লোক উঠলে কাঁপতে থাকে সেতুটি

  • আবু হোসাইন সুমন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট,বাগেরহাট,বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

রায়েন্দা নদীর উপরের সেতুটি এখন চরম ঝুঁকিপূর্ণ/ছবি: বার্তা২৪

রায়েন্দা নদীর উপরের সেতুটি এখন চরম ঝুঁকিপূর্ণ/ছবি: বার্তা২৪

বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা বাজারের গুরুত্বপূর্ণ রায়েন্দা নদীর উপরের সেতুটি এখন চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এলজিইডি’র নির্মিত ব্রিজের লোহার পিলারগুলোর অধিকাংশই নষ্ট হয়ে গেছে। লোকজন উঠলেই সেতুতে শুরু হয় কম্পন। প্রতিদিন ঝুঁকিপূর্ণ এই সেতু দিয়ে দুই পাড়ের হাজারো সাধারণ মানুষ ও স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা চলাচল করছে। এত মানুষের চলাচলকারী সেতুটির মেরামত বা নতুন সেতু নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের। যে কোনো মুহূর্তে সেতু ধসে বড় ধরণের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।

শরণখোলা উপজেলা সদরের খরস্রোতা নদীর উপর ১৯৯৭ সালে এলজিইডি’র মাধ্যমে মাত্র ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে লোহার কাঠামো এবং উপরে আরসিসি ঢালাইয়ে নির্মিত হয় এই সেতুটি। এরপর দীর্ঘ ২১ বছরেও এটি মেরামত করা হয়নি। সেতুটির দক্ষিণ পাড়ে উপজেলার প্রধান শহর রায়েন্দা বাজার। এখানে রয়েছে রায়েন্দা সরকারি পাইলট হাই স্কুল, আরকেডিএস বালিকা বিদ্যালয়, রায়েন্দা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আইডিয়াল ইনস্টিটিউট, ভাসানী কিন্ডার গার্টেন স্কুল, রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, থানা, পোস্ট অফিস, টেলিফোন এক্সচেঞ্জ, সরকারি খাদ্য গুদাম, চারটি ব্যাংকসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।

বিজ্ঞাপন

অপরদিকে উত্তর প্রান্তে খোন্তাকাটা ইউনিয়ন। এখানে রয়েছে শরণখোলা সরকারি কলেজ, রায়েন্দা-রাজৈর ফাজিল মাদরাসা, চারটি বরফ কলসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান। দুই ইউনিয়নের হাজার হাজার সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থীসহ কর্মজীবীরা প্রতিদিন নড়বড়ে এই সেতু দিয়েই যাওয়া-আসা করে থাকেন। তাছাড়া সেতুর নিচ থেকে খাদ্য গুদামের বার্জ, কার্গো জাহাজ, শত শত ফিশিং বোট ও অন্যান্য নৌযান চলাচল করতে গিয়ে ধাক্কা লেগে সেতুর লোহার কাঠামো ভেঙে এলোমেলো হয়ে গেছে। ক্ষয় হয়ে গেছে অধিকাংশ পিলারের গোড়া। সেতুটি এখন পরিত্যক্ত সেতুতে পরিণত হয়েছে।

রায়েন্দা সরকারি পাইলট হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো: সুলতান আহমেদ গাজী ও রায়েন্দা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: সাইয়েদুল হক জানান, সেতুটির বর্তমান যে অবস্থা তাতে ছেলে-মেয়েরা পার হতে ভয় পায়। লোকজন উঠলেই সেতুটি দুলতে থাকে। তাই জনগুরুত্বপূর্ণ এ সেতুটি দ্রুত মেরামত বা নতুন সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিলন ও খোন্তাকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: জাকির হোসেন খান মহিউদ্দিন বলেন, খরস্রোতা এই রায়েন্দা নদী খেয়া নৌকায় পার হতে গিয়ে নৌকা ডুবে বহু দুর্ঘটনা ঘটেছে। পরবর্তীতে নদীর উপর এ সেতুটি দুই ইউনিয়নের বাসিন্দাদের মধ্যে এক সেতু বন্ধন তৈরিসহ পারাপার অনেক সহজ করে দিয়েছে। বর্তমানে এটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। যে কোন সময় ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ব্যাপারে বহুবার উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায় আলোচনা করেও কোনো কাজ হয়নি।

শরণখোলা উপজেলা প্রকৌশলী চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, এই সেতু এবং সেতুর দুই পাড়ের সড়ক আমাদের এলজিইডি’র আইডি তালিকাভূক্ত না। সে কারণে এখানে কোন বরাদ্দ দেওয়া যাচ্ছেনা। এডিবি প্রকল্প ছাড়া আমাদের এটি মেরামতের সুযোগ নেই। সেতুটি এখন মেরামতের প্রায় অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সে কারণে ঢালাই দিয়ে নতুন করে সেতু নির্মাণ করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।

শরণখোলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো: কামাল উদ্দিন বলেন, সেতুর বর্তমান যে অবস্থা তাতে নতুন করে আরসিসি পিলার দিয়ে না করলে মেরামতে কোনো লাভ হবে না। তাই উপর মহলে যোগাযোগ করে বড় কোনো বরাদ্দ আনা যায় কিনা সে ব্যাপারে চেষ্টা চলছে।