দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য ১ জন শিক্ষক

  • আবু হোসাইন সুমন,ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট,বাগেরহাট,বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

শিক্ষার্থী থাকলেও নেই শিক্ষক, ছবি:

শিক্ষার্থী থাকলেও নেই শিক্ষক, ছবি:

বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার ৩৫নং রাজাপুর ইয়াছিন মেমোরিয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে প্রায় দু’শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। কিন্তু দু’শতাধিক শিক্ষার্থীদের বিপরীতে শিক্ষক আছেন মাত্র একজন।

শিক্ষক না থাকায় বিদ্যালয়টিতে পড়ালেখা দীর্ঘদিন ধরে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়ে আসছে। প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৬টি ক্লাসের শিক্ষার্থীদের মাঝে মধ্যে দু-একটি ক্লাস হলেও অধিকাংশ সময়ই কোন ক্লাস হয় না।

বিজ্ঞাপন

সুন্দরবনের কোলঘেঁষে ১৯৭২ সালে ভোলা নদীর পাশে ওই স্কুলটি স্থাপিত হলেও বন সংলগ্ন এলাকায় পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর ছেলে-মেয়েদের এখন বিদ্যালয়টি কোন উপকারেই আসছে না। অভিভাবকেরা তাদের ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা করানোর জন্য প্রতিদিন স্কুলে পাঠালেও অধিকাংশ সময় ক্লাস না করেই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে তাদের। নানা সমস্যার পাশাপাশি স্কুলটিতে নেই কোন শৃঙ্খলাও।

শিক্ষার্থীদের নেই আলাদা কোনো পোশাক। এক সময়ে স্কুলটির সুনাম থাকলেও চরম শিক্ষক সংকটের কারণে দিন দিন ঐতিহ্য হারাচ্ছে বিদ্যালয়টি।

বিজ্ঞাপন

উপজেলা সদর থেকে একটু দুর্গম এলাকায় স্কুলটির অবস্থান হওয়ায় উপজেলা শিক্ষা দফতরের কোনো নজরদারি নেই। এছাড়া অধিকাংশ শিক্ষকেরা সদরমুখী হওয়ায় ওই স্কুলে যোগদান করতে আগ্রহী নন। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কোমলমতি শিশুদের শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য উপজেলা শিক্ষা দফতরকে বারবার অনুরোধ করা হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা আমলে নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

খোঁজ খবরে জানা গেছে, বিদ্যালয়টির ৬টি শ্রেণীতে ভর্তি থাকা শিক্ষার্থীদের অধিকাংশরই অভিভাবকদের পেশা সুন্দরবনের কাঠ কাটা ও মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা। তাদের পক্ষে ছেলে-মেয়েদেরকে কোনভাবেই নামী-দামি বিদ্যালয়ে পড়ালেখা শেখানো সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়েই স্থানীয় ওই স্কুলটিতে শিশুদের ভর্তি করালেও তার ফলাফল শূন্য।

মান সম্মত ভবন, ক্লাস রুম, উপবৃত্তি, টিফিন ব্যবস্থাসহ সরকারি নানা সুযোগ সুবিধা থাকলেও কেবলমাত্র চরম সংকট রয়েছে শিক্ষকের। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক সংকটের কারণে সরকারি নানা উদ্যোগের সুফল ভোগ করতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ আঃ আউয়াল বলেন, তার একার পক্ষে সকল শ্রেণীর দু’শতাধিক শিক্ষার্থী ম্যানেজ করে পাঠদান করা অসম্ভব। এছাড়া শিক্ষা অফিসের মাসিক সভাসহ প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের জন্য সপ্তাহে ৩/৪ দিন ব্যস্ত থাকতে হয় তাকে। যার ফলে ওই দিনগুলোতে বিদ্যালয়টি শিক্ষক শূন্য হয়ে পড়ে।

স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোঃ কামাল হোসেন বলেন, স্কুলের শিক্ষক সংকটের বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কার্যালয়ে বহুবার অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে সংশ্লিষ্টরা কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় শিশুদের পড়ালেখা গত দু’বছর যাবত এক প্রকার বন্ধ আছে। এছাড়া মাঝে মধ্যে দু’একজন শিক্ষক বিদ্যালয়টিতে যোগদান করলেও কিছুদিন পর শিক্ষা অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে তাদের পছন্দনীয় স্থানে বদলী হয়ে যান। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জেনে শুনেও নাক ডেকে ঘুমাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেন, শরণখোলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রায় দেড়শ শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। নতুন করে যাদের নিয়োগ হচ্ছে তারাও তাদের পছন্দ মত জায়গায় চলে যাচ্ছেন। আর রাজাপুর ইয়াছিন মেমোরিয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি অত্যন্ত দুর্গম এলাকায়। রাস্তাঘাট খুবই খারাপ এবং সুন্দরবনের পাশেই। তাই যাদেরকেই সেখানে ডেপুটিশনে দেয়া হয় তারাও সেখানে থাকতে চান না।

তিনি আরও বলেন, জেলার পাশাপাশি যদি শুধু থানা ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ দেয়া যায় তাহলেই এ সমস্যা দূর করা সম্ভব হবে।