এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের পদত্যাগ দাবিতে আল্টিমেটাম

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

নুরুল আমিন, ড. মো. হেলাল উদ্দিন, আবুল খায়ের মো. আমিনুর রহমান ও ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী

নুরুল আমিন, ড. মো. হেলাল উদ্দিন, আবুল খায়ের মো. আমিনুর রহমান ও ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হাওয়ায় দুলতে শুরু করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের পদত্যাগের দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যৌথসভা থেকে আল্টিমেটাম দেওয়া হয়। ১৪ আগস্ট বিকেল ৫টার মধ্যে পদত্যাগ না করলে অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন তারা। কালকে অফিসে আনার জন্য চেয়ারম্যান ও কমিশনের সদস্যদের (৩ জন) গাড়ির সার্ভিস দেওয়া হলেও, ফেরার পথে আর গাড়ি দেওয়া হবে না জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

কিছু বিষয় নিয়ে অনেকদিন ধরেই বিইআরসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছিল। কমিশনের শুরু থেকে সম্মানি ভাতা ও এনার্জি ভাতা দিয়ে আসলেও ২০২৩ সালে বর্তমান কমিশন এসে বন্ধ করে দেয়। বিদ্যুতের কোম্পানিতে কাজ করা কর্মকর্তারা যেভাবে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বিদ্যুৎ ফ্রি পান, তেমনি বিইআরসির স্টাফদের মাসে ২৫০০ টাকা এনার্জি ভাতা দেওয়া হতো। আবার কমিশনে যোগ্য কর্মকর্তা থাকলেও পরিচালক পদে প্রেষণে নিয়োগ নিয়েও রয়েছে চরম অসন্তোষ।

কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, বর্তমান কমিশন আওয়ামী লীগ সরকারের আজ্ঞাবহ হিসেবে পরিচিত। তাদের নিয়োগও আইনসিদ্ধ হয়নি। তারা সরকার অনৈতিক সব নির্দেশনা ফলো করতে গিয়ে কমিশনকে মানুষের কাছে ছোট করেছেন। সব আদেশ দেওয়া হয় কোম্পানির পক্ষে যেভাবে সরকার চান। এতে ভোক্তাদের স্বার্থ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পদত্যাগ দাবি প্রসঙ্গে বিইআরসির সদস্য (বিদ্যুৎ) আবুল খায়ের মো. আমিনুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, পদত্যাগের আল্টিমেটাম বিষয়ে আমি এখনও কিছু জানি না। আমি শুনেছিলাম তারা চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করছেন। এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, তারা যদি আমার পদত্যাগ চান তাহলে কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখবে। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না।

কমিশনের সদস্য ড. মো. হেলাল উদ্দিন বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, আমি এখনও এ বিষয়ে কিছু জানি না। তাই এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চাই না। কমিশনের অপর সদস্য ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরীও দুপুর পর্যন্ত এ বিষয়ে অবগত হননি বলে বার্তা২৪.কমকে জানিয়েছেন।

কমিশনের চেয়ারম্যান নুরুল আমিনকে অফিসে দেখা যায়নি। কমিশন সূত্র জানিয়েছেন, কয়েকদিন ধরেই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দাবি দাওয়া নিয়ে সরব ছিলেন। রোববারের মধ্যে কিছু একটা করবেন বলে আশ্বাসও দিয়েছেন। কিন্তু তা না করে ১২ আগস্ট (সোমবার) থেকে ৩দিনের ছুটি নিয়ে অফিসে অনুপস্থিত রয়েছেন।

বিইআরসির চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, আমি অসুস্থতাজনিত কারণে ছুটি নিয়েছি। গত পরশু (১১ আগস্ট) অফিস গিয়েছিলাম তারা এনার্জি ভাতা ও বিশেষ ভাতা নিয়ে কথা বলেছে। অর্থমন্ত্রণালয় বলেছে এনার্জি ভাতা দেওয়া যাবে না। আবার বিশেষ ভাতা গণহারে বেসিকের সমান দেওয়া যাবে না। ৩৩ বিধি অনুযায়ী যারা ভালো কাজ করবে, তাদেরকে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

পদত্যাগ দাবি প্রসঙ্গে বলেন, বিষয়টি মন্ত্রণালয় দেখবে, এখনই এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চাই না।

২০০৩ সালে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন পাশের মাধ্যমে নিরপেক্ষ ও আধাবিচারিক স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গঠিত হয়। গ্যাস ও বিদ্যুতের বিতরণ কোম্পানিগুলোর জবাবদিহিতা এবং ভোক্তার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গঠিত বিইআরসি মূলত ২০০৯ সালে যাত্রা শুরু করে। এ পর্যন্ত ১১টি প্রবিধানমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। আর ১২টি প্রবিধানমালা এক যুগেরও বেশি সময় ধরে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। আইনে সকল ধরণের জ্বালানির দাম নির্ধারণের এখতিয়ার দেওয়া প্রবিধানমালা ঝুলে থাকায় শুধুমাত্র গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করে আসছিল বিইআরসি।

২০২৩ সালে হঠাৎ করেই আইন সংশোধন করে নির্বাহী আদেশে দাম সমন্বয় (কম/বেশি) করার বিধান যুক্ত করা হয়। তার পর থেকে নির্বাহী আদেশে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম নির্ধারণের সিদ্ধান্তে কার্যত বেকার হয়ে পড়েছে আধাবিচারিক প্রতিষ্ঠানটি। এখন ক্লিনিক্যালি ডেড বলা চলে। এর মাধ্যমে ভয়াবহ শূন্যতা তৈরি করেছে। বিইআরসি গণশুনানির মাধ্যমে দাম চূড়ান্ত করায় ইউটিলিটিগুলোর নানা রকম অসঙ্গতি সামনে আসতো। এতে করে তাদের ওপর এক ধরণের চাপ তৈরি হয়, দিনে দিনে একটি কালচারে পরিণত হতে যাচ্ছিল। সেই প্রক্রিয়াকে গলাটিপে হত্যা করছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তের পর এখন আবার বিইআরসিকে কার্যকর দেখতে চান সংশ্লিষ্টরা।