‘আ.লীগের পোষকদের কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিপীড়নের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে’

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ড. বদিউল আলম মজুমদার, কান্ট্রি ডিরেক্টর, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-বাংলাদেশ।

ড. বদিউল আলম মজুমদার, কান্ট্রি ডিরেক্টর, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-বাংলাদেশ।

আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী অপকর্মের পোষকদের কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাষ্ট্রীয় বাহিনী থেকে দলীয় বাহিনীতে পরিণত এবং নিপীড়নের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দি হাঙ্গার প্রজেক্টের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. বদিউল আলম মজুমদার। 

এ ধরনের কর্মকর্তাদের শাস্তির আওতায় এনে দীর্ঘ সময় ধরে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন পুনর্গঠনের তাগিদ দিয়েছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১৪ আগস্ট) সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালাগের (সিপিডি) আয়োজনে ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সামনে চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক ডায়ালগে প্যানালিস্টের বক্তব্যে তিনি এ সব মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে ইনস্ট্রুমেন্ট হিসেবে কাজ করা লোকজন নতুন সরকারের সময়ে ঘাপটি মেরে বসে আছেন।  

নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আশু করণীয় নির্ধারণে সুপারিশ তুলে ধরতে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।

এ সময় তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের এই মুহূর্তে প্রধান কাজ হবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা এবং মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর হেফাজতে থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের প্রশাসনের কর্মকর্তা ও নেতাদের তালিকা প্রকাশ করে তাদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন বদিউল আলম।

তিনি বলেন, ‘আমাদের ছেলেমেয়েরাও হেফাজতে ছিল। আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম। তারাও হেফাজতে থাকলে তার তালিকা প্রকাশ করা দরকার। তারা গ্রেফতার হয়েছে কি হয়নি সেটা জানানো দরকার। তাদের আইনি প্রক্রিয়ায় কোর্টে উপস্থাপন করা দরকার’ 

এ সময় তিনি আরও বলেন, তারা যেন পালিয়ে যেতে না পারে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। সাত শতাধিক মানুষের হত্যার মাধ্যমে মানবতা বিরোধী অপরাধ, খুন ছাড়াও অন্যান্য ফৌজদারি অপরাধ এবং দুর্নীতি ও পাচারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক অপরাধের বিচার নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।

এ সময় তিনি বলেন, ক্ষমতাশীনদের সঙ্গে আতাত বা সম্পর্ক ছিল না এমন পরিবার থেকে আইনশৃঙখলা বাহিনী বা প্রশাসনে খুব একটা নিয়োগ হয়নি।

প্রশ্ন ফাঁস, মৌখিক পরীক্ষায় ২০০ নাম্বারের মাধ্যমে স্বজনপ্রীতির বাধা পার হয়ে চাকরির যোগ্য নির্বাচিত হলেও অরাজনৈতিক পরিবারের প্রার্থীদের পুলিশ ভ্যারিফিকেশনের মাধ্যমে আটকে দেয়া হয়েছে। প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে অনেকেই লম্বা সময় ধরে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

আগামীতে কী ধরনের সংস্কার বা অন্যান্য কাজ করা হবে এ বিষয়ে চলমান সরকারের পক্ষ থেকে একটি রূপরেখা প্রকাশ করা উচিত বলে মনে করেন বদিউল আলম।

তিনি বলেন, এই সরকার তিন বা ছয় মাসের জন্য থাকলে এক ধরনের করণীয় হবে, আর রাষ্ট্র মেরামত করতে চাইলে অন্য ধরনের করণীয় হবে।

তবে কর্তৃত্ববাদের জগদ্বল পাথর হয়ে যেন কোনো সরকার জনগণের বুকে আর চেপে বসতে না পারে এই বিষয়ে চলমান সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।

প্রক্রিয়াগত ও পদ্মাতিগত সব ধরনের সংস্কার এই সরকারের মেয়াদে সম্ভব হবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই লক্ষ্য অর্জনে রাজনৈতিক সমঝোতায় যেতে হবে।

তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দল ও সিভিল সোসাইটির সঙ্গে বসে একটি রাজনৈতিক সমঝোতায় এসে একটি চুক্তি করতে হবে। পরে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দলকে এই চুক্তি মেনে চলতে বাধ্য করতে হবে।’