বাজেট ২০২৪-২০২৫
২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার এডিপি প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনের
পরিবহন, বিদ্যুৎ ও শিক্ষাখাতকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) চূড়ান্ত করেছে পরিকল্পনা কমিশন। এর মধ্যে সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা এবং বাকি ১ লাখ কোটি টাকা ঋণ ও অনুদান হিসেবে বিদেশি উৎস থেকে আসবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা।
মঙ্গলবার (৭ মে) পরিকল্পনামন্ত্রী আবদুস সালামের সভাপতিত্বে পরিকল্পনা কমিশনের বর্ধিত সভায় প্রস্তাবিত এডিপি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে (এনইসি) উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সিনিয়র সচিব সত্যজিৎ কর্মকার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এনইসি সভায় প্রস্তাবিত এডিপির সামান্য পরিবর্তন হতে পারে।
সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২০২৪) জন্য ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন করা হয়েছিল। এর মধ্যে ১ লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এবং বাকি ৯৪ হাজার কোটি টাকা আসবে বৈদেশিক উৎস থেকে। এ হিসাবে আগামী অর্থবছরে এডিপির আকার মাত্র ২ হাজার কোটি টাকা বা ০.৭৬% বাড়ছে।
পরিকল্পনা কমিশন চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ ৪ হাজার কোটি টাকা বা ২.৩৭% কমিয়ে আনছে। অন্যদিকে, বৈদেশিক উৎসের বরাদ্দ ৬ হাজার কোটি টাকা বা ৬.৩৮% বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে।
অবশ্য বাস্তবায়নে ধীরগতি আর আর্থিক সংকটের কারণে চলতি অর্থবছরের এডিপির আকার ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। এ হিসাবে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির (আরএডিপি) তুলনায় আগামী বছরে বরাদ্দ বাড়ছে ২০ হাজার কোটি টাকা।
পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) ধারাবাহিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নানামুখী সংকটের কারণে আগের বছরের তুলনায় অভ্যন্তরীণ উৎসের বরাদ্দ কিছুটা কমেছিল। স্বাধীনতা পরবর্তী অন্য কোনো বছরেই উন্নয়নখাতে অভ্যন্তরীণ উৎসের বরাদ্দ কমেনি।
এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, চলমান আর্থিক সংকটের বিষয়টি বিবেচনায় নিলে উন্নয়নখাতে বরাদ্দ বাড়ানোর সুযোগ নেই বললেই চলে।
তিনি বলেন, রাজস্ব আহরণে সফলতা না থাকায় সরকারের অর্থ ব্যয়ের সুযোগ কমে এসেছে। মূল্যস্ফীতির কারণে অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে আসায় আমদানি শুল্ক আহরণও কমছে। তা ছাড়া তারল্য সংকটের কারণে ব্যাংক বা অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নেওয়ার সুযোগও কমে এসেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অর্থনীতিবিদ আরো বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারি ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রয়োজন রয়েছে। বাজারে নগদ টাকার প্রবাহ বাড়লে নিত্যপণ্যের দাম দ্রুতই বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।
তবে এডিপির বরাদ্দ গণহারে না কমিয়ে শেষ হওয়ার অপেক্ষায় থাকা বা তাড়াতাড়ি শেষ করা যাবে, এমন প্রকল্পগুলোর প্রয়োজনীয় বরাদ্দ নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন তিনি।
চাপের মুখে অভ্যন্তরীণ আর্থিক উৎস
সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সমন্বিত চাহিদার তুলনায় মোট ২০ হাজার ৩শ ৯১.১৯ কোটির টাকা কম বরাদ্দ প্রস্তাব করেছে পরিকল্পনা কমিশন। প্রস্তাবনা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো এই তহবিল থেকে মোট ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা চাইলেও এর ৮৯% বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।
সব মিলিয়ে বিভিন্ন বাস্তবায়নকারী সংস্থা এডিপিতে ২ লাখ ৭৬ হাজার ৪ শ ২ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছিল। সে হিসাবে এডিপিতে বরাদ্দের ঘাটতি থাকছে, ১১ হাজার ৪ শ ২ কোটি টাকা।
অবশ্য বিদেশি উৎস থেকে চাহিদার চাইতে ৮ হাজার ৯শ ৮৯ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ নিতে প্রস্তাব করেছে পরিকল্পনা কমিশন। ৯১ হাজার ১১ কোটি টাকা চাহিদার বিপরীতে বিদেশি ঋণ বাবদ এক লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে।