গাইবান্ধার বড়া তৈরির গ্রাম 'নুরপুর'

  • তোফায়েল হোসেন জাকির, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, গাইবান্ধা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

গাইবান্ধার জেলার বড়া তৈরির গ্রাম হিসেবে খ্যাত নুরপুর। পলাশবাড়ী উপজেলার সদর ইউনিয়নে এই গ্রামটি অবস্থিত। নুরপুর গ্রামটির প্রায় ৫০ থেকে ৬০টি পরিবার মাসকালাই বড়া তৈরির পেশায় জড়িত। এখানকার নারী-পুরুষ সবাই বড়া তৈরির কারিগর।

ওইসব পরিবারের গৃহবধূরা টিনের চালা কিংবা কাপড়ের ফ্রেম তৈরি করে তাতে মাসকলাইয়ের তৈরি করা ঘন ফেটানো অংশ বড়ি বানিয়ে আটকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই পরিবারগুলোর প্রায় প্রত্যেকে এ কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। সম্প্রতি রাস্তার পাশেই মাটিতে টিন বিছিয়ে বড়া শুকানোর কাজে ব্যস্ত নুরপুরের গৃহিনীরা।

বিজ্ঞাপন

বড়া তৈরি কারিগর মেহেরন্নেসা ও কছিরন বেগম জানান, স্থানীয় কালীবাড়ী থেকে মাসকলাই কিনে এনে রাতে যাতায় পিশে তা ভিজিয়ে রাখতে হয়। আঠালো হয়ে ঘন হলে তা ফেটিয়ে সকালে বড়া তৈরি করে রোদে শুকাতে হয়। এক কিংবা দুদিন পর শুকিয়ে গেলে বিক্রির উপযোগী হয়। বড়া তৈরির সাথে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত রেমানা বেগম বলেন, ৬০ টাকা কেজি দরে প্রতিদিন ১০ কেজি মাসকলাই ৬০০ টাকায় কিনে বড়া তৈরি করার পর শুকনো বড়া হয় ৮ কেজি। শুকনো বড়া পাইকারিভাবে ১০০ টাকা কেজি দরে ৮০০ টাকা বিক্রি করি। প্রতিদিন এ কাজ থেকে ২০০ টাকা লাভ হয়। তা দিয়েই সংসার চলে। পরিবারের সব সদস্যই এটি শেখায় কাজে কোন বেগ পেতে হয়না বলেও জানান এই বড়ার কারিগর। বছরে সাত মাস চলে এই বড়া তৈরির কাজ। বিশেষ করে শীত মৌসুমে এ ব্যবসা তাদের ভালো চলে।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, প্রতিদিন উপজেলাসহ আশেপাশের খুচরা ব্যবসায়ীরা এ গ্রামে এসে বড়া নিয়ে গিয়ে বিক্রি করেন। পলাশবাড়ীর ব্যবসায়ী শাহারুল বলেন, হাট বাজারের চাহিদা অনুযায়ী তারা বড়া সরবরাহ দিতে পারেনা। অর্থ অভাবে কালাই কম কিনতে হয়, তাই বড়াও তৈরি করে কম।

পলাশবাড়ী এসএমবি আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক শাহ আলম মিয়া বলেন, যেকোন ঝোল তরকারিতে বড়া দিয়ে রাঁধলে তার স্বাদটাই হয় আলাদা। এ এলাকায় এই বড়ার তরকারির সু-স্বাদ নেয়নি এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবেনা বলেও জানান তিনি।

বাড়াইপাড়া গ্রামের পুরাতন বড়া ব্যবসায়ী আজিজ জানান, পুঁজি আমাদের কম তাই চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বেশি বড়া তৈরি করতে পারিনা। সরকারি ভাবে ঋণের ব্যবস্থা করলে এ পেশা আরো সম্ভাবনাময় হতো বলে তার আশা।

পলাশবাড়ী সদর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য খায়রুল জানান, সহযোগিতা পেলে তাদের এ পেশায় আরো গতি ফিরবে।