মুক্তার পানি তৃষ্ণা মেটাচ্ছে বাণিজ্য মেলার দর্শনার্থীদের
মাসব্যাপী শুরু হওয়া ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা এরইমধ্যে ১৪ দিনে গড়িয়েছে। প্রায় অর্ধেক সময় পার হয়েছে। বাড়তে শুরু করেছে দর্শনার্থীদের ভিড়। মেলায় দর্শনার্থীদের পানির তৃষ্ণা মেটাতে আছে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের হাতে তৈরি করা মুক্তা পানি। যে পানি একেবারেই বিশুদ্ধ।
দর্শনার্থীরা হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে তৃষ্ণার্ত হলে মুক্তা পানির স্টল দেখে ঢুকে পরছে। স্টলের সম্মুখে বড় করে দুইটি বোতলের ছবি দেওয়া থাকায় বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না যে এই স্টলে পানি পাওয়া যাবে। পানি কিনে খাচ্ছেন সাথে প্লাস্টিকের পণ্যও দেখে কিনছেন। স্বল্পমূল্যে পাওয়ায় এই পানির চাহিদা বেড়েছে বাণিজ্যমেলার অন্যান্য স্টলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছেও।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে মৈত্রী শিল্পের আওতায় দুইশরও বেশি প্রতিবন্ধী তৈরি করেন এসব পানি। শুধু পানিই নয় আরো ৭৫ প্রকারের প্লাস্টিক পণ্যও তৈরি করেন তারা। ঢাকার টঙ্গীতে এ শিল্পের স্থায়ী কারখানা। এর মাধ্যমে নিজেদেরকে স্বাবলম্বী করতে পারছে শারীরিকভাবে অক্ষম এসব মানুষরা। শারীরিক প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্টের মাধ্যমে তাদের জন্য ব্যয় হবে এসব অর্থ।
মেলার ৫ নম্বর স্টলে বিভিন্ন সাইজের বোতলে স্বল্প মূল্যে বিক্রি হচ্ছে এই পানি। বাইরে বা মেলার অন্যান্য স্টলে হাফ লিটার পানির মূল্য ১৫ টাকা কিন্তু বাণিজ্য মেলার স্টলে মাত্র ৯ টাকায় খুচরা বিক্রি হচ্ছে। এবং ৫ লিটার পানি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। মেলায় এই দুই সাইজের বোতলের পানির চাহিদা বেশি। প্লাস্টিকের পণ্যেও দেওয়া হচ্ছে ছাড়।
বিভিন্ন সাইজের পানির পাশাপাশি প্লাস্টিকের বিভিন্ন সাইজের এয়ারটাইট বক্স, বালতি, মগ, বেলচাসহ গৃহস্থালির দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্লাস্টিক পণ্য পাওয়া যাচ্ছে এই স্টলে।
অনেক দর্শনার্থীই জানেন না যে এগুলো প্রতিবন্ধীদের হাতে তৈরি। স্টলে এসে জানার পর অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করছেন। সেইসাথে সাধুবাদ জানাচ্ছেন এই উদ্যোগকে। পণ্য পছন্দ হলে আগ্রহ সহকারে কিনছেন তারা।
সুমি নামের এক দর্শনার্থী বলেন, 'প্রতিবন্ধীরা এসব পণ্য তৈরি করেন ভাবাই যায় না। প্লাস্টিকের জিনিসগুলো দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেক মজবুত। আমরা এসব পণ্য কিনলে তার কিছু অংশ প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে ব্যয় হবে শুনেছি। সেজন্য অবশ্যই কেনা উচিত। তবে শুধু এই কারণেই নয় পণ্য গুলোও অনেক ভালো তাই কিনবো।'
শাহেদ নামে একজন বলেন, এই পানির বিষয়ে আমি আগেই শুনেছিলাম যে এই পানি অনেক বিশুদ্ধ এবং এসব প্রতিবন্ধীরা তৈরি করেন। ঢাকা শহরে বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যায় না। দোকান থেকে মিনারেল ওয়াটার কিনলেও ভেতরে একটা ভয় কাজ করে বিশুদ্ধ হবে কিনা। তাই এই পানি বাণিজ্যিকভাবে আরো ছড়িয়ে দেয়া উচিত।
সনিয়া নামে আরেকজন বলেন, এখানকার পণ্য গুলোও দেখে ভালো লাগছে। বক্স দেখছি ভালই লাগছে কয়েকটা কিনব ভাবছি।
মৈত্রী শিল্পের মার্কেটিং ম্যানেজার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রতিবন্ধীদের কল্যাণের কথা চিন্তা করে এই উদ্যোগ নিয়েছেন । আগে আমরা মানুষকে বলতাম প্রতিবন্ধীদেরকে হেল্প করার জন্য এসব কিনতে কিন্তু এখন আর তা বলতে হচ্ছে না কারণ পণ্যগুলো অনেক ভালো ভাবে তৈরি করেন তারা। বোঝার উপায় নেই কারা তৈরি করে।
তিনি আরো জানান, সরকারের এককালীন ব্যয়ে এই শিল্পের কারখানা তৈরি হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে আর কোনো খরচ করতে হচ্ছে না। কারণ শারীরিকভাবে অক্ষম এসব মানুষরা যা তৈরি করেন তা দিয়েই তাদের মজুরি এবং অন্যান্য খরচ উঠে আসে। মেলায় দর্শনার্থীদের অনেক আগ্রহ আমাদের পণ্যের প্রতি।
বাণিজ্যিকভাবে আরো ছড়িয়ে দেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা চিন্তা করছি শুধু বিশেষ কিছু জায়গায় নয় এর বাণিজ্যিক ব্যবহার সবখানেই বৃদ্ধি করব।
মেলার স্টলে দায়িত্বে থাকা রাইসা জানান, মেলার শুরু থেকেই আমরা ভালো বিক্রি করছি। অনেক ভালো সাড়া পেয়েছি এবার। শুধু এই স্তরের দায়িত্বে আছি বলে বলছি না সত্যি পণ্যগুলো অনেক ভালো। নিজে ব্যবহার করেই বুঝতে পেরেছি। আসলে নিজের প্রয়োজনেও লাগে আবার তাদেরও হেল্প হয়।