বিশেষ অভিযানেও কুমিল্লায় মাদক কারবার থামছে না

  • জাহিদ পাটোয়ারী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুমিল্লা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না সীমান্ত লাগোয়া কুমিল্লা জেলার মাদক কারবার। মাদক কারবারিদের লাগাম টানতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে সংশ্লিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। কিন্তু এতেও টনক নড়ছে না মাদক সিন্ডিকেটের।

পুলিশ সূত্র জানায়, গত বছরের ৪ মে দেশব্যাপীমাদকবিরোধী অভিযান ঘোষণার পর কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলায় পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি সদস্যরা অভিযানে নামেন। এ সময়ে মাদকবিরোধী অভিযানে প্রায় অর্ধশতাধিক ‘বন্দুকযুদ্ধে’র ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন ৩১ জন মাদক কারবারি। পুলিশের দাবি, তারা সবাই শীর্ষ মাদক বিক্রেতা। 

বিজ্ঞাপন

তবে স্থানীয়রা বলছেন, মাদকবিরোধী অভিযানে যারা মারা গেছেন, এরা সবাই খুচরা বিক্রেতা। কারণ, ৩১ জন নিহত হলেও জেলায় মাদকের আমদানি ও কেনাবেচা কমেনি, বরং মাদকের কারবার বেড়েই চলছে।

সূত্রমতে, কুমিল্লার ১৭টি উপজেলার মধ্যে সীমান্ত লাগোয়া উপজেলা রয়েছে পাঁচটি। এসব উপজেলার মধ্যে মাদক আমদানি ও কেনাবেচার জন্য বেশি আলোচিত ব্রাহ্মণপাড়া। সীমান্তবর্তী এই উপজেলার একাধিক স্থানে মাদকের বেচাকেনা অনেকটা ‘ওপেন-সিক্রেট’।

ব্রাহ্মণপাড়ার সৈয়দ আহমেদ লাভলু বলেন, ‘পুলিশ ও বিজিবির সমন্বয় না থাকার কারণে ব্রাহ্মণপাড়ায় মাদকের রমরমা কারবার চলছে। এ উপজেলার পাঁচ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা। এখানে পুলিশ অভিযানে যেতে চাইলে বিজিবি বাধা সৃষ্টি করে।’

এছাড়া কুমিল্লা আদর্শ সদর, সদর দক্ষিণ, চৌদ্দগ্রাম ও বুড়িচং উপজেলা মাদক কারবারের জন্য বেশ আলোচিত। এসব উপজেলার সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন স্থান থেকে বিজিবি প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার মাদকদ্রব্য আটক করছে, আটক হচ্ছেন মাদক ব্যবসার সাঙ্গে জড়িতরাও।

চৌদ্দগ্রামের স্থানীয় সাংবাদিক এমদাদ উল্লাহ জানান, এ বছর পুলিশের বিশেষ অভিযানে চৌদ্দগ্রামে ছয় জন নিহত হয়েছেন। কিন্তু উপজেলার উত্তরাঞ্চলে অভিযান চালানো হলেও দক্ষিণাঞ্চলে কোনো অভিযান পরিচালনা করা হয় না। অথচ সেখানে মাদকের ছড়াছড়ি।

তবে বন্দুকযুদ্ধ নয় বরং মাদক নিয়ন্ত্রণে সীমান্তে প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের দাবি জানিয়েছেন কুমিল্লার বিশিষ্ট জনেরা।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর  কুমিল্লা জেলার সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর মাসুম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘মাদক কেনাবেচা ও মাদক কারবারের সঙ্গে যারাই জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করতে হবে।’

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর আমীর আলী বলেন, ‘মাদক থেকে দেশ ও দেশের তরুণদের বাঁচাতে প্রয়োজন মূল কারবারিদের চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করা। খুচরা বিক্রেতাদের আটকের মাধ্যমে সমাজের তেমন কোনো পরিবর্তন আসবে না।’ 

এ ব্যাপারে কুমিল্লা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ নুরুল ইসলাম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে কুমিল্লায় জিরো টলারেন্স অবস্থানে আছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। জেলাজুড়ে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করা হচ্ছে। সমাজকে মাদকমুক্ত করতে হলে সম্মিলিতভাবে দায়িত্ব নিয়ে প্রত্যেককে নিজের পরিবার থেকেই আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।’