শিল্পে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব এখন বিইআরসিতে

  • সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

দাম বাড়ানোর প্রস্তাব এখন বিইআরসিতে/ছবি: সংগৃহীত

দাম বাড়ানোর প্রস্তাব এখন বিইআরসিতে/ছবি: সংগৃহীত

শিল্পকারখানা ও ক্যাপটিভ বিদ্যুতে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে পেট্রোবাংলা। গ্যাসের দাম বৃদ্ধি সংক্রান্ত পেট্রোবাংলার প্রস্তাব পাওয়ার কথা বার্তা২৪.কমকে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ।

বিজ্ঞাপন

তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, বিকেলের দিকে পেট্রোবাংলার প্রস্তাবটি পেয়েছি। প্রস্তাবটি ডাউনমার্ক করে সদস্য গ্যাসকে দিয়েছি। আমরা এই প্রস্তাব নিয়ে আগামীকাল (৭ জানুয়ারি) বসবো।

পেট্রোবাংলার প্রস্তাবে কি চেয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেন, বিষয়টি আমি বিস্তারিত দেখার সময় পাই নি। শুধু মার্ক করে নিচে নামিয়ে দিয়েছি।

বিজ্ঞাপন

সুত্র জানিয়েছে, নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে দর নির্ধারিত না করে আমদানিকৃত এলএনজির খরচের সমান দর নির্ধারণ করার কথা বলা হয়েছে। পুরাতন শিল্প কারখানায় লোড বাড়াতে চাইলেও গুণতে হবে দ্বিগুণ (এলএনজি আমদানির দর) মূল্য।

আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে গেলে দাম বাড়বে, আর কমে গেলে কমবে। দুই ধরণের দর প্রস্তাব করা হয়েছে। অনুমোদিত (প্রতিশ্রুত) কিন্তু সংযোগ চালু হয় নি এমন গ্রাহকদের এক রকম দর, আর নতুন শিল্পে ভিন্ন দর নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। প্রতিশ্রুত গ্রাহকের অর্ধেক গ্যাসের দর হবে বিদ্যমান দরের সমান, আর অর্ধেকের জন্য আমদানি মূল্য। বর্তমানে শিল্পে ব্যবহৃত প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দর নেওয়া হচ্ছে ৩০ টাকা, আর ক্যাপটিভে ৩০.৭৫ টাকা।

দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির (জিটুজি) আওতায় এবং স্পর্ট মার্কেট থেকে (উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে) এলএনজি আমদানি করে আসছে বাংলাদেশ। জিটুজি চুক্তিতে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়, যে কারণে ওই দর প্রকাশ করা হয় না। তবে গত আগস্ট মাসে স্পর্ট মার্কেটের চুক্তি অনুযায়ী প্রতি ঘনমিটারের দাম পড়েছে ৭১ টাকা।

প্রস্তাবিত ফর্মুলা অনুমোদিত হলে প্রতিশ্রুত গ্রাহককে তার ব্যবহৃত অর্ধেক গ্যাসের জন্য ঘনমিটার প্রতি প্রায় ৬০ টাকার মতো পড়তে পারে। অর্ধেকের জন্য বিদ্যমান দর ৩০ টাকা হারে দিতে হবে। নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে পুরোপুরি ৬০ টাকা হারে বিল দিতে হবে।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ গত ২৭ ডিসেম্বর এক সভায় গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, শিল্প ও ক্যাপটিভ শ্রেণিতে সম্ভাব্য নতুন গ্যাস সংযোগের ক্ষেত্রে গ্রাহকগণ এলএনজি আমদানির মোট ব্যয় মূল্যে পরিশোধ করবেন। শিল্প ও ক্যাপটিভ শ্রেণিতে প্রতিশ্রুত (প্রাথমিক সম্মতিপত্র/চহিদাপত্র ইস্যুকৃত) গ্যাস সংযোগের ক্ষেত্রে গ্রাহকগণ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যমান শিল্প/ক্যাপটিভ পাওয়ার শ্রেণির মূল্যে প্রাপ্য হবেন। অতিরিক্ত ব্যবহারের ক্ষেত্রে এলএনজি আমদানির মোট ব্যয় মূল্যে দাম পরিশোধ করবেন।

