সুন্দরবনে 'বন্দুকযুদ্ধে' ৪ বনদস্যু নিহত
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের (মংলার) জোংড়া এলাকায় র্যাব-০৮ ও বনদস্যু আলিম ওরফে আরিফ বাহিনীর মধ্যে 'বন্দুকযুদ্ধে' বাহিনী প্রধান আরিফসহ ৪ দস্যু নিহত হয়েছে।
এ সময় ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে তিনটি একনলা ও একটি দুইনলা বিদেশি বন্দুক, ১টি ওয়ানশুটারগান, ৬২ রাউন্ড তাজা গুলি ও গুলির খোসা।
সোমবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বনের জোংড়া খালে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। নিহত ৪ দস্যুর বাড়ি বাগেরহাটের মংলা উপজেলার সিগনাল টাওয়ার এলাকার দক্ষিণ চরে।
নিহতরা হলেন- দক্ষিণ নামার চরের মৃত আউয়াল হাওলাদারের ছেলে আবদুল আলিম হাওলাদার ওরফে হালিম (৩১), আফজাল হাওলাদারের ছেলে মো: রাজু (২৪), আলতাফ হাওলাদারের ছেলে সোহেল হাওলাদার (৩০) ও রুবেল হাওলাদার (২৭)।
র্যাব-০৮ কর্তৃক প্রেরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের ১লা নভেম্বর বাগেরহাটের শেখ হেলাল উদ্দিন স্টেডিয়ামে সর্বশেষ দস্যু বাহিনীদের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে সুন্দরবনকে জল ও বন দস্যু মুক্ত ঘোষণা করেন। এরপর থেকে সুন্দরবনকে দস্যু মুক্ত রাখতে র্যাব-০৮ নিয়মিত টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রাখে।
এরই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জ এলাকা থেকে বনদস্যু আরিফ বাহিনীর ৪ দস্যুকে আটক করা হয়। আটকৃতদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তাদের লুকিয়ে রাখা অস্ত্র ও গুলি উদ্ধারে বনের জোংড়া খাল এলাকায় গেলে সেখানে পূর্ব থেকে অবস্থান নিয়ে থাকা আরিফ বাহিনীর সদস্যরা। তারা অভিযানকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে।
এ সময় আত্মরক্ষায় র্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। আটককৃতরা পালিয়ে যাওয়া চেষ্টা করলে গোলাগুলির মধ্যে পড়ে। উভয়ের মধ্যে ৫/৬ ঘণ্টার গোলাগুলির পর স্থানীয় জেলেদের সাথে নিয়ে অভিযানকারীরা ওই এলাকায় তল্লাশি শুরু করে। তল্লাশিতে ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ ৪ সক্রিয় দস্যুকে উদ্ধার করে জেলেরা। পরে তাদেরকে খুলনার দাকোপ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে। পরে নিহত ৪ দস্যুর লাশ, আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি দাকোপ থানা পুলিশে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এদিকে বন্দুক যুদ্ধে নিহত রাজুর মা ফাতেমা বেগম ও বাবা আফজাল হাওলাদার বলেন, 'আমার ছেলে জাহাজে চাকরি করে। জাহাজ থেকে এসে রোববার রাতে ঘরে ঘুমাচ্ছিলো। তখন তাকে কে বা কারা ধরে নিয়ে যায়। এখন শুনি রাজু ক্রসফায়ারে মারা গেছে।'
আলিমের ভাবী পলি বেগম বলেন, 'রোববার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ঘরে ঢুকে আলিমকে ধরে মুখ বেঁধে নিয়ে যায়। এ সময় আমরা ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার শুরু করলে তারা ৪টি ফায়ার করে ওদের টানতে টানতে নিয়ে ট্রলারে তুলে ঢাংমারীর (সুন্দরবন) দিকে চলে যায়।'
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৩১ মে মংলা বন্দরের ইঞ্জিনিয়ারিং জেটিতে সর্বপ্রথম বন দস্যু মাষ্টার বাহিনীর মধ্যদিয়ে শুরু হওয়া আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়া। মোট ৩২টি দস্যু বাহিনীর ৩২৮জন সদস্য আত্মসমর্পণ করে। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর বাগেরহাটের শেখ হেলাল উদ্দিন স্টেডিয়ামে ৬টি বনদস্যু বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্যদিয়ে আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়া শেষ হয়।