গমের ব্লাস্ট প্রতিরোধে সর্বোচ্চ সতর্কবস্থা

  • মাজেদুল হক মানিক,ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, মেহেরপুর, বার্তা২৪
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

গেল তিন বছর গমে ব্লাস্ট নামক ছত্রাকে ভয়াবহ ক্ষতির পর মেহেরপুরের গম চাষিদের মাঝে আতংক বিরাজ করছে। মাঠে এবার ক্ষেতের পর ক্ষেত গমে ভরা। ব্লাস্ট আক্রান্ত হলে চাষিদের পথে বসতে হবে। তাই ব্লাস্ট প্রতিরোধে সর্বোচ্চ সতকর্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে জেলা কৃষি বিভাগ।

জানা গেছে, ২০১৬ সালে বাংলাদেশে গমে প্রথম ব্লাস্ট ছত্রাক ধরা পড়ে মেহেরপুর জেলায়। পরবর্তীতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৮টি জেলায় এর ভয়াবহতা দেখা দেয়। গমে শীষ বের হওয়ার পর ব্লাস্ট ছত্রাক আক্রমণে শীষ শুকিয়ে যায়। শীষে দানা না হওয়ায় মাঠের পর মাঠের গম ক্ষেতে মারাত্মক ফলন বিপর্যয় দেখা দেয়। এতে আন্তর্জাতিক গম ও ভুট্টা গবেষণা কেন্দ্র (সিমিট) এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের কৃষি বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে ব্লাস্ট প্রতিরোধের চেষ্টা শুরু করেন।

বিজ্ঞাপন

এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সাল থেকে এ অঞ্চলের চাষিদের গম আবাদে নিরুৎসাহিত করে কৃষি বিভাগ। এরই মধ্যে গমের নতুন জাত বারি গম ৩৩ উদ্ভাবিত হয়েছে। অপরদিকে দুই বছর গম আবাদে ভাটা পড়ার পাশাপাশি চাষিদেরকে প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থার শেখাচ্ছেন কৃষি কর্মকর্তারা। যার ফলশ্রুতিতে চলতি মৌসুমে গমের আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে,  চলতি মৌসুমে মেহেরপুর জেলার তিনটি উপজেলায় গম আবাদ করা হয়েছে ৭ হাজার ৯৭০ হেক্টর। ইতোমধ্যে গমের কিছু কিছু শীষ বেরিয়েছে এবং আরও কিছু শীষ বেরুনোর অপেক্ষায়। গমের শীষ বেরুনোর সাথে সাথে গম চাষিদেরকে প্রতি লিটার পানিতে ০.৬ গ্রাম নাটিভো মিশিয়ে স্প্রে করার জন্যে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের পক্ষ হতে কৃষকদেরকে নিরন্তর পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণ, দলীয় আলোচনা, ব্যক্তিগত যোগাযোগ, ফোনকল ও ক্ষুদেবার্তা প্রেরণ প্রভৃতির মাধ্যমে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ কৃষকদেরকে পরামর্শ দিয়ে চলেছেন। যেহেতু গমের ব্লাস্ট রোগ মেহেরপুর এলাকার জন্যে একটা ত্রাস, সেজন্যে অত্র এলাকার গম চাষিরাও কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের পরামর্শ মেনে ছত্রাকনাশক স্প্রে করছেন এবং কৃষকেরাও সতর্কাবস্থায় রয়েছে।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, ব্লাস্ট রোগ চিরতরে বিদায় করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইন্সটিটিউট এবং মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সদর উপজেলার বিভিন্ন মাঠে ব্যাপক গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছেন। গমের ব্লাস্ট রোগের এই গবেষণা ফলপ্রসূ হলে গমের ব্লাস্ট প্রতিরোধী আরও জাত পাওয়া সম্ভব হবে। সেইসাথে ব্লাস্ট প্রতিরোধের কার্যকর উপায়ও বেরিয়ে আসবে বলে জানালেন কৃষিবিদ ড. আখতারুজ্জামান।

ধর্মচারী গ্রামের গম চাষি সামসুজ্জামান বলেন, গত বছর আমি গমের শীষ বের হওয়ার সময় একবার এবং ১২ দিন পরে আরেকবার নাটিভো স্প্রে করেছিলাম। এতে আমার গমে ব্লাস্ট আক্রমণ হয়নি। যারা স্প্রে থেকে বিরত ছিলেন তাদের ক্ষেতে ব্লাস্ট লাগে। এবারো আমার ক্ষেতের গমে শীষ বের হওয়া শুরু হলে স্প্রে করব।

মুজিবনগর উপজেলার তারানগর গ্রামের চাষি আক্কাছ আলী বলেন, গত বছর স্প্রে না দিয়ে গমের ক্ষতি হয়েছিল। এবার শীষ বের হওয়ার সাথে সাথে স্প্রে দিয়েছি। আরও একবার স্প্রে দেব। এখনো পর্যন্ত আমার ক্ষেতে ব্লাস্ট আক্রান্ত হয়নি।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছর সামান্য পরিসরে ব্লাস্ট দেখা গেলেও তা নিয়ন্ত্রণে সফল হয় কৃষি বিভাগ ও কৃষকরা। কিন্তু চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত ব্লাস্ট আক্রমণ হয়নি। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা সর্বোচ্চ সতকর্তার সাথে নজরদারি ও প্রয়োজনীয় স্প্রে নিশ্চিত করায় ব্লাস্ট আক্রমণ ঠেকানো সম্ভব বলে মনে করছেন তারা। 

প্রসঙ্গত, ১৯৮৫ সালে ব্রাজিলেই প্রথমবারের মতো গমক্ষেত ব্লাস্ট ছত্রাকে আক্রান্ত হয়। পরবর্তীতে এটি ছড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র ও লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে। তবে ওই দেশগুলোয় প্রয়োজনীয় প্রতিরোধ ব্যবস্থা থাকায় ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পান কৃষকরা।