টিফিন বাক্সে বদলে গেছে প্রাথমিকের চিত্র

  • মাজেদুল হক মানিক, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, মেহেরপুর, বার্তা২৪.কম 
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

টিফিন বাক্সে বদলে গেছে প্রাথমিকের চিত্র। ছবি: বার্তা২৪.কম

টিফিন বাক্সে বদলে গেছে প্রাথমিকের চিত্র। ছবি: বার্তা২৪.কম

বিদ্যালয়ে বসে মায়ের হাতের রান্না করা খাবার খাচ্ছে মেহেরপুরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুরা। বাড়িতে তৈরি পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ ও জাঙ্কফুড বর্জনের লক্ষ্য নিয়ে তাদের হাতে প্রশাসন থেকে দেয়া হয়েছে টিফিন বক্স। এতেই বদলে গেছে বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতির চিত্র।

জানা গেছে, সরকারিভাবে প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিড ডে মিল চালুর নির্দেশ রয়েছে। নির্দেশনা বাস্তবায়নে কয়েকটি বিদ্যালয়ে দুপুরে রান্না করে ছাত্রছাত্রীদের খাওয়ানো শুরু হয়। কিন্তু আর্থিক জোগান না থাকায় তা বাধাগ্রস্ত হতে থাকে। এ কারণে মিড ডে মিল চালু করতে জেলা প্রশাসন থেকে নেওয়া হয় ব্যতিক্রমী উদ্যোগ।

গত বছরের শেষের দিকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের হাতে তুলে দেয়া হয় বিনামূল্যে একটি করে টিফিন বাক্স। উপজেলা প্রশাসন ও শিক্ষা অফিস এটি বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখে। টিফিন বাক্স পাওয়ার পরের দিন থেকে ছাত্রছাত্রীরা সকালে স্কুলে নিয়ে যায় তাদের মায়ের হাতের রান্না করা খাবার। দুপুরে শ্রেণিকক্ষে বসে ওই খাবার খায় ছাত্রছাত্রীরা। এতে দুপুরের খাবার চাহিদা মিটে যাওয়ায় আবারো লেখাপড়ায় মনোযোগ দেয় প্রাথমিকের এসব কোমলমতি শিশুরা।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, মেহেরপুরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩০৮টি। এর মধ্যে সদর উপজেলার ১০৮টি বিদ্যালয়ে ১৯ হাজার, গাংনী উপজেলার ১৬২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৫ হাজার ও মুজিবনগর উপজেলার ৩৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ হাজার ৫শ টিফিন বাক্স বিতরণ করেছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jan/31/1548943186973.jpg

শিক্ষকরা জানান, বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীরা দুপুরে খাবার খাওয়ার অজুহাতে বাড়িতে চলে যেত। কেউ কেউ ফিরে আসলেও অনেকে বিদ্যালয়ে ফেরত আসত না। আবার অনেকেই বিদ্যালয়ের বাইরে থেকেও জাঙ্কফুড খেয়ে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ত। শিক্ষার্থীদের মাঝে টিফিন বাক্স বিতরণের উদ্যোগ নেয় প্রশাসন। সেই সঙ্গে অভিভাবকদেরকে সচেতন করা হয় যাতে তাদের ছেলে-মেয়েদেরকে দুপুরের খাবার পাঠান। এরপর থেকেই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়তে শুরু করে।

নওপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নাজনীন নাহার জানান, টিফিন বাক্স পেয়ে বেশ খুশি শিক্ষার্থীরা। তারা নিয়মিত খাবার নিয়ে আসে।

এ প্রসঙ্গে কয়েকজন ছাত্রছাত্রী জানায়, এর আগে দুপুরে বাড়িতে খাবার খেতে গিয়ে তারা বেশিরভাগ সময় বিদ্যালয়ে ফেরেনি। এখন খাবার খেতে বাড়িতে যেতে হয় না। তাই লেখাপড়ার গতি অনেক বেড়েছে।

গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিষ্ণুপদ পাল জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তিকৃত ছাত্রছাত্রীদের নিয়মিত উপস্থিতির হার বৃদ্ধিকরণ, ঝরে পড়ার প্রবণতা রোধকরণ, দৈনন্দিন পুষ্টির চাহিদা পূরণ করা ছাড়াও শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের লক্ষ্যে টিফিন বাক্স সরবরাহ করা হয়েছে। এতে করে শিক্ষার্থীরা উৎসাহ পেয়েছে।

মেহেরপুর জেলা প্রশাসক আতাউল গনি জানান, শিশুরা যেন প্রতিদিন বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে যায় এ বিষয়ে সবার নজর থাকতে হবে। বিশেষ করে অভিভাবকদের। মায়ের হাতের রান্না খেয়ে বাচ্চারা পুষ্টির জোগান পাচ্ছে। পাশাপাশি বাইরের খাবার খেতে হচ্ছে না। এছাড়া ছাত্রছাত্রীদের ঝরে পড়া রোধ হয়েছে।