অভিজ্ঞতার জন্য বাণিজ্যমেলায় খণ্ডকালীন চাকরিতে ছাত্রীরা
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় প্রতি বছরের মতো এবারও স্টলগুলোতে শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়েছে খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগ। পড়াশোনার পাশাপাশি অভিজ্ঞতা অর্জন ও অল্প সময়ের মধ্যে আয় করার সুযোগ থাকায় এই কাজ আগ্রহের সাথে করছেন তারা। এরমধ্যে নারী শিক্ষার্থীদের সংখ্যাই বেশি। পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলেও দক্ষতার সাথে মেলায় বিক্রয়কর্মীর কাজ করছেন এই নারীরা।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) মেলার ১৫তম দিনে মেলা ঘুরে দেখা যায় বেশিরভাগ স্টল, প্যাভিলিয়নে একই রকম পোশাকে এসব বিক্রয়কর্মীরা সুন্দর করে সেজে দাঁড়িয়ে আছেন। দর্শনার্থী আকর্ষণের চেষ্টা তাদের মধ্যে অটল। কেউ দর্শনার্থীদেরকে পণ্য দেখাচ্ছেন, কেউ গুণগতমান বোঝানোর চেষ্টা করছেন, কেউ পণ্য বিক্রয়ের পর দাম বুঝে নিচ্ছেন তো কেউ সহকর্মীকে কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছেন।
বছরের শুরুতে পড়াশোনার চাপ বেশি না থাকায় কেউ শখের বসে, কেউ সময় পার করার জন্য, কেউ হাত খরচ চালাতে, তো কেউ ছোট ব্যবসা শুরু করার উদ্দেশ্যে খন্ডকালীন এই কাজগুলো করছেন। তবে অভিজ্ঞতা অর্জনের কথাই জানালেন বেশিরভাগ বিক্রয়কর্মী। এছাড়া যে প্রতিষ্ঠানের স্টলের কাজ করছেন কাজ ভালো করলে অনেক ক্ষেত্রে তাদেরকে স্থায়ীভাবেও নিয়োগ দেওয়া হয়।
কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলেও খন্ডকালীন চাকরিরত এসব শিক্ষার্থী বিক্রয়কর্মীদের ভালো শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি চৌকস, কৌশলী, সুন্দর বাচনভঙ্গি, দর্শনার্থী আকর্ষণ করার সক্ষমতা, যোগাযোগের দক্ষতা, স্মার্টনেস সেই সাথে আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব সম্পূর্ণরাই মেলায় কাজ করার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেয়েছেন। এছাড়া বাণিজ্যমেলায় ছুটির দিনগুলোতে বা মেলার শেষ মুহূর্তের দিকে দর্শনার্থীদের ভিড় বৃদ্ধি পায়। সুতরাং চাপের মধ্যে কাজ করার সক্ষমতা থাকতে হবে তাদের।
বাণিজ্য মেলায় এক মাস খণ্ডকালীন চাকরির জন্য কর্মীরা প্রতিষ্ঠান অনুযায়ী ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন। এ ছাড়া সকালের নাশতা, দুপুরের খাবার, বিকেলের নাশতা, রাতের খাবার, যাতায়াত খরচও দিচ্ছেন অনেক প্রতিষ্ঠান। এর বাইরে কেউ চাইলে এক মাসের কাজের অভিজ্ঞতা সনদও দেওয়া হয়, যা পরবর্তী সময়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে বা অন্য কোথাও চাকরির ক্ষেত্রে আবেদনপত্রে অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখানো যায়।
এসব নারী বিক্রয়কর্মীরা আনন্দের সাথেই কাজ উপভোগ করছেন। এই কাজ তাদের জন্য ভবিষ্যতে ভালো কাজের সুযোগ করে দেবে বলে মনে করছেন তারা।
এ বিষয়ে ইগলুর মার্কেটিং অফিসার মো. বায়জিদ হাসান বলেন, মেলায় খণ্ডকালীন কাজের জন্য শিক্ষার্থীদেরকে বেশি সুযোগ দেওয়া হয়েছে। যাতে এখান থেকে ভবিষ্যতে তারা ক্যারিয়ার গড়তে পারে। অনেক সময় ভালো পারফরম্যান্স দেখলে আমরা স্থায়ীভাবে তাদেরকে কাজে নিয়োগ দেই। এছাড়া মেলায় তাদেরকে অনেক সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
যোগ্যতার কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, ১৮ বছরের বেশি বয়সী এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে অন্তত এইচএসসি পাশ, স্পষ্ট করে কথা বলতে পারা, কাস্টমার হ্যান্ডেল করার ক্ষমতা যাদের আছে এমন শিক্ষার্থীদেরকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বাণিজ্য মেলার ঈগলু স্টলে কর্মরত আফিয়া আনজুম জানান, আসলে সামনে কোনো পরীক্ষা বা পড়াশোনার চাপ না থাকায় এখানে কাজ করতে আসা। তাছাড়া অল্প সময়ের মধ্যে মোটামুটি ভালোই ইনকাম করা যায়। সেইসাথে অভিজ্ঞতা অর্জনে সহায়ক হয় এই কাজ।
একই স্টাইলে কর্মরত উর্মি বলেন, আমি প্রত্যেক বছরই বাণিজ্যমেলায় এই কাজ করি। টাকা জমাচ্ছি ছোট করে একটি ব্যবসা শুরু করব বলে।
আলোয় গ্রুপের শোরুম ম্যানেজার মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম জানান, 'তারা যেন এখান থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করে পরবর্তীতে ভালো কাজের সুযোগ পায় সে কারণে আমরা তাদেরকে সুযোগ দিয়ে থাকি। ডাক্তার ইঞ্জিনিয়াররা যেমন ইন্টার্নি করে এটাও এক প্রকার তেমনি।'
পারফরম্যান্স ভালো হলে পরবর্তীতে যা স্যালারি ধরা হয় অনেক ক্ষেত্রে তার চেয়ে অধিক দেওয়া হয় এবং বিভিন্ন ধরনের গিফট তাদের জন্য বরাদ্দ থাকে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
আলোয় গ্রুপের স্টলের বিক্রয়কর্মী মেঘলা বলেন, ভাবলাম এক মাস কাজ করে যদি কিছু উপার্জন করা যায় তাহলে নিজের হাত খরচটা চালিয়ে নিতে পারব। সেই সাথে অভিজ্ঞতা তো হচ্ছেই। আর এখন ইউনিভার্সিটিতেও তেমন কোনো পড়ালেখার চাপ নেই।
আলোয় স্টলে যারা কাজ করছে সবাই অনার্স পড়ছে বা কেউ অনার্স শেষ করেছে। এর নিচে কাউকে নেওয়া হয়নি বলেও জানান এ বিক্রয়কর্মী।