সাবস্টিটিউট) শিল্প গড়ার ক্ষেত্রে আপনার পরামর্শ কী হবে?
কুতুবউদ্দিন আহমেদ: এটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে যেসব পণ্য আমরা আমদানি করি, সেসব শিল্প যদি দেশে স্থাপন করা যায়, তাহলে আমরা একদিক থেকে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করতে পারব, অন্যদিকে বিপুল পরিমাণে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারব, যা দেশের জিডিপিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারবে। এছাড়া এর মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা (এসএমই) তৈরি করা সম্ভব হবে। এতে করে যেমন নতুন উদ্যোক্তাদের উঠে আসার সুযোগ সৃষ্টি হবে, সেই সঙ্গে বিদ্যমান ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তারাও তাদের ব্যবসা বাড়ানোর সুযোগ পাবেন।
আমদানি বিকল্প শিল্প বা ইম্পোর্ট সাবস্টিউট ইন্ডাস্ট্রি প্রতিষ্ঠা করলে আমাদের ফরেন কারেন্সি রিজার্ভ বৃদ্ধি করা সম্ভব। এক্ষেত্রে আমরা কোন কোন পণ্য আমদানি করি তার তালিকা তৈরি করতে পারি। পাশাপাশি সেগুলোর বার্ষিক মূল্যের পরিমাণ পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নিতে পারি যে কোন কোন পণ্যকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে দ্রুততার সঙ্গে শুরু করা যায়।
উদাহরণস্বরূপ আমরা বলতে পারি, স্পেয়ার পার্টস আমদানিতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হয়। একটু উদ্যোগ নিলে দেশেই অনেক স্পেয়ার পার্টস বানানো যাবে। গাজীপুরের ‘বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি’-কে যদি আপগ্রেড করা যায় তাহলে নতুন নতুন যন্ত্রাংশ বানানো সম্ভব এবং এটি করার জন্য অবকাঠামো তৈরি আছে। এছাড়া যদি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের বিশেষ সহায়তা দেয়া সম্ভব হয়, তাহলে তারাও সেক্ষেত্রে যন্ত্রাংশ তৈরিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারবে।
আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম প্রধান খাত রেমিট্যান্স। রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে করণীয় কী?
কুতুবউদ্দিন আহমেদ: রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে আমরা তিন রকমের রেট দেখতে পাই—১. সরকারি রেট ২. প্রণোদনাসহ সরকারি রেট—শুধু প্রবাসীদের জন্য এবং ৩. কার্ব মার্কেটের রেট। তিনটি রেটই প্রচলিত। ইনসেনটিভ দেয়ার পর যে রেটটি পাওয়া যায় তার থেকে কার্ব মার্কেটের রেট যদি বেশি হয় তাহলে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানোর প্রবণতা থাকবেই। হুন্ডিতে সবসময়ই ঝুঁকি থাকে। তাই এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক বা এনবিআরের একটা সুচিন্তিত পলিসি ঠিক করতে হবে। যেই ব্যাংকগুলোয় মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমাদের ফান্ড আসে, ওই জায়গাগুলোয় ব্যাংকগুলোর মানি এক্সচেঞ্জ রয়েছে, তারা যদি সেখানে তাদের উপস্থিতি ও সম্পৃক্ততা বাড়ায় তাহলে রেমিট্যান্স যোদ্ধারা কোনো ঝুঁকি ছাড়াই অফিশিয়াল চ্যানেলে টাকা পাঠাতে উদ্বুদ্ধ হবেন।
ব্যবসা-বাণিজ্যে বৈদেশিক বিনিয়োগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যদিও বর্তমানে এর প্রবাহ কম। বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধিকল্পে সরকারের প্রতি কোনো সুপারিশ রয়েছে?