একইসঙ্গে শিল্প ও ক্যাপটিভ শ্রেণির বিদ্যমান গ্রাহক অনুমোদিত লোড অপেক্ষা অতিরিক্ত ব্যবহারের ক্ষেত্রে এলএনজি আমদানির মোট ব্যয় মূল্যে দাম পরিশোধ করার কথা বলা হয়েছে।

এলএনজি আমদানি মূল্য বলতে দাখিলকৃত বিলের পূর্ববর্তী ৩ মাসের দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির আওতায় ও স্পর্ট এলএনজি ক্রয় বাবদ মোট ব্যয় (এলএনজি ক্রয়মূল্য, রিগ্যাসিফিকেশন চার্জ, ভ্যাট, ট্যাক্স বিভিন্ন মার্জিনসহ সার্বিক মূল্য) গড় মূল্য বুঝাবে জানানো হয়েছে।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ওই সিদ্ধান্তের আলোকে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) প্রেরণ করা হবে। এ জন্য শিল্প ও ক্যাপটিভ শ্রেণির বিদ্যমান গ্রাহকগণ অনুমোদিত লোড অপেক্ষা অতিরিক্ত গ্যাস ব্যবহারের তথ্য (জুলাই ২০২৩ হতে অক্টোবর ২০২৪ পর্যন্ত) মাসভিত্তিক বিবরণী প্রেরণ করতে বলা হয়েছে।

পেট্রোবাংলার মহাব্যবস্থাপক (হিসাব) আব্দুল জলিল স্বাক্ষরিত ওই চিঠি ৬ বিতরণ কোম্পানি ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবরে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে,উল্লেখিত প্রস্তাব (গ্যাস ট্যারিফ পুননির্ধারণের প্রস্তাব) বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে প্রেরণের জন্য শিল্প ও ক্যাপটিভ শ্রেণির বিদ্যমান গ্রাহকগণ অনুমোদিত লোড অপেক্ষা বেশি ব্যবহারের পরিমাণ সংক্রান্ত তথ্য প্রয়োজন। চিঠিতে একটি টেবিল যুক্ত করে দিয়ে সেই অনুযায়ী তথ্য দিতে বলা হয়েছে।

পেট্রোবাংলা সূত্র জানিয়েছে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি লিমিটেড থেকে ১ টাকা দরে, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি থেকে ১.২৫ টাকা দরে, বাপেক্স থেকে ৪ টাকা দরে প্রতি ঘনফুট গ্যাস কেনা হয়। এরপর বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন বাংলাদেশ ও টাল্লোর কাছ থেকে কেনা গ্যাসের সংমিশ্রণে গড় দর দাঁড়ায় ৬.০৭ টাকা ঘনমিটার। দেশীয় এসব উৎস থেকে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে দৈনিক কমবেশি ২০০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। এলএনজি আমদানি থেকে ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গড় মূল্য দাড়িয়েছে ২৪.৩৮ টাকা। আর গ্যাসের গড় বিক্রয় মূল্য ছিল ২২.৮৭ টাকা। এতে করে প্রতি ঘনমিটারে ১.৫৬ টাকা লোকসান হয়েছে পেট্রোবাংলার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে স্পর্ট মার্কেট থেকে আনা এলএনজির দাম পড়েছিল ৬৫ টাকা, যা আগস্টে (২০২৪) ৭১ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে।

সর্বশেষ ২০২৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাহী আদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে (সরকারি ও আইপিপি) ১৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪.৭৫ টাকা ঘনমিটার এবং ক্যাপটিভ পাওয়ারে ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০.৭৫ টাকা ঘনমিটার করা হয়। তার আগে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসেও নির্বাহী আদেশে গ্যাসের দাম গড়ে ৮২ শতাংশ বাড়ানো হয়।