বিনিয়োগকারীদের পুঁজি কেড়ে নেওয়ার আরেক ঈদ

  • সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

দু-তিনদিন বাদেই ঈদুল ফিতর। এই ঈদেও বিনিয়োগকারীদের মনে নেই কোনো আনন্দ, নেই কোনো উৎসাহ ও উদ্দীপনা। কারণ ২০১০ সালের ধসের প্রায় নয় বছর পরও স্থিতিশীল হয়নি দেশের পুঁজিবাজার।

বরং প্রতিবছরই ধস চলছে বাজারে। এবারের ধস শুরু হয়েছে বছরের শুরুতে। যা এখনও চলছে। চলমান এই ধসে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি হয়েছে ৬২ হাজার কোটি টাকা। ফলে লাভ তো দূরের কথা, পুঁজি হারানোর বেদনায় সাড়ে ২৮ লাখ বিনিয়োগকারীকে পার করতে হচ্ছে আরেকটি ঈদ।

বিজ্ঞাপন

শেয়ার সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) এর তথ্য মতে, বর্তমানে পুঁজিবাজারে ২8 লাখ ৪৫ হাজার ২৬টি বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব রয়েছে। একজন বিনিয়োগকারীর বিপরীতে একটি বিও ধরা হলে সাড়ে ২৮ লাখ বিনিয়োগকারী রয়েছেন বাজারে।

এই বিনিয়োগকারীরা চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২ জুন পর্যন্ত ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) থেকে পুঁজি হারিয়েছেন ৬১ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে ডিএসই থেকে ৩১ হাজার কোটি, আর সিএসই থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা। এই সময়ে ডিএসইর প্রধান সূচক কমেছে ৬০০ পয়েন্ট।

গত পাঁচ মাসে আট লাখ টাকা পুঁজি হারানো বিনিয়োগকারীর একজন হলেন আডিল সিকিউরিটিজের অধ্যাপক মুজিব উদ্দিন। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ২০১০ সালের ধসে আমার ৪৫ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে দীর্ঘ নয় বছর চেষ্টা করেছি। নতুন করে আরো ১১ লাখ টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে বেশ কিছু টাকার লোকসান কাটিয়ে উঠতে শুরু করছিলাম। কিন্তু ফেব্রুয়ারি থেকে চলা দরপতনে নতুন করে আরো আট লাখ টাকা পুঁজি হারিয়েছি।

তিনি বলেন, রমজানের ঈদ মানেই নতুন পোশাক কেনা। কিন্তু এক দিকে, টানা চার মাস দরপতন। অন্য দিকে, ভালো শেয়ারের দাম বাড়ার পরিবর্তে বেড়েছে খারাপ শেয়ারের। ফলে আমি একদম ধরা খেয়েছি। কোনো রকম জোড়াতালি দিয়ে ঈদ পার করতে হচ্ছে আমাদের।

ঈদ ও দরপতনের ব্যাপারে প্রশ্ন করতেই ক্ষোভ ঝরে পড়ে ইবিএল সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী আশিকুর রহমানের কথায়। বেশ কিছুক্ষণ সরকারের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমাদের কথা কেউ ভাবে না। চিন্তা করেন, কোনো দেশের পুঁজিবাজার কি টানা নয় বছর ধরে খারাপ থাকতে পারে? পৃথিবীর কোনো দেশে কি সেই নজির আছে, দেখাতে পারবেন?

তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ছিল, গত আট বছর যেভাবেই যাক, নতুন সরকার ক্ষমতায়, এবার বাজার ভালো হবে। কিন্তু তাতে অন্তত এবারের ঈদটা ভালো কাটবে, স্ত্রী-সন্তান, পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালোভাবে এ ঈদ কাটাতে পারবো। কিন্তু লাভ তো দূরের কথা, সর্বশেষ তিন মাসে চার লাখ টাকা মূলধন নেই।

বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি ব্রোকাজের হাউজের মালিকদের অবস্থা আরো খারাপ। নাম না প্রকাশ শর্তে ডিএসইর একজন পরিচালক বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমার ব্যক্তিগত বিনিয়োগের কথা বাদ দিলাম। বাজারে শেয়ার ব্যবসা না থাকায় অন্যখাত থেকে টাকা এনে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঈদ বোনাস দিয়েছি। বেতন দিতে পারিনি।