কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া: জরাজীর্ণ ফেরি দিয়ে চলছে পারাপার
রাজধানী ঢাকার সাথে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগের অন্যতম নৌরুট কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া। মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঠালবাড়ি ঘাট দিয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষ ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে। ঘাটে ফেরি, লঞ্চ ও স্পিড বোট ব্যবহার করে নদী পার হন যাত্রীরা। তবে এ নৌরুটে বেশিরভাগ মেয়াদোত্তীর্ণ লক্কর-ঝক্কর ফেরি দিয়ে চলছে পদ্মা পারাপার।
বিআইডাব্লিউটিসি'র কাঁঠালবাড়ি ঘাট সূত্র জানায়, যাত্রী ও গাড়ি পারাপারের জন্য ১৮টি ফেরি রয়েছে। এর মধ্য রো রো চারটি, ডাম্ব ছয়টি, কে টাইপ পাঁচটি ও ছোট ফেরি তিনটি।
জানা যায়, চলমান ফেরিগুলোর মধ্যে কমপক্ষে ছয়টি ফেরি রয়েছে, যেগুলো ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে কলকাতা-নারায়ণগঞ্জ রুটে পাট পরিবহন করতো। এখন কোনো রকম জোড়াতালি দিয়ে যানবাহন পরিবহন করে চলছে।
তীব্র স্রোতের মধ্যেও প্রতিদিন ফেরিগুলো যাত্রী ও পণ্যবোঝাই যানবাহন পার করছে। বেশির ভাগ ফেরি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। যার কারণে অতিরিক্ত সময় গুনতে হচ্ছে যানবাহনগুলোর। যার ফলে যানজট বেড়েছে, এছাড়া দুর্ঘটনার শঙ্কাও রয়েছে। আবার পদ্মায় স্রোতের গতিবেগ বেশি থাকলে কর্তৃপক্ষ ফেরিগুলো বন্ধ রাখছে। আবার পুরাতন কিছু ফেরি রং করে নতুন করা হয়েছে বলেও জানা যায়।
কাঁঠালবাড়ি ঘাট সূত্রে জানা গেছে, এই ঘাটের বেশকিছু ফেরি লক্কর-ঝক্কর ও মেয়াদোত্তীর্ণ। ফলে তীব্র ঢেউয়ের কারণে নদী পার হতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় ফেরিচালকদের। নাব্যতা সংকটের কারনে একমাস ধরে লৌহজং টার্নিং বিপজ্জনক হয়ে পড়ায় শিমুলিয়া থেকে ছেড়ে আসা বিকল্প চ্যানেল ব্যবহার করছে। ফলে পারাপারে নির্ধারিত সময়ের দ্বিগুণ সময় লাগছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক মেরিটাইপ সংস্থার (আইএমও) কোড অনুযায়ী বাংলাদেশে চলাচলরত ফেরিগুলো ৩০ বছর চলার কথা থাকলেও এ রুটের বেশির ভাগ ফেরিই আরও বেশি পুরনো ও মেয়াদোত্তীর্ণ।
ফ্ল্যাট ফেরিগুলোর মধ্যে ১৯৩৮ সালে থোবাল ও যমুনা, ১৯২৫ সালে রানীক্ষেত, রায়পুরা, রানীগঞ্জ ও টাপলো এক সময় নারায়ণগঞ্জ থেকে কলকাতা পাট বহন করেছে। পরে তা ফেরি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। অথচ এগুলোর মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। এছাড়া রো রোসহ কয়েকটি ফেরির ইঞ্জিন শক্তিশালী হওয়ায় সব মিলিয়ে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেন কর্তৃপক্ষ।
ঘাট পারের অপেক্ষায় থাকা ট্রাকচালক মহিউদ্দিন বলেন, ‘এ রুটের ডাম্ব ফেরিগুলো অনেক ভাঙাচোরা। অনেক সময় আবহাওয়া খারাপ থাকলে মাঝ নদী থেকে আবার পাড়ে ফিরে আসতে হয়।’
বনফুল পরিবহনের চালক নাইম আহম্মেদ বলেন, ‘মাঝে মাঝে কিছু ফেরি বন্ধ থাকে। যেগুলো চলাচল করে, সেগুলোতে যাত্রীবাহী পরিবহনই বেশি পারাপার করে। প্রতিটি ফেরিই পুরাতন। কখন যে কী দুর্ঘটনা ঘটে!’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডাম্ব ফেরির এক মাস্টার ইনচার্জ জানান, ডাম্ব ফেরিগুলো এক সময় নারায়ণগঞ্জ থেকে ভারতের আসাম পর্যন্ত পাট টানার কাজে ব্যবহৃত হতো। ফেরিগুলো এখন অনেক পুরাতন হয়ে গেছে, ইঞ্জিনের শক্তিও কমে গেছে। ফলে স্রোতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অনেক সময় পারছে না।’
রো-রো ফেরি এনায়েতপুরীর মাস্টার ইনচার্জ মো. আমিন বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে স্রোতের গতিবেগ অনেক বেশি থাকে। রো রো ফেরিগুলোই চলাচল করতে হিমশিম খেতে হয়। এর চেয়ে ডাম্ব ফেরিগুলোর ইঞ্জিনে শক্তি কম হওয়ায় তাদের সমস্যা আরও বেশি।’
বিআইডাব্লিউটিসির কাঁঠালবাড়ি ঘাট ম্যানেজার আ. সালাম বলেন, ‘তীব্র স্রোতে সেলফ ইঞ্জিনচালিত রো রো ফেরিগুলো ঠিকমতো চলতে পারছে। ডাম্ব ফেরির জন্য সমস্যা। তবে আবহাওয়া ভালো থাকলে নৌ চলাচলে সমস্যা হয় না।’
বিআইডাব্লিউটিএ'র শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক (মেরিন) আহমদ আলী বলেন, 'এ রুটের বেশির ভাগ ফেরিই পুরাতন। তবে এখনো ইঞ্জিন সবল রয়েছে। স্রোতের সময় ডাম্ব ফেরির চলতে সমস্যা হয়। এছাড়া অন্যান্য ফেরি চলাচলে তেমন সমস্যা নেই। আর নতুন ফেরি যুক্ত হবার বিষয়টি উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষ জানেন।'