কুতুবউদ্দিন আহমেদ: দেশের বিনিয়োগ নীতিতে বারবার পরিবর্তনের কারণে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা যেন অনিশ্চয়তার মুখোমুখি না হন, সে ব্যাপারে সরকারের উচিত প্রাথমিকভাবে প্রদত্ত প্রণোদনাগুলোর সহজ প্রাপ্তি নিশ্চিত করা। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি যেটি প্রয়োজন সেটি হলো বিদেশী যারা এরই মধ্যে বিনিয়োগ করছেন আমাদের দেশীয় খাতগুলোয়, তাদের সঙ্গেই বিস্তারিত সংলাপে অংশ নিয়ে তাদের চাহিদাগুলো শোনা, যেন নীতিমালার যথাযথ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে তাদের বিনিয়োগের রাস্তাকে আরো সহজ করে তোলা যায়। এক্ষেত্রে ভারত, ভিয়েতনাম প্রভৃতি দেশের উদাহরণ পর্যালোচনা করা যেতে পারে। সেসব দেশে বিদেশী বিনিয়োগ করা সহজতর। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের একটি দীর্ঘদিনের দাবি হলো নিয়ন্ত্রক কাঠামোকে সহজীকরণ, প্রশাসনিক প্রক্রিয়াগুলো সরলীকরণ এবং একক সেবা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা। সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগ সমর্থনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোয় ই-গভর্ন্যান্স সিস্টেম দক্ষ ও দ্রুত হওয়া জরুরি। বাংলাদেশের উচিত উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের ব্যবসায়িক সহযোগীদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে (এফটিএ) অংশ নেয়া, যা পরবর্তী সময়ে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগের (এফডিআই) প্রবাহ বাড়াবে। পাশাপাশি দেশীয় এবং বহির্মুখী টেক্সটাইল-পোশাক শিল্পের প্রসারের জন্য গৃহীত উদ্যোগগুলোকে আর্থিক প্রণোদনার মাধ্যমে উৎসাহিত করা দরকার।
বণিক বার্তা’র সৌজন্যে
বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের অবস্থা যখন নাভিশ্বাস তখন ডিম তৈরি করেছে বাড়তি চাপ। বিভিন্ন পর্যায়ে ডিমের বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করে দিলেও পণ্যটির দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি সরকার। আজও ডিমের পাইকারি আড়তে ডিম বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে।
সরেজমিনে (১৬ অক্টোবর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত পাইকারি বাজারে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়। এদিন পোল্ট্রি মুরগির একশো ডিম ১ হাজার ২১০ থেকে ১ হাজার ২৩০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতে দেখা যায়। সে হিসেবে প্রতি পিস ডিমের দাম পড়ে ১২ টাকা ১০ পয়সা থেকে ১২ টাকা ৩০ পয়সা।
এর আগে, গতকাল ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান ডিম উৎপাদক এবং সরবরাহকারীদের সঙ্গে বৈঠক করে যথাক্রমে উৎপাদক পর্যায়ে ১০ টাকা ৯১ পয়সা, পাইকারিতে ১১ টাকা ১ পয়সা এবং খুচরায় ১১ টাকা ৮৭ পয়সা দাম নির্ধারণ করে দেয়। যা আজ (বুধবার) থেকে কার্যকর কথা বলা হয়।
তবে সরকারের বেঁধে দেয়া এমন দামের প্রতিফলন পাইকারি বাজারের কোথাও দেখা যায়নি। বরং পাইকারি পর্যায়ে প্রতি পিস ডিম ১১ টাকা ১ পয়সা বিক্রি করার কথা থাকলেও বিক্রি হচ্ছিলো ১২ টাকা ১০ পয়সা থেকে ১২ টাকা ৩০ পয়সা পর্যন্ত।
এ নিয়ে শফিক ট্রেডার্স এর ডিম বিক্রেতা মোহাম্মদ কামাল বার্তা২৪.কমকে বলেন, ডিমের দাম গতকাল থেকে কমেছে। গতকাল আমরা প্রতি একশো ডিম বিক্রি করেছি ১৪০০ টাকার বেশি। সেখান থেকে এক দিনের মধ্যেই দুইশো টাকা কমে গেছে।
আল-আমিন ট্রেডার্সের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিক্রেতা বলেন, একদিনে একশো ডিমে দুইশো টাকা কমে গেছে, আর কত কমবে? ডিমের দাম এইভাবে কমলে তো আমরাও বাঁচতে পারবো না, ডিমের যারা উৎপাদক তারাও বাঁচতে পারবে না। আজকে আমাদের কোনো ব্যবসা (লাভ) নাই।
সরকারের বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে বেশি দামে কেনো ডিম বিক্রি করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এইটা বলতে পারি না। আমরা যেমন দামে কিনে আনছি, বিক্রি করতেছি। ডিমের দাম কমলে যারা ডিম উৎপাদন করে তারা বাঁচবে কিভাবে?
ডিমের দাম তো কখনোই এতো বেশি ছিলো না তাহলে সে সময় কিভাবে ব্যবসা করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আর কিছু বলতে চাই না। আমরা ব্যবসা করি, আমরা বুঝি কি অবস্থায় আছি।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি দেশে হয়ে যাওয়া বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে কমে গেছে ডিমের উৎপাদন। প্রতিদিন যেখানে চাহিদা সাড়ে ৪ কোটি থেকে ৫ কোটি ডিমের সেখানে এখানে উৎপাদন হচ্ছে সাড়ে ৩ লাখ ডিম। ফলে এর প্রভাব এসে পড়ে বাজারে, বেড়ে যায় দাম।
এই অবস্থা থেকে জনগণকে স্বস্তি দিতে সরকার প্রায় ৪ কোটি ডিমের আমদানির অনুমতি দিলেও সেখানে মাত্র কয়েক লাখ ডিম আমদানি হয়েছে। তাই সংকট কাটছে না বাজারে।
এর আগেও সরকার ডিমের দাম প্রায় ১২ টাকা বেঁধে দিলেও তা এক মাসেও কার্যকর করতে পারেনি। উল্টো সরকারের অভিযান পরিচালনার জন্য ব্যবসায়ীরা ডিম বিক্রি বন্ধ করে দেয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে।