‘এক কেজি চালও দেয়নি যে ক্ষুধার জ্বালা মিটাবো’
২০০৭ সালে সিডরে হারিয়েছেন বড় ছেলেকে। এ বছরে ফণীর কাছে হারাতে হলো ছোট ছেলে ও মাকে। একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রিয়জনদের হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে, এখন নিজেদের বেঁচে থাকাটাও হয়ে উঠেছে অনেক বড় একটি চ্যালেঞ্জ।
ঘূর্ণিঝড় ফণী অতিক্রমের ৩৬ ঘন্টা পার হলেও কোন ত্রান সহায়তা পায়নি বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো। স্বজনহারা ও ঘরহারা মানুষের আহাজারি চলছে ধ্বংসস্তুপগুলোতে। সাইক্লোন শেল্টারের স্বল্পতায় ঘূর্ণিঝড়ের সময় গ্রামগুলোতে বারংবার প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে বলে দাবী এলাকাবাসীর।
এদিকে ত্রাণ সহায়তা দেয়ার জন্য এখনও দাপ্তরিক কার্যক্রম চলছে বলে দাবী করছে প্রশাসন।
ঘূর্ণিঝড় ফণীর কয়েক ঘন্টার তান্ডবে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার চরদোয়ানী এলাকার ৬টি গ্রাম ধ্বংসস্তুপে পরিনত হয়।
ধ্বংসস্তুপের কাছে গেলেই ভেসে আসছে কান্নার শব্দ। সব হারিয়ে নিঃস্ব ইব্রাহিম কান্নারত অবস্থায় বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘সিডরে মারা গেলো বড় ছেলে। আর ফণীতে চলে গেল ছোট ছেলে আর মা। এখন আর কি আছে জীবনে’।
ইব্রাহিম অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রশাসনের কেউ এক কেজি চালও দেয়নি যে ক্ষুধার জ্বালা মিটাবো। সব হারিয়ে এখন নিজেও মরতে বসেছি। প্রতিবেশীরা যা দেয়, তাই খেয়ে বেঁচে আছি’।
ঘূর্ণিঝড়ে নিহত জাহিদুলের মা জেসমিন বেগম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘একটা সাইক্লোন শেল্টার যদি থাকতো তবে বড় ছেলে রবিউল সিডরের পানিতে ডুবে মরতো না। আর ছোট ছেলে জাহিদুল ও মা (শাশুড়ি) নুরজাহান বেগম ঘরের নিচে চাপা পরেও মরতো না’।
একই এলাকার, সোহেল, হারুন, নাজির মাঝি, কুদ্দুস মিয়া, সাইদুল ইসলাম, সুফিয়া বেগমসহ একাধিক ক্ষতিগ্রস্থরা একই সুরে জানান, কাছাকাছি সাইক্লোন সেল্টার না থাকায় ঘূর্ণিঝড়গুলোতে আশ্রয়হীন হয়ে পরে এখানকার মানুষ।
এলাকাবাসী অভিযোগ করে বার্তা২৪.কমকে আরো জানায়, বসতবাড়ি, ফসলি ক্ষেত, পুকুরের মাছ সব কিছু শেষ হয়ে গেলেও কোন সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসেনি কেউ। এখনও খাবার ও বিশুদ্ধ পানির চরম সংকটে আছেন তারা।
অবশ্য ফণী কেটে যাওয়ার পরের ২৪ ঘন্টা ধরে সহায়তা দেয়ার দাপ্তরিক কার্যক্রম চালাচ্ছেন বলে বার্তা২৪.কমকে জানান পাথরঘাটা উপজেলার ত্রান ও পুনর্বাসক কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম।
বরগুনায় পাঁচ শতাধিক কাচা ঘর সম্পূর্ণ ও প্রায় সাড়ে ৮ হাজার বসতঘড় আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়া নিহত হয়েছে ২ জন ও আহত হয়েছে প্রায় অর্ধশত।