‘দ্রব্যমূল্যের আগুনে ঘি ঢালার উদ্যোগ চলছে’

  • সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

করোনার ক্ষত দগদগে, অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠা বন্ধ হয়ে গেছে, পর্যটন কেন্দ্র ও রেস্টুরেন্ট সংশ্লিষ্ট অনেকেই এখনও বেকার রয়ে গেছে। দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরতে পারছে না সরকার। তেমন একটি সময়ে ডিজেলের দাম বাড়িয়ে আগুনে ঘি ঢালার ব্যবস্থা করেছে সরকার।

ডিজেলের নজিরবিহীন মূল্য বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়ায় এমনই মন্তব্য করেছেন পাঠাও চালক স্বপন মিয়া। এক সময়ের উদ্যোক্তা স্বপন মিয়াকে করোনা নতুন পেশায় আসতে বাধ্য করেছে। সারাজীবনের সঞ্চয় দিয়ে ৩ বন্ধু মিলে একটি রেস্টুরেন্ট চালু করেছিলেন। করোনাকালে বন্ধ থাকায় ভাড়া পরিশোধ করতে না পেরে বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন। বলা চলে সবকিছু ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে বেঁচেছেন।

বিজ্ঞাপন

স্বপন মিয়া বলেন, সরকার জনগণের পালস বুঝতে পারছে না। অনেকেই নানামুখী সংকটের মধ্যে রয়েছে। পরিবহনের উপর তাদের কোনোকালেই নিয়ন্ত্রণ ছিল না। এখন যে অরাজকতা শুরু হয়েছে রক্ষা পাবো কিভাবে। ঘোষণা ছাড়াই রাস্তায় গাড়ি নেই। বাজারে শীতের সব্জির অগ্নিমূল্য, কোনো কোনো সব্জির দাম ২’শ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ট্রাক ভাড়া বেড়ে যাবে তখনওতো সব্জির মূল্য আরও বেড়ে যাবে। উৎসমুখে ১ টাকা বাড়লে সেই অজুহাতে আমরা দাম বাড়াই কয়েকগুণ। কে ঠেকাবে ট্রাক চালকদের। ভোজ্য তেলের দামও লাগাম ছাড়া।

তেমন একটি অবস্থায় ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি, আবার একদিন পরেই এলপি গ্যাসের মুল্য বৃদ্ধি মানুষকে অতিষ্ঠ করে তুলছে। মানুষ ক্ষোভে ফুসছে। সরকার মোটেই সঠিক কাজ করেনি। সব নিয়ে দাম বাড়াতে পারতো। ৫’শ টাকা দিয়ে কাঁচাবাজার করে বাসায় ফেরা যায় না।

সবজি বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, চড়াদামে শিকারতো আমরাও। দিন শেষে আমাকেওতো সব্জি কিনতে হয়। আবার ব্যবসায় পুঁজি বেশি খাটাতে হচ্ছে। দেখেশুনে মনে হচ্ছে সরকার গরিব দেখতে পারছে না।

বাস চালক নজরুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরাতো বাস চালাতে চাই। বসে থাকলেতো বেতন পাবো না, কিন্তু খরচ না উঠেলে কি করে চলবে। সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে, বাসের অগ্নিম আয়কর আড়াই হাজার থেকে বাড়িয়ে ৬ হাজার করা হয়েছে। চাকা, টায়ার-টিউব, মবিল ও অন্যান্য সকল যন্ত্রপাতির দাম বেড়েছে। পথে পুলিশের চাঁদাবাজি বেড়েছে। ১৫ বছর ধরে বাস চালাই কখনও একসঙ্গে এতো বেশি পরিমাণে তেলের দাম বাড়েনি। করোনার সময়ে কতোদিন গাড়ি বন্ধ ছিল, তখন আমরা কিভাবে চলেছি কেউ খোজ নেয় নি। এইতো কয়েক মাস আগেও ৩ মাসের মতো বাস বন্ধ ছিল, অনেকেই ঋণের দায়ে জর্জরিত। সে কথা চিন্তা না করে হঠাৎ তেলের দাম বাড়ানো হলো।

বুধবার মধ্যরাতে হঠাৎ করেই ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটার প্রতি ১৫ টাকা হারে বাড়ানো হয়। ৬৫ টাকা লিটারের ডিজেল কিনতে এখন ৮০ টাকা করে গুণতে হচ্ছে। আর ভাড়া বৃদ্ধির দাবীতে অলিখিত আন্দোলনে নেমে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। রাস্তায় যানবাহন না পেয়ে নাকাল জনগণ। পরিবহন মালিকদের দাবি তেলের দাম বাড়ানোর সঙ্গে ভাড়া সমন্বয় করা উচিত ছিল। সাধারণ জনগণ উদ্বেগের মধ্যে সময় পার করছে, পরিনতি কোথায় গিয়ে ঠেকে সেদিকে লক্ষ্য রাখছেন। তেলের দাম কমে নাকি গাড়ি ভাড়া বেড়ে যায়। তারা তেলের দাম কমানোর জোর দাবি জানিয়েছেন।